সুলত্বানুল হিন্দ, কুতুবুল মাশায়িখ, মুজাদ্দিদুয যামান, গরীবে নেওয়াজ, আওলাদে রসূল, হাবীবুল্লাহ
সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন হাসান চীশতী আজমিরী সাঞ্জারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৪৭)
(বিলাদত শরীফ ৫৩৬ হিজরী, বিছাল শরীফ ৬৩৩ হিজরী)
, ২৯ শে রজবুল হারাম শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ০২ তাসি’, ১৩৯২ শামসী সন , ৩০ জানুয়ারী, ২০২৫ খ্রি:, ১৬ মাঘ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
সুলতান শিহাবুদ্দীন মুহম্মদ ঘোরীর দ্বিতীয়বার ভারত আক্রমণ ও বিজয়:
তারাইনের যুদ্ধে সুলতান শিহাবুদ্দীন মুহম্মদ ঘোরী বিজয় লাভ করতে পারেননি। গুরুতর আহত অবস্থায় নিজ রাজ্য গজনী চলে যান। তবে সুলতান দৃঢ় প্রতিজ্ঞা বদ্ধ হলেন যে, বিজয় লাভ না করা পর্যন্ত সকল প্রকার আরাম-আয়েশ, রাজকীয় আহার-বিহার এমন কি আহলিয়ার সাথে নিরিবিলি অবস্থান থেকে বিরত থাকবেন। যেমন প্রতিজ্ঞা তেমনি কাজ। উনার বাসস্থান হলো মুসাফির খানা, বিছানা হলো খড়কুটা, বালিশ হলো দু’হাত আর খাবার হলো গরীব-দুঃখীদের লঙ্গর খানায়।
যুদ্ধের ময়দান হতে ফিরে এসে সৈন্য সংগ্রহে মনোনিবেশ করলেন। সৈন্য সংখ্যা ও সমর শক্তি বাড়ালেন। কিন্তু আশানুরূপ শক্তিশালী হলো না। তবে তিনি নিরাশ হননি। বিজয় লাভের জজবা দাউ দাউ করে জ্বলছে। এরই মধ্যে স্বপ্নে পাওয়া সুসংবাদ উনার মনোবলকে দৃঢ় ও শক্তিশালী করলো। উনার নিশ্চিত বিশ্বাস জন্মেছে যে, ইনশাআল্লাহ অবশ্যই এবারের জিহাদে তিনি বিজয় লাভ করবেন।
তিনি সৈন্যদেরকে একত্রিত করলেন। কাউকে কিছু না বলে পেশোয়ারের দিকে রওয়ানা হলেন। সেখানে একজন পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সাক্ষাত পেলেন।
সেই পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সুলতানের জন্য দোয়া করলেন এবং জিহাদে বিজয়ের সুসংবাদ দিলেন।
সুলতান শিহাবুদ্দীন মুহম্মদ ঘোরী সকলকে একত্রিত করে লাহোরে পৌঁছলেন। রুকুনুদ্দীন হামযাকে নিজের বার্তাসহ পৃথ্বিরাজের কাছে পাঠালেন।
পত্রের সারমর্ম হচ্ছে- পৃথ্বিরাজ! তুমি সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করো- মুসলমান হও। অথবা আমার বশ্যতা স্বীকার করো- জিজিয়া কর দাও। অন্যথায় যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হও।
পৃথ্বিরাজ ছিল অহংকারী। সমর শক্তির ক্ষেত্রে নিজেকে অপরাজেয় মনে করতো। তাই পত্রের উত্তরে বললো-
আমাদের অসংখ্য-অগনিত সৈন্য সর্বদা প্রস্তুত। তাছাড়া তাদের শক্তিমত্তার সম্পর্কে আপনি বেখবর নন। এছাড়াও প্রতিদিনই বিভিন্ন এলাকা হতে সৈন্য আসছে। যদি আপনার নিজের প্রতি দয়া-মায়া নাও হয় তবুও অন্তত নিজের মুষ্টিমেয় ও অদক্ষ সৈন্যদের জন্য মায়া-মুহব্বত করুন। আর লজ্জিত হওয়ার পূর্বে ফেরত চলে যান। অন্যথায় প্রস্তুত হয়ে যান। তিন হাজারের অধিক হাতি এবং অগণিত সৈন্য ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত তীরন্দাজ বাহিনী সকলেই সম্মিলিতভাবে আপনার সৈন্যের উপর ঝাঁপিয়ে পড়বে। যুদ্ধের ময়দানে আপনাদেরকে হাতি দ্বারা পদদলিত করা হবে। নাউযুবিল্লাহ!
