ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (১৯)
, ১২ যিলক্বদ শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ১২ ছানী আ’শার, ১৩৯২ শামসী সন , ১১ মে, ২০২৫ খ্রি:, ২৮ বৈশাখ, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) ইতিহাস

শয়তান যে মানুষকে নেক সুরতে ধোঁকা দেয়, এ বিষয়টি ভালভাবে অনুধাবন করেছিল শয়তানের অনুচর ইহুদী এবং খ্রিষ্টানরা। মুসলমানদের সোনালী যুগ এসেছিল শুধু ইসলামের পরিপূর্ণ অনুসরণের ফলে। শয়তানের চর ইহুদী খ্রিষ্টানরা বুঝতে পেরেছিল মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ, অনৈক্য, সংঘাত সৃষ্টি করতে পারলেই ইসলামের জাগরণ এবং বিশ্বশক্তি হিসেবে মুসলমানদের উত্থান ঠেকানো যাবে। আর তা করতে হবে ইসলামের মধ্যে ইসলামের নামে নতুন মতবাদ প্রবেশ করিয়ে। শুরু হয় দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা; যার মূলে থাকে খ্রিষ্টীয় ব্রিটিশ সম্রাজ্যবাদ। জন্ম হয় ওহাবী মতবাদের। ওহাবী মতবাদ সৃষ্টির মূলে থাকে একজন ব্রিটিশ গুপ্তচর হেমপার। মিশর, ইরাক, ইরান, হেজাজ ও তুরস্কে তার গোয়েন্দা তৎপরতা চালায় মুসলমানদের বিভ্রান্ত করার জন্য “ÒConfession of British Spy and British enmity against Islam” গ্রন্থ হচ্ছে হেমপারের স্বীকারোক্তি মূলক রচনা। যা মূল গ্রন্থ থেকে ধারাবাহিকভাবে অনুবাদ প্রকাশ করা হবে। ইনশাআল্লাহ!
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
নাজাফের মত কারবালায়ও শিয়ারা একই রকম আচার অনুষ্ঠান করে থাকে। কিন্তু কারবালাতেও আবহাওয়া নাজাফের চেয়ে ভাল। কারবালার চারিধার অনেক ফলের বাগান এবং ছোট ছোট নদী দ্বারা বেষ্টিত।
ইরাকে আমার মিশন চলাকালীন সময়ে আমি একটি দৃশ্য দেখতে পেয়েছিলাম যা আমার হৃদয়ে অনেক প্রশান্তি এনে দেয়। কিছু কিছু ঘটনা অটোম্যান সম্প্রদায়ের পতন ত্বরান্তিত করে। ইস্তাম্বুলের কর্তৃপক্ষ, যে গভর্ণরকে ইরাকে নিয়োগ দিয়েছিলেন সে ছিলো অশিক্ষিত এবং নিষ্ঠুর প্রকৃতির। সে যা খুশি তাই করতো। জনগণ তাকে পছন্দ করতো না। সুন্নী সম্প্রদায় একটা অস্বস্তিকর অবস্থায় ছিলো কেননা গভর্ণর তাদের কোন মূল্যায়ন করতো না বরং তাদের স্বাধীনতা হরণ করেছিলো আর শিয়া সম্প্রদায়ও তুর্কী শাসকগণ দ্বারা শাসিত হয়ে নিজেদের হেয় মনে করতো। তাদের মধ্যে ছিলো অনেক সাইয়্যিদ এবং শরীফ’ বংশীয় লোক যারা আওলাদে রসূল বা নবীজী উনার বংশধর এবং গভর্ণরের দায়িত্ব পালনের জন্য আরও উপযুক্ত ছিলো।
শিয়ারা ছিলো অত্যন্ত বেদনাদায়ক পরিস্থিতিতে তারা অনেক দুঃস্থ এবং জীর্ণশীর্ণ পরিবেশে বাস করতো। রাস্তায় চলাচলও নিরাপদ ছিলো না। চলার পথে ডাকাতদল আক্রমণের জন্য ওৎ পেতে বসে থাকতো, যখন তারা দেখতো কোন কোন সৈন্য সামন্ত তাদের পাহারায় নেই। সে কারণে সরকারীভাবে কোন পাহারার ব্যবস্থা না থাকলে কোন কাফেলা যাত্রা শুরু করতো না।
শিয়ারা নিজ গোত্রের মধ্যে ঝগড়া বিবাদ করতো। দৈনিক একে অপরকে হত্যা ও লুন্ঠন করতো। অজ্ঞতা আর অশিক্ষা ব্যাপকভাবে বিস্তৃতি লাভ করেছিলো। শিয়াদের এ অবস্থা দেখে ধর্মীয় যাজকে দ্বারা শাসিত ইউরোপের অবস্থা আমার মনে হতো। নাজাফে এবং কারবালায় বসবাসরত কয়েকজন ধর্মীয় নেতা এবং অল্প সংখ্যক ভোটার ছাড়া এক হাজার জনের মধ্যে একজন শিয়াও জানতো না কি করে লিখতে পড়তে হয়। অর্থনীতি সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিলো এবং লোকজন দারিদ্রতার মধ্যে বাস করতো। প্রশাসনিক ব্যবস্থাও ছিলো সম্পূর্ণ অচল। শিয়ারা রাষ্ট্রদ্রোহীতার কাজে জড়িত থাকতো। সরকার এবং জনগণের মধ্যে ছিলো অনেক দূরত্ব। ফলে তাদের মধ্যে কোন পারস্পরিক সহযোগিতা ছিলো না। শিয়া ধর্মীয় নেতারা একমাত্র সুন্নীদের গালমন্দ করা ছাড়া জ্ঞানে, ব্যবসায়, ধর্মীয় এবং পার্থিব বিষয়ে একেবারে শেষ পর্যায়ে উপনিত হয়েছিলো।
