মন্তব্য কলাম
প্রসঙ্গঃ ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন
, ৪রা রজবুল হারাম শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ০৮ ছামিন, ১৩৯২ শামসী সন , ০৫ জানুয়ারী, ২০২৫ খ্রি:, ২০ পৌষ , ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) মন্তব্য কলাম

ভোক্তা অধিকার সুনিশ্চিত করতে বিদ্যমান আইন সংশোধন করে আরো যুগোপযোগী করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
কিন্ত কথা হল বেআইনী ও মহা আপত্তিকর আইন পাস হয় কীভাবে? অগ্রপশ্চাৎ বিবেচনা না করে শুধু সরকারের গায়ের জোরে একটি আইন জন্মলাভ করে কীভাবে?
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণের নামে অধিকার হরণের এ প্রহসন এতদিনই বা চলল কেন? আইনে যেভাবে ভোক্তাদের অধিকার কেড়ে নিয়ে অসৎ উৎপাদনকারী ও ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষা করা হয়েছে, তাতে ব্যবসায়িক অসততা ও ভেজালকেই উৎসাহিত করা হয়েছে। বরং ভোক্তাদের সঙ্গে প্রতারণার শামিল এ আইন না করাই বরং ভালো ছিল। প্রশ্ন উঠে তাহলে সরকারের পবিত্র দায়িত্ব কোনটি? ভোক্তাদের অধিকার দেখা, নাকি অসৎ ব্যবসায়ীদের রক্ষা করা? আইনের ৭২ ধারায় ওষুধবিষয়ক বিশেষ বিধান-(১) শিরোনামে বলা হয়েছে, ‘ঔষধে ভেজাল মিশ্রণ বা নকল ঔষধ প্রস্তুত করা হইতেছে কি না, অনুসন্ধান করিয়া উহা উদ্ঘাটন করিবার ক্ষমতা ও দায়িত্ব মহাপরিচালকের থাকিলেও উহাদের বিষয়ে এই আইনের অধীন কোনো বিচার বিভাগীয় কার্যক্রম গ্রহণ বা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করা যাইবে না। ’
অবাক ব্যাপার, কোনো রাষ্ট্র কীভাবে পারে তার নাগরিকের ন্যায়সংগত বিচার পাওয়ার অধিকার এভাবে কেড়ে নিতে? সম্প্রতি রিড ফার্মার প্যারাসিটামল সিরাপে বিষাক্ত উপাদান পাওয়া গেছে। সেই সিরাপ খেয়ে ২৫ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। কিডনি নষ্ট হয়ে অনেক শিশুর জীবন এখনো সংকটাপন্ন। এসব শিশুর মা-বাবারা কি তাদের শিশুহত্যার বিচার দাবি করতে পারবেন না? কোনো ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারবেন না?
অসাধু ব্যবসায়ীরা ভেজাল শিশুখাদ্য বা নকল ওষুধ বিক্রি করবেন, তা খেয়ে মারা যাবে কোলের শিশু, মা-বাবা বুকফাটা আর্তনাদ করবেন; কিন্তু কোনো প্রতিকার চাইতে পারবেন না, আদালতে মামলা করতে পারবেন না। কার্যত এমনই বিধান রাখা হয়েছে সম্প্রতি প্রণীত ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনে। সরকারের দৃষ্টিতে এসবই যদি হয় আইনী তাহলে বেআইনী কোনটি?