চিঠি লিখে আগত দূতের হাতে দিয়ে বললো, যান। আপনাদের সুলতানকে চিঠি দিয়ে যুদ্ধের পরিণতির কথা চিন্তা করে পা বাড়াতে বলবেন।
পৃথ্বিরাজ, নিজের বিজয় ও সফলতার উপর পরিপূর্ণ বিশ্বাসী ছিলো। সুলতানের জওয়াব দিয়ে নিজে যুদ্ধের প্রস্তুতিতে লেগে গেলো।
অবশেষে পৃথ্বিরাজ থানসিরের ময়দানে বিশাল বাহিনী নিয়ে উপস্থিত হলো। পৃথ্বিরাজের সৈন্যদের মধ্যে তিন হাজার হস্তিবাহিনী, তিন লাখ ঘোড়া ও উষ্ট্রি বাহিনী এবং পদাতিক বাহিনী ছিলো অসংখ্য-অগণিত। দেড় শতাধিক অন্যান্য রাজ্যের সৈন্যগণও তার মধ্যে যোগদান করলো।
সুলতান শিহাবুদ্দীন মুহম্মদ ঘোরীর সৈন্য সংখ্যা ছিলো মাত্র ১ লাখ ২০ হাজার। পৃথ্বিরাজ ও সুলতান উভয়ের সৈন্যগণ নদীর পাড়ে পরিখা খনন করে আত্মরক্ষার বুহ্য তৈরী করলো।
পৃথ্বিরাজের সৈন্যদের অপেক্ষা সহ্য হচ্ছে না। তারা সুলতানের সৈন্যের উপর আক্রমণ করলো। তুমুল যুদ্ধ শুরু হলো। কুতুবুল মাশায়িখ, সুলতানুল হিন্দ সাইয়্যিদুনা হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সুসংবাদ পেয়ে সৈন্যদের মনোবল এমনই বৃদ্ধি পেল যে, তারা যেন একজনই একশত। সুবহানাল্লাহ! সুলতানের সৈন্যগণ পৃথ্বিরাজের সৈন্যদেরকে কচুকাটা করতে লাগলো। সুলতানের সৈন্যদের তাকবীর ধ্বনী শুনে পৃথ্বিরাজের সৈন্যদের হাত থেকে তরবারী পড়ে যেতে লাগলো। রাজাদের অন্তরাত্মা কেঁপে উঠলো। তারা সম্পূর্ণভাবে মনোবল হারিয়ে ফেললো। পৃথ্বিরাজের সৈন্যদের মধ্যে ভীতির সঞ্চার হলো। তারা যুদ্ধের ময়দান থেকে পালাতে লাগলো।
এমনকি পৃথ্বিরাজ স্বয়ং নিজেই পরাজয় নিশ্চিত বুঝতে পেরে যুদ্ধ ক্ষেত্র হতে পালাতে লাগলো। কিন্তু পালাতে পারলো না। নদীর তীরে সুলতানের সৈন্যদের হাতে গ্রেফতার হলো। তখন সে বুঝতে পারলো সুলতানুল হিন্দ, কুতুবুল মাশায়িখ সাইয়্যিদুনা হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কথাই সত্যে পরিণত হলো।
সুলতান শিহাবুদ্দীন মুহম্মদ ঘোরী বিজয় লাভ করলেন। পৃথ্বিরাজের ছেলে সুলতান শিহাবুদ্দীন মুহম্মদ ঘোরীর বশ্যতা স্বীকার করালো। ফলে সুলতান তাকে গজনী রাজ্যের ফরমাবরদার ও করদাতারূপে দায়িত্বে রাখলেন। আর কুতুবুদ্দীন আইবেককে উনার স্বীয় প্রতিনিধিত্ব দান করে সারা ভারতের বিজিত অংশের শাসনকর্তা নিযুক্ত করলেন। (তাযকিরাতুল আউলিয়া ৪/২১৯, খাজা গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহির পূর্ণাঙ্গ জীবন চরিত্র-১৬৫) (চলবে)
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (৩)
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক- ছবি তোলা হারাম
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক করেন-
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (২)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যাকাত সম্পর্কিত আহকাম, মাসায়িল ও ফাযায়িল (২)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পর্দা পালন করা পুরুষ-মহিলা সবার জন্য ফরজ
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত মুবারক করা সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসীর জন্য ফরযে আইন
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে ছিরাতুল মুস্তাক্বীম উনার ছহীহ তাফসীর- ০১
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)












