সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার ঈমানদীপ্ত ঐতিহ্য (৪৬)
, ১৬ ই জুমাদাল ঊলা শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ২২ সাদিস, ১৩৯২ শামসী সন , ১৯ নভেম্বর, ২০২৪ খ্রি:, ০৪ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
হযরত আবু লুবাবা ইবনে আব্দুল মুনযির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ঈমানদীপ্ত তওবার অবিস্মরণীয় মেছাল
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক নির্দেশে ৫ম হিজরী সনে মদীনা শরীফের আউস গোত্রের অন্যতম প্রধান মিত্র বনী কুরাইজার ইহুদী গোত্রকে চুক্তি ভঙ্গ, বিশ্বাসঘাতকতা এবং মুনাফিকীর দরুণ অবরোধ করা হয়। এ অবস্থায় ইহুদী চক্র পরামর্শের জন্য আউস গোত্রীয় কাউকে তাদের নিকট পাঠানোর জন্য বিনীত অনুরোধ করে।
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তখন হযরত আবু লুবাবা ইবনে আব্দুল মুনযির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে সেখানে প্রেরণ করেন। ইহুদী চক্রের সাথে আলোচনার এক পর্যায়ে তিনি তাদেরকে বলেন, আমার মতে তোমরা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ফরমান মুতাবিক অস্ত্র সমর্পণ করো ও অন্যান্য নির্দেশনা মেনে নাও। নতুবা... বলে হযরত আবু লুবাবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার গলা মুবারকের দিকে ইশারা করলেন অর্থাৎ বুঝিয়ে দিলেন যে, না মানলে গলায় ছুরি চালানো হবে।
গলা মুবারকের দিকে ইশারা করার পর মুহূর্তেই হযরত আবু লুবাবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ‘ইন্না লিল্লাহ’ পাঠ করে ভীষণ চিন্তিত হয়ে পড়লেন। উনার ইশারা দ্বারা না জানি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আমানত মুবারকের খিয়ানত হয়ে গেল। তৎক্ষণাৎ তিনি সেখান থেকে সরাসরি ছুটে গেলেন মসজিদে নববী শরীফের দিকে। একটা মোটা ও ভারী শিকল দিয়ে নিজেকে মসজিদে নববী শরীফের একটি খুঁটি মুবারকের সাথে ভালভাবে বেঁধে অঝোর নয়নে তওবা-ইস্তিগফার রোনাজারী করতে লাগলেন। এই সময় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত আবু লুবাবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার খবর নিলেন। তখন কেউ একজন বিস্তারিত ঘটনা খুলে বললেন।
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, ‘উনি যদি আমার নিকট সরাসরি চলে আসতেন তবে আমিই তো উনার মাগফিরাতের জন্য দোয়া করতাম। ’ সুবহানাল্লাহ!
এদিকে হযরত আবু লুবাবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ঐ অবস্থায় ৮/৯ দিন মতান্তরে ২০ দিন পর্যন্ত থাকলেন। শুধুমাত্র নামায ও জরুরতের সময় উনার আহলিয়া কিংবা কন্যা এসে বাঁধন খুলে দিতেন আবার বেঁধে দিতেন। এ সময় খানাপিনাও সম্পূর্ণরূপে পরিত্যাগ করলেন। এতে উনার শ্রবণশক্তি এমনকি দৃষ্টিশক্তিও লোপ পাওয়ার উপক্রম হলো। অবশেষে নিতান্ত দুর্বল হয়ে বেহুশ অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। ঠিক এ অবস্থায় উনার ঈমানদীপ্ত অনুতাপে সন্তুষ্ট হয়ে মহান আল্লাহ পাক তিনি ফজরের নামাযের কিছু পূর্বে আয়াত শরীফ নাযিল করলেন।
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তখন সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আস সাদিসাহ আলাইহাস সালাম উনার হুজরা শরীফে ছিলেন। নূরানী চেহারা মুবারকে মুচকি হাসি মুবারক দেখে হযরত উম্মুল মু’মিনীন আলাইহাস সালাম আরজ করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! মহান আল্লাহ পাক তিনি তো আপনাকে সবসময়ই খুশির মধ্যে রেখেছেন; কিন্তু এখন কি ব্যাপার একটু খুলে বলবেন কি?
