হিলাল
সউদি সরকারের উম্মুল কুরা ক্যালেন্ডার দ্বারা হজ্জের তারিখসহ অন্যান্য আরবী মাসের ঘোষণা শরীয়ত সমর্থিত নয়
, ২৫ যিলক্বদ শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ২৫ ছানী আ’শার, ১৩৯২ শামসী সন , ২৪ মে, ২০২৫ খ্রি:, ১১ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা

সউদি আরব যেভাবে যিলক্বদ মাস গণনা করছে তাতে এটা সহজেই বোঝা যাচ্ছে, আগামী ২৭শে মে, মঙ্গলবার হবে তাদের ২৯শে যিলক্বদ অর্থাৎ পবিত্র যিলহজ্জ শরীফ মাসের চাদ তালাশের দিন। আর তাদের উম্মুল কুরা ক্যালেন্ডারে পবিত্র যিলহজ্জ শরীফ মাসের শুরু আগাম দেখানো আছে ২৮ মে, বুধবার থেকে।
এটা সকলেরই জানা, হিজরী সনের প্রতিটি মাস শুরু হতে হবে চাঁদ দেখা সাপেক্ষে। চাঁদ দেখা গেলে মাসটি ২৯ দিনে গুনতে হবে আর দেখা না গেলে মাসটি ৩০ দিনে পূর্ণ করতে হবে। এটি সম্মানিত হাদীছ শরীফ দ্বারা সমর্থিত এবং সকল মাযহাবে মাস শুরুর ক্ষেত্রেই এই ফতওয়াই প্রদান করা হয়েছে।
বর্তমানে সউদি আরবসহ আরও অনেক মুসলিম দেশে এস্ট্রোনমিক্যাল ক্যালকুলেশন করে মাস শুরুর যে প্রচলন দেখা দিয়েছে, তা স্পষ্টতই বিদয়াত ও গুমরাহী এবং খালি চোখে চাঁদ না দেখে বরং এই ভুল ক্যালকুলেশন পদ্ধতিতে মাস গণনা এবং এর কারণে সঠিক তারিখে আরবী মাস শুরু না হবার কারণে মুসলমানগণের অনেক ইবাদত-বন্দেগী নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
যেমন পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাসের শুরু যদি ভুল তারিখে একদিন আগে শুরু হয় তবে রমাদ্বান শরীফের শুরুতেই একটি রোযা আবার পরবর্তী মাস শুরুর ক্ষেত্রে একই ঝামেলা থাকলে আরও একটি রোযা এবং লাইলাতুল ক্বদর তালাশ করার জন্য যে বেজোড় রাত্রিতে ইবাদত করার কথা সেটা জোড় রাত্রিতে হলে হাদীছ শরীফে উল্লেখিত ফযীলতসমূহ থেকে মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে।
এটি কেবল রমাদ্বান শরীফ মাসের কথা। এভাবে ঈদুল ফিতর, ঈদুল আদ্বহা, লাইলাতুল নিছফি মিন শাবান (শবে বরাত) ছাড়াও আরও যে সকল মাসে বিশেষ দিনসমূহ রয়েছে সেই দিনগুলো সঠিক তারিখে পালন করা যাচ্ছে না।
পবিত্র হজ্জ পালনের ক্ষেত্রে আরাফার ময়দানে ৯ই যিলহজ্জ শরীফ সূর্য ঢলার পর থেকে অবস্থান করা ফরয। এখন যিলহজ্জ শরীফ মাস চাঁদ না দেখে বা মনগড়া নিয়মে (ক্যালকুলেশন পদ্ধতিতে) শুরু হলে ৭ বা ৮ই যিলহজ্জ শরীফ আরাফার ময়দানে অবস্থান করলে হজ্জের আর যত অনুষঙ্গই পালন করা হোক না কেন পবিত্র হজ্জ বাতিল বিবেচিত হবে।
আগামী ২৭শে মে, মঙ্গলবার, সউদি আরবে যে চাঁদ দেখা যাবে না তার প্রমাণ এখানে উপস্থাপন করা যেতে পারে।
