পবিত্র তারাবীহ নামাযে ও অন্যান্য সময় পবিত্র কুরআন শরীফ খতম করে পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়িজ (১)
, ২৪ শা’বান শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ২৭ তাসি’, ১৩৯২ শামসী সন , ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রি:, ১০ ফালগুন, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার প্রাথমিক যুগে পবিত্র কুরআন শরীফ খতম বা তিলাওয়াত করে বা করিয়ে উজরত বা পারিশ্রমিক নেয়ার বৈধতা ছিল। পরবর্তীতে ইসলামী খিলাফত সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে এবং খিলাফতের পক্ষ হতে ইমাম ও কাজী নিযুক্ত করা হয়। সাথে সাথে নিযুক্ত ইমাম ও কাজী ছাহেবদের জন্য খিলাফতের পক্ষ হতে ভাতাও নির্ধারণ করা হয়। যেহেতু খিলাফতের পক্ষ হতে ভাতা নির্ধারণ করা ছিল, সেহেতু পবিত্র কুরআন শরীফ খতম বা তিলাওয়াত করে বা করিয়ে আলাদা উজরত বা পারিশ্রমিক নেয়াটা অপ্রয়োজনীয় হয়ে যায়।
তাই, উলামায়ে মুতাক্বদ্দিমীন বা পূর্ববর্তী ফক্বীহগণ পবিত্র কুরআন শরীফ খতম বা তিলাওয়াত করে বা করিয়ে উজরত বা পারিশ্রমিক নেয়াকে নাজায়িজ ফতওয়া দিয়েছিলেন। কিন্তু সময়ের আবর্তনে মুসলমানরা নিজেদের আমলের কারণে খিলাফত হতে মাহরূম হওয়ায় ইমাম ছাহেব, কাজী ছাহেব বা তা’লীমের কাজে মশগুল ব্যক্তিদের ভাতার বিষয়টি অনিশ্চিত হয়ে যায়। এহেন পরিস্থিতিতে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার প্রচার-প্রসার এবং দ্বীনী তা’লীম-তালকীনের বৃহত্তম স্বার্থে পবিত্র কুরআন শরীফ খতম বা তিলাওয়াত করে বা করিয়ে উজরত বা পারিশ্রমিক নেয়ার অতীব প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। কারণ, ভাতা নির্ধারিত না থাকায় দ্বীনী তা’লীমে নিয়োজিত ব্যক্তিদের সচ্ছলভাবে জীবন-যাপন কঠিন হয়ে পড়ে। এখন উজরত গ্রহণের বৈধতা না থাকলে দ্বীনী তা’লীম বন্ধ হয়ে যাবে।
তাই, নির্ভরযোগ্য সকল ফিক্বাহ ও ফতওয়ার কিতাবে একথাই উল্লেখ আছে যে, “উলামায়ে মুতাকাদ্দিমীন অর্থাৎ পূর্ববর্তী ফক্বীহ উনাদের মতে সকল ইবাদতের বিনিময়ে উজরত গ্রহণ করা নাজায়িয ছিলো। কিন্তু উলামায়ে মুতাআখখিরীন বা পরবর্তী ফক্বীহ উনারা সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার বৃহত্তর স্বার্থে ইজতিহাদ করতঃ ফতওয়া বা রায় দেন যে, সময় অথবা স্থান নির্ধারণ করার শর্তে পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত বা খতম করাসহ সর্বপ্রকার ইবাদতের বিনিময়ে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়িয। ” যেমন, ‘বাহরুর রায়েক’ কিতাবের ৫ম খ- ২২৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
اِنَّ الْـمُفْتٰى بِهٖ جَوَازُ الْاَخْذِ عَلَى الْقِرَائَةِ.
