সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুর রবি’য়াহ যাহরা আলাইহাস সালাম উনার পবিত্রতম সাওয়ানেহ উমরী মুবারক
, ০৩ রমাদ্বান শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ১৫ আশির, ১৩৯১ শামসী সন , ১৪ মার্চ, ২০২৪ খ্রি:, ৩০ ফাল্গুন, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
এ বিষয়ে সকল হযরত উলামায়ে কিরাম একমত যে, হযরত বানাতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা সকলেই উম্মুল মু’মিনীন হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার মাধ্যমে তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করেছেন। হযরত বানাতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মধ্যে সাইয়্যিদাতুন নিসা, সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুর রবি’য়াহ যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি চতুর্থতম। আর হযরত আওলাদু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মধ্যে সাইয়্যিদাতুন নিসা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি সপ্তম।
সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুর রবি’য়াহ যাহরা আলাইহাস সালাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করার মুবারক সময় সম্পর্কে বিভিন্ন ইখতিলাফ পাওয়া যায়। তবে সাইয়্যিদাতুন নিসা, সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুর রবি’য়াহ যাহরা আলাইহাস সালাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের বিষয়টি সুস্পষ্ট করেছেন মুজাদ্দিদে আ’যম সাইয়্যিদুনা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম। তিনি এ মুবারক বিষয়ে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে তিনি সরাসরি জিজ্ঞাসা করে জেনে নিয়েছেন এবং উম্মাহকে জানিয়েছেন। তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুনিয়াবী হায়াত মুবারক যখন সাঁইত্রিশ বছর, সেই বছর পবিত্র জুমাদাল উখরা শরীফ উনার ২০ তারিখ ইয়াওমুল জুমুআ’হ সুবহে ছাদিকের মুবারক সময়ে সাইয়্যিদাতুন নিসা, সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুর রবি’য়াহ যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন।
মুবারক খিদমতে জান্নাতী সম্মানিত মহিলাগণ:
কিতাবে উল্লেখ করা হয়- “উম্মুল মু’মিনীন হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি বর্ণনা করেন, সাইয়্যিদাতুন নিসা সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুর রবি’য়াহ যাহরা আলাইহাস সালাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের সময় যখন নিকটবর্তী হলো, তখন খাদেমাগণ উনাদেরকে সংবাদ দেয়া হলো। কিন্তু দেখা গেলো, শেষ মুহূর্তেও কেউ আসতে পারলেন না। কাউকে পাওয়া গেলো না। তখন দেখা গেলো, পবিত্র হুজরা শরীফ উনার মধ্যে চারজন সম্মানিতা মহিলা উনারা উপস্থিত হয়েছেন। উনাদের চেহারা মুবারক অত্যন্ত নূরানী ও উজ্জ্বল। ছূরতান উনাদেরকে পরিচিত মনে হচ্ছিল না। বিষয়টি পরিষ্কার করার জন্য উম্মুল মু’মিনীন হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি উনাদের পরিচয় মুবারক জিজ্ঞাসা করলেন। উনারা পর্যায়ক্রমে পরিচয় মুবারক দিলেন। প্রথমজন বললেন, তিনি উম্মুল বাশার হযরত হাওওয়া আলাইহাস সালাম। দ্বিতীয়জন বললেন, তিনি রব্বাতু কালীমিল্লাহ হযরত আসীয়া আলাইহাস সালাম। তৃতীয়জন বললেন, তিনি উখতু কালীমিল্লাহ হযরত উম্মু কুলছুম আলাইহাস সালাম। চতুর্থজন বললেন, তিনি উম্মু রুহিল্লাহ হযরত মারইয়াম আলাইহাস সালাম।” সুবহানাল্লাহ!
অর্থাৎ স্বয়ং খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি সাইয়্যিদাতুন নিসা, সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুর রবি’য়াহ যাহরা আলাইহাস সালাম উনার মুবারক খিদমতের জন্য জান্নাত হতে সম্মানিতা মহিলাগণ উনাদেরকে পাঠিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!
