সুলত্বানুল হিন্দ, কুতুবুল মাশায়িখ, মুজাদ্দিদুয যামান, গরীবে নেওয়াজ, আওলাদে রসূল, হাবীবুল্লাহ
সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন হাসান চীশতী আজমিরী সাঞ্জারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৪৮)
(বিলাদত শরীফ ৫৩৬ হিজরী, বিছাল শরীফ ৬৩৩ হিজরী)
, ৬ই শা’বান শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ০৯ তাসি’, ১৩৯২ শামসী সন , ০৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রি:, ২৩ মাঘ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
সুলতানুল হিন্দ, খাজা গরীবে নেওয়াজ হাবীবুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার দরবার শরীফে সুলতান শিহাবুদ্দীন মুহম্মদ ঘোরী:
হিন্দু রাজা পৃথ্বিরাজ মুসলমান সৈন্যবাহিনীর হাতে পরাজিত হয়ে গ্রেফতার হলো। তাকে সুলতান শিহাবুদ্দীন মুহম্মদ ঘোরীর নিকট হাজির করা হলো। জানতে চাওয়া হলো পৃথ্বিরাজের ব্যাপারে সুলতানের ফায়সালা।
সুলতান শিহাবুদ্দীন মুহম্মদ ঘোরী বললেন, “তোমরা তাকে চির বিদায় করে দাও। শত্রুর শেষ রাখতে নেই। ” নির্দেশ পেয়ে সৈন্যরা পৃথ্বিরাজের মাথা দ্বিখ-িত করলো। তার লাশ নদীতে ফেলে দিলো। (তারিখে ফেরেশতা- ১/৫৮, গরীবে নেওয়াজ পূর্ণাঙ্গ জীবনী-১৬৭)
তবে অনেক ঐতিহাসিক লিখেছেন যে, গ্রেফতারের পর পৃথ্বিরাজকে হত্যা করা হয়নি। বরং তাকে গ্রেফতার করে গজনী পাঠিয়ে দেয়া হয়। আর সেখানে সে কিছুদিন জীবিত ছিল। তারপর বন্দী অবস্থায় স্বাভাবিকভাবে মারা যায়।
পৃথ্বিরাজকে পরাজিত করে সুলতান শিহাবুদ্দীন মুহম্মদ ঘোরী উনার বিজয় অভিযান অব্যাহত রাখেন। সে সময় উনাকে বাধা দানের ক্ষমতাধর কেউ ছিল না। তিনি একটার পর একটা দেশ বিজয় করেন। অবশেষে একদিন পবিত্র আজমীর শরীফে হাজির হন। অবশ্য আজমীর শরীফে তিনি কিছুটা বাঁধার সম্মুখীন হয়েছিলেন। কিন্তু তিনি প্রতিরোধকারীদেরকে কঠোর হস্তে দমন করেন। পবিত্র আজমীর শরীফও বিজয় করেন।
উল্লেখ্য যে, সুলতান শিহাবুদ্দীন মুহম্মদ ঘোরী তিনি যখন সুলতানুল হিন্দ, কুতুবুল মাশায়িখ, সাইয়্যিদুনা হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার দরবার শরীফ পবিত্র আজমীর শরীফে পৌঁছেন তখন ছিল সন্ধ্যা। পবিত্র মাগরীব নামাযের আযান হচ্ছিল। আযান শুনে সুলতান বিচলিত হলেন। আযানের মধুর ধ্বণিতে তিনি বিমোহিত হন। লোকজনকে জিজ্ঞাসা করলেন, এ মধুর আযান কোথা থেকে ভেসে আসছে? লোকজন বললো, হে সুলতান! এ এলাকায় একজন ওলীআল্লাহ আছেন। উনার অনেক মুরীদ, মু’তাকিদ, মুহিব্বীন আছেন। এখানে তিনি মহাসম্মানিত দ্বীন ইসলাম প্রচার কল্পে অবস্থান করছেন। ইতোমধ্যে অসংখ্য-অগনিত হিন্দু উনার হাত মুবারকে বাইয়াত হয়ে মুসলমান হয়েছেন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, উনি কোথায় অবস্থান মুবারক করছেন? আমাকে উনার কাছে নিয়ে চলো। আমি উনার সাথে সাক্ষাত করবো।
