সাইয়্যিদুল আওলিয়া, মাহবূবে সুবহানী, কুতুবে রব্বানী, গাউছুল আ’যম, মুজাদ্দিদুয যামান, সুলত্বানুল আরিফীন, মুহিউদ্দীন, আওলাদে রসূল,
সাইয়্যিদুনা হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সাওয়ানেহ উমরী মুবারক (৪)
, ২৩ শে রজবুল হারাম শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ২৭ ছামিন, ১৩৯২ শামসী সন , ২৪ জানুয়ারী, ২০২৫ খ্রি:, ১০ মাঘ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
বিলাদত শরীফ:
“সাইয়্যিদুল আওলিয়া, গাউছুল আ’যম, মাহবূবে সুবহানী, ইমামে রব্বানী, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিলাদত শরীফ থেকে বিছাল শরীফ পর্যন্ত পুরো জিন্দেগী মুবারকই কারামতে পরিপূর্ণ। ”
বিশুদ্ধ বর্ণনা মুতাবেক তিনি ৪৭১ হিজরী সনের ১লা রমাদ্বান শরীফ দুনিয়ার যমীনে তাশরীফ আনেন। উনার বিলাদতের কারণে ইরান বা পারস্য দেশের জিলান নগরী পুণ্যভূমিতে পরিণত হয়। (নাহফাতুল উনস, রাহজাতুল আসবার, যুবদাতুল আছার)
তিনি যখন উনার মাতা উম্মুল খায়ের, আমাতুল জাব্বার আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদাতুনা হযরত ফাতিমা রহমতুল্লাহি আলাইহা উনার রেহেম শরীফ-এ তাশরীফ নেন তখন উনার মাতার বয়স মুবারক ছিল ষাটের কাছাকাছি। এত অধিক বয়স মুবারকে সন্তান রেহেম শরীফ-এ আসায় তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার শুকরিয়া আদায় করলেন। এটা যে গাউছুল আ’যম, সাইয়্যিদুল আওলিয়া, সাইয়্যিদুনা হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারই মহান কারামতের অন্তর্ভুক্ত তা আর ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন পড়ে না।
দিনে দিনে মায়ের রেহেম শরীফ-এ সাইয়্যিদুল আওলিয়া, মাহবূবে সুবহানী, কুতুবে রব্বানী হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বেড়ে উঠতে লাগলেন। সাইয়্যিদাতুনা উম্মুল খায়ের হযরত ফাতিমা রহমতুল্লাহি আলাইহা সন্তান সম্ভবা হওয়ার প্রথম মাসে একদিন স্বপ্নে দেখলেন, মানবজাতির প্রথম মাতা সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত হাওয়া আলাইহাস সালাম তিনি উনার সামনে হাজির হয়ে সহাস্যে বলছেন, “হে হযরত ফাতিমা রহমতুল্লাহি আলাইহা! আপনি বিশ্বজগতের অত্যন্ত ভাগ্যবতী, পুণ্যবান ও ধন্য খুব ছূরত মহিলা। আপনার রেহেম শরীফ-এ যে মুবারক সন্তান এসেছেন তিনি আওলিয়ায়ে কিরাম উনাদের সাইয়্যিদ হবেন। আপনি সবসময় সতর্ক থাকবেন। ”
দ্বিতীয় মাসে আবার স্বপ্নে দেখলেন যে, হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার আহলিয়া সাইয়্যিদাতুনা হযরত সাররা আলাইহাস সালাম উনার মুবারক শিয়রে দাঁড়িয়ে মধুর কণ্ঠে বলছেন, “হে সাইয়্যিদা! মানবকুলের সৌভাগ্যবতী হযরত ফাতিমা রহমতুল্লাহি আলাইহা! মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরতে আপনার রেহেম শরীফ-এ নূরে আলম অর্থাৎ গুপ্তভেদ উন্মোচনকারী শ্রেষ্ঠ ওলীআল্লাহ অবস্থান করছেন। আপনি সবসময় একনিষ্ঠভাবে মহান আল্লাহ পাক উনার ছানা-ছিফতে মশগুল থাকবেন। ”
তৃতীয় মাসে পুনরায় তিনি স্বপ্নে দেখলেন যে, ফিরআউনের স্ত্রী সাইয়্যিদাতুনা হযরত আছিয়া আলাইহাস সালাম তিনি উনাকে বলছেন, “হে পুণ্যবতী, আল্লাহ প্রেমিক হযরত ফাতিমা রহমতুল্লাহি আলাইহা! আমি আপনাকে এক সুসংবাদ প্রদান করছি- আপনি সৌভাগ্যবতী এবং অনেক মর্যাদার অধিকারী। আপনার রেহেম শরীফ-এ দুনিয়ার অদ্বিতীয় ওলীআল্লাহ উনার আবির্ভাব ঘটেছে। অতএব, আপনি অতি সাবধানে থাকবেন। ”
চতুর্থ মাসে এক রাতে তিনি স্বপ্নে দেখলেন যে, জগতের অতি বিস্ময়কর জান্নাতবাসিনী মর্যাদাশীলা রমনী সাইয়্যিদাতুনা হযরত মারইয়াম আলাইহাস সালাম, যিনি ছিলেন জলীলুল ক্বদর রসূল হযরত ঈসা রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিতা মাতা। তিনি বলছেন, “হে হযরত ফাতিমা রহমতুল্লাহি আলাইহা! আপনার রেহেম শরীফ-এ যে মুবারক সন্তান দিনে দিনে বেড়ে উঠছেন তিনি বিশ্ববরেণ্য আউলিয়ায়ে আ’যম, আব্দুল কাদির জিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি। সুতরাং আপনি অতি সাবধানে চলাফেরা করুন। ”
