দ্বীন ইসলাম উনার ঈমানদীপ্ত ঐতিহ্য (৩৮)
, ১৮ ছফর শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ২৬ ছালিছ, ১৩৯২ শামসী সন , ২৪ আগষ্ট, ২০২৪ খ্রি:, ০৯ ভাদ্র , ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) ইতিহাস
উহুদের ময়দানে হযরত নাসিয়া বিনতে কা’ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনার ঈমানদীপ্ত বীরত্বের অতুলনীয় ঘটনা
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে নাসিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন- উহুদের জিহাদের দিন মুশরিকরা আমাকে প্রচ- এক আঘাত করে। কোন মতেই সে আঘাতের ক্ষতস্থান থেকে রক্তক্ষরণ বন্ধ হচ্ছিল না। তখন আমার মা হযরত নাসিয়া বিনতে কা’ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা আমার সেই ক্ষতস্থানে পট্টি বেঁধে দিয়ে ঈমানদীপ্ত জজবায় বললেন, ‘উঠো বাবা! ফের জিহাদ শুরু করো। ’ এ সময় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সন্তুষ্টচিত্তে ইরশাদ মুবারক করলেন, ‘ওহে আম্মারার মা! এত শক্তি সাহস, জজবা আপনি কোথা থেকে পেলেন?’ এমন সময় যে নরাধম আমাকে আঘাত করেছিল সে আমাদের সামনে দিয়েই যাচ্ছিল। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, ‘হে আম্মারার মা! এই লোকটিই আপনার পুত্রকে আঘাত করেছে। ’ এই কথা মুবারক শুনার সাথে সাথেই আমার মা ঐ নরাধমের পায়ের নলীতে তরবারী দ্বারা এমন প্রচ- জোরে আঘাত করলেন যে, সে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূরুদ দারাজাত মুবারক (ক্বদম মুবারকের) সন্নিকটে ছিটকে পড়লো। নরাধমটির এমন কুপোকাতের দৃশ্য অবলোকন করে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এমন মৃদুভাবে হাসলেন যে, উনার সম্মুখভাগের দাত মুবারকগুলো প্রকাশ পেলো। এ সময় তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করলেন, ‘ওহে আম্মারার মাতা! উত্তমভাবেই আপনি আপনার পুত্রের প্রতিশোধ গ্রহণ করলেন। মহান আল্লাহ পাক উনার শোকর যে, তিনি আপনাকে দুশমনের উপর জয়ী করেছেন। আপনার সম্মুখেই শত্রুকে ধ্বংস করে আপনার চক্ষু উজ্জ্বল করেছেন। ’ তখন হযরত নাসিয়া বিনতে কা’ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা নিবেদন করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! দুয়া করুন, আমি যেন পরকালে আপনার সম্মানিত আহলে বাইত শরীফ উনাদের সাথে জান্নাতে অবস্থান করতে পারি।
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তখন উনার ঈমানদীপ্ত স্বামী এবং সন্তানদের জন্যও দুয়া করলেন এই বলে, ইয়া আল্লাহ পাক! এদেরকে জান্নাতে আমার সঙ্গী করুন। হযরত নাসিয়া বিনতে কা’ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বলেন, এমন মুবারক দুয়ার পর আমার উপর যত বিপদই আসুক না কেন তাতে আমার বিন্দুমাত্রও ভয়-চিন্তা নেই। সুবহানাল্লাহ!
