ঘটনা থেকে শিক্ষা
শেখ চুল্লির দুনিয়াবী সম্পদ গড়ার অলীক কল্পনা এবং হাক্বীক্বত বাস্তবতা
, ০৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ১২:০০:০০ এএম ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
আর এই শহরের মধ্যে এটাই সবচেয়ে বড় বাজার। এই বাজারের মধ্যে একটা দোকানের দাম হচ্ছে এক লক্ষ টাকা। এক লক্ষ টাকা দিয়ে আমি একটা দোকান কিনব। একটা দোকান কিনলে বেচা-কিনা অনেক হবে। আমি অনেক ধনী হয়ে যাব। এই শহরের মধ্যে যারা বিশিষ্ট ধনী, তাদের মধ্যে আমি একজন হবো। যেহেতু আমি এখনও বিয়ে-শাদী করিনি। তখন এই শহরের যিনি প্রধান রয়েছেন, তার মেয়েকে বিয়ে করার প্রস্তাব দিব। সে তো সহজে রাজী হয়ে যাবে। আমার এত সম্পদ, এত টাকা-পয়সা দেখে, সে রাজী হয়ে যাবে। রাজী হয়ে সে তার মেয়ে আমার কাছে বিয়ে দিবে। বিয়ে করব, কিছুদিন পর আমার একটা সন্তান হবে। সে চলছে আর ফিকির করছে। যখন সন্তান হবে, কথা বলবে, কথা শিখবে। কথা শিখলে সে আমাকে বলবে একদিন খাওয়ার জন্য। তখন সেই মিন্তী ফিকির করছে। সন্তান যখন আমাকে বলবে খাওয়ার জন্য, তখন আমি অভিমান করব। অভিমান করে বলবো খাব না। রাস্তাতো খুব কাদাযুক্ত ছিল। সে যখন খাব না বলে তার পা সামনের দিকে বাড়িয়ে দিয়েছে, তার মাথায় কলসী ভরা সরিষার তেল, ওজন রয়েছে অনেক। আর এক পা সে তুলে ফেলেছে, এক পা পিছলে সে পড়ে গেছে। এটা যখন সে বললো, তার ছেলে যখন তাকে খাদ্যের জন্য তাকে বলবে, বারবার তাকে বলতে থাকবে খাওয়ার জন্য, অনুরোধ করতে থাকবে, তখন সে অভিমান করে বলবে, আমি খাব না বলে পা দিয়ে সে সামনের দিকে ধাক্কা দিবে। এই বলে সে পা তুলে ফেললো। সে পিছলিয়ে পড়ে গেল। পড়ে যাওয়ার কারণে তার মাথায় যেহেতু তেলের কলসী ছিল, কলসীটা মাটিতে পড়ে গেল। বিকট আওয়াজ হয়ে কলসীটা ভেঙ্গে গেল। তেলগুলি জমিনে পড়ে গেল।
এদিকে যে তেলের মালিক ছিল, সে তো সামনে সামনে হাটছিল। তার দ্রুত যাওয়ার দরকার ছিল বাড়ীতে। বাড়ীতে গিয়ে অন্যান্য কাজ রয়েছে সেটা সে করবে। সে তার ফিকিরে চলছে। আর মিন্তী তার ফিকিরে চলছিল। যখন কলসী পড়ে গেল, বিকট আওয়াজ হলো। মালিক পিছন দিকে তাকিয়ে দেখল কলসী পড়ে গেছে, তেল নষ্ট হয়ে গেছে। সে তো মাথায় হাত দিল, হে কুলি তুমি করলে কি? আমার আট আনার তেল তুমি নষ্ট করে দিলে! তুমি করলে কি এটা। একটু সাবধান হয়ে চললে না? সে মালিক নানান চু-চেরা করতে লাগল। সেই কুলি-মিন্তী সেতো চুপ হয়ে রইলো। কিছুক্ষণ পরে বললো, হুযূর বেয়াদবী মাফ করবেন। আপনি চু-চেরা, ক্বিল ও ক্বাল করবেন না, আপনি আমার কথা শুনুন। আপনার মাত্র আট আনার তেল নষ্ট হলো। আর কিছুই হয়নি। এটা আবার আট আনা দিলে পাওয়া যাবে। কিন্তু আমার লাখ টাকার দোকান গেল, বাড়ী গেল, গাড়ী গেল, সন্তান গেল, স্ত্রী-পুত্র, সংসার সব আমার বিনাশ হয়ে গেল। আর আপনার মাত্র আট আনার তেল খরচ হলো।