সেদিন সউদি আরবে (বিশেষভাবে পবিত্র মক্কা শরীফের অবস্থান বিবেচনায়) সূর্যাস্তের সময় চাঁদের বয়স হবে ১৪ ঘন্টা ১৩ মিনিট, সূর্যাস্তের পর চাঁদ অস্ত যাবার সময়ের পার্থক্য হবে ৩৮ মিনিট, দিগন্তরেখার উপর চাঁদের উচ্চতা হবে ৬ ডিগ্রী ৪১ আর্ক মিনিট, কৌণিক দূরত্ব হবে ৮ ডিগ্রী ৬ আর্ক মিনিট। চাঁদের এরকম অবস্থানে কখনোই চাঁদ খালি চোখে দৃশ্যমান হয় না। চাঁদ প্রথম খালি চোখে দেখার আকৃতিতে আসবে কানাডা ও আমেরিকার পূর্ব অঞ্চলের দিকে (তবে চাঁদ দেখা যাবে বা যাবে না তা নির্ভর করে আকাশ পরিস্কার থাকার সাথে) যেখান থেকে সউদি আরবের সময়ের পার্থক্য হবে প্রায় সাড়ে পাঁচ ঘন্টা। ২৭শে মে পবিত্র মক্কা শরীফে সন্ধ্যা হবে ৭ টার দিকে আর চাঁদ যে অঞ্চলে খালি চোখে দৃশ্যমান হবার আকৃতিতে আসবে সেখানকার স্থানীয় সময়ের বিবেচনায় পবিত্র মক্কা শরীফে সময় হবে রাত ১২টা ৩০ মিনিট। যদিও নিজ নিজ অঞ্চলে খালি চোখে চাঁদ দেখা সম্মানিত শরীয়তের শর্ত তারপরেও যারা দাবি করে পৃথিবীর কোথাও চাঁদ দেখা গেলে সারা বিশ্বের জন্য প্রযোজ্য, সেই অবান্তর নিয়মও প্রয়োগ করা সম্ভব হবে না কারণ চাঁদ সউদি আরবের পূর্বের কোন দেশ থেকে দৃশ্যমান হবে না বরং তা দেখা যেতে পারে তাদের পশ্চিমের কোন জায়গা থেকে আর এই অবস্থায় অর্থাৎ রাত ১২টা ৩০ মিনিটের দিকে যিলহজ্জ মাসের চাঁদ ঘোষণা হবে অবান্তর।
পূর্বে পবিত্র হজ্জের তারিখ ঘোষণা নিয়ে সউদি আরবের জালিয়াতির ব্যাপারে প্রমাণসহ উপস্থাপন করার পরেও অনেকেই এ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন । তাই আমরা সউদি আরবের উম্মুল কুরা ক্যালেন্ডারের ওয়েবসাইট থেকেই কিছু অংশ প্রকাশ করছি। যা দিয়ে সহজেই প্রমাণিত হবে যে, সউদি সরকার পবিত্র যিলহজ্জ শরীফ মাসসহ অন্যান্য মাসে চাঁদের তারিখ ঘোষণায় সম্মানিত শরীয়তের অনুসরণ করে না বরং যে নিয়মের অনুসরণ করে থাকে তা হচ্ছে ইহুদীদের চাঁদ দেখার নিয়মের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। তাদের উম্মুল কুরা ওয়েবসাইটেই খালি চোখে চাঁদ দেখে হিজরী সাল গণনার সাথে তাদের ক্যালেন্ডারের কি পার্থক্য তা স্পষ্ট লেখা রয়েছে। এবার বিবেচনার ভার পাঠকের হাতে এবং বিশ্বের অগণিত মুসলমানের কাছে। যেন উনারা নির্ধারণ করতে পারেন এযাবতকাল ধরে উনাদের দ্বারা পালিত হজ্জ আসলেই আদায় হচ্ছে কিনা।
Difference between the Umm al Qura calendar and other lunar calendars
Traditionally, Islamic lunar calendars were based on moon sightings. A lunar month would begin with the sighting of a nwe moon after sunset. A committee of people experienced in observing moon phases would gather to see the nwe moon at the end of the 29th day of lunar months. If a nwe moon is sighted, it will mark the beginning of the next lunar month. If a nwe moon is not sighted on the 29th, the 30th day will begin and the next day will be the 1st of the next lunar month.