শুধু এতটুকুই নয়, ঐতিহাসিকগণ বর্ণনা করেন, এই ঈমানদীপ্ত বীর ছাহাবীয়া হযরত নাসিয়া বিনতে কা’ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা মুসাইলামাতুল কায্যাবের প্রতিরোধে জিহাদেও শরীক হন। তিনি স্বয়ং বর্ণনা করেন, ইয়ামামার যুদ্ধের দিন আমি মুসাইলামাকে তালাশ করছিলাম। হঠাৎ এক ব্যক্তি আমাকে তরবারী দ্বারা আঘাত করে; তাতে আমার একটি হাত কেটে পড়ে যায়। মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! এমন কঠিন অবস্থা সত্ত্বেও আমি যুদ্ধ থেকে বিরত হইনি। অল্প কিছুক্ষণ পরেই আমি সেই শত্রুকে মরে পড়ে থাকতে দেখলাম। এও দেখলাম, আমার পুত্র হযরত আব্দুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ঐ অভিশপ্তের মাথার উপর দাঁড়িয়ে তারই রক্ত দ্বারা নিজের তরবারী ভিজাচ্ছেন। তখন আমি সিজদায় পড়ে মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শোকরগুজার করলাম এবং আমার ক্ষতস্থানে পট্টি বাঁধতে লাগলাম। সুবহানাল্লাহ!
ঈমানদীপ্ত ইবরত:
হযরত আব্দুল হক মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত নাসিয়া বিনতে কা’ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনার ঈমানদীপ্ত বীরত্বের শান মুবারক বর্ণনা করে বলেন, সুবহানাল্লাহ! তিনি এক আশ্চর্যজনক মহিলা, অনেক পুরুষের চাইতেও তিনি অনেক ঊর্ধ্বে ছিলেন। কোন এক বুযূর্গ বলেছেন, মানুষের মাঝে নেক আমলই আসল। সে পুরুষ হোক আর নারীই হোক তাতে বিশেষ কিছু আসে যায় না। কারণ বাঘ তার আস্তানা থেকে লোকালয়ে আসলে মানুষ বলে- বাঘ এসেছে, বাঘ এসেছে! কেউ কিন্তু এ কথা বলে না, এটি পুরুষ বাঘ কিংবা মাদী বাঘ।
মূলতঃ প্রতি যুগে হযরত নাসিয়া বিনতে কা’ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনার ন্যায় বীর মুজাহিদদের ঈমানদীপ্ত উছীলায় দ্বীন ইসলামের হিফাজত হয়। বর্তমান যামানায় তেমনি ঈমানদীপ্ত দ্বীন ইসলামের হিফাজত করছেন এবং বাতিলের মূলোৎপাটন করছেন মুজাদ্দিদে আ’যম, সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম তিনি এবং উনার সম্মানিত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা। উনাদের ক্বদম মুবারকে উম্মাহ নিজেদের মাল-জান সপে দিয়ে লাভ করতে পারে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চিরস্থায়ী রেযামন্দী-সন্তুষ্টি মুবারক। যেমনটি লাভ করেছেন হযরত নাসিয়া বিনতে কা’ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা এবং উনার ঈমানদীপ্ত আহাল (স্বামী) ও সন্তানগণ। সুবহানাল্লাহি ওয়া রসূলিহী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! (সমাপ্ত)
-মুহম্মদ মুহাজিরুল ইসলাম।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৪০)
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
কেমন ছিলো মোঘল সালতানাতের গোলন্দাজ এবং অশ্বারোহী বাহিনী
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পান্থনিবাস ও সরাইখানা নির্মাণে মুসলমানদের অনবদ্য অবদান
২৬ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৩৯)
১৫ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
মুসলমানদের শিক্ষা-দীক্ষার বিরোধিতায় বিধর্মী-অমুসলিমরা
১৪ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী বাংলার হিন্দু ধনিক-বণিক, বেনিয়া শ্রেণী, ব্যাংকার প্রভৃতির সাথে এক গভীর ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে মুসলিম
১৪ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইউরোপকে যেভাবে সমৃদ্ধ করেছেন আফ্রিকান মুসলমানরা
১২ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
গুজরাটের সুলতান মুজাফফর শাহের পরহেজগারিতা এবং ভ্রাতৃত্ববোধ
০২ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৩৭)
০১ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
কেমন ছিলেন ইসলামী ইতিহাসের প্রথম আইনশৃঙ্খলা বাহিনী
০১ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ঐতিহাসিক মুসলিমবাগ ঈদগাহ-ই কি আজকের ঢাকেশ্বরী মন্দির?
২৯ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
১২টি চন্দ্রমাসের নাম এবং নামকরণের সার্থকতা (২)
২৯ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)












