সুলত্বানুল হিন্দ, কুতুবুল মাশায়িখ, মুজাদ্দিদুয যামান, গরীবে নেওয়াজ, আওলাদে রসূল, হাবীবুল্লাহ
সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন হাসান চীশতী আজমিরী সাঞ্জারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৬১)
(বিলাদত শরীফ ৫৩৬ হিজরী, বিছাল শরীফ ৬৩৩ হিজরী)
, ২০ মে, ২০২৫ ১২:০০:০০ এএম ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
হযরত খাজা কুতুবুদ্দীন বখতিয়ার কাকী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে হযরত খাজা গরীব নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি চিশতীয়া খান্দানের পরবর্তী শাহানশাহ মনোনীত করে গদীনশীন করা:
এখন আমি আপনার নিকট এ সম্মানিত আমানত সোপর্দ করলাম। এর হক্ব যেভাবে আমি ও আমার পূর্ববর্তী তরীকার বুযূর্গগণ আদায় করে এসেছেন, আপনিও তদ্রƒপ আপনার পরবর্তী বুযূর্গ উনাদেরকে এ সম্মানিত আমানত হস্তান্তর করে এর হক্ব যথাযথভাবে আদায় করতে বলবেন। যাতে হাশরের ময়দানে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সামনে আমাকে লজ্জিত হতে না হয়।
আমি উনার সমস্ত আদেশ-নিষেধ মুবারক সম্পূর্ণরূপে মেনে চলার প্রতিশ্রুতি দিলাম। আর শুকরিয়াস্বরূপ দু’রাকায়াত সম্মানিত নামায আদায় করলাম। তারপর তিনি আমার হাত মুবারক ধরলেন এবং নিজের সম্মানিত মুখ মুবারক আকাশের দিকে করে বললেন, যান। আমি আপনাকে মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরতী হাত মুবারকে সোপর্দ করলাম এবং আপনাকে মনজিলে মাকছূদে পৌঁছে দিলাম। সুবহানাল্লাহ!
অতঃপর বললেন, আপনি চারটি বিষয়ের উপর বিশেষভাবে দৃষ্টি রাখবেন।
১। দরবেশ অর্থাৎ আপনাকে দেখে মনে হবে যেন আপনি ধনী ও ঐশ্বর্যশীল।
২। ক্ষুধার্ত মানুষকে আহার করাবেন।
৩। অন্তরে বিরহ ব্যথা থাকলেও বাইরে হাশি-খুশি থাকবেন।
৪। যে ব্যক্তিকে নিজের দুশমন মনে হবে তার সাথেও বন্ধুত্ব ও সদ্ভাব বজায় রাখবেন।
যখন তিনি এসব নছীহত মুবারক শুনাচ্ছিলেন তখন আমি ভাবছিলাম যে, ক্বদম মুবারক বুছী দিয়ে বিদায় নিয়ে চলে যাবো। তিনি আমার এ ইচ্ছাটা উনার পবিত্র অন্তর্দৃষ্টি মুবারক দ্বারা উপলব্ধি করলেন। বললেন, সামনে আসুন। আমি আদেশ মুবারক পালন করলাম এবং উনার পবিত্র ক্বদম মুবারকে পড়ে চুমু খেতে থাকলাম।
তিনি দাঁড়িয়ে আমাকে তুলে বুক মুবারকে জড়িয়ে ধরলেন, পবিত্র সূরা ফাতিহা শরীফ পাঠ করলেন এবং বললেন, সম্মানিত তরীকত উনার পথ হতে কখনও বিচ্ছিন্ন হবেন না। এ পথে সবসময় বীরপুরুষ (মর্দে মু’মিন) হয়েই থাকবেন।
আমি পুনরায় উনার পবিত্র ক্বদমে বুছা দিলাম। তিনি অত্যন্ত মুহব্বতের সাথে আমাকে তুললেন এবং পুনরায় সীনা মুবারকে জড়িয়ে নিলেন। আমি বিদায়ের অনুমতি প্রার্থনা করলাম। তিনি আমাকে অত্যন্ত খুশি মনে অনুমতি দান করলেন। আমি দিল্লীর পথে রওয়ানা দিলাম। চলতে চলতে এক সময় দিল্লীতে পৌঁছে গেলাম। এখানে তা’লীম-তরবিয়তের কাজ শুরু করলাম। কয়েকজন সূফী আমার সাথে এসেছিলেন। উনারাও ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার করার জন্য সেখানে আমার সাথে বসবাস করতে লাগলেন। আমি দিল্লীতে পৌঁছার পর সংবাদদাতা আজমীর শরীফ হতে খবর নিয়ে এলেন যে আপনি আজমীর শরীফ ত্যাগ করার পর ২০ দিন সাইয়্যিদুনা হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি হায়াতে ছিলেন। তারপর বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন। আমি