সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ আশার আলাইহাস সালাম
, ১৯ যিলহজ্জ শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ০৯ ছানী, ১৩৯১ শামসী সন , ০৮ জুলাই, ২০২৩ খ্রি:, ২৪ আষাঢ়, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ আশার আলাইহাস সালাম তিনি পবিত্র মক্কা শরীফে সম্মানিত নবুওয়ত প্রকাশের ৩১ বছর পূর্বে পবিত্র মাহে রজবুল হারাম শরীফ উনার ৩ তারিখ, পবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদুল আইয়াম শরীফ অর্থাৎ পবিত্র ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ সম্মানিত বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ
নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সঙ্গে নিসবাতুল আযীম শরীফ অনুষ্ঠিত হওয়ার পূর্বে সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়য়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ আশার আলাইহাস সালাম উনার দু’টি শাদী মুবারক হয়েছিলেন। প্রথম আহাল উনার সাথে উনার জুদাই হয়ে যায়। দ্বিতীয় আহাল আবু রুহম ইবনে আবদুল উয্যা ৭ম হিজরীতে ইনতিকাল করেন। আবু রুহমের ইনতিকালের পর ৭ম হিজরী সনের পবিত্র মাহে জিলক্বদ শরীফ উনার ১৬ তারিখ নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে উনার নিসবাতুল অযীম শরীফ অনুষ্ঠিত হয়। সে সময় নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ক্বাযায়-উমরা পালন করার জন্য পবিত্র মক্কা শরীফে তাশরীফ আনয়ন করেছিলেন। উমরা আদায়ের পর পবিত্র মদীনা শরীফে ফেরার পথে পবিত্র মক্কা শরীফ থেকে ৬ থেকে ১২ মাইল দূরে সারাফ নামক মনযিলে নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বিশ্রাম গ্রহণ করেন। এখানেই সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়য়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ আশার আলাইহাস সালাম তিনি নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক খিদমতে তাশরীফ মুবারক আনয়ন করেন। পবিত্র নিসবাতুল আযীম শরীফ অনুষ্ঠিত হওয়ার সময় সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়য়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ আশার আলাইহাস সালাম উনার বয়স মুবারক ছিলেন ৫০ বছর ৪ মাস ১৩ দিন। সুবহানাল্লাহ!
সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন হযরত আছ ছালিছাহ ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়য়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ আশার আলাইহাস সালাম উনার মুবারক চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করতে গিয়ে উনার উচ্ছ্বসিত প্রশংসায় তিনি বলেন-
إنها كانت من أتقانا لله و أوصلنا للرحم -
অর্থ: আমাদের মধ্যে তিনি মহান আল্লাহ পাক উনাকে সবচেয়ে বেশী ভয় করতেন এবং সবচেয়ে বেশী আত্মীয়তার সম্পর্ক অটুট রাখতেন। (তাবাক্বাত, সিয়ারু আলামিন নুবালা)
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ আশার আলাইহাস সালাম উনার অভ্যাস ছিল দাস-দাসী ক্রয় করে মুক্ত করে দেয়া। এজন্য তিনি মাঝে মাঝে ধার কর্জ করতেন। একবার তিনি খুব বড় অঙ্কের অর্থ কর্জ করেন। উনাকে যখন জিজ্ঞেস করা হলো, আপনি এত বড় অংকের কর্জ কিভাবে পরিশোধ করবেন? উত্তরে তিনি বলেছিলেন: কোন লোকের যদি সদিচ্ছা থাকে যে সে ধারকৃত টাকা পরিশোধ করবে, তবে মহান আল্লাহ পাক নিজেই ইহা পরিশোধের ব্যবস্থা করে দেন। সুবহানাল্লাহ! (তাবাকাত)
সম্মানিত শরীয়ত উনার আদেশ নিষেধের ব্যাপারে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ আশার আলাইহাস সালাম তিনি অত্যন্ত কঠোর ছিলেন। এ ব্যাপারে কোন রকম নমনীয়তা উনার মধ্যে ছিল না। একবার উনার এক নিকট আত্মীয় উনার সাথে দেখা করতে আসে। তার মুখ থেকে মদের গন্ধ আসছিল। তিনি লোকটিকে শক্তভাবে ধমক দেন। তাকে তিনি বলে দেন: তুমি আর কখনও আমার নিকট আসবে না।
সাইয়য়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ আশার আলাইহাস সালাম তিনি নারী জাতীর আদর্শ ছিলেন। দ্বীন সংক্রান্ত বিষয়ে এবং আখলাকে ইছলাহী অর্জনের জন্য তিনি নারী সমাজকে সব সময় নছীহত করতেন। উনার থেকে বর্ণিত হাদীছ শরীফের সংখ্যা ৪৬, মতান্তরে ৭৬। বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ সহ অন্যান্য হাদীছ শরীফের কিতাবে সেগুলি সংকলিত হয়েছে। উনার বর্ণিত হাদীছ শরীফের মাধ্যমে শরীয়তের গুঢ়তত্ত্ব সম্পর্কে উনার গভীর জ্ঞানের পরিচয় পাওয়া যায়। মুহাদ্দিছে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের হিসাব মতে রাবীদের বর্ণনা অনুযায়ী উনার বর্ণিত হাদীছ শরীফ উনার সংখ্যা ৪৬ বা ৭৬ বলা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে সকল উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা ছিলেন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পরিপূর্ণ অনুসারী। কাজেই উনাদের কাজকর্ম, কথা-বার্তা, আচার ব্যবহার সবই পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার অন্তর্ভূক্ত। হিজরী ৭ম সন থেকে হিজরী ৫১ সনে উনার বিছালী শান মুবারক প্রকাশিত হওয়া পর্যন্ত প্রায় ৪৪ বছর উম্মুল মু’মিনীন হিসাবে তিনি আম জনসাধারণের মধ্যে এবং খাছ ভাবে আম-মহিলাগণের মধ্যে তা’লীম তরবিয়তে ব্যাপৃত ছিলেন। সুবহানাল্লাহ!
