সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার ঈমানদীপ্ত ঐতিহ্য (৪৩)
, ২৩ রবীউছ ছানী শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ২৯ খ্বমিস , ১৩৯২ শামসী সন , ২৭ অক্টোবর , ২০২৪ খ্রি:, ১১ কার্তিক, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
হযরত খুবাইব ইবনে আদী ইবনে আমের রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ঈমানদীপ্ত মহান আত্মত্যাগ
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ‘আদল’ ও ‘কারাহ’ গোত্রের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হযরত আছিম ইবনে ছাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নেতৃত্বে যে বাহিনীকে প্রেরণ করেন, সেই বাহিনীর অন্যতম সদস্য ছিলেন হযরত খুবাইব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। পথিমধ্যে স্থানীয় বনু লেহইয়ান গোত্রের মুশরিক সন্ত্রাসীদের সাথে জিহাদ করতে করতে প্রতিনিধিদলের সকলেই ঈমানদীপ্ত শাহাদাত মুবারক গ্রহণ করলেও হযরত খুবাইব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে জীবিত বন্দি করা হয়। কয়েক মাস উনাকে বন্দি রাখার পর পবিত্র হারাম শরীফ মাস অতিক্রম করলে মুশরিকরা মরিয়া হয়ে উঠে উনাকে শূলে চড়িয়ে শহীদ করার জন্য। নাঊযুবিল্লাহ!
তারা পবিত্র হারাম শরীফ উনার অদূরে তানঈম নামক স্থানে একটি গাছে শূলী কাঠ ঝুলায়। ব্যাপক ঢোল-শহরত করে মক্কা শরীফের নারী-পুরুষ, শিশু, যুবক, বৃদ্ধ নির্বিশেষে সকল শ্রেণীর মানুষের সমাবেশ ঘটানো হয়। শূলীতে চড়ানোর পূর্বে হযরত খুবাইব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি মুশরিকদের নিকট কিছুটা সময় চেয়ে নেন দু’ রাকায়াত নফল নামায পড়ার জন্য। অতঃপর তিনি দোয়া করলেন এই বলে- ‘আয় বারে ইলাহী! আমরা আপনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দাওয়াত পৌঁছে দিয়েছি, দয়া করে আপনিও আমাদের সংবাদ আপনার মহাসম্মানিত রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পৌঁছে দিন।’ সত্যিই পবিত্র ওহী মুবারকের মাধ্যমে পবিত্র মদীনা শরীফ থেকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সবকিছু অবহিত হচ্ছিলেন এবং উপস্থিত হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মাঝে তা বর্ণনা করছিলেন।
এদিকে শূলীতে উঠার ঠিক আগ মুহ‚র্তে হযরত খুবাইব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি গগনবিদারী চিৎকারে বলে উঠলেন, আছ ছলাতু আস সালামু আলাইকা ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! তৎক্ষণাৎ পবিত্র মদীনা শরীফ থেকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি জাওয়াব দিলেন, ওয়া আলাইকুমুস্ সালাম ইয়া খুবাইব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু!