সুলতান শিহাবুদ্দীন মুহম্মদ ঘোরী সুলত্বানুল হিন্দ, কুতুবুল মাশায়িখ হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার দরবার শরীফে হাজির হলেন। তখন উনারা সারিবদ্ধভাবে নামায আদায়ের জন্য দাঁড়িয়েছেন। সুলত্বানুল হিন্দ, কুতুবুল মাশায়িখ সাইয়্যিদুনা হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ইমামতিতে পবিত্র নামায শুরু হলো। সুলতান শিহাবুদ্দীন মুহম্মদ ঘোরী তিনি নামাযে শরীক হলেন। যথাসময়ে নামায শেষ হলো। সাইয়্যিদুনা হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি ঘুরে বসলেন। সুলতান শিহাবুদ্দীন মুহম্মদ ঘোরীর চোখ উনার পবিত্র নূরানী চেহারা মুবারকের উপর পড়লো। তিনি বিস্ময়ে অভিভূত হলেন। ইনিই তো সেই মহাসম্মানিত বুযূর্গ যিনি স্বপ্নযোগে আমাকে সাক্ষাত দিয়ে ভারত আক্রমণের নির্দেশ মুবারক দিয়েছিলেন। সুবহানাল্লাহ! দিয়েছিলেন বিজয়ের সুসংবাদ।
সুলতান শিহাবুদ্দীন মুহম্মদ ঘোরী অত্যন্ত ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে অত্যান্ত আদবের সাথে সাইয়্যিদুনা হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকটবর্তী হলেন। ক্বদম মুবারকে পড়ে গেলেন। ভাবাবেগে কেঁদে ফেললেন। এভাবে দীর্ঘক্ষণ অতিবাহিত হলো। সুলত্বানুল হিন্দ, কুতুবুল মাশায়িখ, সাইয়্যিদুনা হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি তাকে উঠিয়ে বসালেন। সুলতান শিহাবুদ্দীন মুহম্মদ ঘোরী বাকরুদ্ধ। কথা বলতে পারছেন না। স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরার পর সুলতান শিহাবুদ্দীন মুহম্মদ ঘোরী তিনি কুতুবুল মাশায়িখ সাইয়্যিদুনা হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে মনের বাসনা অভিব্যক্ত করলেন। বললেন, আমি আপনার পবিত্র হাত মুবারকে বাইয়াত হতে চাই। আপনি আমাকে আপনার মুরীদ-খাদিমরূপে কবুল করুন।
সুলত্বানুল হিন্দ, কুতুবুল মাশায়িখ সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি অত্যন্ত দয়াপরবশ হয়ে উনার দরখাস্ত কবুল করলেন। উনাকে বাইয়াত করালেন। উনার গোলামীতে আবদ্ধ করে নিলেন। সুবহানাল্লাহ!
সুলতান শিহাবুদ্দীন মুহম্মদ ঘোরী কিছুদিন পবিত্র আজমীর শরীফে অবস্থান করেন। অতঃপর দিল্লী গমন করেন। দিল্লীর শাসনকর্তা সুলতানকে অনেক হাদিয়া-তোহফা দেন। অত্যন্ত তা’যীম-তাকরীম করেন। তিনি সেখানে কিছুদিন অবস্থান করেন। পরে কুতুবুদ্দীন আইবেককে নিজের নায়িব বা স্থলাভিষিক্ত করতঃ হিন্দুস্থান ত্যাগ করে গজনীতে ফিরে যান। (চলবে)
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
অ্যান্টার্কটিকা নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় বিজ্ঞানীরা
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম (৪)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা অবশ্যই সত্যের মাপকাঠি; অস্বীকারকারীরা কাট্টা কাফির (১)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র দু‘আ বা মুনাজাত (১১তম অংশ)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম (৩)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুনিয়ার যমীনে অবস্থানকালীন সময়ে ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ যে রোযা মুবারক রাখতেন সে রোযা মুবারক মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ১২ই শরীফ উনার দিনে হওয়াটা ছিলো একটি বিরল ঘটনা (২)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত হাযির-নাযির শান মুবারক (১)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
প্রাণীর ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
আল্লাহওয়ালী মহিলা উনাদের তিনটি বৈশিষ্ট্য-
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)












