বিধর্মীদের পোশাক পরিধান করা সর্বাবস্থায় হারাম
, ১৪ ছফর শরীফ, ১৪৪৭ হিজরী সন, ১০ ছালিছ, ১৩৯৩ শামসী সন , ০৯ আগস্ট, ২০২৫ খ্রি:, ২৬ শ্রাবণ, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) সুন্নত মুবারক তা’লীম
বিজাতীয়দের কতিপয় পোশাকের মধ্যে অন্যতম হলো শার্ট, প্যান্ট, জিন্স, হিন্দুদের পাঞ্জাবী, ধুতী, কোর্ট ও টাই ইত্যাদি এবং যেসব পোশাক বিধর্মী-বিজাতীয়দের সাদৃশ হয় তা পরিহার করা মুসলমানদের জন্য অপরিহার্য। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ
অর্থ: যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে মিল রাখে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত। (আবু দাউদ শরীফ)
সম্মানিত সুন্নতী পোশাক হচ্ছে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার শিয়ার বা নিদর্শন। আর এজন্য সম্মানিত নিদর্শনসমূহকে অমান্য করা যাবে না বা অবহেলা ও অসম্মান করা যাবে না। কেননা, এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تُحِلُّوا شَعَائِرَ اللَّهِ
অর্থ: হে ঈমানদারগণ! তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনার শিয়ার বা নিদর্শনসমূহকে অসম্মান করো না অর্থাৎ সম্মান করো। (পবিত্র সূরা মায়িদাহ শরীফ- পবিত্র আয়াত শরীফ ০২)
সুতরাং পোশাক পরিধান করার মাধ্যমে দৃশ্যত একজন লোককে মুসলমান হিসেবে এবং ঈমানদার হিসেবে ও সম্মানিত ব্যক্তি হিসেবে চেনা যায়। যদি তাই হয় তাহলে মুসলমান সম্মানিত দ্বীন ইসলামী বা মহাসম্মানিত সুন্নতী পোশাক বাদ দিয়ে অন্য কোন পোশাক পরতে পারে না।
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম এসেছেন নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে। উনি যে পোশাক মুবারক পরিধান করেছেন তা-ই তো মহাসম্মানিত সুন্নতী পোশাক অর্থাৎ মুমিন মুসলমানদের পোশাক। এজন্য কখনও শার্ট প্যান্ট বা অন্যান্য পোশাক যা সাধারণত কাফির মুশরিক ও বেদ্বীন বদদ্বীনরা পরে থাকে, তা পরিধান করা যাবে না।
কাজেই, বেদ্বীন বদদ্বীন ও তাদের সমগোত্রীয়দের পোশাক পরিধান করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
কেননা, মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
مَا آتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانتَهُوا وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ
অর্থ: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তোমাদের জন্য যা নিয়ে এসেছেন তোমরা তা দৃঢ়ভাবে আকড়ে ধরো অর্থাৎ পালন করো আর যা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন তা থেকে বিরত থাকো। এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করো। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি কঠিন শাস্তিদাতা। (পবিত্র সূরা হাশর শরীফ-পবিত্র আয়াত শরীফ ৭)
মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنكُمْ
অর্থ: হে ঈমানদারগণ! তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনাকে, উনার মহাসম্মানিত রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে এবং উলিল আমর অর্থাৎ হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম, তাবিয়ীন, তাবে তাবিয়ীন, আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনাদেরকে অনুসরণ করো। ”(পবিত্র সূরা নিসা শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৯)
সুতরাং একজন মুসলমান সে পুরুষ হোক বা মহিলা হোক তাকে অবশ্যই মহাসম্মানিত সুন্নতী পোশাক পরতে হবে, যা নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পরিধান করেছেন এবং উনার নির্দেশ মুবারকে ও অনুসরণে হযরত উম্মাহাতুল মুমিনীন আলাইহিন্নাস সালাম ও হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারাসহ হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারাও পরিধান করেছেন। সুবহানাল্লাহ!
সম্মানিত সুন্নতী পোশাকের ক্ষেত্রে কিছু বিষয় লক্ষনীয় ও পার্থক্য
দৈনন্দিন জীবনে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি প্রায় সময় ইযার বা সেলাইবিহীন লুঙ্গি এবং রিদা বা চাদর মুবারক ব্যবহার করতেন। সুবহানাল্লাহ!