এ সংবাদ শুনার সঙ্গে সঙ্গে আমার অন্তর-মন সব কাঁদতে লাগলো। তার প্রতিক্রিয়ায় আমার চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরতে লাগলো। আমি আছরের নামায পড়ে জায়নামাযে বসে মুরাকাবা করতে লাগলাম। আমি সাইয়্যিদুনা হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে দেখতে পেলাম। তিনি আরশে আযীমে অবস্থান মুবারক করছেন এবং উনাকে অত্যন্ত খুশি মনে হলো। আমি উনার পবিত্র ক্বদম মুবারকে বুছা দিলাম। এবং উনার অবস্থা জিজ্ঞেস করলাম।
তিনি বললেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাকে অশেষ দয়া ও ইহসান করেছেন এবং উনার নৈকট্য মুবারক দান করে ধন্য করেছেন। তিনি আমাকে সম্মানিত আরশ মুবারক উনার অধিবাসী করে দিয়েছেন। আমি সবসময় মহান আল্লাহ পাক উনার দীদার মুবারকে থাকি। সুবহানাল্লাহ। এখানেই অবস্থান মুবারক করি।
সুলত্বানুল হিন্দ, সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কতিপয় মাকতুব বা চিঠি মুবারক:
সম্মানিত মা’রিফাত ও হাক্বীক্বতের পরিচয় বহনকারী, মহান আল্লাহ পাক উনার আশিক ভাই হযরত খাজা কুতুবুদ্দীন বখতিয়ার কাকী রহমতুল্লাহি আলাইহি আপনার অবশ্যই জানা আছে যে, জ্ঞানী ও বুদ্ধিমান সেই ব্যক্তি যে ফকীরি বা দরবেশী গ্রহণ করে এবং সকল প্রকার আশা আকাঙ্খাকে বিসর্জন দেয়। কেননা, এ পথে আশা আকাঙ্খার কোন স্থান নেই।
এখানে কামনাহীনতাই হচ্ছে কামনা। যে ব্যক্তি এ নিয়মের পরিপন্থী-বিপরীত তাকে ‘আহলে গাফলত’ অর্থাৎ ছন্নছাড়া ও নিস্কর্মের দল বলা হয়। এরা শুদ্ধতাকে অশুদ্ধতা, এবং অশুদ্ধতাকে শুদ্ধতা মনে করে। আর আরামকে ব্যারাম এবং ব্যারামকে আরাম মনে করে। কাজেই সেই ব্যক্তি বুদ্ধিমান ও জ্ঞানী যে ব্যক্তি দুনিয়া ও দুনিয়া সংক্রান্ত সকল বিষয় ও বস্তুকে বিসর্জন দিয়ে ফকীর বা দরবেশীকে গ্রহণ করে। আর আশা আকাঙ্খাকে ছেড়ে দিয়ে অনাকাঙ্খী হয়ে যায়।
যে দরবেশ আশা আকাঙ্খা, কামনা-বাসনা ত্যাগ করে; সেই সফলতা অর্জন করতে পারে। এ পথের বীর পুরুষগণ মহান আল্লাহ পাক উনাকে ধারণ করে রাখে। যিনি চিরন্তন, চিরমহান, চির মনোরম, সৌন্দর্যময়। যিনি চিরকাল ধরে ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন। আর যে ব্যক্তি ক্ষণস্থায়ী ধ্বংসশীল ও ভঙ্গুর জিনিসকে কামনা-বাসনার মধ্যে ধারণ করে, সে ব্যক্তি অবশ্যই নির্বোধ ও অজ্ঞ। অধিক আর কি লিখবো- ওয়াস সালাম। ফকীর মুঈনুদ্দীন চিশতী সাঞ্জারী রহমতুল্লাহি আলাইহি!
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (৩)
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক- ছবি তোলা হারাম
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক করেন-
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (২)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যাকাত সম্পর্কিত আহকাম, মাসায়িল ও ফাযায়িল (২)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পর্দা পালন করা পুরুষ-মহিলা সবার জন্য ফরজ
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত মুবারক করা সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসীর জন্য ফরযে আইন
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে ছিরাতুল মুস্তাক্বীম উনার ছহীহ তাফসীর- ০১
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)












