ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (১৬)
, ২৪ শাওওয়াল শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ২৪ হাদি আশির, ১৩৯২ শামসী সন , ২৩ এপ্রিল, ২০২৫ খ্রি:, ১০ বৈশাখ, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) ইতিহাস
শয়তান যে মানুষকে নেক সুরতে ধোঁকা দেয়, এ বিষয়টি ভালভাবে অনুধাবন করেছিল শয়তানের অনুচর ইহুদী এবং খ্রিষ্টানরা। মুসলমানদের সোনালী যুগ এসেছিল শুধু ইসলামের পরিপূর্ণ অনুসরণের ফলে। শয়তানের চর ইহুদী খ্রিষ্টানরা বুঝতে পেরেছিল মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ, অনৈক্য, সংঘাত সৃষ্টি করতে পারলেই ইসলামের জাগরণ এবং বিশ্বশক্তি হিসেবে মুসলমানদের উত্থান ঠেকানো যাবে। আর তা করতে হবে ইসলামের মধ্যে ইসলামের নামে নতুন মতবাদ প্রবেশ করিয়ে। শুরু হয় দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা; যার মূলে থাকে খ্রিষ্টীয় ব্রিটিশ সম্রাজ্যবাদ। জন্ম হয় ওহাবী মতবাদের। ওহাবী মতবাদ সৃষ্টির মূলে থাকে একজন ব্রিটিশ গুপ্তচর হেমপার। মিশর, ইরাক, ইরান, হেজাজ ও তুরস্কে তার গোয়েন্দা তৎপরতা চালায় মুসলমানদের বিভ্রান্ত করার জন্য ÒConfession of British Spy and British enmity against IslamÓ গ্রন্থ হচ্ছে হেমপারের স্বীকারোক্তি মূলক রচনা। যা মূল গ্রন্থ থেকে ধারাবাহিকভাবে অনুবাদ প্রকাশ করা হবে। ইনশাআল্লাহ!
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
একবার আমি তাকে বললাম, ‘নামায ফরয নয়।’ সে বললো কি করে নামায ফরয নয়?’ আমি বললাম, মহান আল্লাহ পাক কুরআন শরীফে বলেছেন, ‘তোমরা নামাযের মাধ্যমে আমাকে স্মরণ করো।’ (পবিত্র সূরা ত্ব-হা শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ১৪)
সুতরাং নামাযের উদ্দেশ্য মহান আল্লাহ পাক উনাকে স্মরণ করা। সুতরাং নামায না পড়েও মহান আল্লাহ পাক উনাকে স্মরণ করতে পারো। [এ বক্তব্যও কুফরী। এখানে সঠিক ব্যাখ্যা হচ্ছে যে, নামাযের মাধ্যমে মহান আল্লাহ পাক উনার দায়িমী হুযূরী হাছিল হয়। যেমন হাদীছ শরীফে বর্ণিত হয়েছে, “নামায হচ্ছে মু’মিনদের মি’রাজ।”]
নজদের মুহম্মদ বললো, হ্যাঁ আমি শুনেছি কিন্তু মানুষ নামাযের পরিবর্তে আল্লাহ পাক উনার যিকির করে।
(হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, ‘নামায হলো দ্বীন ইসলামের স্তম্ভ। যে নামায পড়লো সে ইসলাম উনাকে ক্বায়িম রাখলো। আর যে নামায পড়লো না সে ইসলাম উনাকে ধ্বংস করার কাজে সাহায্য করলো।” অন্য হাদীছ শরীফে আছে, ‘তোমরা সেভাবে নামায আদায় করো, যেভাবে আমাকে নামায পড়তে দেখো।’ নামায না পড়া কবীরাহ গুনাহ। আর নামায সঠিকভাবে আদায় করলে হৃদয়ের পবিত্রতা থাকে।)
নজদের মুহম্মদের কাঁধ থেকে আমি ধীরে ধীরে বিশ্বাসের চাদর সরিয়ে ফেলতে থাকি। একে একে তার মনে জিহাদ সম্পর্কে বিভ্রান্ত সৃষ্টি, মদ-শরাব জায়েজ করা, মুতা বিবাহ জায়েজসহ হালাল-হারাম একাকার করা, ফরয রোযা ও নামায থেকে বিচ্যুতকরণ, ছাহাবীদের সম্পর্কে কুফরী আক্বীদা ও বিরূপ ধারণা দিতে সফল হয়েছি। সর্বশেষ ঈমান থেকে চূড়ান্তরূপে সরিয়ে দিতে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্পর্কে নজদের মুহম্মদের সাথে বিতর্কে লিপ্ত হলাম। নজদের মুহম্মদ বললো, ‘এখন থেকে তুমি যদি এ বিষয়ে আমার সাথে আলাপ করো তাহলে আমাদের বন্ধুত্ব নষ্ট হয়ে যাবে।’