মুবারক খিদমতের অনন্য দৃষ্টান্ত :
উম্মুল মু’মিনীন হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করার কিছুদিন পর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তায়েফে তাশরীফ মুবারক রাখলেন। তিনি তাদেরকে পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার দাওয়াত মুবারক প্রদান করলেন। তায়েফবাসীরা পবিত্র দ্বীন ইসলাম গ্রহণতো করলোই না, বরং তারা শিশু ও গোলামদেরকে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে জুলূম করার জন্য নিয়োজিত করলো। তারা উনার পবিত্র জিসম মুবারক লক্ষ্য করে পাথর ছুঁড়ে মারতে লাগলো। নাউযুবিল্লাহ! পাথরের আঘাতে পবিত্র জিসিম মুবারক হতে পবিত্র নুরুন নাজাত মুবারক প্রকাশ পেতে লাগলো। (মাদারেজুন নুবওওয়াত)
অন্য বর্ণনায় রয়েছে- তায়েফের মুবারক ছফরে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত যায়েদ বিন হারিছা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে খাদিম হিসেবে সাথে নিয়েছিলেন। সেখানকার কাফিররা যখন উনাকে লক্ষ্য করে পাথর ছুঁড়তে লাগলো, পাথরের আঘাতে পবিত্র জিসিম মুবারক হতে নূরুন নাজাত মুবারক প্রকাশ পেতে লাগলো। দেখা গেলো- নূরুন নাজাত মুবারক প্রবাহিত হওয়ার কারণে পবিত্র ক্বদম মুবারক উনার সাথে পবিত্র না’লাইন শরীফ লেগে গেলেন।
উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন- নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক খিদমতে আমি আরজ করলাম, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! ‘উহুদের যে (পবিত্র দান্দান শরীফ শহীদ হওয়ার) ঘটনা রয়েছে তার চেয়েও বেদনাবিধুর কোনো ঘটনা কি রয়েছে? যা আপনাকে কষ্ট দেয়।’ তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন- তারা আমাকে কঠিন হতে কঠিনতর কষ্ট দিয়েছে। তবে আমি সর্বাধিক কষ্ট পেয়েছি তায়েফের ছফরে।” (বুখারী শরীফ)
এখন কথা হলো- তায়েফের সেই ঘটনা যখন সংঘটিত হয়, তখন কোনো উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা হুজরা শরীফ-এ ছিলেন না। তাহলে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লøাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন তায়েফ হতে ফিরে আসলেন, তখন মুবারক খিদমতে আঞ্জাম দিয়েছেন কে? সেই কঠিন সময়ে পবিত্র হুজরা শরীফ-এ সার্বিক খিদমতে আঞ্জাম দিয়েছেন সাইয়্যিদাতুন নিসা আছ ছালিছা হযরত উম্মু কুলছুম আলাইহাস সালাম এবং সাইয়্যিদাতুন নিসা সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুর রবি’য়াহ যাহরা আলাইহাস সালাম। সুবহানাল্লাহ!
উনারা সেই কঠিন সময়ে মুবারক খিদমতে যে আঞ্জাম দিয়েছেন, কায়িনাতবাসী তা কখনোই কল্পনা করতে পারবে না। শারীরিক, মানসিকসহ কোনো ধরনের খিদমত উনারা বাকী রাখেননি। যা বলাই বাহুল্য।
পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ:
হিজরী ১১ সনে ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন। উনার বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করার পরে হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি মাত্র ছয় মাস যমীনে অবস্থান মুবারক করেন। অতঃপর উক্ত ১১ হিজরী সনের ৩রা রমাদ্বান শরীফ ইয়াওমুল ইছনাইন শরীফ (সোমবার) দিনে বাদ আছর তিনি উনার বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন। উনার জানাযা নামায পড়ান সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহূ ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি।
মহান আল্লাহ পাক তিনি যেন যামানার ইমাম ও উনার হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের উছিলায় আমাদেরকে বেশি করে হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার সম্পর্কে জানার তাওফীক দান করেন। (আমিন)
-মুহম্মদ ইমাদুদ্দীন।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
অ্যান্টার্কটিকা নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় বিজ্ঞানীরা
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম (৪)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা অবশ্যই সত্যের মাপকাঠি; অস্বীকারকারীরা কাট্টা কাফির (১)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র দু‘আ বা মুনাজাত (১১তম অংশ)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম (৩)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুনিয়ার যমীনে অবস্থানকালীন সময়ে ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ যে রোযা মুবারক রাখতেন সে রোযা মুবারক মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ১২ই শরীফ উনার দিনে হওয়াটা ছিলো একটি বিরল ঘটনা (২)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত হাযির-নাযির শান মুবারক (১)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
প্রাণীর ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
আল্লাহওয়ালী মহিলা উনাদের তিনটি বৈশিষ্ট্য-
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)












