সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে লেবাস বা পোশাকের হুকুম-আহকাম (১০)
, ৭ই শা’বান শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ১০ তাসি’, ১৩৯২ শামসী সন , ০৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রি:, ২৪ মাঘ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
লম্বা বা কিস্তি টুপি:
শরীয়তের দৃষ্টিতে লম্বা বা কিস্তি টুপি পরিধান করা হারাম। কারণ লম্বা টুপি কাফির, বেদ্বীন ও হিন্দু মারওয়ারীদের খাছ টুপি। এ প্রসঙ্গে বিখ্যাত মুফাসসির, ইমাম ক্বাজী বায়জাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার প্রসিদ্ধ তাফসীরে বায়জাবীর মধ্যে পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ উনার ৬নং আয়াত শরীফ (اِنَّ الَّذِينَ كَفَرُواْ سَوَاءٌ عَلَيْهِمْ) -এর তাফসীরে উল্লেখ করেন-
لُبْسُ الْغِيَارِ وَشَدُّ الزُّنَّارِ وَنَحْوُهُمَا كُفْرًا.
অর্থ: “গিয়ার বা লম্বা টুপি পরিধান করা ও পৈতা বাধা এবং এতদুভয়ের অনুরূপ পোশাক পরিধান করা কুফরী। ” (তাফসীরে বায়জাবী, ২৩ পৃষ্ঠা)
উল্লেখ্য, অন্যান্য কিতাবে গিয়ার (اَلْغِيَارُ) শব্দের বিস্তারিত ব্যাখ্যা ও আহকাম বর্ণনা করা হয়েছে। যেমন তাফসীরে বায়জাবীর বিখ্যাত শরাহ “হাশিয়ায়ে মুহিউদ্দীন শায়খ যাদাহ ১ম খ- ১০৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, “গিয়ার, তা হলো লম্বা টুপি, যা ইসলামের প্রাথমিক যুগে ব্যবহার করা হতো এবং তা বর্তমানে কাফিরদের খাছ শেয়ার বা আলামত। যেরূপ নাছারাদের খাছ আলামত হচ্ছে টাই। ”
অনুরূপ হাশিয়াতুল শিহাব আল মুসাম্মাহ ইনায়াতুল ক্বাজী ওয়া কিফাইয়াত্তুর রাজী আলা তাফসীরিল বায়জাবী ১ম খ- ২৬৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে, “গিয়ার হচ্ছে লম্বা টুপি, যা ইসলাম পূর্ব যুগে ব্যবহার করা হতো। আর তা কাফিরদেরই শেয়ার বা আলামত। ” অনুরূপ তাকরীরুল হাবী ফী হল্লে বায়জাবী ২য় খ-ে ৩৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে।
আর এ প্রসঙ্গে হযরতুল আল্লামা রুহুল আমীন বশীরহাটি রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কর্তৃক প্রণীত বিশ্ববিখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য দলীল সমৃদ্ধ ফতওয়ার কিতাব “ফতওয়ায়ে আমীনিয়া”তে উল্লেখ করেন, “কিস্তি (লম্বা) টুপি খাছ মারওয়ারিদের (হিন্দুদের) পোশাক”।
হুজ্জাতুল ইসলাম, হযরত ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার বিখ্যাত কিতাব “আল মুর্শিদুল আমীন” কিতাবে লিখেন, ইবলীস যখন হযরত মূসা কালিমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সাথে সাক্ষাৎ করে, তখন ইবলীসের মাথায় লম্বা টুপি ছিলো।
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা অকাট্যভাবেই প্রমাণিত হলো যে, লম্বা বা কিস্তি টুপি পরিধান করা হারাম ও কুফরী। কেননা তাতে কাফির ও হিন্দু মারওয়ারীদের সাথে সাদৃশ হয় ও তাদের খাছ শিয়ার বা আমলকে অনুসরণ করা হয়, যা শরীয়তের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণই হারাম। সুতরাং কেউ যদি কিস্তি বা দোপাট্টা টুপি পরিধান করে, তাতে সুন্নতের অনুসরণ তো হবেই না বরং তা হিন্দু মারওয়ারীদের সাথে সাদৃশ হওয়ার কারণে কাট্টা হারাম। কেননা বেদ্বীন বা বিধর্মীদের সাথে কোন ব্যাপারে সাদৃশ্য রাখা শরীয়তের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ হারাম।