এরপর থেকে ভয়ে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্পর্কে কোন আলাপ-আলোচনা করা বাদ দিলাম যাতে আমার সব চেষ্টা বিফলে না যায়। অতঃপর আমি ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করি, আমি নজদের মুহম্মদকে সুন্নী ও শিয়া মতের বাইরে নতুন একটি মতে চলতে উপদেশ দেই। সে আমার এই নতুন ধারণাটাকে পছন্দ করলো, বস্তুত: সে ছিলো একজন অহংকারী ব্যক্তি। সাফিয়াকে ধন্যবাদ, তার সাহায্যেই আমি নজদের মুহম্মদের জীবনকে থামিয়ে দিতে পেরেছি।
কোন এক উপলক্ষে আমি তাকে বললাম, ‘আমি শুনেছি যে, আমাদের নবী হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে পরস্পর ভাই বলে তৈরী করেছিলেন। বিষয়টি কি সত্যি? সে সম্মতি প্রকাশ করলো। আমি নজদের মুহম্মদের কাছে জানতে চাইলাম, এই ইসলামিক নীতি কি স্থায়ী ছিলো, না অস্থায়ী। সে ব্যাখ্যা করে বললো, এটা ছিলো একটা স্থায়ী ব্যবস্থা। কেননা, ক্বিয়ামত দিবস পর্যন্ত আমাদের নবী হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যা হালাল করেছেন তা হালাল থাকবে আর যা হারাম করেছেন তা হারাম থাকবে। তখন আমি তাকে আমার ভাই হবার আহ্বান করলাম এবং আমরা পরস্পর ভাই হয়ে রইলাম। সেদিন থেকে আমি তাকে কখনও ত্যাগ করিনি। আমরা একে অপরের সঙ্গী হয়ে রইলাম। এমনকি সফরেও। সে ছিলো আমার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আমার জীবনের অনেক মূল্যবান দিনগুলো ব্যয় করে যে চারা বপন করেছিলাম এখন সে ফল দিতে শুরু করেছে। নজদের মুহম্মদের সঙ্গে আমার (হেমপার) যখন খুব ঘনিষ্ঠতা ছিলো, সেই সময়ে একদিন লন্ডন থেকে একটি বার্তা পেলাম যে, আমাকে কারবালা এবং নাজফের উদ্দেশ্যে যাত্রা করতে হবে। কারবালা এবং নাজফ হচ্ছে শিয়াদের ধর্মীয় জ্ঞান এবং আধ্যাত্মিকতার জন্য দু’টি গুরুত্বপূর্ণ শহর।
সুতরাং নজদের মুহম্মদের সাহচর্য ত্যাগ করে আমাকে বসরা ছাড়তে হলো। তথাপি আমি খুব খুশি এবং নিশ্চিত ছিলাম এই কারণে যে, নৈতিকভাবে অধঃপতিত এবং মূর্খ এই লোকটি (নজদের মুহম্মদ) একটা নতুন ফিরক্বা তৈরী করতে যাচ্ছে, যা ইসলামকে ভেতর থেকে ধ্বংস করে দেবে, এবং আমি হচ্ছি সেই নতুন ফিরক্বার উত্তরাধিকার সৃষ্টির রূপকার।
ভাষান্তর : আবুল বাশার।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
কেমন ছিলো মোঘল সালতানাতের গোলন্দাজ এবং অশ্বারোহী বাহিনী
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পান্থনিবাস ও সরাইখানা নির্মাণে মুসলমানদের অনবদ্য অবদান
২৬ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৩৯)
১৫ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
মুসলমানদের শিক্ষা-দীক্ষার বিরোধিতায় বিধর্মী-অমুসলিমরা
১৪ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী বাংলার হিন্দু ধনিক-বণিক, বেনিয়া শ্রেণী, ব্যাংকার প্রভৃতির সাথে এক গভীর ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে মুসলিম
১৪ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইউরোপকে যেভাবে সমৃদ্ধ করেছেন আফ্রিকান মুসলমানরা
১২ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
গুজরাটের সুলতান মুজাফফর শাহের পরহেজগারিতা এবং ভ্রাতৃত্ববোধ
০২ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৩৭)
০১ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
কেমন ছিলেন ইসলামী ইতিহাসের প্রথম আইনশৃঙ্খলা বাহিনী
০১ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ঐতিহাসিক মুসলিমবাগ ঈদগাহ-ই কি আজকের ঢাকেশ্বরী মন্দির?
২৯ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
১২টি চন্দ্রমাসের নাম এবং নামকরণের সার্থকতা (২)
২৯ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ঐতিহাসিক খেমকারান যুদ্ধ: যেভাবে বাংলাদেশের জাতীয়তাবোধের উদ্ভব
২৫ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)