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, “হযরত আবু লুবাবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ঈমানদীপ্ত অনুতাপে মহান আল্লাহ পাক তিনি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং এ সম্পর্কে আয়াত শরীফ নাযিল করেছেন। ” তখন হযরত উম্মুল মু’মিনীন আলাইহাস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক ইজাযত নিয়ে (তখনও পর্দার হুকুম নাযিল হয়নি) হযরত আবু লুবাবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টির কথা ঘোষণা করে দিলেন। ঘোষণা শুনে দলে দলে লোকজন উনার বাঁধন খুলে দিতে জড়ো হলেন। কিন্তু হযরত আবু লুবাবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু দীপ্তকণ্ঠে বলে দিলেন, “মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! যতক্ষণ পর্যন্ত আমার প্রাণের আক্বা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজ হাত মুবারকে আমার বাঁধন না খুলবেন ততক্ষণ পর্যন্ত আমি এভাবেই পড়ে থাকবো। ” অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ফজরের নামাযের জন্য মসজিদে নববী শরীফে তাশরীফ আনলে নিজ নূরুল মাগফিরাত মুবারক অর্থাৎ হাত মুবারকে হযরত আবূ লুবাবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার বাঁধন খুলে দেন। সুবহানাল্লাহ!
অতঃপর খুশিতে আত্মহারা হয়ে হযরত আবু লুবাবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে জড়িয়ে ধরেন আর বলতে থাকেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমার সবকিছুই আপনার জন্য কুরবান। ধন-সম্পদের সবটুকুই মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় দান করে দিলাম। মেহেরবানী করে আবাদুল আবাদের জন্য আপনার কদম মুবারকে আমাকে ঠাঁই দিন। সুবহানাল্লাহি ওয়া রসূলিহী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!
ঈমানদীপ্ত ইবরত:
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আদেশ মুবারকের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম-পুঙ্খানুপুঙ্খ বাস্তবায়নে কতটুকু ভয়, আদব এবং সতর্কতা অপরিহার্য সেটারই জ্বলজ্যান্ত মেছাল রেখে গেছেন হযরত আবু লুবাবা ইবনে আব্দুল মুনযির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। যিনি ছিলেন ঐতিহাসিক বদরের জিহাদের সময় পবিত্র মদীনাতুল মুনাওয়ারাহ শরীফে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার স্থলাভিষিক্ত একান্ত বিশ্বস্ত নায়িব। মূলতঃ প্রত্যেক যুগের নায়িবে রসূল, মহান আল্লাহ পাক উনার লক্ষ্যস্থল ওলীআল্লাহগণের প্রতি মুহব্বত আনুগত্য এবং বিশ্বস্ততা অর্জনে উম্মাহর জন্য অনন্য মেছাল হযরত আবু লুবাবা ইবনে আব্দুল মুনযির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ঈমানদীপ্ত তওবার উপরোক্ত মেছাল।
অতএব, বর্তমান যামানায় আল্লাহ পাক উনার লক্ষ্যস্থল ওলীআল্লাহ, আহলে বাইতে রসূল, মুজাদ্দিদে আ’যম, সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম এবং উনার সম্মানিত আহলে বাইত শরীফ উনাদের প্রতিও প্রত্যেকের একান্ত দায়িত্ব ও কর্তব্য সর্বাবস্থায় উনাদের পুঙ্খানুপুঙ্খ সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম আনুগত্য প্রদর্শন হচ্ছে কিনা- সে বিষয়ে অনুক্ষণ সজাগ সতর্কাবস্থায় গোলামীতে লিপ্ত থাকা।
-মুহম্মদ মুহাজিরুল ইসলাম।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (২)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যাকাত সম্পর্কিত আহকাম, মাসায়িল ও ফাযায়িল (২)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পর্দা পালন করা পুরুষ-মহিলা সবার জন্য ফরজ
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত মুবারক করা সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসীর জন্য ফরযে আইন
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে ছিরাতুল মুস্তাক্বীম উনার ছহীহ তাফসীর- ০১
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
যেখানে প্রাণীর ছবি থাকে, সেখানে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করেন না
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
যা খাওয়া হারাম করা হয়েছে
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ইবলিসের পরে দ্বিতীয় উলামায়ে সূ হলো বালয়াম বিন বাউরা
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পবিত্র ক্বাবলাল জুমুআহ্, বা’দাল জুমুআহ্ এবং সুন্নাতুল ওয়াক্ত নামায উনার শরঈ আহকাম (৪)
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)












