বিছাল শরীফের পরও সম্মানিত শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার প্রতি আদবের অনন্য ও নজীরবিহীন দৃষ্টান্ত
, ১৮ যিলক্বদ শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ১৮ ছানী আ’শার, ১৩৯২ শামসী সন , ১৭ মে, ২০২৫ খ্রি:, ৪ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
ক্বলবের ক্বিবলা হচ্ছেন- “শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা। ” উনার ফায়েজের মাধ্যমে মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুহব্বত ও মা’রিফাত মুবারকের ফায়িজে মুরীদ ফায়েজিয়াব বা ফায়েজপ্রাপ্ত হয়, ক্বলব ও অন্যান্য লতীফাসমূহে যিকির জারী হয়। অতঃপর ক্বলবসহ (অন্তর) সমস্ত লতীফা পরিশুদ্ধ হয় এবং ইখলাছ পয়দা হয়। আর তখনই মুরীদের পক্ষে গাইরুল্লাহ মুক্ত হয়ে একমাত্র মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য ইবাদত করা সহজ ও সম্ভব হয়।
উল্লেখ্য, নামাজের ক্বিবলা বা কা’বা শরীফ উনার ন্যায় ক্বিবলায়ে কুলূব বা ক্বলবের ক্বিবলার হুরমত রক্ষা করা তথা তা’যীম-তাকরীম করা সর্বাবস্থায় মুরীদের জন্য ফরজের অন্তর্ভুক্ত। সেটা উনার উপস্থিতিতে হোক কিংবা অনুপস্থিতিতে হোক। জীবিত অবস্থায় হোক কিংবা ইন্তিকালে হোক।
হুজ্জাতুল ইসলাম, হযরত ইমাম গাযযালী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, “যদি কোন ব্যক্তি কামিল শায়েখ উনার সন্ধান পায় তখন তার উচিত কা’বা শরীফ উনার ন্যায় উনাকে তা’যীম করা। ” (সিরাতুল মুস্তাকিম)
পূর্ববর্তী আউলিয়ায়ে কিরাম, ইমাম-মুজতাহিদ, যারা মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চরম-পরম সন্তুষ্টি-রেযামন্দী, মা’রিফত-মুহব্বত মুবারক হাছিল করেছেন উনাদের আমল-আক্বীদা সেরূপই ছিলো।
পূববর্তী যামানায় অসংখ্য-অগণিত হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম বিগত হয়েছেন যারা কোন সময় নিজ শায়েখের অবস্থান স্থলের দিকে পা দেয়া তো দূরের কথা পিঠ পর্যন্ত দেননি। এমনকি ইন্তিকালের পরেও উনাদের মাথা মুবারক শায়েখের অবস্থান স্থলের দিকেই নিবদ্ধ ছিলো। সুবহানাল্লাহ!
এ প্রসঙ্গে দু-একটি উদাহরণই যথেষ্ট বুঝার জন্য। কুতুবুল ইরশাদ, হযরত রূহুল আমীন বশিরহাটী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, একবার আমিসহ আমার শায়েখ, আমিরুশ শরীয়ত ওয়াত তরীক্বত, হযরত আবু বকর ছিদ্দীক্বী ফুরফুরাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ও উনার আরো অনেক মুরীদ-মু’তাক্বিদ আজমীর শরীফ জিয়ারতের উদ্দেশ্যে গেলাম। তারাগড় পাহাড়ে উঠে শহীদগণের মাজার শরীফ জিয়ারত করলাম। সেখানে একটি মাজার শরীফ দেখতে পেলাম যে, সেই মাজার শরীফে যিনি শায়িত আছেন; উনার মাথা মুবারক উনার নিজ শায়েখ উনার পা মুবারকের দিকে ছিলো। বাদশাহ আওরঙ্গজেব দুই-তিনবার মাজার শরীফটি উত্তর-দক্ষিণ লম্বা করে দিয়েছিলেন আর প্রত্যেকবার মাজার শরীফ হতে আওয়াজ আসত, হে বাদশাহ! হাশরের ময়দানে আমার জাওয়াব আমিই দিবো। আপনি কেন আমাকে বিরক্ত করছেন?
