ইলমে তাছাওউফ
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (১২)
(গত ১৫ রবীউছ ছানী শরীফের পর)
, ১৩ জুমাদাল উলা শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ৩০ সাদিস ১৩৯১ শামসী সন , ২৮ নভেম্বর, ২০২৩ খ্রি:, ১২ অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
![মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (১২)](https://www.al-ihsan.net/uploads/1701115276_রাজারবাগ দরবার শরীফ.jpg)
(১৪) যদি শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার কোন কথা অন্য কোন লোকের সামনে বলতে চাও তাহলে সে লোকের বিবেক অনুপাতে বলবে। অজ্ঞ ও মুর্খ লোকেরা যে কথা বুঝতে না পারে, সেটা তাদের সম্মুখে বলবে না। কারণ এতে তাদের কোন ফায়দা নেই, বরং ক্ষতি হবে। কেননা এ কথা দ্বারা শায়েখ উনার ব্যাপারে তার আক্বীদা নষ্ট হয়ে যাবে। এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফে বর্ণিত আছে-
كَلِّمُوا النَّاسَ عَلَى قَدْرِ عُقُوْلِهِمْ وَلَا تُكَلِّمُوا النَّاسَ عَلَى قَدْرِ عُقُوْلِكِمْ وَادْعُوْا مَايُنْكِرُوْنَ أَتُرِيْدُوْنَ اَنْ يُّكَذِّبَ اللهَ وَرَسُوْلَهُ.
অর্থ: “আখেরী রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন ইমামুল মুরসালীন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন- তোমরা মানুষকে তাদের আক্বল বা জ্ঞান অনুপাতে কথা বলবে। তোমাদের নিজের আক্বল বা বিবেক অনুপাতে তাদের সাথে কথা বলবে না। সুতরাং বোঝে না অথবা অস্বীকার করে, সে বিষয়কে তোমরা পরিহার করবে। তোমরা কি চাও যে, মানুষ মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার মাহবূব হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকে অস্বীকার করুক?” (আদাবুশ শায়েখ)
(১৫) মুরীদ যা কিছুই হাছিল করুক না কেন, তা স্বীয় শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার উছীলায় হয়েছে বলে বিশ্বাস করবে। যার সমুজ্জল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন- সাইয়্যিদুত ত্বয়িফা, লিসানুল ক্বওম, সুলত্বানুল মুহাক্কিক্বীন হযরত জুনাইদ বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি। উনার বয়স মুবারক যখন ৭ বৎসর, তখন উনার শায়েখ হযরত ইমাম আবুল হাসান সাররী সাক্বতী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনাকে নিয়ে পবিত্র মক্কা শরীফে হজ্জ করতে গেলেন। ঘটনাক্রমে সে সময় মক্কা শরীফের মধ্যে চারশত জন ইমাম-মুজতাহিদ আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা সমবেত হয়েছিলেন। একদিন উনাদের মধ্যে শোকর সম্বন্ধে আলোচনা হচ্ছিল। প্রত্যেকেই নিজ নিজ মত প্রকাশ করলেন। হযরত ইমাম আবুল হাসান সাররী সাক্বতী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি তখন সাইয়্যিদুত ত্বয়িফা হযরত জুনাইদ বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে বললেন, জুনাইদ! আপনিও শোকর সম্বন্ধে কিছু বলুন। সাইয়্যিদুত ত্বয়িফা হযরত জুনাইদ বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি কিছুক্ষণ মাথা নত করে রইলেন। অতঃপর মাথা উত্তোলন করে আদবের সাথে বললেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদেরকে যে নিয়ামত দান করেছেন, তা পেয়ে আমরা যেন উনার অবাধ্য ও নাফরমান না হই। উনার নিয়ামতকে নাফরমানী ও গুনাহের কাজের উপকরণ না বানাই, এটাই হচ্ছে শোকর। আর তা শুনে উপস্থিত সকলেই সমবেত কন্ঠে বলে উঠলেন, হে জুনাইদ বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি! আপনি খুবই উত্তম কথা বলেছেন। আপনার উক্তিই সত্য। উপস্থিত সকলের ঐক্যমতে, এর চেয়ে উত্তম কেউ বলতে পারবে না। আর এটাও বললেন, হে বৎস! অদূর ভবিষ্যতে আপনার মুখ আপনার জন্য মহান আল্লাহ পাক উনার দেয়া বড় নিয়ামত হবে। উনার এ কথাগুলো শুনে হযরত ইমাম আবুল হাসান সাররী সাক্বতী রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, হে জুনাইদ! আপনি এটা কোথা থেকে শিখলেন? তিনি বললেন, আপনার দরবার শরীফে উঠা-বসা এবং আপনার পবিত্র ছোহবত মুবারকের বরকতে। (তাযকিরাতুল আউলিয়া)
