ইলমে তাছাওউফ
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৪০)
কামিল শায়েখ উনার প্রতি সর্বক্ষেত্রে বিশুদ্ধ আক্বীদা ও হুসনে যন পোষণ করা মুরীদের জন্য কামিয়াবী হাছিলের কারণ
, ৩০ শাওওয়াল শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ৩০ হাদি আশির, ১৩৯২ শামসী সন , ২৯ এপ্রিল, ২০২৫ খ্রি:, ১৬ বৈশাখ, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) ইলমে তাছাউফ

আরো বর্ণিত আছে যে, একবার নিশাপুরের এক সওদাগর এক হাজার মুদ্রায় এক খুব ছূরত বাঁদী ক্রয় করলো। ঘটনাক্রমে ঐ সময় তার একটি খাতক টাকা পরিশোধ না করে নিশাপুর ছেড়ে অন্য শহরে পালিয়ে গেলো। তখন সওদাগর তার খোঁজ করা দরকার বলে মনে করলো; কিন্তু তার অসুবিধার সৃষ্টি হলো বাঁদীকে নিয়ে। এমন গুণবতী, খুব ছূরত বাঁদীকে কার কাছে রেখে যাওয়া যায়? শহরে তখন একটি বিশ্বাসী লোকও ছিলো না।
অবশেষে সওদাগর হযরত আবু উছমান জাররা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে একমাত্র বিশ্বাসী মনে করে উনার কাছে অনুরোধ জানালো যে, “জনাব! আমার বাঁদীকে আপনার জিম্মায় রেখে যেতে চাই। কয়েকটি দিন তাকে আপনার পরিবারের লোকের সঙ্গে রাখবেন। তাহলে খুবই উপকৃত হবো। ” হযরত আবু উছমান জাররা রহমতুল্লাহি আলাইহি প্রথমে রাজী হলেন না; কিন্তু শেষ পর্যন্ত সওদাগরের অনুরোধে উনাকে সম্মত হতে হলো। সওদাগর উনার গৃহে নিজ বাঁদীটিকে রেখে সে তার খাতকের খোঁজে বের হয়ে পড়লো।
কিছুদিন অতিবাহিত হওয়ার পর একবার হঠাৎ হযরত আবু উছমান রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার দৃষ্টি উক্ত বাঁদীর উপর পতিত হলে বাঁদীর অসাধারণ রূপদর্শনে হযরত আবু উছমান রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মনের ভিতর তুমুল আলোড়ন শুরু হলো। এক পলক দৃষ্টিতেই উনার মনে ইশকের আগুন জ্বলে উঠলো। তখন তিনি দিশেহারা হয়ে শেষ পর্যন্ত উনার শায়েখ যিনি ছিলেন হযরত আবু হাফস হাদ্দাদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কাছে গিয়ে সব কথা খুলে বললেন।
হযরত আবু হাফস হাদ্দাদ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ঘটনা শুনে উনাকে হযরত ইউসুফ ইবনে হুসাইন রায়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কাছে যেতে বললেন। হযরত আবু উছমান রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি অনতিবিলম্বে উনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলেন।
বাসস্থানের নিকটবর্তী হয়ে যখন বিভিন্ন লোকের নিকট উনার বাসগৃহের সন্ধান করতে লাগলেন, তখন লোকজন এরূপ বলতে লাগলো যে, “তিনি তো বদমায়েশ লোক। আপনার পোশাকে তো আপনাকে একজন ভাল লোক মনে হয়। আপনার কি দরকার আছে উনার কাছে? বরং আমরা তো মনে করি উনার মতো লোকের সঙ্গে দেখা না করে আপনার দেশে ফিরে যাওয়াই উত্তম। উনার সাথে সাক্ষাতে ভালোর পরিবর্তে খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা বেশী। ”
তখন আবু উছমান রহমতুল্লাহি আলাইহি বহু লোক মুখে এ ধরনের কথা শুনে হযরত ইউসুফ ইবনে হুসাইন রায়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সাথে সাক্ষাত না করেই সেখান থেকে প্রত্যাবর্তন করলেন। নিশাপুরে ফিরে তিনি সকল ঘটনা হযরত আবু হাফস হাদ্দাদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কাছে বললেন। ঘটনা শুনে তিনি অত্যন্ত দুঃখ প্রকাশ করে বললেন, “তোমার এভাবে ফিরে আসা কিছুতেই ঠিক হয়নি। তুমি আবার গিয়ে উনার সাথে দেখা করে আসো। ”
হযরত আবু উছমান রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার নির্দেশ পালনে পুনরায় হযরত ইউসুফ ইবনে হুসাইন রায়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সাথে সাক্ষাত করার উদ্দেশ্যে উনার বাসস্থান অভিমুখে রওয়ানা হলেন। এবারও পথে নানা ধরনের বাধা-বিপত্তির সম্মুখীন হলেন; কিন্তু তা উপেক্ষা করে হযরত ইউসুফ ইবনে হুসাইন রায়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার দরজায় উপস্থিত হলেন। সেখানে উপস্থিত হয়ে তিনি দেখতে পেলেন, গৃহের দরজায় উপবিষ্ট উজ্জল নূরানী চেহারাম-িত হযরত ইউসুফ ইবনে হুসাইন রায়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি।