আরো বর্ণিত রয়েছে, কুতুবুল ইরশাদ, হযরত রূহুল আমীন বশিরহাটী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আরো বলেন, মাহবুবে ইলাহী, সুলত্বানুল আরিফীন, হযরত নিজামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মাজার শরীফের পূর্ব দিকে একজন মহান আল্লাহ পাক উনার ওলী উনার মাজার শরীফ দেখতে পেলাম, উনার মাথা মুবারকও উনার নিজ শায়েখের পা মুবারকের দিকে পূর্ব-পশ্চিমে রয়েছে। ” সুবহানাল্লাহ! (ফুরফুরা শরীফের হযরত পীর ছাহিব ক্বিবলা উনার বিস্তারিত জীবনী ৮২, ৮৩)
এমনকি আমাদের দেশেও এরূপ অনেক ঘটনার অভাব নেই। সিলেটের অদূরে মুরারবন্দ এলাকায় সাইয়্যিদ নাছীরুদ্দীন সিপাহসালার রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মাজার শরীফ অবস্থিত। যিনি হযরত শাহজালাল ইয়ামেনী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার প্রধান খলীফা। উনার মাজার শরীফ পূর্ব-পশ্চিম অবস্থায় আজও বিরাজমান। উনাকেও উত্তর-দক্ষিণ করে কবরে নামানো হয়েছিলো। কিন্তু রাখার সাথে সাথে পূর্ব-পশ্চিম দিকে হয়ে যায়। অনেক চেষ্টা করেও দক্ষিণ দিকে করা সম্ভব হয়নি। অগত্যা উনাকে সেভাবেই রাখা হয়েছে। সুবহানাল্লাহ!
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন-
وَلِكُلِّ وُجْهَةٌ هُوَ مُوَلِّيْهَا.
অর্থ: প্রত্যেকেরই একটি ক্বিবলা রয়েছে, যেদিকে সে রুজু হয়। (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৪৮)
কাজেই, শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা হচ্ছেন- ক্বিবলায়ে কুলুব তথা অন্তরের ক্বিবলা। নামাজের ক্বিবলার ন্যায় যিনি অন্তরের ক্বিবলা উনার প্রতিও তা’যীম-তাকরীম, আদব বজায় রাখা ফরজ। সালিক বা মুরীদ স্বীয় শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার দিকে রুজু থেকেই যিকির-ফিকির, তাসবীহ-তাহলীল, দোয়া-দুরূদ শরীফ, খানা-পিনা ইত্যাদি সকল কাজ সম্পাদন করবে।
মোটকথা, মুরীদের চাওয়া-পাওয়া আপন শায়েখ তিনি। উনার দিকেই অন্তরের রোখকে সবসময় নিবিষ্ট রাখতে হবে। (দলীলসমূহ: ফতওয়ায়ে শামী, দুররুল মুখতার, আইনুল ইয়াক্বীন, আল মাআরিফুল মুহম্মদিয়্যাহ, ক্বলাদাতুল জাওয়াহির, তাহযীবুর রিফাইয়্যাহ, মাওসূআতুর রদ ‘আলাছ ছূফিয়্যাহ, বেহেশতী জেওর- পুরাতন ছাপা ইত্যাদি)
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
অ্যান্টার্কটিকা নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় বিজ্ঞানীরা
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম (৪)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা অবশ্যই সত্যের মাপকাঠি; অস্বীকারকারীরা কাট্টা কাফির (১)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র দু‘আ বা মুনাজাত (১১তম অংশ)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম (৩)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুনিয়ার যমীনে অবস্থানকালীন সময়ে ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ যে রোযা মুবারক রাখতেন সে রোযা মুবারক মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ১২ই শরীফ উনার দিনে হওয়াটা ছিলো একটি বিরল ঘটনা (২)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত হাযির-নাযির শান মুবারক (১)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
প্রাণীর ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
আল্লাহওয়ালী মহিলা উনাদের তিনটি বৈশিষ্ট্য-
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)












