সুওয়াল - জাওয়াব:
প্রসঙ্গ: কারবালার ঘটনা নিয়ে হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনাকে দোষারোপ বা চু-চেরা (নাউযুবিল্লাহ)
, ২৯ যিলহজ্জ শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ০৮ ছানী, ১৩৯২ শামসী সন , ০৬ জুলাই, ২০২৪ খ্রি:, ২২ আষাঢ়, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
সুওয়াল:
ইমামুছ ছালিছ হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনার শাহাদাতকে কেন্দ্র করে অনেকে জলীলুল ক্বদর ছাহাবী হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে দোষারোপ করে থাকে। এটা কতটুকু শরীয়তসম্মত? দয়া করে জানাবেন।
জাওয়াব: (১ম অংশ)
কোন হযরত নবী-রসূল আলাইহিস্ সালাম উনাকে যেমন কোন ব্যাপারে দোষারোপ করা জায়িয নেই। তদ্রƒপ কোন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকেও কোন ব্যাপারে দোষারোপ করা জায়িয নেই।
এ বিষয়ে মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার কালাম পাক উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
وَلَا تَزِرُ وَازِرَةٌ وِّزْرَ أُخْرٰى
অর্থ: একজনের পাপের বোঝা অপরজন বহন করবেনা। (সূরা আনয়াম শরীফ: আয়াত শরীফ নং ১৬৪)
এ আয়াত শরীফ উনার তাফসীরে উল্লেখ করা হয়েছে যে, সন্তানের অপরাধের জন্য পিতাকে এবং পিতার অপরাধের জন্য সন্তানকে দায়ী করা বৈধ নয়। যেমন, কাবিলের অপরাধের জন্য হযরত আবুল বাশার আদম ছফিউল্লাহ আলাইহিস্ সালাম উনাকে, কেনানের অপরাধের জন্য হযরত নূহ আলাইহিস্ সালাম উনাকে দায়ী করা বৈধ নয়। তেমনি ইয়াযীদের অপরাধের জন্য হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে দায়ী করাও বৈধ নয়। বরং সম্পূর্ণ নাজায়িয, হারাম ও কুফরীর অন্তর্ভুক্ত ও জাহান্নামী হওয়ার কারণ।
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
لِيَغِيْظَبِهِمُ الْكُفَّارَ
অর্থ: কাফিররাই উনাদের (হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের) প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে থাকে। (সূরা ফাতহ শরীফ: আয়াত শরীফ নং ২৯)
আর পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ مَالِكِ بْنِ اَنَسٍ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ قَالَ مَنْ غَاظَهٗ أَصْحَابَ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَهُوَ كَافِرٌ
অর্থ: হযরত মালিক ইবনে আনাস রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন, যে ব্যক্তি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে, সে কাফির। ” (নাসীমুর রিয়াদ্ব)
এখানে একটা বিষয় মনে রাখা দরকার যে, আল্লাহ পাক-উনার রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার আদরের দৌহিত্র হযরত ইমামুছ ছালিছ আলাইহিস সালাম উনার মর্মান্তিক শাহাদাতে মুসলিম উম্মাহ’র অন্তর ব্যথাতুর হবে তা চরম সত্য কথা এবং এটি ঈমান মজবুতীর আলামতও বটে। কিন্তু এজন্য হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু যিনি আল্লাহ পাক-উনার রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার জলীলুল ক্বদর ছাহাবী উনাকে দোষারোপ করা কস্মিনকালেও শরীয়তসম্মত হতে পারে না।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اَبِـىْ سَعِيْدِنِ الْـخُدْرِىِّ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا تَسُبُّوْا اَصْحَابِـىْ فَلَوْ اَنَّ اَحَدَكُمْ اَنْفَقَ مِثْلَ اُحُدٍ ذَهَبًا مَا بَلَغَ مُدَّ اَحَدِهِمْ وَلَا نَصِيْفَهٗ.
অর্থ: হযরত আবু সায়ীদ খুদুরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, তোমরা আমার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে গালি দিওনা। কেননা তোমাদের কেউ যদি উহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণ আল্লাহ পাক-উনার রাস্তায় দান কর, তবুও ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের এক মূদ্ (১৪ ছটাক) বা অর্ধ মূদ্ (৭ ছটাক) গম দান করার ফযীলতের সমপরিমাণ ফযীলত অর্জন করতে পারবে না। ” (বুখারী শরীফ)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে যে-
عَنْ حَضْرَتْ عُوَيـْمِرِ بْنِ سَاعِدَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ اَنَّهٗ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ إِنَّ اللهَ اِخْتَارَنِيْ وَاخْتَارَلِـىْ أَصْحَابًا فَجَعَلَ لِىْ مِنْهُمْ وُزَرَاءَ وَأَنْصَارًا وَأَصْهَارًا فَمَنْ سَبَّهُمْ فَعَلَيْهِ لَعْنَةُ اللهِ وَالْـمَلٰئِكَةِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِيْنَ وَلَا يَقْبَلُ اللهُ مِنْهُمْ صَرْفًا وَّعَدْلًا.
অর্থ: হযরত উয়াইমির ইবনে সায়িদাহ রদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত রয়েছে, নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাকে মনোনীত করেছেন এবং আমার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে মনোনীত করেছেন এবং উনাদের মধ্য থেকে আমার কার্য সম্পাদনকারী, খিদমতকারী ও বৈবাহিক সূত্রের আত্মীয়বর্গ নির্ধারণ করেছেন। অতএব যারা উনাদেরকে গালি দিবে বা দোষারোপ করবে, তাদের প্রতি মহান আল্লাহ পাক উনার, উনার ফেরেশ্তা আলাইহিমুস সালাম উনাদের ও মানুষ সকলেরই লা’নত এবং তাদের কোন ফরয ও নফল ইবাদত মহান আল্লাহ পাক তিন কবুল করবেন না। ” (তবারানী শরীফ, হাকিম শরীফ)
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম (৩)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুনিয়ার যমীনে অবস্থানকালীন সময়ে ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ যে রোযা মুবারক রাখতেন সে রোযা মুবারক মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ১২ই শরীফ উনার দিনে হওয়াটা ছিলো একটি বিরল ঘটনা (২)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত হাযির-নাযির শান মুবারক (১)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
প্রাণীর ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
আল্লাহওয়ালী মহিলা উনাদের তিনটি বৈশিষ্ট্য-
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
পুরুষের জন্য কমপক্ষে একমুষ্ঠি পরিমাণ দাড়ি রাখা ফরয
১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম (২)
১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মুসলমানদের সবচেয়ে বড় শত্রু কাফির-মুশরিকরা (২)
১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পর্দা পালন করা নারী-পুরুষ সকলের জন্যই শান্তি ও পবিত্রতা হাছিলের কারণ
১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সীমালঙ্ঘনকারী কাফির-মুশরিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ করা মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশ মুবারক
১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)