However, the government of Saudi Arabia developed and employed the Umm al Qura calendar. This calendar, similar to other Islamic calendars, is based on the lunar cycle. However, it has a major difference as compared to other lunar calendars. Umm al Qura calendar is not based on the moon sightings, but on astronomical calculations that determine the phases of the moon. In this way, dates and months of lunar years in this calendar are determined through complex computational calculations. (উম্মুল কুরা ওয়েবসাইট থেকে হুবহু উদ্বৃত)
ঐতিহ্যগতভাবে, ইসলামিক চন্দ্র মাস ছিলো চাঁদ দেখার উপর নির্ভরশীল। চন্দ্র মাস শুরু হবে সূর্যাস্তের পর বাঁকা চাঁদ দেখে। চাঁদ দেখার ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ লোকজনের একটি কমিটি একত্রিত হবে প্রতি আরবী মাসের ২৯ তারিখে। যদি চাঁদ দেখা যায় তবে নতুন মাস শুরু হবে আর চাঁদ দেখা না গেলে মাস ত্রিশ দিনে পূর্ণ করার পর পরের দিন হবে নতুন মাসের শুরু।
যাই হোক সউদি সরকার তৈরি করেছে এবং চালু করেছে উম্মুল কুরা বর্ষপঞ্জী। এই ক্যালেন্ডারটি অন্যান্য ইসলামিক ক্যালেন্ডারের মত চাঁদের ঘূর্ণনের উপরই নির্ভরশীল। তবে অন্যান্য ইসলামিক ক্যালেন্ডারের সাথে এর বড় রকমের একটি পার্থক্য আছে। উম্মুল কুরা ক্যালেন্ডার চাঁদ দেখার উপর নির্ভরশীল নয় বরং তা একটি মহাকাশীয় বিদ্যার গণনা পদ্ধতি যা চাঁদের দশা বা অবস্থানকে নির্ণয় করে থাকে। এইভাবে একটি চন্দ্র বর্ষপঞ্জীর দিন, মাস জটিল গণনা পদ্ধতির মাধ্যমে উম্মুল কুরা ক্যালেন্ডারে নির্ণয় করা হয়ে থাকে।
-আল্লামা এবিএম রুহুল হাসান।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
উলামায়ে সূ’ ধর্ম ব্যবসায়ীদের পরিচিতি ও হাক্বীক্বত (৮)
১৪ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পর্দা পালন করা পুরুষ মহিলা সবার জন্য ফরজ
১৪ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৪ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
যে সকল ওলামায়ে সূ’রা মন্দির ও মূর্তি পাহারা দিয়েছে, হিন্দুদের পূজায় গিয়েছে, তাদেরকে পূজা করতে সাহায্য-সহযোগীতা করেছে, সমর্থন করেছে, সম্মতি প্রকাশ করেছে, তাদের সাথে মুছাফাহা ও মুয়ানাক্বা করেছে, তাদেরকে সম্মান করেছে, তা’যীম করেছে, তাদের সম্পর্কে সম্মানসূচক শব্দ ব্যবহার করেছে এবং সম্মানসূচক শব্দ দ্বারা সম্বোধন করেছে, বাহ বাহ দিয়েছে এবং বেশী বেশী মূর্তি তৈরি করতে বলেছে এবং বেশী বেশী পূজা করতে বলেছে তারা প্রত্যেকেই মূর্তিপূজারী ও মুশরিক হয়ে কাট্টা কাফির ও মুরতাদ হয়েছে (২৯)
১৪ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
১৪ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
১৩ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
১৩ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৩ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, রহমতুল্লিল আলামীন, রঊফুর রহীম, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিশেষ শান মুবারক ‘আছবারুছ ছবিরীন’ (২)
১৩ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হাদীছ শরীফে আরব দেশ থেকে ইহুদী-নাছারা তথা সমস্ত কাফির-মুশরিকদেরকে বের করে দেয়ার ব্যাপারে কঠোর হুশিয়ারী রয়েছে
১২ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
নামাযে মহান আল্লাহ পাক ও বান্দার মাঝে কথোপকথন
১২ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পর্দা রক্ষা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া ব্যভিচারের সমতুল্য
১২ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)