সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার ইতিহাসে শিল্প বিপ্লব
, ১৪ শা’বান শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ০৭ ‘আশির, ১৩৯০ শামসী সন , ০৭ মার্চ, ২০২৩ খ্রি:, ২১ ফাল্গুন, ১৪২৯ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) ইতিহাস
বর্তমান সময়ে মানুষ এই চিন্তা নিয়ে বড় হয় যে, শিল্পের উদ্ভাবন ও উৎপাদন পশ্চিমা সভ্যতার একক দান, যা আঠারো শতকের শিল্প বিপ্লবের পর সূচিত হয়েছিল। তাদের এই বিশ্বাস এত প্রবল যে কারো ধারণা জন্মাতে পারে, আঠারো থেকে উনিশ শতকে সম্পন্ন ইউরোপীয় শিল্প বিপ্লবের আগে পৃথিবীতে কোনো শিল্প-কারখানা ছিল না। অথচ পৃথিবীতে এর আগেও শিল্প-কারখানা ছিল এবং তার ক্রমবিকাশের ধারাও অব্যাহত ছিল। বিশেষত মুসলিম ইতিহাসের সোনালি অধ্যায়ে শিল্প, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অভাবনীয় উন্নয়ন হয়; বরং মুসলিম আমলে সাধিত শিল্প বিপ্লবই পরবর্তী সময়ে শিল্পোন্নয়নের মূল হিসেবে কাজ করেছিল।
* শহর অঞ্চলে শিল্প উদ্ভাবন ও রপ্তানিমুখী বাণিজ্যিক উৎপাদন শিল্প বিপ্লবের ১০ শতাব্দীকাল আগে থেকেই ছিল। মুসলিম বিজ্ঞানীরা এমন সব অভিনব আধুনিক মেশিনারিজ উদ্ভাবন করেছিলেন যেগুলো পানি ও বাতাসের সাহায্যে পরিচালিত হতো।
* মুসলিম বিশ্বে প্রচুর পরিমাণ খনিজ পদার্থ পরিশোধন করা হতো এবং স্থানীয় বাজারের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারেও তোলা হতো।
* চীন থেকে মুসলিম স্পেন পর্যন্ত সর্বত্র কাপড় উৎপাদন করা হতো এবং উৎপাদন পদ্ধতি খুব ভিন্ন ছিল না।
* আধুনিক শেয়ার ব্যবস্থার মতো শিল্পপ্রতিষ্ঠানের আর্থিক মূল্য নির্ণয় করে মূলধন বিনিয়োগ করা হতো।
আব্বাসীয় সালতানাতের সময় ইরাক ও ইরাকের বাইরে সব ধরনের পণ্য উৎপাদনে উৎসাহ ও প্রণোদনা দেওয়া হতো। বসরায় কাচ ও সাবান কারখানা গড়ে ওঠে। এই সময় কাগজশিল্পে বিশেষ উন্নয়ন ঘটে। মুসলিম বিশ্বে শিল্পের এই বিকাশ বিশ্বের অন্যান্য দেশ ও অঞ্চলকে প্রভাবিত করে। ইরাক, পারস্য, শাম ও খোরাসানের মতো মিসরেও শিল্পের ব্যাপক প্রসার ঘটে।
দামেস্ক ছিল স্টিলের তরবারির জন্য এবং সিরিয়া কাচশিল্পের জন্য খ্যাতি অর্জন করেছিল। খ্রি: নবম শতকের আগেই এখানে আংশিক রঙিন ও এনামেলযুক্ত কাচ উৎপাদন শুরু হয়।
আব্বাসীয় আমলে রপ্তানি পণ্যের শীর্ষে ছিল কৃষিপণ্য, কাচ, যন্ত্রপাতি, সিল্ক, কাপড়, সব ধরনের সুগন্ধি, গোলাপজল, জাফরান, সিরাপ ও তেল। যদিও মুসলিম বিশ্বের প্রতিটি শহরেই স্থানীয় প্রয়োজন পূরণের মতো বিভিন্ন প্রকার পদার্থ, কাচ, সুতা ও কাপড় উৎপাদনের ব্যবস্থা ছিল।
এক কথায় বলা যায়, আব্বাসীয় আমলে মুসলিম বিশ্বে এক অনন্য শিল্প বিপ্লব সাধিত হয়। যা সমগ্র মুসলিম বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে এবং কয়েক শতাব্দী পর্যন্ত মুসলিমরা সেই বিপ্লবের নেতৃত্ব দেন। সেই বিপ্লবের সুফল ভোগ করেছিল ইউরোপও। পরবর্তীতে শত শত বছর অন্ধকারে থাকা ইউরোপীয়ানরা মুসলমানদেরই শিল্প বিপ্লবের কাঠামো চুরি করে নিজেদের নামে চালিয়ে দিতে থাকে। যার ধারাবাহিকতা আজও চলমান।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৪২)
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
১৯৭১ সালে ভারতের লুটপাটের খতিয়ান এবং ভারতের কাছে বাংলাদেশের পাওনার পরিমাণ
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
ইতিহাস, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের উজ্জ্বল সাক্ষী সাতৈর শাহী মসজিদ (২)
১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৪১)
১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
কেমন ছিলো মোঘল সালতানাতের উট এবং হস্তিবাহিনীর ইতিহাস
১০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৪০)
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
কেমন ছিলো মোঘল সালতানাতের গোলন্দাজ এবং অশ্বারোহী বাহিনী
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পান্থনিবাস ও সরাইখানা নির্মাণে মুসলমানদের অনবদ্য অবদান
২৬ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৩৯)
১৫ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
মুসলমানদের শিক্ষা-দীক্ষার বিরোধিতায় বিধর্মী-অমুসলিমরা
১৪ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী বাংলার হিন্দু ধনিক-বণিক, বেনিয়া শ্রেণী, ব্যাংকার প্রভৃতির সাথে এক গভীর ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে মুসলিম
১৪ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইউরোপকে যেভাবে সমৃদ্ধ করেছেন আফ্রিকান মুসলমানরা
১২ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)












