নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারকে অবমাননাকারীদের যুগে যুগে ভয়াবহ পরিণতি (৬)
, ১৫ যিলহজ্জ শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ১২ আউওয়াল, ১৩৯৩ শামসী সন , ১১ জুন, ২০২৫ খ্রি:, ২৯ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ
আবূ লাহাবের ভয়াবহ পরিণতি:
অবশেষে চলে এলো সেই পাওনার সময়। এবার স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক উনার বিচারের পালা। পবিত্র বদর জিহাদের ঠিক সাত দিন পর মরণব্যাধিতে আক্রান্ত হলো আবূ লাহাব। ভয়ংকর ধরণের উৎকট প্লেগ দেখা দিলো তার গলদেশে। পুরো কণ্ঠনালী এক ধরনের মারাত্মক ফুসকুড়িতে ছেয়ে গেলো। গলদেশ ফুলে একাকার হয়ে গেলো! খাওয়া-দাওয়া বন্ধ। দুহাতে অর্থ বিলিয়ে চরম দাম্ভিক আবূ লাহাব সবকিছু ঠেকাতে চেয়েছিলো। কিন্তু তা কোনো কাজে এলো না। তার শক্তিশালী হাত দুটি অসাড় হয়ে গেলো ধীরে ধীরে। দুনিয়ার কোনো অর্থ-সম্পদ দিয়ে এ রোগ দূর করতে পারলো না।
যে সন্তানের গর্বে সে অহংকারী হয়ে উঠছিলো, সেই সন্তানেরাই তাকে ঘৃণাভরে নির্জন প্রান্তরে (জঙ্গলে) ফেলে চলে গেলো। যে ধরনের প্লেগে আক্রান্ত হয়েছিলো আবূ লাহাব, সবার ধারণা হয়েছিলো তা অত্যন্ত মারাত্মক। সাধারণত বড় ধরনের পাপী না হলে এ ধরনের প্লেগে আক্রান্ত হয় না কেউ। এ জন্য সন্তানেরা কেউ পরিত্যক্ত পিতার নিকটবর্তী হলো না। অবশেষে ক্ষুধার যন্ত্রণায় তিলে তিলে নিঃশেষ আবূ লাহাবের গোঙানি আর কাতরানোও স্তব্ধ হয়ে গেলো একদিন। অত্যন্ত লাঞ্চিত ও পরিত্যক্ত অবস্থায় দুনিয়া ছেড়ে চলে গেলো! মৃত্যুর পরও কেউ এলো না তাকে স্পর্শ করতে। তিনদিন সে সেখানেই পড়ে থাকলো। বাতাসে গোটা এলাকায় মারাত্মক দুর্গন্ধ ছেয়ে গেলো। কয়েকজন হাবশি কৃতদাস নিয়োগ করা হলো তার লাশ মাটি চাপা দিতে। তারা কিছু দূরে একটি গর্ত খুঁড়লো এবং বেশ কিছু দূরত্ব বজায় রেখে সুদীর্ঘ কাঠখ-ের সাহায্যে তার গলিত মৃতদেহ ঠেলে গর্তে ফেলে দিয়ে কোনরকমভাবে কঙ্কর ও পাথর দিয়ে চাপা দিয়ে ফিরে এলো।
কোনো কোনো বর্ণনায় রয়েছে, আবূ লাহাব নিজ ঘরেই মারা যায়। তিনদিন পর্যন্ত তার লাশ পড়ে থাকে। তার ছেলেরা ধারে কাছেও যায়নি। ইতিমধ্যে লাশ পঁচে ফুলে বীভৎস আকার ধারণ করে। পুরো ঘর উদ্ভট দুর্গন্ধে ছেয়ে যায়। আরবরা প্লেগকে খুবই মারাত্মক মনে করতো। অবশেষে একজন কুরাইশ লোক তার দুজন ছেলেকে বললো, ‘তোমাদের ধ্বংস হোক! তোমাদের লজ্জা করে না যে, তোমাদের পিতা তার ঘরে মরে পঁচে আছে?! তার লাশ কোথাও দাফন করছো না কেন?’ তারা বললো, ‘আমরা প্লেগকে ভয় করি!’ ওই লোকটি বললো, ‘চলো, আমি তোমাদের সহায়তা করবো। ’
অতঃপর তারা তিনজন মিলে আবূ লাহাবের পঁচা লাশ পবিত্র মক্কা শরীফ উনার উপকণ্ঠে একটি দেয়ালের কাছে নিয়ে যায়। সেখানে তারা দূর থেকে লাশের উপর পানি ঢালে। এরপর একটি গর্ত খুঁড়ে দূর থেকেই কাঠ দিয়ে ঠেলে ঠেলে লাশটি গর্তে ফেলে দেয়। অতঃপর কঙ্কর ও পাথর দিয়ে কোনরকম চাপা দিয়ে চলে আসে! মহান আল্লাহ পাক উনার কালাম মুবারক উনার ফল ১২ বছর পর দুনিয়াবী আযাবের মাধ্যমে শুরু হয়। আর পরকালের কঠিন আযাবতো চিরকাল চলতেই থাকবে।
এভাবেই মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার মহাসম্মানিত হাবীব মাহবূব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুশমনদেরকে নিকৃষ্ট আযাব-গযব দিয়ে ধ্বংস করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে রেখেছেন। সুবহানাল্লাহ!
