পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ থেকে বাল্যবিবাহের স্পষ্ট দলীল
, ০২ ছফর শরীফ, ১৪৪৭ হিজরী সন, ২৯ ছানী, ১৩৯৩ শামসী সন , ২৮ জুলাই, ২০২৫ খ্রি:, ১৪ শ্রাবণ, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
পবিত্র সূরা নিসা শরীফ উনার ৩নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক ইরশাদ মুবারক করেন-
وَإِنْ خِفْتُمْ أَلَّا تُقْسِطُوا فِي الْيَتَامَىٰ فَانكِحُوا مَا طَابَ لَكُم مِّنَ النِّسَاءِ مَثْنَىٰ وَثُلَاثَ وَرُبَاعَ
অর্থ: “আর যদি তোমরা ভয় করো যে, ইয়াতীম মেয়েদের হক্ব যথাযথভাবে পূরণ করতে পারবে না, তবে সেসব মেয়েদের মধ্যে থেকে যাদের ভালো লাগে তাদের বিয়ে করে নাও দুই, তিন, কিংবা চারটি পর্যন্ত। ” (সূরা নিসা: আয়াত শরীফ ৩)
এবার জানা দরকার ইয়াতীম কাকে বলে, লিসানুল আরব অভিধানে ইয়াতীমের সংজ্ঞায় বর্ণিত আছে-
اليتيم: الذي يموت أبوه حتى يبلغ الحلم، فإذا بلغ زال عنه اسم اليتيم، واليتيمة ما لم تتزوج، فإذا تزوجت زال عنها اسم اليتيمة.
অর্থ: ইয়াতীম এমন সন্তানকে বলা হয়, যার পিতা মারা গিয়েছে, বালেগ হওয়া অবধি সে ইয়াতীম হিসাবে গণ্য হবে, বালেগ হবার পর ইয়াতীম নামটি তার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। আর মেয়ে সন্তান বিয়ের পূর্ব পর্যন্ত ইয়াতীম বলে গণ্য হবে বিয়ের পর তাকে আর ইয়াতীম বলা হবে না। ” (লিসানুল আরব ১২/৬৪৫)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইয়াতীম প্রসঙ্গে বর্ণিত আছে,
قَالَ حضرت عَلِيُّ بْنُ أَبِي طَالِبٍ عليه السلام حَفِظْتُ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم "لاَ يُتْمَ بَعْدَ احْتِلاَمٍ
অর্থ: ইমামুল আউওয়াল মিন আহলে বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আমীরুল মু’মিনীন, হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে আমি হাদীছ শরীফ হিফয করে রেখেছি যে, বালেগ হওয়ার পর ইয়াতীম থাকে না। ” (আবু দাউদ শরীফ ২৮৭৫, সুনানে কুবরা বায়হাক্বী ৬/৫৭ হাদীছ ১১৬৪২, মুজামুল কবীর তাবরানী ৩৪২২, সুনানে ছগীর লি বায়হাকী ২০৪৯, শরহুস সুন্নহ ৯/২০০, ফতহুল বারী ২/৩৪৬, উমদাতুল ক্বারী ২১/১০৭, কানযুল উম্মল ৬০৪৬)
উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার সনদ উত্তম ও সকল রাবী ছেকাহ।
উপরোক্ত বর্ণিত পবিত্র আয়াত শরীফে “ইয়াতীম” ও তার ব্যাখ্যায় পবিত্র হাদীছ শরীফ এবং লুগাত থেকে যা বোঝা গেলো, ইয়াতীম মেয়েদের বিবাহ করা যাবে। আর মেয়েদের মধ্যে ইয়াতীম হচ্ছে সেই সব মেয়ে যারা এখনো বালেগ হয়নি।
এ বিষয়ে ছহীহ একখানা হাদীছ শরীফ আছে যেখানে ইয়াতীমকে বিবাহের বিষয়টা বলা হয়েছে-
عَنْ حضرت أَبِي هُرَيْرَةَ عليه السلام قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم"الْيَتِيمَةُ تُسْتَأْمَرُ فِي نَفْسِهَا فَإِنْ صَمَتَتْ فَهُوَ إِذْنُهَا وَإِنْ أَبَتْ فَلاَ جَوَازَ عَلَيْهَا".قَالَ وَفِي الْبَابِ عَنْ أَبِي مُوسَى وَابْنِ عُمَرَ ام المؤمنين وَعَائِشَةَ عليها السلام. قَالَ أَبُو عِيسَى حَدِيثُ أَبِي هُرَيْرَةَ حَدِيثٌ حَسَنٌ