পঞ্চম মাসে এক রাতে তিনি স্বপ্নে দেখলেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রথম যাওজাতুল মুকাররমাহ, উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনাকে বলছেন, “হে পুণ্যবতী, ভাগ্যবতী! আপনার রেহেম শরীফ-এ দ্বীন ইসলামের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র, মহান আল্লাহ পাক উনার প্রিয় বান্দা, মুহিউদ্দীন উনার আবির্ভাব ঘটেছে। আপনাকে অতিশয় সাবধানে থাকতে হবে। ”
দেখতে দেখতে উম্মুল খায়ের, আমাতুল জাব্বার, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদাতুনা হযরত ফাতিমা রহমতুল্লাহি আলাইহা উনার রেহেম শরীফ-এ আসার বয়স মুবারক দশ মাস পূর্ণ হলো। সেদিনটি ছিল ৪৭১ হিজরী সনের শা’বান মাসের ঊনত্রিশ তারিখ অপরাহ্ন। সহসা আকাশ ঘন কালো মেঘে ঢেকে গেল। মাহে শা’বানের ঊনত্রিশ তারিখে চাঁদ উঠার সম্ভাবনা ছিল; কিন্তু সন্ধ্যায় আকাশে গাঢ় মেঘে আচ্ছন্ন থাকার কারণে চাঁদ দেখা অসম্ভব হয়ে পড়ে। তবুও জিলান নগরীর হাজার হাজার লোক মাহে রমাদ্বান শরীফ-এর চাঁদ দেখার আশায় খোলা মাঠে উপস্থিত হয়েছেন। কিন্তু ঐ ঘনকালো মেঘ ভেদ করে চাঁদ দেখা কোনভাবেই সম্ভব ছিল না। বাধ্য হয়ে সবাই অন্তরে চাপা ব্যাথা নিয়ে ঘরে ফিরে গেলেন। ঐ দিনটি ছিল সাইয়্যিদুল আওলিয়া, গাউছুল আ’যম, ইমামে রব্বানী, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিলাদত শরীফ লাভের পূর্ব দিন। সন্ধ্যার পর হতেই উম্মুল খায়ের, আমাতুল জাব্বার, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদাতুনা হযরত ফাতিমা রহমতুল্লাহি আলাইহা কিছুটা ব্যাথা অনুভব করলেন। তিনি বর্ণনা করেন, রমাদ্বান শরীফ-এর ১লা তারিখে অর্ধেক রাত অতিবাহিত হওয়ার কিছু পরে আমি ঘুম থেকে উঠে ওযূ করে তাহাজ্জুদের নামায আদায় করত: দোয়ায় মশগুল ছিলাম। এমন সময় আসমান থেকে যমীন পর্যন্ত এক অতি উজ্জ্বল আলোর ছটা প্রকাশিত হলো। সে আলোর ছটা আমার ঘরকে আলোকিত করে তুললো। এমন সময় গায়েবী আওয়াজ (অদৃশ্য কণ্ঠস্বর) ভেসে এলো আমার কান মুবারকে। আমাকে সম্বোধন করে বলা হলো- “হে ফাতিমা! মহান আল্লাহ পাক উনার এক প্রিয়তম বান্দা উনার বিলাদতের সময় অতি নিকটে। ” রাতের তৃতীয় প্রহর, ছুবহি ছাদিকের কিছু পূর্বে গাউছে পাক, সাইয়্যিদুল আওলিয়া, ইমামে রব্বানী, মাহবূবে সুবহানী, মুহিউদ্দীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বিলাদত শরীফ লাভ করলেন। দুনিয়াতে তাশরীফ এনেই তিনি সিজদার ভঙ্গিতে মাথা মুবারক মাটিতে রেখে বলতে লাগলেন, “সুবহানা রব্বিয়াল আ’লা” (আমার মহিয়ান-গরিয়ান রব আল্লাহ পাক উনার পবিত্রতা বর্ণনা করছি)
আর সে সময়ই ঘরের ভিতরে অদৃশ্য কণ্ঠস্বর ভেসে আসছিল, সমস্ত ঘর রহমত, বরকতে পূর্ণ হয়ে উঠেছিল। আর আমি অত্যন্ত ইতমিনান ও আনন্দিত হয়ে সে দৃশ্য অবলোকন করছিলাম। (অসমাপ্ত)
-আল্লামা মুফতী সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালীম।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ইলিম অর্জন করার পর সে অনুযায়ী যে আমল করে না, তার তিনটি অবস্থার যে কোনো একটি হবেই-
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (৪)
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ঢিলা-কুলুখের বিধান
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
বেপর্দা হওয়া শয়তানের ওয়াসওয়াসাকে সহজ করার মাধ্যম
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় খরচ করলে তা দ্বিগুণ-বহুগুনে বৃদ্ধি করে ফিরিয়ে দেয়া হয়
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
আসমাউর রিজাল, জারাহ ওয়াত তা’দীল, উছুলে হাদীছ শরীফ উনার অপব্যাখ্যা করে অসংখ্য ছহীহ হাদীছ শরীফ উনাকে জাল বলছে ওহাবী সালাফীরা (১)
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (৩)
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক- ছবি তোলা হারাম
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক করেন-
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার)