হিজরী ৫১ সনে যখন সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়য়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ আশার আলাইহাস সালাম তিনি পবিত্র মক্কা শরীফে হজ্জ পালন করতে গমন করেন। হজ্জ পালন শেষে তিনি বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন। বিছালী শান মুবারক প্রকাশের তারিখটি ছিলেন পবিত্র মাহে যিলহজ্জ শরীফ উনার ১৯ তারিখ, সাইয়্যিদু সাইয়্যিদুল আইয়াম শরীফ অর্থাৎ ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ। তখন উনার বয়স মুবারক হয়েছিলেন ৯৪ বছর ৫ মাস ১৬ দিন। সুবহানাল্লাহ!
হযরত ইয়াযীদ ইবনে আহমদ রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন: বিছালী শান মুবারক প্রকাশের পূর্বে সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়য়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ আশার আলাইহাস সালাম পবিত্র মক্কা শরীফে উনার মারিদ্বী শান মুবারক প্রকাশিত হয়। মারিদ্বী শান যখন খুব প্রকট হয়, তিনি বললেন: আমাকে তোমরা পবিত্র মক্কা শরীফ উনার বাইরে নিয়ে যাও, পবিত্র মক্কা শরীফে আমার বিছাল শরীফ হবে না। কেননা, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার সম্পর্কে ইরশাদ মুবারক করেছেন: পবিত্র মক্কা শরীফে আমার বিছাল শরীফ হবে না। তখন লোকগণ উনাকে বহন করে সারফ নামক স্থানে সেই গাছটির নিকট নিয়ে যান, যেখানে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সঙ্গে একটি তাঁবুতে নিসবাতুল আযীম শরীফ অনুষ্ঠিত হওয়ার পর উনার মুবারক খেদমতে তিনি তশরীফ মুবারক এনেছিলেন। অতঃপর ঐ স্থানটিতেই উনার বিছালী শান মুবারক হয়ে যায়। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস আলাইহিস সালাম উনার নির্দেশে এখানেই উনার দাফন মুবারক সুসম্পন্ন হয়। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস আলাইহিস সালাম উনার জানাযার নামায পড়ান (সীরতে ইবনে হিশাম, খাছায়েছুল কুবরা)।
যখন উনার পবিত্র জিসিম মুবারক খাটিয়ায় উঠানো হয়, তখন হযরত ইবনে আব্বাস আলাইহিস সালাম বললেন: সাবধান! ইনি হচ্ছেন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিতা আহলিয়া। সমস্ত মু’মিনদের সম্মানিতা মাতা। খুব বেশী ঝাঁকি দিবেন না, খুব আদবের সাথে নিয়ে চলবেন। সুবহানাল্লাহ! (তাবাক্বাত)
-সাঈদ আহমদ গজনভী।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
অ্যান্টার্কটিকা নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় বিজ্ঞানীরা
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম (৪)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা অবশ্যই সত্যের মাপকাঠি; অস্বীকারকারীরা কাট্টা কাফির (১)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র দু‘আ বা মুনাজাত (১১তম অংশ)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম (৩)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুনিয়ার যমীনে অবস্থানকালীন সময়ে ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ যে রোযা মুবারক রাখতেন সে রোযা মুবারক মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ১২ই শরীফ উনার দিনে হওয়াটা ছিলো একটি বিরল ঘটনা (২)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত হাযির-নাযির শান মুবারক (১)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
প্রাণীর ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
আল্লাহওয়ালী মহিলা উনাদের তিনটি বৈশিষ্ট্য-
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)












