নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারকে অবমাননাকারীদের যুগে যুগে ভয়াবহ পরিণতি (১০)
, ১৪ মুহররমুল হারাম শরীফ, ১৪৪৭ হিজরী সন, ১১ ছানী, ১৩৯৩ শামসী সন , ১০ জুলাই, ২০২৫ খ্রি:, ২৬ আষাঢ়, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ
পবিত্র কা’বা শরীফ উনার গিলাফ মুবারকে ঝুলে থেকেও শেষ রক্ষা হলো না:
ইবনে খ্বাতাল নামক এক ব্যক্তি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারকে কটূক্তি করতো। পবিত্র মক্কা শরীফ বিজয়ের দিন এ কারণেই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাকে হত্যা করার নির্দেশ মুবারক দেন। এ বিষয়ে পবিত্র হাদীছ শরীফে বর্ণিত রয়েছে। হযরত আনাস ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন-
أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ دَخَلَ عَامَ الْفَتْحِ وَعَلَى رَأْسِهِ الْمِغْفَرُ فَلَمَّا نَزَعَهُ جَاءَ رَجُلٌ فَقَالَ إِنَّ ابْنَ خَطَلٍ مُتَعَلِّقٌ بِأَسْتَارِ الْكَعْبَةِ فَقَالَ اقْتُلُوْهُ
অর্থ: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র মক্কা শরীফ বিজয়ের বছর হেলমেট মুবারক পরা অবস্থায় পবিত্র মক্কা শরীফে প্রবেশ করেন। তিনি যখনই উনার নূরুল হুদা মুবারক থেকে হেলমেট মুবারক খুলে ফেললেন, এমতাবস্থায় একজন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি এসে বললেন, ইবনে খ¦তাল (বাঁচার জন্য) পবিত্র কা’বা শরীফ উনার গিলাফ মুবারক ধরে ঝুলে আছে। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নির্দেশ মুবারক দিলেন, (ঐ অবস্থায়ই) তাকে হত্যা করুন। (তখন ঐ অবস্থায়ই তাকে ক্বতল করা হয়। ) (বুখারী শরীফ, হাদীছ শরীফ নং ১৮৪৬; মুসলিম শরীফ, হাদীছ শরীফ নং ৩৩৭৪, সুনানুল কুবরা লিন নাসায়ী ৮/৭ ইত্যাদি)
ক্রুসেডার কিরবাণের পরিণতি:
৬১৫ হিজরী, ১২১৮ খ্রিষ্টাব্দ। মিশরের দিময়াত পঞ্চমবারের মতো ক্রুসেডারদের হামলার শিকার হলো। তারা দিময়াত অবরোধ করে নিলো। আইয়ুবী শাসক মুহাম্মদ আল-আদিল দিময়াত অবরোধের শিকার হওয়ার দুঃখে এ বছরের ২১ আগস্ট ইন্তেকাল করেন। ইন্তেকালের আগে পুত্র মুহাম্মদ আল-কামিলকে দিময়াত থেকে ক্রুসেডারদের বের করে দেওয়ার ওছিয়ত করে যান।
মুহাম্মদ আল-কামিল দিময়াতের সম্মুখে, দিময়াত ও কায়রোর মাঝামাঝি অবস্থিত মানসুরায় উনার বাহিনীর ছাউনি স্থাপন করলেন। ক্রুসেড হামলা রুখে দিতে নিজের নিকটাত্মীয়দের সাথে চলে আসা দ্বন্দ্ব মিটমাট করে নিলেন। দামেশক্ব, আলেপ্পো, হিমস ও বিভিন্ন জায়গা থেকে উনার জন্য সহায়তা আসতে লাগলো। মানসুরায় ক্রুসেডারদের সাথে এক তুমুল সংঘর্ষ বেধে গেলো। নীলদরিয়ায় পানিচ্ছাস দেখা দিলো। মিশরীয়রা ক্রুসেডারদের চারিদিক থেকে ঘিরে নিল। আবার ক্রুসেডারদের মধ্যে ব্যাপকহারে জ্বরের প্রভাব দেখা দিলো। সব মিলিয়ে ক্রুসেডারদের অবস্থা একেবারে চরমে পৌঁছে গেলো। তারা সন্ধির জন্য মরিয়া হয়ে উঠলো।
মানসুরায় ক্রুসেডারদের সাথে মুহাম্মদ আল-কামিল আইয়ুবী বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ চলাকালে প্রতিদিন শত্রুবাহিনী থেকে ‘কিরবান’ নামক এক চরম বেয়াদব, হিংসুটে, ক্রুসেডার কুকুর বের হয়ে আসতো। মুসলিম বাহিনীর সম্মুখে দাঁড়িয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে জঘন্য নোংরাভাবে গালমন্দ করতো। এটা ছিলো তার নিত্যদিনের বদ স্বভাব।
সুলতান মুহাম্মদ আল-কামিল আইয়ুবী তিনি মনে মনে এই মালঊন কুকুরটাকে বন্দি করতে চাইতেন। কিন্তু সেটা সম্ভব হতো না বা সে উনার অনুকূলে আসতো না। তিনি তার মুখাবয়ব খুব ভাল করে স্মরণ করে রাখতেন। যাতে সময়মতো তাকে চিনতে ভুল না করেন।
৬১৮ হিজরী, ১২২১ খ্রিষ্টাব্দ। বাধ্য হয়ে ক্রুসেডাররা সন্ধির মাধ্যমে অবরোধ তুলে নিলো। এরপর তাদের দেশে ফিরে গেলো। কিন্তু এই হিংসুটে ক্রুসেডার কুকুরটা সবার সাথে ফিরে না গিয়ে শাম দেশে চলে গেলো। যাতে করে সেখানে মুসলমানদের বিরুদ্ধে লড়তে পারে। এটা ছিলো তার অতিরিক্ত ইসলাম ও মুসলিম-বিদ্বেষের আলামত।