উঁচু বা বুরনুস টুপি:
উঁচু বা উপরের দিকে লম্বা টুপি যাকে আরবীতে ‘বুরনুস’ বলা হয়। এ টুপি পরিধান করাও হারাম। কেননা বুরনুস টুপি খৃষ্টান সন্নাসীদের খাছ টুপি। এ প্রসঙ্গে বিখ্যাত মুহাদ্দিছ ইমাম তিবরানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার “আওছাত” কিতাবে বর্ণনা করেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “সাবধান!” তোমরা খৃষ্টান সন্নাসীদের পোশাক হতে বেঁচে থাকো। নিশ্চয়ই যারা খৃষ্টানী পোশাক দ্বারা নিজেদের সুসজ্জিত করে অথবা খৃষ্টানদের অনুরূপ পোশাক পরিধান করে, তারা আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়। ”
পাঁচ কল্লি টুপি:
পবিত্র হাদীছ শরীফের কোথাও উল্লেখ নেই যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম তথা খাইরুল কুরুনের কেউ পাঁচ কল্লি টুপি পরিধান করেছেন। মূলত খাইরুল কুরুনে পাঁচ কল্লি টুপির কোন অস্তিত্বই ছিলো না।
উল্লেখ্য, পাঁচ কল্লি টুপির উৎপত্তিকারক হচ্ছে আকাবিরে দেওবন্দ। মূলত তাদের মাধ্যমেই পাঁচ কল্লি টুপির রেওয়াজ চালু হয়। যেমন এ প্রসঙ্গে দেওবন্দের মুহাদ্দিছ আছগর হোসাইন দেহলভী তার “গুলজারে সুন্নত” কিতাবে লিখেছে-
اسى غرض سے اكابر دين مين ݒانج كلى كى طوݒى كا رواج هوا هے.
অর্থ: “এ উদ্দেশ্যেই আকাবিরে দ্বীনগণের মধ্যে পাঁচকল্লি টুপির রেওয়াজ চালু হয়। ”
অতএব, সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হলো যে, পাঁচ কল্লি টুপি নতুন উদ্ভুত আমল, যাকে শরীয়তে বিদয়াত বলা হয়। যে বিদয়াত সম্পর্কে হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ اَحْدَثَ فِىْ اَمْرِنَا هَذَ مَالَيْسَ مِنْهُ فَهُوَ رَذٌ.
অর্থ: “যে ব্যক্তি আমার এ দ্বীনের ভিতরে কোন নতুন আমলের প্রবর্তন করবে, যার ভিত্তি এ দ্বীনের ভিতরে নেই, তা অবশ্যই পরিত্যাজ্য। ” (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ)
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
অ্যান্টার্কটিকা নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় বিজ্ঞানীরা
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম (৪)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা অবশ্যই সত্যের মাপকাঠি; অস্বীকারকারীরা কাট্টা কাফির (১)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র দু‘আ বা মুনাজাত (১১তম অংশ)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম (৩)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুনিয়ার যমীনে অবস্থানকালীন সময়ে ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ যে রোযা মুবারক রাখতেন সে রোযা মুবারক মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ১২ই শরীফ উনার দিনে হওয়াটা ছিলো একটি বিরল ঘটনা (২)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত হাযির-নাযির শান মুবারক (১)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
প্রাণীর ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
আল্লাহওয়ালী মহিলা উনাদের তিনটি বৈশিষ্ট্য-
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)












