সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে লেবাস বা পোশাকের হুকুম-আহকাম (১২)
, ২০ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০:০০ এএম ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
সুন্নতি পাগড়ী:
পাগড়ী পরিধান করা দায়েমী সুন্নত। মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বদা পাগড়ী মুবারক পরিধান করতেন। মক্কা শরীফ বিজয়ের সময়ে উনার মহাসম্মানিত নূরুল হুদা মুবারক অর্থাৎ মাথা মুবারকে কালো পাগড়ী মুবারক ছিলো। তিনি পাগড়ী মুবারকের নিচে এবং পাগড়ী ব্যতীত শুধু টুপি মুবারকও ব্যবহার করেছেন।
পাগড়ী সম্বন্ধে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “মানুষ যখন পাগড়ী পরা ছেড়ে দিবে, তখন তাদের থেকে দ্বীন চলে যাবে।”
অন্যত্র তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “পাগড়ী বাঁধো- যা ইসলামের নিদর্শন, মুসলমান ও কাফিরদের মধ্যে পার্থক্যকারী।”
পাগড়ী পরে নামায পড়লে ৭০ গুণ বেশী ছওয়াব লাভ করা যায়। (শামায়েলে তিরমিযী শরীফ, সিহাহ সিত্তাহ, মিরকাত শরীফ, মাদারেজুন নুবুওওয়াত, সিরাতুন নবী, জামউল ওসায়েল ইত্যাদি)
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অধিকাংশ সময় যে পাগড়ী মুবারক ব্যবহার করতেন তা ছিলো সাত হাত লম্বা। হুজরা শরীফের মধ্যে ব্যবহার করতেন তিন হাত এবং ঈদ, জুমুয়া ও দূতদের জন্যে ব্যবহার করতেন ১২ হাত লম্বা পাগড়ী মুবারক। (আদাবুন নবী)
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কালো, সবুজ, সাদা, ধূসর ইত্যাদি বিভিন্ন রংয়ের পাগড়ী মুবারক পরিধান করতেন। তবে কালো পাগড়ী মুবারকই বেশী ব্যবহার করতেন। (শামায়েলে তিরমিযী শরীফ, জামউল ওসায়েল ও সীরত গ্রন্থসমূহ)
সিমলা ১ বিঘত থেকে ১ হাতের মধ্যে হওয়া বাঞ্ছনীয় এবং তা দু’কাঁধের মধ্যখানে ঝুলিয়ে রাখা উত্তম। তবে কখনো বা সম্মুখ ভাগের ডান দিকে ঝুলিয়ে রাখাও দুরস্ত আছে। (শামায়েলে তিরমিযী শরীফ, জামউল ওসায়েল)
বিধর্মীদের অনুসরণ করা হারাম:
আমিরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন, সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি উনার খিলাফতকালে যখন খিলাফত উনার সীমানা বিস্তৃৃত হতে থাকে। এমনকি শক্তিধর রোম-পারস্যের তখত উলট-পালট হয়ে যায়। দলে দলে মানুষ সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করতে থাকে, সাথে সাথে আযমীদের (অনারবদের) চাল-চলন ও লিবাসের নমুনাও দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে অনুপ্রবেশ করে। এ প্রসঙ্গে সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুন্নত মুবারক ও পবিত্র কুরআন শরীফ উনার হুকুম-আহকামকে বাস্তবায়ন ও আযমীদের (অনারব) চাল-চলন ও লিবাসকে পরিহার করে চলার জন্য বিভিন্ন ভূখ- ও প্রদেশে ফরমান মুবারক পাঠিয়েছেন।
খলীফাতুল মুসলিমীন, সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি পারস্যের অধিবাসীদের জন্য যে ফরমান পাঠান, তা এভাবে বর্ণিত আছে-
عن حضرة عمر عليه السلام انه كتب الى الـمسلمين الـممين بيلاد فارس اياكم وذى اهل الـمشرك.
অর্থ: “খলীফাতুল মুসলিমীন, সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি যে সমস্ত মুসলমান পারস্যে অবস্থান করছিলেন, উনাদের উদ্দেশ্যে লিখেন, হে মুসলমানগণ! নিজেকে মুশরিক ও কাফিরদের লিবাস ও চাল-চলন হতে দূরে রাখো।” (বুখারী শরীফ)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত আছে যে, হযরত আবূ উছমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমি আজারবাইজানে ছিলাম, আমাদের সেনাপতি হযরত ওতবা বিন ফরকাদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নামে খলীফাতুল মুসলিমীন আলাইহিস সালাম তিনি এ ফরমান পাঠান-
يا عتبة بن فرقد اياكم اياكم والتنعم وزى اهل الـمشرك ولبوس الـحرير.
অর্থ: “হে ওতবা বিন ফরকাদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! আপনাদের সকলের জন্যই এটা ফরয যে, স্বাচ্ছন্দ ও কোমল জীবন যাপন এবং কাফির-মুশরিকদের লিবাস ও চাল-চলন হতে এবং রেশমী কাপড় ব্যবহার হতে পরহিয করুন।” (মুসনাদে আহমদ শরীফ)
ইহা হতে প্রতীয়মান হয় যে, মুসলমানদের জন্য কাফির-মুশরিকদের পোশাক-পরিচ্ছদ, চাল-চলন ইত্যাদির অনুসরণ করা হতে পরহিয করতে হবে। এ সমস্ত পোশাক পরিধান করলে মুসলমানদের স্বাতন্ত্র চিন্তা আর থাকে না। কোনা ফাঁড়া পাঞ্জাবী, চোষ পায়জামা, আসকা, কিস্তি টুপি ইত্যাদি হিন্দুদের পোশাক, হিন্দুদের থেকে এর উৎপত্তি; শার্ট, প্যান্ট, কোট, টাই ইত্যাদি খৃষ্টানদের পোশাক, তাদের থেকেই এর উৎপত্তি; তাই এ সমস্ত পোশাক-পরিচ্ছদ হতে পরহিয করার জন্যই আমিরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি উক্ত ফরমান মুবারক দিয়েছেন। কেননা উক্ত সমস্ত পোশাকই আযমীদের পোশাক। উক্ত ফরমান মুবারক কোন স্থান, কালের সাথে সম্পর্কযুক্ত নয়, বরং ক্বিয়ামত পর্যন্ত উক্ত হুকুম জারি থাকবে। (আল বাইয়্যিনাত শরীফ, ১৬তম সংখ্যা ৫০ পৃষ্ঠা)
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
অ্যান্টার্কটিকা নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় বিজ্ঞানীরা
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম (৪)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা অবশ্যই সত্যের মাপকাঠি; অস্বীকারকারীরা কাট্টা কাফির (১)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র দু‘আ বা মুনাজাত (১১তম অংশ)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম (৩)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুনিয়ার যমীনে অবস্থানকালীন সময়ে ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ যে রোযা মুবারক রাখতেন সে রোযা মুবারক মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ১২ই শরীফ উনার দিনে হওয়াটা ছিলো একটি বিরল ঘটনা (২)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত হাযির-নাযির শান মুবারক (১)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
প্রাণীর ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
আল্লাহওয়ালী মহিলা উনাদের তিনটি বৈশিষ্ট্য-
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)