অর্থ: হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেছেন, ইয়াতীম কুমারী থেকে তার বিবাহের ব্যাপারে সম্মতি গ্রহণ করতে হবে। যদি সে চুপ থাকে তবে তাই তার সম্মতি বলে গণ্য হবে। আর যদি অস্বীকার করে তবে তার উপর তা কার্যকারী হবে না।
এই বিষয়ে হযরত আবূ মূসা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার, হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম থেকেও পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণিত আছে। ইমাম হযরত আবূ ঈসা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত পবিত্র হাদীছ শরীফখানা হাসান। (ছহীহ আবু দাউদ ১৮২৫, তিরমিযি শরীফ ১১০৯)
সুতরাং প্রমাণিত হলো ইয়াতীম মেয়েকেও বিবাহ করা যাবে, আর ইয়াতীম হচ্ছে তারা যারা এখনো বালেগ হয়নি। এ প্রসঙ্গে আরো একটি ছহীহ হাদীছ শরীফ বর্ণিত আছে-
وَقَالَ أَحْمَدُ وَإِسْحَاقُ إِذَا بَلَغَتِ الْيَتِيمَةُ تِسْعَ سِنِينَ فَزُوِّجَتْ فَرَضِيَتْ فَالنِّكَاحُ جَائِزٌ وَلاَ خِيَارَ لَهَا إِذَا أَدْرَكَتْ. وَاحْتَجَّا بِحَدِيثِ ام المؤمنين عَائِشَةَ عليها السلام أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم بَنَى بِهَا وَهِيَ بِنْتُ تِسْعِ سِنِينَ
অর্থ: হযরত ইমাম আহমদ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ও হযরত ইসহাক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, যখন ইয়াতীম কন্যার বয়স নয় (৯) বৎসর হয় আর তাকে বিয়ে দিয়ে দেয়া হয় এবং সে সম্মতি দান করে তবে এই বিয়ে জায়িয। সাবালিকা হওয়ার পর আর তার ইখতিয়ার থাকবে না। উনারা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার ঘটনাকে দলীল হিসাবে পেশ করেন যে, যখন উনার বয়স মুবারক নয় (৯) বৎসর হয়, তখন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হুজরা শরীফ মুবারকে তাশরীফ গ্রহণ করেন। হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম বলেন-
وَقَدْ قَالَتْ حضرت ام المؤمين عَائِشَةُ عليها السلام إِذَا بَلَغَتِ الْجَارِيَةُ تِسْعَ سِنِينَ فَهِيَ امْرَأَةٌ
“মেয়েদের বয়স নয় (৯) বছর হলে সে মহিলা। ” (তিরমিযী ১১০৯, সুনানু কুবরা বায়হাক্বী ১৪২৫, ফতহুল বারী ২/৭১২)
নয় (৯) বছর হলে যদি মহিলা হয়, তবে তাকে বিবাহ করাও শরীয়তসম্মত। যা ছহীহ পবিত্র হাদীছ শরীফ থেকেই প্রমাণ হলো। এরপরও কোনো মুসলমান বাল্য বিবাহের বিরোধিতা করলে সে কি মুসলমান থাকবে?
-খাজা মুহম্মদ নূরউদ্দীন।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (৩)
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক- ছবি তোলা হারাম
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক করেন-
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (২)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যাকাত সম্পর্কিত আহকাম, মাসায়িল ও ফাযায়িল (২)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পর্দা পালন করা পুরুষ-মহিলা সবার জন্য ফরজ
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত মুবারক করা সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসীর জন্য ফরযে আইন
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে ছিরাতুল মুস্তাক্বীম উনার ছহীহ তাফসীর- ০১
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)