অর্থ: “নিশ্চয়ই ফতওয়াগ্রাহ্য মতে পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করে উজরত গ্রহণ করা জায়িয। ”
আযান, ইমামতি, মাদ্রাসায় শিক্ষকতা, পবিত্র কুরআন শরীফ খতম বা পাঠ ইত্যাদি ইবাদতের বিনিময়ে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করাকে উলামায়ে মুতাক্বাদ্দিমীন (পূর্ববর্তী আলিম) উনারা নাজায়িয বলেছেন আর উলামায়ে মুতাআখ্খিরীন (পরবর্তী আলিম) উনারা শর্ত স্বাপেক্ষে জায়িয বলেছেন, এর পরিপ্রেক্ষিতে কেউ বলতে পারেন আমরা কোন মত গ্রহণ করবো? প্রথমটি না দ্বিতীয়টি? মূলতঃ দ্বিতীয়টি অর্থাৎ উলামায়ে মুতাআখ্খিরীন উনাদের জায়িয হওয়ার মতকেই গ্রহণ করতে হবে। কেননা এটাই গ্রহণযোগ্য মত এবং এর উপরই ফতওয়া।
এ প্রসঙ্গে বাহ্রুর রায়িক কিতাবে উল্লেখ করা হয় যে,
اِنَّ الْـمُفْتٰى بِهٖ جَوَازُ الْاَخْذِ عَلَى الْقِرَائَةِ.
অর্থ: “পবিত্র কুরআন শরীফ পাঠ করে উজরত গ্রহণ করা জায়িয, এটা ফতওয়া গ্রাহ্য মত। ”
‘তাহ্তাবী’ কিতাবে উল্লেখ আছে,
اَلْـمُخْتَارُ جَوَازُ الْاِسْتِيْجَارِ عَلٰى قِرَائَةِ الْقُرْاٰنِ-
অর্থ: “পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করে উজরত গ্রহণ করা জায়িয হওয়াই (ফক্বীহ্ উনাদের) মনোনীত মত। ”
আর ফিক্বাহ্ শাস্ত্রের উছূল বা নিয়ম হলো- মতভেদযুক্ত মাসয়ালায় যে মতটাকে
وَبِهٖ يُفْتٰى- وَهُوَ الْـمُخْتَارُ- عَلَيْهِ الْفَتَاوٰى.
ইত্যাদি শব্দ দ্বারা তারজীহ বা প্রাধান্য দেওয়া হবে, সে মতটিই গ্রহণযোগ্য হবে। প্রাধান্যপ্রাপ্ত মাসয়ালার বিপরীত ফতওয়া দেওয়া সম্পূর্ণই নাজায়িয ও হারাম।
এ প্রসঙ্গে শরহে উকুদে রস্মুল মুফ্তী, ফতওয়ায়ে কোবরায় উল্লেখ করা হয় যে,
اِبْنُ حَجَرٍ اَلْـمَكِّىُّ قَالَ لَا يَـحِلُّ لَـهُمَا الْـحُكْمُ وَالْاِفْتَاءُ بِغَيْرِ الرَّاجِحِ لِاَنَّهٗ اِتِّبَاعُ لِّلْـهَوَاءِ وَهُوَ حَرَامٌ اِجْـمَاعًا.
অর্থ: “মুহাক্কিক ইবনে হাজর মক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, ইখ্তিলাফযুক্ত মাসয়ালায় প্রাধান্যপ্রাপ্ত মাসয়ালার বিপরীত ফতওয়া দেওয়া বা আমল করা সর্বসম্মতিক্রমে হারাম। কেননা এটা নফসের অনুসরণ। ”
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
হযরত আব্বাস ইবনে মিরদাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যাকাত সম্পর্কিত আহকাম, মাসায়িল ও ফাযায়িল (৪)
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
প্রাণীর ছবি তোলা হারাম ও নাফরমানীমূলক কাজ
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
অ্যান্টার্কটিকা নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় বিজ্ঞানীরা
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম (৪)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা অবশ্যই সত্যের মাপকাঠি; অস্বীকারকারীরা কাট্টা কাফির (১)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র দু‘আ বা মুনাজাত (১১তম অংশ)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম (৩)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুনিয়ার যমীনে অবস্থানকালীন সময়ে ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ যে রোযা মুবারক রাখতেন সে রোযা মুবারক মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ১২ই শরীফ উনার দিনে হওয়াটা ছিলো একটি বিরল ঘটনা (২)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)