আমি কারবালায় ও নাজাফে চার মাস অবস্থান করেছিলাম এবং নাজাফে ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম। আমার অবস্থা এতটাই খারাপ হয়ে যায় যে, সুস্থ হওয়ার আশা একেবারেই ত্যাগ করেছিলাম। আমার অসুস্থতা তিন সপ্তাহ স্থায়ী ছিলো। আমি একজন ডাক্তারের শরানাপন্ন হলে তিনি একটি প্রেসক্রিপশন দিয়েছিলেন। সেই ঔষধ ব্যবহারে আমি আরোগ্য লাভ করেছিলাম।
আমার অসুস্থতার পুরো সময়টাই আমি মাটির নিচে একটি রুমে অবস্থান করেছিলাম। যেহেতু আমি অসুস্থ ছিলাম আমার গৃহকর্তা নিজেই ঔষধ এবং খাবার প্রস্তুত করে দিতো। বিনিময়ে সে অল্প মূল্য নিতো এবং শুধু ছওয়াবের আশায় সে এই কাজগুলো করতো, কারণ আমি ছিলাম আমিরুল মু’মিনীন হযরত আলী আলাইহিস সালাম উনার জিয়ারত প্রার্থী।
ডাক্তার আমাকে উপদেশ দিয়েছিলেন, অসুস্থতার প্রথম কয়েকদিন শুধু মুরগীর স্যুপ খেতে। পরবর্তীতে তিনি মুরগী খাওয়ার অনুমতি দেন। তৃতীয় সপ্তাহে আমি খেয়েছিলাম ভাতের স্যুপ। সুস্থ হয়ে আমি আবার বাগদাদের উদ্দেশ্যে রওয়ানা করলাম। আমার নাজাফে, হুনায়, বাগদাদে এবং পথের সব অভিজ্ঞতার ওপর একশ’ পৃষ্ঠার একটি রিপোর্ট প্রস্তুত করেছিলাম। উপনিবেশ মন্ত্রণালয়ের বাগদাদ প্রতিনিধির নিকট আমি আমার রিপোর্ট জমা দিলাম। আমি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশের অপেক্ষা করছিলাম যে ইরাকেই থাকবো না লন্ডনে ফিরে যাবো। আমি লন্ডনে ফিরে যেতে চাইলাম কারণ, অনেকদিন ধরেই দেশের বাইরে অবস্থান করছি। আমার দেশ এবং পরিবারের কথা খুব মনে হচ্ছিলো। বিশেষতঃ আমার ছেলে রামপুটিনকে দেখতে ইচ্ছে হচ্ছিলো, যে আমার দেশ ত্যাগের পর জন্ম নেয়। এ কারণে, আমার রিপোর্টের সঙ্গে একটা দরখাস্তও দিয়ে দিলাম অন্তত অল্প কিছুদিনের জন্য হলেও আমাকে যেন ছুটি দেয়া হয়। এছাড়া আমার ইরাকে তিন বছরের মিশনের ব্যাপারে একটা মৌখিক রিপোর্ট দিতে চাইলাম এবং একই সময়ে কয়েকদিন বিশ্রাম নিতে পারবো।
ভাষান্তর : আবুল বাশার।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ভারতের হায়দরাবাদ দখল করে রাখার চাপা ইতিহাস
১৫ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
বাংলার মুসলিম কৃষকদের উপর হিন্দু জমি দখলদারদের জুলুমের ইতিহাস (পর্ব ১১)
১৩ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
বাংলার মুসলিম কৃষকদের উপর হিন্দু জমি দখলদারদের জুলুমের ইতিহাস (পর্ব ১০)
১০ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ইসলামী বিশ্বকোষের আলোকে বালাকোট শহরের স্থাপত্য ও বালাকোট যুদ্ধের ইতিহাস (১)
০৯ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
অস্থায়ী হাসপাতাল নির্মাণে মুসলমানদের অবদান
০৮ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
বাংলার মুসলিম কৃষকদের উপর হিন্দু জমি দখলদারদের জুলুমের ইতিহাস (পর্ব ০৯)
০৬ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
বাংলার মুসলিম কৃষকদের উপর হিন্দু জমি দখলদারদের জুলুমের ইতিহাস (পর্ব ০৮)
০৩ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (১৮)
০৩ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
চলুন জানি: বিখ্যাত মুসলমান যুদ্ধাস্ত্র বিজ্ঞানী নাজমুদ্দিন হাসান আর রাম্মাহ’র কথা
০১ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
বাংলার মুসলিম কৃষকদের উপর হিন্দু জমি দখলদারদের জুলুমের ইতিহাস (পর্ব ০৭)
২৯ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
কাফিরদের রচিত গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার মুসলমানদের জন্য নয় (১)
২৭ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
বাংলার মুসলিম কৃষকদের উপর হিন্দু জমি দখলদারদের জুলুমের ইতিহাস (পর্ব ০৬)
২৬ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)