বুলন্দী শান মুবারক
সাইয়্যিদুল মুয়াল্লিমীন, মুত্ত্বালা’ আলাল গইব, ছাহিবুল ক্বলম, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক হিদায়েত ও তা’লীমের পদ্ধতি (১)
, ১২ যিলক্বদ শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২২ ছানী আশার, ১৩৯১ শামসী সন , ২১ মে, ২০২৪ খ্রি:, ০৭ জৈষ্ঠ্য, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَدَاعِيًا إِلَى اللهِ بِإِذْنِهٖ وَسِرَاجًا مُّنِيرًا
অর্থ: মহান আল্লাহ পাক উনার আদেশক্রমে উনারই দিকে আহবানকারী রূপে এবং এক দীপ্তিমান আলোক দানকারী রূপে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পাঠানো হয়েছে। (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ, ৪৬)
এই আয়াত শরীফে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ¦তামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে دَاعِيًا إِلَى اللهِ হিসাবে উল্লেখ করে উনার দাঈ (মহান আল্লাহ পাক উনার দিকে আহবায়ক) সুলভ সীরাত এবং পয়গম্বর সুলভ সকল ফযীলত ও কামালতের উপর আলোকপাত করা হয়েছে, دَاعِيًا إِلَى اللهِ বাক্যাংশের পূর্বে شَاهِدٌ(সাক্ষী)مُبَشِّرَ (সুসংবাদদাতা) ও نَذِيْرَ(সতর্ককারী) শব্দগুলো এনে ৪৫ নম্বর আয়াত শরীফে দাওয়াতের সফলতার জন্য প্রয়োজনীয় দু’টি মৌলিক বিষয়ের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। প্রথমত شَاهِدٌ সাক্ষী ও প্রমাণরূপে দাঈর দ্বিতীয়ত তারগীব বা উৎসাহ দান ও তারহীব বা সতর্কীকরণ مُبَشِّرٌ ও نَذِيْرٌ “সুসংবাদদাতা” ও “সতর্ককারী” এ শব্দদ্বয়ের অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। যা দাওয়াতের উছূল ও আরকান তথা মৌলিক নীতিসমূহ ও আহকাম মালার মূল। অপরদিকে مُبَشِّر ،شَاهِدٌ ও نَذِيْرٌ দাওয়াতের এ বুনিয়াদী শব্দগুলোকে مُطْلَقٌ বা শর্তহীনভাবে উল্লেখ করেدَعْوَتٌ اِلَى اللهِ
(মহান আল্লাহ পাক উনার দিকে আহবান)-এর ব্যাপকতা ও বিস্তৃতির প্রতি ইশারা করা হয়েছে, যা প্রকৃত পক্ষে খতমে নুবুওওয়াতেরই বিষয়বস্তু। আর শেষে
وَسِرَاجًا مُّنِيرًا
(জ্যোর্তিময়) শব্দ এনে দাঈ ও দাওয়াতের যে ব্যাপক ও বিস্তৃত দিক সে دَاعِي-এর মধ্যে যা লুকিয়ে আছে তার প্রতি ইশারা করা হয়েছে। অন্য আয়াত শরীফে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
لَقَدْ مَنَّ اللهُ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ إِذْ بَعَثَ فِيهِمْ رَسُولًا مِنْ أَنْفُسِهِمْ يَتْلُو عَلَيْهِمْ آيَاتِهِ وَيُزَكِّيهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَإِنْ كَانُوا مِنْ قَبْلُ لَفِي ضَلَالٍ مُبِينٍ
অর্থ: “আল্লাহ তাআলা মু’মিনদের প্রতি ইহসান করেছেন যে, তাদের জন্য তাদের মধ্য থেকে একজন রসূল প্রেরণ করেছেন। যিনি তাদেরকে মহান আল্লাহ পাক উনার আয়াত তিলাওয়াত করে শুনাবেন এবং তাদেরকে তাযকিয়া বা পরিশুদ্ধি দান করবেন এবং তাদেরকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দিবেন। যদিও তারা পূর্বে হিদায়েতপ্রাপ্ত ছিলো না। ” (পবিত্র সূরা আল ইমরান শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ, ১৬৪)
উপরোক্ত আয়াত শরীফে ৪টি কাজ যথা তিলাওয়াত, তা’লীম, তাযকিয়া ও ‘হিকমত’-এর কথা বলা হয়েছে এবং উলামায়ে কিরাম এ চারটি কাজকে সূর্যের চারটি তাকবীনি দায়িত্ব- তাওয়াজ্জুহ, তানবীর, তা’সীর, তাসী-এর সাথে তুলনা করেছেন।
তিলাওয়াত: সূর্য যেমন তাওয়াজ্জুহ অর্থাৎ জনসমক্ষে উদিত হয়ে আলোর ঝিলিক দেখায় তেমনি তিলাওয়াতের মাধ্যমে খোদায়ী ইলিমের ও ওহীর এবং পয়গম্বরীর সৌন্দর্য প্রকাশিত হয়েছে।
তা’লীম: সূর্য যেমন তানউয়ীর- অর্থাৎ আলোকিত করে, ফলে এক বস্তু অন্য বস্তু থেকে পৃথক করা যায়। ঠিক সেভাবে তা’লীমের মাধ্যমে বাতিল আর হক্ব পৃথক হয়েছে।