উনার সম্মুখেই দাঁড়ানো একটি সুশ্রী বালক এবং নিকটে আছে একটি সোরাহী ও পান পেয়ালা। হযরত আবু উছমান রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনাকে সালাম করে, উনার সাথে কথা-বার্তা শুরু করলেন। উনার বিনয়পূর্ণ আচার-আচরণ ও শিষ্টাচার দেখে ভক্তি ও খুশিতে মুগ্ধ হলেন। এই অবস্থায়ই তিনি উনাকে জিজ্ঞেস করলেন, “হুযূর! বেয়াদবী মাফ করবেন, আপনার কাছে এ সুন্দর বালকটি দাঁড়িয়ে আছে। তাছাড়া পাশেই শরাবের সোরাহী ও পান পেয়ালা, তার রহস্য কি?”
হযরত ইউসুফ ইবনে হুসাইন রায়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, “দেখো! মানুষ ভিতরের কথা না জেনে শুধু বাইরে দেখে বা শুনে অনেক কিছু মনে করে, কিন্তু হাক্বীক্বতে তা ভুল। তুমি যে ছেলেটিকে দেখছো, সে আমার পুত্র। আমার কাছে সোরাহীটি, তা শরাবের নয় বরং পানির। আর ঐ পেয়ালাটিতে আমি পানি পান করি। ”
উনার কথা শুনে হযরত আবু উছমান রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, “আপনার মুখে সব কথা শুনে এখন মন পরিষ্কার হলো; কিন্তু সব সময় তো সবার এরূপ আসল ব্যাপার জেনে নেয়া সম্ভব নয়। বরং তখন বাইরের অবস্থা দেখেই মানুষ মন্তব্য করে থাকে। এমতাবস্থায় আপনি বাহ্যিক দিকটি এভাবে রাখেন কেন?”
তখন হযরত ইউসুফ ইবনে হুসাইন রায়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি জবাবে বললেন, “বাহ্যিক দিক এভাবে রাখার কারণ কি তা জানতে চাও? তাহলে জেনে রাখো, কেউ যেন কারও খুব ছূরত (সুন্দরী) বাঁদী আমার নিকট আমানত না রাখে। ”
উনার কথা শুনা মাত্রই হযরত আবু উছমান রহমতুল্লাহি আলাইহি এবার পরিষ্কারভাবে বুঝতে পারলেন, যে ব্যক্তি প্রকৃতই মুত্তাক্বী হয়েছেন এবং পার্থিব বিষয়বস্তু হতে মন ও চোখকে উঠিয়ে নিয়েছেন, মানুষের তোহমত বা অপবাদে উনার কি আসে যায়? এই মহামূল্যবান ইলিম লাভের সাথে সাথে হযরত আবু উছমান রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মনে যে অন্য রকম চঞ্চলতা ও পাশবিক ভাবের উদয় হয়েছিলো তা সম্পূর্ণভাবে নির্মূল হয়ে গেলো। সুবহানাল্লাহ! (অসমাপ্ত)
-আল্লামা মুফতী সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালীম।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
পবিত্র ইলমে ফিক্বাহ ও পবিত্র ইলমে তাছাউফ অর্জনের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা
০৯ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৪১)
২৯ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৩৯)
২৫ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৩৮)
২৪ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সাওয়ানেহ উমরী মুবারক (১৪)
২৩ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মুহলিকাত তথা বদ স্বভাবসমূহ
০৭ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
পবিত্র মুনজিয়াত উনার বিবরণ
০৫ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ওলীআল্লাহ উনাদের ছোহবতে যাওয়া ব্যতীত কারো পক্ষে প্রকৃত মু’মিন-মুসলমান হওয়া সম্ভব নয়
০৫ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সাওয়ানেহ উমরী মুবারক (১২)
০৪ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হযরত শায়েখ আবূ বকর শিবলী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৬)
২৬ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
হযরত শায়েখ আবূ বকর শিবলী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৫)
২৫ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হযরত শায়েখ আবূ বকর শিবলী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৪)
২৩ মার্চ, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)