শুধু শিশুখাদ্য বা খাদ্যপণ্য নয়, বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যাবে না। কোনো বিক্রেতা পণ্যের উৎপাদন প্রক্রিয়ায় জড়িত না থাকলে তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না। সরাসরি কারও বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবেন না ভোক্তা; ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে লিখিত অভিযোগ করতে হবে। কিন্তু অভিযোগ দায়েরের ৯০ দিনের মধ্যে যদি অভিযোগপত্র দাখিল করা না হয়, তাহলে সে মামলা আদালতে আমলযোগ্য হবে না।
প্রত্যেক ভোক্তারই তার ভোগ্যপণ্যের কিছু তথ্য জানার অধিকার রয়েছে। এসব অধিকারকে সাধারণত চারভাগে ভাগ করা হয়। প্রথমত, নিরাপত্তার অধিকার। এটা ভোক্তার মৌলিক অধিকার। প্রত্যেক ভোক্তার অধিকার আছে ক্ষতিকারক পণ্যের প্রতিক্রিয়া থেকে নিজেকে রক্ষা করা। দ্বিতীয়ত, বাজারে যে পণ্যসামগ্রী ক্রয়-বিক্রয় হয় সেগুলো সম্পর্কে পর্যাপ্ত এবং সঠিক তথ্য জানার অধিকারও রয়েছে। প্রতিটি দ্রব্য কি কি উপাদানে প্রস্তুত, কিভাবে দ্রব্যটি ব্যবহার করতে হবে, এতে কোন ক্ষতিকারক উপাদান রয়েছে কিনা ইত্যাদি সম্পর্কে জানা ভোক্তার অধিকার। তৃতীয়ত, ভোক্তা স্বার্থ পরিপন্থী যে কোন দ্রব্য সম্পর্কে কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ পেশ করার অধিকার রয়েছে ভোক্তার। চতুর্থত, ন্যায্যমূল্যে পণ্যক্রয়ের অধিকার রয়েছে প্রত্যেক ভোক্তার। বাজারে প্রাপ্ত একাধিক পণ্য থেকে ন্যায্য মূল্যে পছন্দসই পণ্য ক্রয়ের অধিকার ভোগ করতে পারেন ভোক্তা। কিন্তু বাংলাদেশে ক্রেতার অধিকার বর্তমান অবস্থা পর্যালোচনা করলে প্রতীয়মান হয় যে, ক্রেতারা নিতান্তই অসহায় অবস্থায় কালাতিপাত করছে। পণ্যের ঊর্ধ্বমূল্য, নকল ও নিম্নমান সম্পন্ন পণ্য বিক্রয়। তাছাড়াও ব্যাপক ভেজাল, প্রতারণামূলক বিজ্ঞাপন, ত্রুটিপূর্ণ ওজন, পণ্যের মোড়কে খুচরা বিক্রয়মূল্য লেখা না থাকা, ক্ষতিকারক রাসায়নিক দ্রব্য মিশ্রিত পণ্য, অবৈধ প্রক্রিয়ায় পণ্য উৎপাদন, মেয়াদ উত্তীর্ণ পণ্য বাজার সয়লাব করে আছে।
এ সব পণ্য এখন ভোক্তাদের নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত কোন অধিকার এখানকার ক্রেতারা সঠিকভাবে ভোগ করতে পারে না। আমাদের দেশের বাজারগুলোতে নিম্নমানের ওষুধে সয়লাব। যা মানব স্বাস্থ্যের জন্য বিরাট ক্ষতিকর। তবুও ক্রেতারা এর মান কিংবা ক্ষতির পরিমাণ না জেনে সেবন করছে। জানার আগ্রহ থাকলেও জানার মতো কোন স্কোপ আমাদের দেশে সাধারণ মানুষের জন্য সৃষ্টি হয়নি। হোটেলগুলোতে প্রতিনিয়ত বাসি পচা ও বিষাক্ত খাবার খাওয়াচ্ছে। এর ফলে অনেকের শরীরেই মরণব্যাধি বাসা বেঁধেছে। অনেকের মৃত্যুও হয়েছে। সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশে ভোগ্যপণ্যের নকল প্রবণতা আশংকাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এতটা বিচক্ষণতার সাথে নকল করা হয় যে, সাধারণ ক্রেতাদের পক্ষে আসলটা নিরূপণ করা খুবই কঠিন হয়ে পড়ে। এক গবেষণায় দেখা যায় ঢাকা শহরে ৮৪টি ভোগ্যপণ্য সম্পূর্ণ কিংবা আংশিকভাবে নকল হচ্ছে। শুধু ভোগ্যপণ্য নয়, ওষুধ পর্যন্ত নকল হচ্ছে।
প্রসঙ্গতঃ সরকার যদি মনে করে যে, তার প্রশাসন দ্বারাই সে সফল হবে না- সে কথা ভুল বলার অবকাশ নেই। কারণ শুধু আইন প্রয়োগ করেই যে এ সমস্যার সমাধান হবে তা নয়। মূলতঃ এজন্য প্রয়োজন মন-মানসিকতার পরিবর্তন তথা ইসলামী আদর্শের প্রতিফলন।
-আল্লামা মুহম্মদ ওয়ালীউর রহমান।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সংবিধান, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য বিরোধী আপত্তিকর শব্দ প্রকাশের বিপরীতে মহান আল্লাহ পাক উনার ‘কুদরত’ ও ‘রহমত’ এ ছিফত মুবারক দ্বয়ের ব্যাপক প্রচলন ঘটাতে হবে
১১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
দেশে ভেজাল ওষুধের দৌরাত্ম বাড়ছেই। ১২ হাজার কোটি টাকার ওষুধের এক-দশমাংশই নিম্নমানের। ভেজাল ওষুধে বহুবিধ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। সরকার এখনই প্রতিরোধ না করলে দেশের জনস্বাস্থ্য মহাবিপর্যয়ের মুখে পড়বে।
১০ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
দেশের লবণচাষীরা হাজার কোটি টাকার লবণ আমদানী ঠেকিয়ে রেখেছে লবণচাষীদের উপর বিভিন্ন চাপ, বাধা ও নিয়ন্ত্রণ তৈরী করছে সিন্ডিকেট অপরদিকে দেদারছে নিষিদ্ধ ও ক্ষতিকর সোডিয়াম সালফেট আমদানী করে লবণ বলে বাজারজাত করা হচ্ছে
০৯ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পবিত্র দ্বীন ইসলাম পালন করা কী অপরাধ? সংবিধান কী পবিত্র দ্বীন ইসলাম পালনের সুযোগ দেয়নি? পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের মধ্যে কী বেপর্দা ও ছবির বিরুদ্ধে বলা হয়নি? তাহলে কী রাষ্ট্রযন্ত্রের উচিত নয়- ছবি না তুলে, বেপর্দা না হয়ে দ্বীনদার মুসলমানরা যাতে সাংবিধানিক সুযোগ পায় সে অধিকার সংরক্ষিত করা। প্রয়োজনে সংবিধান সংশোধন করা।
০৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
নিজেদের জীবন পঙ্গু করে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে যারা ক্ষমতায় বসিয়েছে, সেই ছাত্র-জনতা এখন চিকিৎসা পাচ্ছে না। তাদের বিক্ষোভ করতে হচ্ছে, রাস্তায় নামতে হচ্ছে! নিয়মের জটিলতায় ক্ষতিপূরণ পেতে দেরি আহত ও নিহতদের পরিবারের লালফিতায় আটকা গণঅভ্যুত্থানে আহতদের ক্ষতিপূরণ
০৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
নিজেদের জীবন পঙ্গু করে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে যারা ক্ষমতায় বসিয়েছে, সেই ছাত্র-জনতা এখন চিকিৎসা পাচ্ছে না। তাদের বিক্ষোভ করতে হচ্ছে, রাস্তায় নামতে হচ্ছে! এর চেয়ে দুঃখজনক ঘটনা এর চেয়ে বড় বিশ্বাসঘাতকতা এই অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য আর কি হতে পারে?
০৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
প্রসঙ্গঃ সম্মানিতা হুর, গেলমানের আলোচনায় কুণ্ঠা। তার বিপরীতে অশ্লীল শব্দ আওড়াতে স্বতঃস্ফূর্ততা হুর, গেলমান লাভের মানসিকতা পোষণের পরিবর্তে বিবস্ত্রপনায় বিপর্যস্থ হওয়া তথা চরিত্রহীনতায় পর্যবসিত হওয়া। নাঊযুবিল্লাহ!
০৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সঠিক পরিসংখ্যান ও জরিপের অভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না সরকার সঠিক পরিসংখ্যান ছাড়া শুধু অর্থনীতিই নয় কোনো খাতেরই সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও পরিকল্পনা সম্ভব নয় বাজার নিয়ন্ত্রণে চাই সঠিক ও নির্ভরযোগ্য তথ্য-উপাত্ত জরিপ তথা পরিসংখ্যা
০৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
খাবারের নামে আমরা কী খাচ্ছি? ভেজাল খাবারে দেশব্যাপী চলছে নীরব গণহত্যা। ভেজাল দমনে ইসলামী মূল্যবোধের প্রতিফলন ঘটাতে হবে।
০৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদে মুজাদ্দিদে আ’যম সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার রোবে, দোয়ার বরকতে- কুদরতীভাবে কমে যাচ্ছে ডলারের আধিপত্য বাংলাদেশের রিজার্ভ ডলারে রাখা উচিৎ নয়- এতে লাভ আমেরিকার মুসলিম বিশ্বে অভিন্ন মুদ্রা ব্যবস্থা বিশেষত মূল্যহীন কাগজী মুদ্রা বাদ দিয়ে সুন্নতী দিনার-দিরহাম মুদ্রা চালু করা আবশ্যক ইনশাআল্লাহ (চতুর্থ পর্ব)
০২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
নারীরা এখন প্রকাশ্যে সিগারেট থেকে সব ধরণের মাদক সেবন ও বিকি-কিনিতে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে গেছে। রক্ষা পেতে নারীদের জন্য সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম উনার ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার করার বিকল্প নেই
০১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ভীনদেশী অ্যাপের ফাঁদে পড়ে বিপথে যাচ্ছে দেশের তরুণ প্রজন্ম বাড়ছে নারীপাচার, দেশে বাড়ছে অশ্লীলতা ও পর্ণোগ্রাফির প্রচার কিশোর-কিশোরীদের টার্গেট করেই একটি মহল এসব অপসংস্কৃতির প্রচার ও প্রসার ঘটাচ্ছে এসব অপসংস্কৃতি নির্মূলে দ্বীন ইসলামই একমাত্র সমাধান
৩০ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)