মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অনুসরণই সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার অনুসরণ
, ২৫ শা’বান শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ২৮ তাসি’, ১৩৯২ শামসী সন , ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রি:, ১১ ফালগুন, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
মহাসম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
اِنَّ هٰذَا الْعِلْمَ دِيْنٌ
অর্থ: “নিশ্চয়ই সম্মানিত ইলিমই হচ্ছেন সম্মানিত দ্বীন ইসলাম। ” (মুসলিম শরীফ, সুনানে দারিমী শরীফ)
আর সম্মানিত ইলিম বলতে পবিত্র কুরআন শরীফ এবং পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের সম্মানিত ইলিমকে বুঝানো হয়েছে। যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
كَانَ خُلُقُهُ الْقُرْاٰنَ
অর্থ: “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত চরিত্র মুবারকই হচ্ছেন পবিত্র কুরআন শরীফ। ” (মুসনাদে আহমদ শরীফ, দালায়িলুন নুবুওয়াহ)
অনুরূপ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
اُوْتِيْتُ الْقُرْاٰنَ وَمِثْـلَهٗ مَعَهٗ
অর্থ: “আমাকে মহাসম্মানিত কুরআন শরীফ এবং উনার সাথে উনার অনুরূপ বিধান (অর্থাৎ হাদীছ শরীফ) দেয়া হয়েছে। ” সুবহানাল্লাহ! (মুসনাদে আহমদ শরীফ, মিশকাত শরীফ)
উল্লেখ্য, পবিত্র কুরআন শরীফ হচ্ছেন ওহীয়ে মাতলূ আর পবিত্র হাদীছ শরীফ হচ্ছেন ওহীয়ে গইরে মাতলূ। এ দু’ প্রকার ওহী মুবারকই হচ্ছেন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র আদর্শ মুবারক।
কেননা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র ওহী মুবারক ব্যতীত কোন কথা মুবারক বলেননি, কোন কাজ মুবারক করেননি এবং কোন সম্মতি মুবারকও প্রকাশ করেননি। তিনি কোন সমাজ বা কোন দেশ বা কোন ব্যক্তিকে অনুসরণ করেননি। তিনি শুধুমাত্র অনুসরণ করেছেন যিনি খলিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনাকে অর্থাৎ উনার সম্মানিত আদেশ মুবারককে। আর মহান আল্লাহ পাক উনার আদেশ মুবারক উনার নামই হচ্ছেন পবিত্র ওহী মুবারক।
পবিত্র কুরআন শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
وَمَا يَنْطِقُ عَنِ الْـهَوٰى إِنْ هُوَ إِلَّا وَحْيٌ يُّـوْحٰى
অর্থ: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র ওহী মুবারক ব্যতীত নিজ থেকে কোন কথা মুবারক বলেননি। (পবিত্র সূরা নজম শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৩, ৪)
পবিত্র কুরআন শরীফে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
إِنْ أَتَّبِعُ إِلَّا مَا يُـوْحٰى إِلَيَّ
অর্থ: আমি তো কেবল ওই আদেশ মুবারকই অনুসরণ করি যা আমার প্রতি ওহী মুবারক করা হয়। (পবিত্র সূরা আহক্বাফ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ০৯)
কাজেই সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার যারা বিশ্বাসী বা অনুসারী মু’মিন মুসলমান উনাদেরকে তো অবশ্যই বরং জিন, ইনসান, ফেরেশতা আলাইহিমুস সালামসহ সমস্ত সৃষ্টির জন্য একমাত্র অনুসরণীয় অনুকরণীয় এবং মহান আদর্শ মুবারক হচ্ছেন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি। সুবহানাল্লাহ!
পবিত্র কুরআন শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُوْلِ اللهِ أُسْوَةٌ حَسَنَة
অর্থ: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মধ্যেই রয়েছে তোমাদের জন্য উসওয়াতুন হাসানাহ বা সর্বোত্তম আর্দশ মুবারক। সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ২১)
সুতরাং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকেই সর্বক্ষেত্রে এবং সর্ববিষয়ে অনুসরণ করতে হবে এবং উনারই আদর্শ মুবারক বা সুন্নত মুবারক পালন করতে হবে। উনার আদর্শ মুবারক বা সুন্নত মুবারক পালনই হচ্ছেন সম্মানিত দ্বীন ইসলাম পালন। সুবহানাল্লাহ!
