পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের আলোকে সম্মানিত যাকাত উনার আহকাম, মাসায়িল ও ফাযায়িল (৩৬)
, ৩রা শাবান শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ২৬ তাসি, ১৩৯০ শামসী সন , ২৪ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ খ্রি:, ১০ ফাল্গুন, ১৪২৯ ফসলী সন, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
ঙ) হালাল রিযিকের সু-বন্দোবস্ত হয়: যেহেতু যাকাত প্রদানের মাধ্যমে ধন-সম্পদে বরকত ও পবিত্রতা হাছিল হয়। তাই এই ধন-সম্পদে কোন ধরনের হারাম মিশ্রিত হওয়ার সুযোগ থাকে না। আর মহান আল্লাহ পাক তিনি যেহেতু কাউকে সাধ্যের অতিরিক্ত কোন কষ্ট দেন না তাই মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَمَنْ قُدِرَ عَلَيْهِ رِزْقُهٗ فَلْيُنفِقْ مِـمَّآ اٰتَاهُ اللهُ ۚ لَا يُكَلِّفُ اللهُ نَفْسًا اِلَّا مَآ اٰتَاهَا ۚ سَيَجْعَلُ اللهُ بَعْدَ عُسْرٍ يُّسْرًا ◌
অর্থ : “যার উপরে রিযিকের সংর্কীণতা এসেছে, তার উচিত মহান আল্লাহ পাক তিনি তাকে যা দিয়েছেন, তা থেকে সাধ্যমত ব্যয় করা। মহান আল্লাহ পাক তিনি যাকে যা দিয়েছেন, তদপেক্ষা বেশি কাউকে দায়িত্ব দেননা। অতিশীঘ্রই মহান আল্লাহ পাক তিনি কষ্টের পর সুখ দিবেন।” (পবিত্র সূরা ত্বলাক্ব শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৭)
সুতরাং মহান আল্লাহ পাক উনার প্রদত্ত যাকাত যারা যথাযথভাবে আদায় করবে তাদের হালাল রিযিকের সু-বন্দোবস্ত মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই করে দিবেন। নতুন নতুন হালাল রিযিকের পথ তাদের জন্যে উম্মুক্ত হতেই থাকবে।
চ) তক্বদীর পরিবর্তন হয় : দোয়া ও দানের দ্বারা তাকদীর পরিবর্তন হয়।
এ প্রসঙ্গে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের একটি ঘটনা বর্ণিত আছে। একজন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ফয়সালা হয়েছে আগামীকাল তিনি ইন্তিকাল করবেন। উনাকে তাকদীরের এই ফয়সালা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন উনার শেষ ইচ্ছা তিনি উনার আহলিয়ার হাতে রুটি খাবেন। কিন্তু তিনি বিয়ে-শাদী করেননি। যা হোক উনার শাদীর ব্যবস্থা হলো। উনার আহলিয়া রুটি তৈরী করলেন। তিনি যখন খেতে বসেছেন তখন একজন ভিক্ষুক এসে বললো আমি ক্ষুধার্ত; আমাকে কিছু খেতে দিন। উনার এই শেষ ইচ্ছার রুটি তিনি না খেয়ে ভিক্ষুককে দিয়ে দিলেন।
এখন রাত পার হয়ে গেল কিন্তু তিনি ইন্তিকাল করলেন না। দেখা গেল একটা বিরাট অজগর সাপ উনার বিছানার নিচে মরে পড়ে আছে এবং মুখে রুটির টুকরা। মহান আল্লাহ পাক তিনি কুদরতীভাবে সেই রুটির টুকরো দিয়ে অজগর সাপটিকে মেরে তাকদীরের যে মন্দ সেই মন্দটিকে ঘুরিয়ে ভাল ফয়সালা করে দিলেন। সুবহানাল্লাহ!
কাজেই একটি সাধারণ দানের ক্ষেত্রে (যা ছিল ঐচ্ছিক) যদি এমন হয় তাহলে ফরয দানের ক্ষেত্রে (যাকাত, ফিত্বরা, উশর) কিরূপ ফয়সালা হবে তা আমরা সহজেই অনুমান করতে পারি।
আবার যেহেতু সাধারণভাবে দোয়ার দ্বারা তাকদীর পরিবর্তন হয়। তাহলে একটি বিষয় চিন্তনীয় যে, যথাযথভাবে কেউ যদি যাকাত আদায় করে তাহলে যাকাতদাতার সুনিশ্চিতভাবেই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুয়া মুবারক লাভ করবে। কেননা, মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
خُذْ مِنْ اَمْوَالِـهِمْ صَدَقَةً تُطَهِّرُهُمْ وَتُزَكّيْهِمْ بِـهَا وَصَلِّ عَلَيْهِمْ اِنَّ صَلَاتَكَ سَكَنٌ لَّـهُمْ وَاللهُ سَـمِيْعٌ عَلِيْمٌ.