শামের লড়াইয়ে এই নিকৃষ্ট কুকুর মুসলমানদের হাতে গ্রেফতার হয়। তাকে চিনতে ভুল করেননি মুহাম্মদ আল-কামিল আইয়ুবী তিনি। চেনার সাথে সাথে কিছু লোকের মারফত তিনি তাকে পবিত্র মদীনা শরীফ উনার গভর্নরের কাছে পাঠিয়ে দেন। যাতে করে পবিত্র মদীনা শরীফ উনার সেই যমীন মুবারকেই এই কুকুরকে যবাই করা হয়, যে যমীন মুবারকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অবস্থান মুবারক করছেন।
৬২৫ হিজরী পবিত্র ঈদুল ফিতর উনার দিন। মুসলমানদের খুশির দিন। সেই খুশিকে আরো দ্বিগুণ বহুগুণে বৃদ্ধি করে দিলো এই ঘটনা। পবিত্র রওজা শরীফ উনার সামনে ‘কিরবান’ নামক এই ক্রুসেডার কুকুরকে উপস্থিত করা হয়। তার গলায় ছুরি লাগানোর পূর্বে পবিত্র রওজা শরীফ উনার দিকে লক্ষ্য করে বলা হয়-
يا رسول الله صلى الله عليه وسلم هذا عدو الله وعدوك والمصرح في ملة كفره بسبك وسبب صاحبك قد أرسله محمد سلطان مصر ليقتل بين يديك، ويشكر الله لما وفقه من مجاهدة الشرك الذين كفروا بما أنزل إليك ورام أن يجعله عبرة لمن انتهك حرمتك واجترأ عليك
‘ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! এ হলো মহান আল্লাহ পাক উনার এবং আপনার দুশমন। যে প্রকাশ্যে আপনাকে এবং আপনার হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে গালি দিয়েছে। নাঊযুবিল্লাহ! তাকে মিশরের সুলতান মুহাম্মদ আল-কামিল প্রেরণ করেছেন, আপনার নিকটে (পবিত্র রওজা শরীফ উনার) সামনে তার একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদ- সেটা বাস্তবায়ন করার জন্য। তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার শুকরিয়া আদায় করেছেন, যারা আপনার প্রতি নাযিলকৃত বিষয়সমূহকে অস্বীকার করে তাদের সাথে জিহাদ করতে পারার জন্য। যারা আপনার পবিত্রতা মুবারক লঙ্ঘন করেছে এবং আপনাকে আক্রমণ করার, আপনার সুমহান শান মুবারকে কটূক্তি করার দুঃসাহস করেছে তাদের জন্য তিনি এটাকে একটি দৃষ্টান্ত হিসেবে রেখে দিতে চান। ’
এর কিছুক্ষণ পরই তরবারী দ্বারা এই নিকৃষ্ট কুকুরটার মাথা তার গর্দান থেকে ফেলে দেয়া হয়। (সে যমীনে লুটিয়ে পড়ে, পবিত্র রওজা শরীফ উনার সংলগ্ন পবিত্র মাটি মুবারক এই নিকৃষ্ট হিংসুটে ক্রুসেডার কুকুরের নাপাক রক্তে রঞ্জিত হয়। ) সমস্ত মুসলমানগণ খুশিতে মহান আল্লাহ পাক উনার শুকরিয়া আদায় করেন এবং আল্লাহু আকবার ধ্বনিতে আকাশ বাতাস প্রকম্পিত করে তুলেন। সুবহানাল্লাহ! (ওয়াফাইয়াতুল আ’ইয়ান ৫/৯০, ই’লামুল মুসলিমীন বিহুকূকি সাইয়্যিদিল মুরসালীন ১৫০ পৃষ্ঠা, দিমাউন আলা জিদারিস সুলতাহ ২৭৬ পৃষ্ঠা) (চলবে)
-হাফিয মুহম্মদ ইমামুল হুদা।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মানহানিকারীর একমাত্র শরঈ শাস্তি হচ্ছে ‘মৃত্যুদন্ড’ (৫)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাঝে ফানা ও বাক্বা সারা কায়িনাত (৪০)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাঝে ফানা ও বাক্বা সারা কায়িনাত (৩৯)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
এক নযরে সাইয়্যিদাতুন নিসায়ি আলাল আলামীন, আফযালুন নাস ওয়ান নিসা বা’দা রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আস সাবি‘আহ্ আত্বওয়ালু ইয়াদান আলাইহাস সালাম উনার মহাসম্মানিত পরিচিতি মুবারক
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত মহাপবিত্র নূরানী হুলিয়া মুবারক (৪র্থ পর্ব)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় নসবনামাহ্ মুবারক
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাঝে ফানা ও বাক্বা সারা কায়িনাত (৩৮)
১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ মাহফিল উনার ইন্তিজামকারী বিনা হিসাবে সম্মানিত জান্নাতে প্রবেশ করবেন
১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মানহানিকারীর একমাত্র শরঈ শাস্তি হচ্ছে ‘মৃত্যুদন্ড’ (৪)
১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক শানে ব্যবহৃত একখানা শব্দ মুবারক পবিত্র “নূরুল ফাতাহ” মুবারক উনার ব্যাপকতা ও বিশালতা
১২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারকে মানহানীকারীদের যুগে যুগে ভয়াবহ পরিণতি (৩১)
১১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাঝে ফানা ও বাক্বা সারা কায়িনাত (৩৭)
১১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)