পবিত্র কুরআন শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
وَإِنْ تُطِيْـعُوْهُ تَـهْتَدُوْا
অর্থ: যদি তোমরা তোমাদের যিনি মহাসম্মানিত রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ইত্বায়াত বা অনুসরণ করো তথা উনার পবিত্র সুন্নত মুবারক পালন করো তাহলেই তোমরা হিদায়েত প্রাপ্ত হবে। (পবিত্র সূরা নূর শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৪)
অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ইত্বায়াত বা অনুসরণ করলে তথা উনার মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক পালন করলে উম্মত হিদায়েত প্রাপ্ত হবে। আর যদি উনার সুন্নত মুবারক পালন না করে তাহলে সে হিদায়েত পাবে না। বরং সে গোমরাহ বা পথভ্রষ্ট হয়ে যাবে। নাঊযুবিল্লাহ!
যেমন এ প্রসঙ্গে মহাসম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
وَلَوْ تَـرَكْتُمْ سُنَّةَ نَبِيِّكُمْ لَضَلَلْتُمْ
অর্থ: যদি তোমরা মহাসম্মানিত রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত সুন্নত মুবারক ছেড়ে দাও তাহলে অবশ্যই তোমরা গোমরাহ বা পথভ্রষ্ট হয়ে যাবে। নাঊযুবিল্লাহ! (আবূ দাউদ শরীফ, তিরমিযী শরীফ, নাসায়ী শরীফ, মিশকাত শরীফ ইত্যাদি)
এক্ষেত্রে বলা কিংবা চিন্তা করার কোন অবকাশ বা সুযোগই নেই যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র সুন্নত মুবারক পালন এক বিষয় আর সম্মানিত দ্বীন ইসলাম পালন অন্য বিষয়। বরং পবিত্র সুন্নত মুবারক পালন আর সম্মানিত দ্বীন ইসলাম পালন একই বিষয়ের নাম।
সুতরাং, কেউ যদি সম্মানিত দ্বীন ইসলাম পালন করতে চায় বা দ্বীন ইসলাম পালন করার দাবি করে তাকে সর্বক্ষেত্রে ও সর্ববিষয়ে সুন্নত মুবারক পালন বা অনুসরণ করতে হবে। সুন্নত মুবারক পালন ব্যতীত দ্বীন ইসলাম পালনের দাবি সম্পূর্ণ মিথ্যা। এ মর্মে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
لَا يُـؤْمِنُ اَحَدُكُمْ حَتّٰى يَكُوْنَ هَوَاهُ تَـبَـعًا لِّمَا جِئْتُ بِهٖ
অর্থ: তোমাদের কেউই ততক্ষণ পর্যন্ত ঈমানদার হবে না যে পর্যন্ত আমি যা নিয়ে এসেছি (পবিত্র কুরআন শরীফ এবং পবিত্র হাদীছ শরীফ) উনার অনুসারী সে না হবে। (মিশকাত শরীফ, শরহুস সুন্নাহ শরীফ ইত্যাদি)
অতএব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যে ইবাদত বন্দেগী করেছেন, করতে বলেছেন, যা খেয়েছেন, খেতে বলেছেন, যা পরেছেন বা পরতে বলেছেন, যা ব্যবহার করেছেন বা করতে বলেছেন, যেভাবে চলাফেরা করেছেন, করতে বলেছেন ইত্যাদি প্রতিটি বিষয়ে উনার পবিত্র সুন্নত মুবারক রয়েছে। অর্থাৎ তিনি পরিপূর্ণ আদর্শ বা মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক রেখে গেছেন।
-মুফতী শুয়াইব আহমদ।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
হযরত আব্বাস ইবনে মিরদাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যাকাত সম্পর্কিত আহকাম, মাসায়িল ও ফাযায়িল (৪)
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
প্রাণীর ছবি তোলা হারাম ও নাফরমানীমূলক কাজ
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
অ্যান্টার্কটিকা নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় বিজ্ঞানীরা
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম (৪)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা অবশ্যই সত্যের মাপকাঠি; অস্বীকারকারীরা কাট্টা কাফির (১)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র দু‘আ বা মুনাজাত (১১তম অংশ)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম (৩)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুনিয়ার যমীনে অবস্থানকালীন সময়ে ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ যে রোযা মুবারক রাখতেন সে রোযা মুবারক মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ১২ই শরীফ উনার দিনে হওয়াটা ছিলো একটি বিরল ঘটনা (২)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)