উম্মে জামিলের পরিণতি:
এ হচ্ছে আবূ লাহাবের স্ত্রী। হযরত আবূ সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার বোন। যার মূল নাম ছিলো আরওয়া (اَرْوَى) অথবা ‘আওরা’ (عَوْرَاءُ) তবে সে উম্মে জামীল হিসেবেই পরিচিত। (عَوْرَاءُ) আওরা শব্দের অর্থ হচ্ছে একচক্ষু দৃষ্টিহীন হওয়া। যার কারণে হযরত মুহিউদ্দীন ইবনে আরাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উক্ত মহিলাকে ‘আওরা উম্মে ক্বাবীহ’ (عَوْرَاء اُمُّ قَبِيْحٍ) অর্থাৎ ‘এক চক্ষু সকল নিকৃষ্টের মূল’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। (তাফসীরে কুরতুবী ২০/২৩৯)
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরুদ্ধে তার স্বামী আবূ লাহাবের ন্যায় এই মহিলাও সারাক্ষণ লেগে থাকতো। সে গীবত-তোহমত ও নিন্দাবাদে মুখর থাকতো। চোগলখুরী ও মিথ্যাচারের মাধ্যমে সংসারে বা সমাজে অশান্তির আগুন ধরিয়ে দেয়া ব্যক্তিকে আরবদের পরিভাষায় (حَمَّالَةُ الْحَطَبِ) ইন্ধন বহনকারী বা ‘খড়িবাহক’ বলা হতো। অর্থাৎ ঐ শুষ্ককাঠ যাতে আগুন লাগালে দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ে। মালঊন আবূ লাহাবের স্ত্রী এ কাজটিই করতো পিছনে থেকে। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরুদ্ধে এমন কোনো অপপ্রচার নেই, যা আবূ লাহাবের ন্যায় তার স্ত্রীও করতো না।
হযরত আসমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন পবিত্র সূরা মাসাদ শরীফ নাযিল হন, তখন এই একচোখা মহিলা উম্মে জামীল সে রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে হাতে একটি প্রস্তরখন্ড নিয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে প্রহার করার উদ্দেশ্যে পবিত্র কা’বা শরীফ চত্বরে গমন করে। সেখানে এসে সে কিছু নিকৃষ্ট কবিতাংশ পাঠ করে। সে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ইসমে যাত মুবারক উনাকে ব্যঙ্গ করে বলে-
مُذَمَّمًا عَصَيْنَا وَأَمْرَهُ أَبَيْنَا وَدِيْنَهُ قَلَيْنَا
‘নিন্দিতের আমরা অবাধ্যতা করি, উনার নির্দেশ আমরা অমান্য করি এবং উনার দ্বীনকে আমরা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করি’। (চলবে)
-হাফিয মুহম্মদ ইমামুল হুদা।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাঝে ফানা ও বাক্বা সারা কায়িনাত (৩২)
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ইজতিহাদ সংক্রান্ত মওযূ হাদীছ ও তার খন্ডনমূলক জবাব (৭)
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাঝে ফানা ও বাক্বা সারা কায়িনাত (৩১)
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইজতিহাদ সংক্রান্ত মওযূ হাদীছ ও তার খন্ডনমূলক জবাব (৬)
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক শানে ব্যবহৃত একখানা শব্দ মুবারক পবিত্র “নূরুন নাজাত” মুবারক উনার ব্যাপকতা ও বিশালতা
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারকে মানহানীকারীদের যুগে যুগে ভয়াবহ পরিণতি (৩০)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ইজতিহাদ সংক্রান্ত মওযূ হাদীছ ও তার খন্ডনমূলক জবাব (৫)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সম্মানিত সম্বোধন মুবারক করার বিষয়ে কতিপয় মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র লফ্য বা পরিভাষা মুবারক
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনি তিনজন উনাদের মুহব্বত ফরয করে দিয়েছেন-
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ মেহমানদারী করার মাধ্যমে উদযাপনে শাফায়াত মুবারক লাভ
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাঝে ফানা ও বাক্বা সারা কায়িনাত (৩০)
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ইজতিহাদ সংক্রান্ত মওযূ হাদীছ ও তার খন্ডনমূলক জবাব (৪)
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)