পোশাকের ক্ষেত্রে কতিপয় বিষয় খেয়াল রাখতে হবে: যথা-
১. পোশাক সতর/আব্রু আবৃতকারী, শালীন ও পরহেযগারী হতে হবে।
২. পোশাক-পরিচ্ছদ টাইট ফিট বা আঁটসাঁট (চোস প্যান্ট, পাতলা কাপড় যা পড়ার পরও সতর দেখা যায়) হওয়া চলবে না অর্থাৎ পোশাক হতে হবে ঢিলে ঢালা। পোশাক ঢিলে ঢালা হতে হবে।
৩. অহংকারী পোশাক পরা যাবেনা।
৪. পুরুষদের জন্য জাফরানী রং, রেশমী কাপড়, গাঢ় লাল, হলুদ পোশাক পরা যাবেনা।
৫. লোক দেখানোর জন্য পোশাক পরা যাবেনা।
৬. এমন পোশাক পরিধান করা যাবে না, যে পোশাক পরিধান করার পরও লজ্জাস্থানের অবয়ব বোঝা যায়। কারণ ওই সব লোকদের উপর অভিসম্পাত যারা পোশাক পরার পরও বিবস্ত্র থাকে।
৭. এমন পাতলা বা ফিনফিনে কাপড় পড়া যাবে না যে কাপড় পরার পরও শারীরিক গঠন দেখা যায় বা বুঝা যায়।
৮. মহিলারা পুরুষের এবং পুরুষ মহিলাদের পোশাক পরিধান করতে পারবে না।
৯. পুরুষের জন্য স্বর্ণের অলঙ্কার পরা যাবে না: স্বর্ণ পুরুষের জন্য হারাম।
১০. পুরুষের জন্য রেশমি কাপড় পরিধান করা হারাম।
১১. বেদ্বীন বদদ্বীন ইহুদী নাছারা অর্থাৎ বিধর্মী - বিজাতীয়দের কোন পোশাকই পরিধান করা যাবে না। বিধর্মীদের মত পোশাক পরা যাবেনা। বিধর্মী বিজাতির সাথে সাদৃশ্য হয় এমন পোশাক পরা যাবেনা।
১২. বেশি চাকচিক্য তথা দুনিয়াবী কোন পোশাক পরিধান করা যাবে না, যাতে বিপরীত লিঙ্গকে আকৃষ্ট করে; মহিলা-পুরুষ উভয়ই পর মহিলা বা পর পুরুষকে আকৃষ্ট করার জন্য বেশি চাকচিক্য পোশাক পরিধান করা হারাম।
১৩. পুরুষের টাখনুর নিচে পোশাক পরিধান করা যাবে না।
১৪. সৌন্দর্য বৃদ্ধিকারক ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পোশাক পরিধান করতে হবে।
১৫. এককথায় সর্ববস্থায় সম্মানিত সুন্নতী পোশাক দায়িমীভাবেই পরিধান করতে হবে।
-আহমদ হুসাইন
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ওযূ করার খাছ সুন্নতী তারতীব মুবারক ও মাসয়ালা-মাসায়িল (১)
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইস্তিঞ্জার আদব ও ঢিলা-কুলুখ ব্যবহার করা সম্পর্কে (২)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ইস্তিঞ্জার আদব ও ঢিলা-কুলুখ ব্যবহার করা সম্পর্কে (১)
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
প্রয়োজনে ছুরি এবং চাকু দিয়ে খাবার কেটে খাওয়াও মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
জুতা-মোজা ঝেড়ে পরিস্কার করে পরিধান করা খাছ সুন্নত মুবারক
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
চামড়ার মোজা পরিধান করা খাছ সুন্নত মুবারক
৩০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
খাছ সুন্নতী না’লাইন বা স্যান্ডেলের বর্ণনা (০৩)
২৯ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
খাছ সুন্নতী না’লাইন বা স্যান্ডেলের বর্ণনা (০২)
২৮ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
খাছ সুন্নতী না’লাইন বা স্যান্ডেলের বর্ণনা (০২)
২৮ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী খাবার ‘পনির’
২৮ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
খাছ সুন্নতী না’লাইন বা স্যান্ডেলের বর্ণনা (০১)
২৭ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মহাসম্মানিত খাছ সুন্নতী বিছানা মুবারক উনার বর্ণনা
২৬ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)