তাযকিয়া: সূর্য যেমন তাসীর অর্থাৎ তার উত্তাপ দ্বারা অন্যকে উত্তপ্ত করে তোলে এবং সূর্য রশ্মি জীবানু ইত্যাদি ধ্বংস করে। ঠিক সেভাবে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র নূরুল আছল মুবারক (ক্বল্ব মুবারক) থেকে ফয়েজ বিচ্ছূরিত হয়ে ক্বলবে পতিত হয়ে অন্তরের পরিশুদ্ধি ও পবিত্রতা অর্জিত হয়।
হিকমত: সূর্য যেমন তাসী-অর্থাৎ গতিবিধির মাধ্যমে আদর্শ স্থাপন ও পথপ্রদর্শন করে। ঠিক সেভাবে উম্মতের আমল করার জন্য আদর্শস্থাপন করে অর্থাৎاُسْوَةٌ حَسَنَةٌ “উসওয়ায়ে হাসানা কায়িম করে, মানুষের মনগড়া ও অপরিপক্ক মতবাদ ও আমল ত্যাগ করে চিরস্থায়ী নিয়ামত অর্জনের পথ প্রদর্শন করেছেন।
আর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ফিকিরই ছিল, কি করে প্রত্যেকটি মানুষ হিদায়েত ও নাযাত পায়। তিনি দোয়া মুবারক করতেন-
اَللّٰهُمَّ اهْدِنَا وَاهْدِبِنَا النَّاسَ جَمِيْعًا
“আয় মহান আল্লাহ পাক! আমাদেরকে হিদায়েত দান করুন এবং আমাদের উছীলায় প্রত্যেককে হিদায়েত দান করুন। ”
আর মহান আল্লাহ পাক তিনি হিদায়েত দিবেন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক উছীলায়। যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
قَدْ جَاءَكُمْ مِنَ اللهِ نُورٌ وَكِتَابٌ مُبِينٌ يَهْدِي بِهِ اللهُ مَنِ اتَّبَعَ رِضْوَانَهُ
অর্থ: “নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে এসেছেন এক মহান নূর মুবারক (নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি) এবং সুস্পষ্ট কিতাব মুবারক যাঁর উছীলায় মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি মুবারক অন্বেষণকারীদের হিদায়েত দান করবেন। ” (পবিত্র সূরা মায়িদা শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ, ১৫)
তাই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে رَحْمَةٌ لِلْعَالَمِينَ (সমস্ত আলমের জন্য রহমত স্বরূপ) এবং সমগ্র আলমের জন্য সতর্ককারী বলা হয়েছে। (চলবে)
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মানহানিকারীর একমাত্র শরঈ শাস্তি হচ্ছে ‘মৃত্যুদন্ড’ (৫)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাঝে ফানা ও বাক্বা সারা কায়িনাত (৪০)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাঝে ফানা ও বাক্বা সারা কায়িনাত (৩৯)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
এক নযরে সাইয়্যিদাতুন নিসায়ি আলাল আলামীন, আফযালুন নাস ওয়ান নিসা বা’দা রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আস সাবি‘আহ্ আত্বওয়ালু ইয়াদান আলাইহাস সালাম উনার মহাসম্মানিত পরিচিতি মুবারক
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত মহাপবিত্র নূরানী হুলিয়া মুবারক (৪র্থ পর্ব)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় নসবনামাহ্ মুবারক
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাঝে ফানা ও বাক্বা সারা কায়িনাত (৩৮)
১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ মাহফিল উনার ইন্তিজামকারী বিনা হিসাবে সম্মানিত জান্নাতে প্রবেশ করবেন
১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মানহানিকারীর একমাত্র শরঈ শাস্তি হচ্ছে ‘মৃত্যুদন্ড’ (৪)
১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক শানে ব্যবহৃত একখানা শব্দ মুবারক পবিত্র “নূরুল ফাতাহ” মুবারক উনার ব্যাপকতা ও বিশালতা
১২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারকে মানহানীকারীদের যুগে যুগে ভয়াবহ পরিণতি (৩১)
১১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাঝে ফানা ও বাক্বা সারা কায়িনাত (৩৭)
১১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)