শূলীতে চড়িয়ে একেবারে শেষ মুহ‚র্তে জনৈক কাফির উনাকে প্রশ্ন করে; আচ্ছা! আপনি কি এটা পছন্দ করেন যে, আপনার এই স্থানে আপনার পরিবর্তে আপনার যিনি রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে রাখা হোক? সাথে সাথে তিনি জবাব দিলেন, আমি এখান থেকে ফিরে গিয়ে আমার পরিবার পরিজনের সাথে নিশ্চিন্তে নিরাপদে অবস্থান করি এবং তার বিনিময়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জিসিম মুবারকের কোথাও একটা কাঁটারও আচর লাগুক; মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! আমি তা কস্মিনকালেও কোন কিছুর বিনিময়ে বরদাশত করবো না।’ অতঃপর প্রায় অর্ধশতাধিক কাফির তীরন্দাজ একই সাথে অতর্কিতে হযরত খুবাইব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে লক্ষ্য করে তীর নিক্ষেপ করলো। এতে উনার শরীর মুবারক এতো বেশি ঝাঁঝরা হয়ে যায় যাতে গোশত টুকরা টুকরা হয়ে খসে পড়ছিল। ঐ অবস্থায় উনাকে রেখে মুশরিকরা রাত দিন পাহারা দিতে লাগলো।
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কয়েকজন দক্ষ গোয়েন্দা ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে প্রেরণ করলেন হযরত খুবাইব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার শহীদি জিসিম মুবারক কৌশলে নিয়ে আসার জন্য। গোয়েন্দা ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা সেখানে পৌঁছে দেখেন গভীর রাতে প্রায় ৪০ জন মুশরিক সশস্ত্র অবস্থায় নেশামত্ত হয়ে শহীদি জিসিম মুবারকের আশপাশে পাহারা দিচ্ছে। খুবই কৌশলে উনারা শহীদি দেহ মুবারক শূলী থেকে নামাতে সক্ষম হন। ইতোমধ্যে পাহারাদার মুশরিকরা তা টের পেয়ে যায়। তারা একাধিক দিক থেকে তীর বল্লম নিক্ষেপ করতে করতে পিছু নিলো। চরম প্রতিক‚ল অবস্থায় গোয়েন্দা ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা হযরত খুবাইব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার জিসিম মুবারক যমীনে রেখে দিলেন। মুশরিকরা জিসিম মুবারকের কাছে ঘেঁষার পূর্বেই যমীন ফেটে গিয়ে হযরত খুবাইব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে গ্রহণ করলো। সুবহানাল্লাহ!
এ কারণেই হযরত খুবাইব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ‘বালীউল আরদ্’ লক্বব মুবারকে সম্মানিত দ্বীন ইসলামের ইতিহাসে চির স্মরণীয় হয়ে রয়েছেন।
ঈমানদীপ্ত ইবরত:
ঈমানদীপ্ত শাহাদাতের পূর্ব মুহ‚র্তেও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা যে মহাসম্মানিত হাবীব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুহব্বত মুবারকের যিকিরে লিপ্ত থাকতেন- তারই অনন্য উদাহরণ হযরত খুবাইব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার উপরোক্ত ঈমানদীপ্ত ঘটনা। স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ছলাত-সালাম মুবারক পাঠের মাধ্যমেই উনার ঈমানদীপ্ত জিন্দেগীর পরিসমাপ্তি ঘটে। কারণ উনারা দৃঢ়ভাবেই বিশ্বাস করতেন, ইয়াক্বীন রাখতেন যে, মূলতঃ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যিকিরই হলো ঈমান। আর এমনই ঈমান উম্মাহ’র মাঝে জাগ্রত করতে প্রতিনিয়ত জাহিরী-বাতিনী কোশেশে মগ্ন রয়েছেন; মুজাদ্দিদে আ’যম, সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম তিনি এবং উনার মহাসম্মানিত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা।
প্রত্যেক বান্দা-বান্দী তথা উম্মতের জন্য অপরিহার্য দায়িত্ব-কর্তব্য হলো; কঠিন মুহ‚র্তেও হযরত খুবাইব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার মত ঈমান প্রকাশের হিম্মত অর্জনের জন্য উনাদের মুবারক ছোহবত ইখতিয়ার করা। মহান আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা তেমনই দীপ্ত ঈমানের জন্য আমাদের সবাইকে কবুল করুন। আমীন। (সমাপ্ত)
-মুহম্মদ মুহাজিরুল ইসলাম।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
অ্যান্টার্কটিকা নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় বিজ্ঞানীরা
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম (৪)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা অবশ্যই সত্যের মাপকাঠি; অস্বীকারকারীরা কাট্টা কাফির (১)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র দু‘আ বা মুনাজাত (১১তম অংশ)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম (৩)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুনিয়ার যমীনে অবস্থানকালীন সময়ে ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ যে রোযা মুবারক রাখতেন সে রোযা মুবারক মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ১২ই শরীফ উনার দিনে হওয়াটা ছিলো একটি বিরল ঘটনা (২)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত হাযির-নাযির শান মুবারক (১)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
প্রাণীর ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
আল্লাহওয়ালী মহিলা উনাদের তিনটি বৈশিষ্ট্য-
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)