খুব ফিকিরের বিষয়। এই লোকটার নাম দেয়া হয়েছে শেখ চুল্লী। এই শেখ চুল্লী বললো যে, আপনার মাত্র আট আনার তেল ক্ষতি হলো আর আমার কি ক্ষতি হলো? আমার লাখ টাকার দোকান গেল, গাড়ী-বাড়ী গেল, স্ত্রী-সন্তান গেল, সব কিছু গেল। আমি আবার সেই শূন্যের মধ্যে এসে দাঁড়ালাম।
হাক্বীক্বত প্রত্যেকটা লোকই এই ফিকিরই করে থাকে, এটাই তার চিন্তা তার কল্পনা তার আশা-আকাঙ্খা। কারণ একটা লোক আশা ছাড়া বাঁচতে পারে না। তার সামনে অবশ্যই কিছু আশা থাকতে হবে। এখন সেটা শরীয়তসম্মতই হোক আর শরীয়ত উনার খেলাফই হোক, জায়েয হোক আর নাজায়েযই হোক, তার সামনে একটা আশা থাকতেই হবে। যেই আশাকে লক্ষ্য করে সে চলতে থাকবে। এখন যাদের আশা শরীয়তসম্মত, তাদের জন্য রহমত, বরকত, সাকিনা আর যাদের আশাগুলি এই শেখ চুল্লীর মত হবে, তাদের ইহকালও বরবাদ হয়ে যাবে, তাদের পরকালও বরবাদ হয়ে যাবে। যেমন- শেখ চুল্লীর সব বরবাদ হয়ে গেল। চোখের পলকে সব কিছু ধ্বংস হয়ে গেল। ঠিক তদ্রুপ যারা এভাবে ফিকির করবে, এভাবে চিন্তা করবে, তাদের ইহকাল এবং পরকালও ধ্বংস হয়ে যাবে। এটা খুব ফিকিরের বিষয়, এটাই মহান আল্লাহ পাক তিনি বলে দিয়েছেন যে, “আধিক্যের আগ্রহ মানুষকে মোহগ্রস্ত করে দেয়। কবর জিয়ারত না করা পর্যন্ত তার কোন উদ্ধার নেই। ” এবং মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “আদম সন্তান একটা পাওয়ার পর আরেকটা তালাশ করে। একটার পর আরেকটা তালাশ করে, করতেই থাকে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সে তার মঞ্জিলে মকসুদে পৌঁছতে পারুক আর না পারুক, তার আশা-আকাঙ্খা কিন্তু শেষ হয় না মৃত্যু পর্যন্ত। যখন তার মৃত্যু হয়ে যায়, তখন তার আশা বন্ধ হয়ে যায়। তার আশা-আকাঙ্খা রদ হয়ে যায়। ”
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
হযরত আব্বাস ইবনে মিরদাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যাকাত সম্পর্কিত আহকাম, মাসায়িল ও ফাযায়িল (৪)
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
প্রাণীর ছবি তোলা হারাম ও নাফরমানীমূলক কাজ
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
অ্যান্টার্কটিকা নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় বিজ্ঞানীরা
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম (৪)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা অবশ্যই সত্যের মাপকাঠি; অস্বীকারকারীরা কাট্টা কাফির (১)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র দু‘আ বা মুনাজাত (১১তম অংশ)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম (৩)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুনিয়ার যমীনে অবস্থানকালীন সময়ে ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ যে রোযা মুবারক রাখতেন সে রোযা মুবারক মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ১২ই শরীফ উনার দিনে হওয়াটা ছিলো একটি বিরল ঘটনা (২)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)