কাজেই মুরীদ যা কিছুই হাছিল করুক না কেন, তা নিজ শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার ফয়েজ ও তাওয়াজ্জুহ’র বরকতে হয়েছে বলে মনে করবে। এর উপর দায়িম-ক্বায়িম থাকা তার জন্য অধিক ফায়দাজনক।
এ সম্পর্কে আরো বর্ণিত আছে যে, একবার কোন এক অপরাধে হযরত শায়েখ আযল তিবরীজী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে মৃত্যুদ- কার্যকর (কতল) করে দেয়ার জন্য জল্লাদের হাতে অর্পণ করা হয়। জল্লাদ উনাকে কতলের স্থানে নিয়ে ক্বিবলামুখী করে দাঁড় করায়। তখন হযরত শায়েখ আযল তিবরীজী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি খেয়াল করলেন যে, ক্বিবলামুখী হয়ে দাঁড়ালে উনার শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলার মাযার শরীফ উনার পিছনে পড়ে যায়, তাই তিনি ক্বিবলামুখী হতে ফিরে নিজের শায়েখের মাযার শরীফের দিকে ঘুরে দাঁড়ালেন। জল্লাদ উনাকে বলল যে, আপনি এখন যে অবস্থার সম্মুখীন হয়েছেন তাতে আপনার ক্বিবলামুখী হওয়া উচিত। হযরত শায়েখ আযল রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, “তোমার তা দিয়ে কি কাজ, তুমি তরবারী উত্তোলন করো অর্থাৎ তোমার কাজ তুমি করো। আমি নিজ ক্বিবলার দিকেই ফিরে আছি।” এতে জল্লাদের সঙ্গে উনার এক প্রকার তর্ক বেঁধে যায়। এই বিষয় নিয়ে জল্লাদের সাথে কথা কাটাকাটি চলাকালীনই শাহী ফরমান (আদেশ) আসলো যে, দরবেশকে ক্ষমা করা হলো, উনাকে মুক্ত করে দাও। সুবহানাল্লাহ!
‘ফওয়ায়েদুস সালেকীন’ কিতাবে লিখিত আছে যে, “কুতুবুল আকতাব হযরত বখতিয়ার কাকী রহমতুল্লাহি আলাইহি যখন এই ঘটনা উল্লেখ করেছিলেন তখন তিনি কেঁদে বললেন, সেই দরবেশ নিজ শায়েখ উনার প্রতি বিশুদ্ধ হুসনে যন এবং নিজ ক্বিবলা ঠিক রাখায় মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাকে সেই কঠিন মুছিবত থেকে হিফাযত করেছেন। সুবহানাল্লাহ! (অসমাপ্ত)
-আল্লামা মুফতী সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালীম।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ছবি তোলা শক্ত হারাম, রয়েছে কঠিন শাস্তি
২৭ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
তরজমাতুল মুজাদ্দিদিল আ’যম আলাইহিস সালাম
২৭ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৭ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
২৭ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
কাফির-মুশরিক, বেদ্বীন-বদদ্বীনদের সঙ্গে কখনই মুহব্বত করা ও সাদৃশ্য রাখা যাবে না
২৬ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
অন্যায়কে ঘৃণা না করলে ঈমানদার থাকা যায় না
২৬ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
তা’বীয ও ঝাড় ফুঁক সম্পর্কে শরয়ী ফায়সালা (৪)
২৬ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৬ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৬ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৬ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৬ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২৬ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার)