সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাঝে ফানা সারা কায়িনাত
, ৭ই রজবুল হারাম শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ১১ ছামিন, ১৩৯২ শামসী সন , ০৮ জানুয়ারী, ২০২৫ খ্রি:, ২৩ পৌষ , ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ
ফানা-বাক্বার বেনযীর দৃষ্টান্ত মুবারক-
আমর ইবনে আব্দে উদ্দকে হত্যা:
খন্দকের সম্মানিত জিহাদ মুবারক সংঘটিত হয় ৬ষ্ঠ হিজরী শরীফ উনার শুরুর দিকে। ৬ষ্ঠ হিজরী শরীফ উনার সম্মানিত ছফর শরীফ মাসে প্রায় এক মাস খন্দক খনন করা হয়। তারপর সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিশ শুহূরিল আ’যম শরীফ (মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রবীউল আউওয়াল শরীফ) মাসে খন্দকের মূল সম্মানিত জিহাদ মুবারক হয়। ‘খন্দক’ শব্দের অর্থ পরিখা বা গর্ত। যেহেতু এই সম্মানিত জিহাদ মুবারক-এ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার ৩ দিকে দীর্ঘ খন্দক বা পরিখা খনন করা হয়েছিল, তাই এই সম্মানিত জিহাদ মুবারক উনাকে ‘খন্দকের জিহাদ’ বলা হয়। আর ‘আহ্যাব’ অর্থ দলসমূহ। পুরো আরবের কাফিররা সম্মিলিতভাবে এই জিহাদে অংশ গ্রহণ করেছে বিধায় এই জিহাদকে আহযাবের জিহাদও বলা হয়। এই জিহাদে কাফিরদের সৈন্য ছিলো ১০ হাজার। আর হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনারা ছিলেন প্রায় ১৪০০। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র দো‘আ মুবারক উনার কারণে কাফির-মুশরিকদের উপর গযবস্বরূপ কঠিন ঝড়-তুফান এসে তাদের সমস্ত কিছু ল-ভ- করে দেয়। অতঃপর তারা পালিয়ে যায়।
এই খন্দকের জিহাদের সময়ই তরবারী, তীর ও বর্শার সাজে সজ্জিত হয়ে ঘোড়ার উপর আরোহণ করে সমস্ত কাফির সৈন্যদের সম্মুখ দিয়ে খন্দক ডিঙ্গিয়ে গিয়ে দাম্ভিকতা এবং অহঙ্কারের সাথে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনাদের প্রতি মল্লযুদ্ধের আহ্বান করে কাট্টা কাফির আমর ইবনে আব্দে উদ্দ বললো-
من يبارز
‘আপনাদের মধ্যে কোনো মল্লযোদ্ধা আছেন কি?’
সে মনে করেছিলো- এমন কে আছেন যিনি তার সাথে মল্লযুদ্ধ করতে যাবেন। তার সামনে যিনিই মল্লযুদ্ধ করতে যাবেন তিনিই নির্ঘাত মৃত্যুমুখে পতিত হবেন। না‘ঊযুবিল্লাহ!
তার দাম্ভিকতা এবং অহঙ্কারের সমুচিত জবাব দেয়ার জন্য ইমামুল আউওয়াল সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি দাঁড়িয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক-এ আরযী মুবারক পেশ করে বললেন-
أنا له يا نبي الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
‘ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি তার জন্য প্রস্তুত রয়েছি, দয়া করে আমাকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র অনুমতি মুবারক দান করুন, আমি এই কাট্টা কাফিরকে জাহান্নামে পাঠিয়ে দেই। ’
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন-
اجلس إنه عمرو بن عبد ود
‘আপনি বসুন। নিশ্চয়ই সে হচ্ছে আমর ইবনে আব্দে উদ্দ। ’ অর্থাৎ সে সাধারণ কোনো যোদ্ধা নয়; বরং সে হচ্ছে সারা পৃথিবীর সমস্ত কাফিরদের মধ্যে সবচেয়ে বড় যোদ্ধা।
এরপর আমর ইবনে আব্দে উদ্দ দ্বিতীয় বারের মতো আবার দাম্ভিকতা এবং অহংকারের সাথে চিৎকার দিয়ে বলতে লাগলো,
أين جنتكم التي تزعمون أنه من قتل منكم دخلها أفلا تبرزنّ لي رجلا
‘আপনাদের সেই সম্মানিত জান্নাত মুবারক কোথায়? যা আপনারা ধারণা করেন যে, আপনাদের কেউ শহীদ হলে তিনি সম্মানিত জান্নাত মুবারক-এ যাবেন। আমার মোকাবিলা করার মতো কী কোনো লোক নেই?
সে আরো বললো, ‘আপনাদের মধ্য থেকে কি একজনও আমাকে দোযখে পাঠানোর জন্য বা আমার পক্ষ থেকে উনাকে বেহেশতে পাঠিয়ে দেয়ার জন্য প্রস্তুত নন?’ না‘ঊযুবিল্লাহ!
তখন সে আবৃত্তি করে বলে,
ولقد بححت من الندا ... ء يجمعكم هل من مبارز
‘উচ্চস্বরে কথা বলার জন্য এবং মল্লযোদ্ধাকে আহবান জানাতে জানাতে আমার গলা বসে গেছে। ’
فقام امام الاول سيدنا حضرت كرم الله وجهه عليه السلام فقال أنا له يا رسول الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
‘তখন ইমামুল আউওয়াল সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি দাঁড়িয়ে গিয়ে বলেন- ‘ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি তার জন্য প্রস্তুত রয়েছি, দয়া করে আমাকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র অনুমতি মুবারক দান করুন, আমি এই কাট্টা কাফিরকে জাহান্নামে পাঠিয়ে দেই। ’
তখনও নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন-
اجلس إنه عمرو بن عبد ود
‘আপনি বসুন। নিশ্চয়ই সে হচ্ছে আমর ইবনে আব্দে উদ্দ। ’ অর্থাৎ সে সাধারণ কোনো যোদ্ধা নয়; বরং সে হচ্ছে সারা পৃথিবীর সমস্ত কাফিরদের মধ্যে সবচেয়ে বড় যোদ্ধা।
ثم نادى الثالثة فقام امام الاول سيدنا حضرت كرم الله وجهه عليه السلام فقال أنا له يا رسول الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فقال إنه عمرو فقال وإن كان عمرا
‘অতঃপর সেই কাট্টা কাফির আমর ইবনে আব্দে উদ্দ তৃতীয়বার আরো বেশি অহঙ্কার এবং দাম্ভিকতার সাথে হাঁক-ডাক দিতে থাকে। তখন আবারও ইমামুল আউওয়াল সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি দাঁড়িয়ে গিয়ে বলেন- ‘ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি তার জন্য প্রস্তুত রয়েছি, দয়া করে আমাকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র অনুমতি মুবারক দান করুন, আমি এই কাট্টা কাফিরকে জাহান্নামে পাঠিয়ে দেই। ’ তখনও নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন- ‘আপনি বসুন। নিশ্চয়ই সে আমর ইবনে আব্দে উদ্দ। ’ তখন সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, ‘যদিও সে আমর ইবনে আব্দে উদ্দ অর্থাৎ সে সারা পৃথিবীর সমস্ত কাফিরদের মধ্যে সবচেয়ে বড় যোদ্ধা হোক না কেনো! (তাতে কোনো সমস্যা নেই। ) ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! দয়া করে আমাকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র অনুমতি মুবারক দান করুন, আমি এই কাট্টা কাফিরকে জাহান্নামে পাঠিয়ে দেই। ’ (আস সীরাতুল হালাবিয়্যাহ্ শরীফ ২/৪২৭)
তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইমামুল আউওয়াল সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনাকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র অনুমতি মুবারক দান করেন এবং
أعطاه سيفه ذا الفقار وألبسه درعه الحديد وعممه بعمامته
‘নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইমামুল আউওয়াল সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনাকে উনার ‘যুল ফিক্বার’ নামক তরবারী মুবারক দিলেন, উনার লৌহবর্ম পরিয়ে দিলেন এবং উনার (বিশেষ) পাগড়ী মুবারক পরিয়ে দিলেন। ’ (আস সীরাতুল হালাবিয়্যাহ্ শরীফ ২/৪২৭, তারীখুল খমীস)
(অপেক্ষায় থাকুন। )
-মুহাদ্দিছ মুহম্মদ আমীন।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মানহানিকারীর একমাত্র শরঈ শাস্তি হচ্ছে ‘মৃত্যুদন্ড’ (৫)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাঝে ফানা ও বাক্বা সারা কায়িনাত (৪০)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাঝে ফানা ও বাক্বা সারা কায়িনাত (৩৯)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
এক নযরে সাইয়্যিদাতুন নিসায়ি আলাল আলামীন, আফযালুন নাস ওয়ান নিসা বা’দা রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আস সাবি‘আহ্ আত্বওয়ালু ইয়াদান আলাইহাস সালাম উনার মহাসম্মানিত পরিচিতি মুবারক
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত মহাপবিত্র নূরানী হুলিয়া মুবারক (৪র্থ পর্ব)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় নসবনামাহ্ মুবারক
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাঝে ফানা ও বাক্বা সারা কায়িনাত (৩৮)
১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ মাহফিল উনার ইন্তিজামকারী বিনা হিসাবে সম্মানিত জান্নাতে প্রবেশ করবেন
১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মানহানিকারীর একমাত্র শরঈ শাস্তি হচ্ছে ‘মৃত্যুদন্ড’ (৪)
১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক শানে ব্যবহৃত একখানা শব্দ মুবারক পবিত্র “নূরুল ফাতাহ” মুবারক উনার ব্যাপকতা ও বিশালতা
১২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারকে মানহানীকারীদের যুগে যুগে ভয়াবহ পরিণতি (৩১)
১১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাঝে ফানা ও বাক্বা সারা কায়িনাত (৩৭)
১১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)