অর্থ : “(ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) আপনি উনাদের ধন-সম্পদ থেকে যাকাত, ফিত্বরা, উশর, দান, ছদক্বা, হাদিয়া ইত্যাদি গ্রহণ করুন, দয়া করে গ্রহণ করে এর মাধ্যমে প্রদানকারীদেরকে যাহিরী পবিত্রতার সাথে সাথে বাতিনী পবিত্রতা প্রদান করুন এবং আপনি উনাদের জন্যে দোয়া মুবারক করুন। নিশ্চয়ই আপনার দোয়া মুবারকই উনাদের জন্যে শান্তি, নিরাপত্তা এবং কামিয়াবী হাছিলের কারণ হবে। মহান আল্লাহ পাক তিনি সব কিছু শোনেন এবং সব কিছু জানেন।” (পবিত্র সূরা তওবা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১০৩)
তাহলে যাকাতদাতা কতটুকু প্রশান্তি লাভ করবে, তার কতটুকু তাকদীর পরিবর্তন ঘটবে, তা সহজেই বোধগম্য।
চ) মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা সন্তুষ্ট হবেন এবং অভিভাবক ও হিফাযতকারী হবেন : যথাযথভাবে যাকাত আদায়কারীর প্রতি মহান আল্লাহ পাক তিনি ও উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা সন্তুষ্ট হবেন। আর তাই উনারা উক্ত যাকাতদাতার অভিভাবক হয়ে হিফাযত করবেন। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
فَاَقِيْمُوا الصَّلٰوةَ وَاٰتُوا الزَّكٰوةَ وَاعْتَصِمُوْا بِاللهِ هُوَ مَوْلَاكُمْ ۖ فَنِعْمَ الْمَوْلٰى وَنِعْمَ النَّصِيْرُ ◌
অর্থ : “তোমরা নামায কায়িম করো, যাকাত আদায় করো এবং মহান আল্লাহ পাক উনাকে শক্তভাবে ধারণ করো। তিনিই তোমাদের মালিক। অতএব তিনি কতইনা উত্তম অভিভাবক এবং সবচেয়ে বড় অভিভাবক ও উত্তম সাহায্যকারী।” (পবিত্র সূরা হজ্জ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৭৮)
মহান আল্লাহ পাক তিনি ও উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা যাকাতদাতার অভিভাবক হবেন অর্থাৎ সমস্ত অনিষ্ট থেকে হিফাযত করবেন এবং গায়েবী মদদ করবেন।
যেখানে স্বাভাবিক দানশীল ব্যক্তির ব্যাপারে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اَبِـيْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ عَنِ النَّبِيّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ اَلسَّخِيُّ قَرِيْبٌ مِّنَ اللهِ قَرِيْبٌ مِّنَ الْـجَنَّةِ قَرِيْبٌ مِّنَ النَّاسِ بَعِيْدٌ مِّنَ النَّارِ وَالْبَخِيْلُ بَعِيْدٌ مِّنَ اللهِ بَعِيْدٌ مِّنَ الْـجَنَّةِ بَعِيْدٌ مِّنَ النَّاسِ قَرِيْبٌ مِّنَ النَّارِ وَلَـجَاهِلٌ سَخِيٌّ اَحَبُّ اِلَى اللهِ عَزَّ وَجَلَّ مِّنْ عَابِدٍ بَـخِيْلٍ.
অর্থ : “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, দানশীল মহান আল্লাহ পাক উনার নিকটে, পবিত্র জান্নাত উনার নিকটবর্তী, মানুষের নিকটবর্তী এবং জাহান্নাম থেকে দূরে। আর বখিল মহান আল্লাহ পাক থেকে দূরে, পবিত্র জান্নাত উনার থেকে দূরে, মানুষের থেকে দূরে এবং জাহান্নামের নিকটবর্তী। মহান আল্লাহ পাক উনার নিকটে বখিল আবিদ অপেক্ষা কম জ্ঞান সম্পন্ন দানশীল অধিক প্রিয়।” (তিরমিযী শরীফ : কিতাবু বাব্বি ওয়াছ ছলাত : বাবু মা-জা-য়া ফিস সাখায়ি : হাদীছ শরীফ নং ১৯৬১)
আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
اَلسَّخِىُ حَبِيْبُ اللهِ وَلَوْ كَانَ فَاسِقَا.
অর্থ : “দানশীল মহান আল্লাহ পাক উনার বন্ধু যদিও সে ফাসিক হোক না কেন।” সুবহানাল্লাহ!
তাহলে ফরয ইবাদত সম্মানিত যাকাতদাতা উনার প্রতি মহান আল্লাহ পাক তিনি কতটুকু ইহসান করবেন, কত বড় অভিভাবক হবেন, তা সহজেই বোধগম্য।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
অ্যান্টার্কটিকা নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় বিজ্ঞানীরা
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম (৪)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা অবশ্যই সত্যের মাপকাঠি; অস্বীকারকারীরা কাট্টা কাফির (১)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র দু‘আ বা মুনাজাত (১১তম অংশ)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম (৩)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুনিয়ার যমীনে অবস্থানকালীন সময়ে ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ যে রোযা মুবারক রাখতেন সে রোযা মুবারক মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ১২ই শরীফ উনার দিনে হওয়াটা ছিলো একটি বিরল ঘটনা (২)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত হাযির-নাযির শান মুবারক (১)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
প্রাণীর ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
আল্লাহওয়ালী মহিলা উনাদের তিনটি বৈশিষ্ট্য-
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)












