সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার কথা বলার উদ্দেশ্য পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযাকে নষ্ট করা, যা মূলত মুনাফিকদের একটি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত (২৭)
, ৩০ রমাদ্বান শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ১১ হাদী আশার, ১৩৯১ শামসী সন , ১০ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রি:, ২৮ চৈত্র, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
“কম দূরত্বের কারণে সময়ের পার্থক্য যেহেতু মান্য করা ফরয, সেহেতু বেশি দূরত্বের কারণে দিনের পার্থক্য মেনে ভিন্ন ভিন্ন দিনে পবিত্র ঈদ পালন করা ও পবিত্র রোযা শুরু করা ফরযে আইন”
সারাবিশ্বে একই দিনে পবিত্র ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার দাবিকারীরা দাজ্জাল ও কায্যাব, তাদের থেকে দূরে থাকা ফরয-ওয়াজিব:
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَاللهُ يَشْهَدُ إِنَّ الْمُنَافِقِينَ لَكَاذِبُونَ
অর্থ: মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, নিশ্চয়ই মুনাফিকরা অবশ্যই মিথ্যাবাদী। (পবিত্র সূরা মুনাফিকূন শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ-১)
পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللّٰهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَكُوْنُ فِي آخِرِ الزَّمَانِ دَجَّالُونَ كَذَّابُونَ يَأْتُونَكُمْ مِنَ الأَحَادِيثِ بِمَا لَمْ تَسْمَعُوا أَنْتُمْ وَلاَ آبَاؤُكُمْ فَإِيَّاكُمْ وَإِيَّاهُمْ لاَ يُضِلُّونَكُمْ وَلاَ يَفْتِنُونَكُمْ
অর্থ: “হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আখিরী যামানায় কিছু সংখ্যক মিথ্যাবাদী দাজ্জাল বের হবে, তারা তোমাদের নিকট এমন সব (মিথ্যা-মনগড়া) কথা উপস্থাপন করবে, যা তোমরা কখনো শুননি এবং তোমাদের বাপ-দাদারাও শুনেনি। সাবধান! তোমরা তাদের থেকে দূরে থাকবে এবং তোমাদেরকে তাদের থেকে দূরে রাখবে। তবে তারা তোমাদেরকে গোমরাহ্ করতে পারবে না এবং ফিৎনায় ফেলতে পারবে না। ” (মুসলিম শরীফ, শরহুন নববী, ফতহুল মুলহিম)
দাজ্জালে কাযযাবের অর্থ-
خَلَّاطُوْنَ بَيْنَ الْحَقِّ وَالْبَاطِلِ مُمَوِّهُوْنَ
অর্থ: যারা সত্যের সাথে সাথে মিথ্যাকে মিশ্রিত করে মানুষের সাথে প্রতারণা করে ও ধোকা দেয়।
আর পবিত্র হাদীছ শরীফে বর্ণিত দাজ্জালে কাযযাবের প্রকৃত অর্থ হলো- যারা পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার বিভ্রান্তিকর অর্থ ও অপব্যাখ্যা করে সর্বদা মুসলমানদের মাঝে ফেৎনা করে ও বিভ্রান্তি ছড়ায় তাদেরকে বলা হয় দাজ্জালে কাযযাব। মূলতঃ তারা মুনাফিক। তাই সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার দাবিকারীরাও পবিত্র হাদীছ শরীফে বর্ণিত দাজ্জাল ও কাযযাবের অন্তর্ভুক্ত।
ধারাবাহিক আলোচনা.........
হযরত ইমাম যাইলায়ী’ আল-হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার তাবয়ীনুল হাক্বায়িক কিতাব উনার মধ্যে স্পষ্ট করে উল্লেখ করেছেন যে-
قَالَ رَحِمَهُ اللَّهُ (وَلَا عِبْرَةَ بِاخْتِلَافِ الْمَطَالِعِ) وَقِيلَ يُعْتَبَرُ وَمَعْنَاهُ أَنَّهُ إذَا رَأَى الْهِلَالَ أَهْلُ بَلَدٍ وَلَمْ يَرَهُ أَهْلُ بَلْدَةٍ أُخْرَى يَجِبُ أَنْ يَصُومُوا بِرُؤْيَةِ أُولَئِكَ كَيْفَمَا كَانَ عَلَى قَوْلِ مَنْ قَالَ لَا عِبْرَةَ بِاخْتِلَافِ الْمَطَالِعِ وَعَلَى قَوْلِ مَنْ اعْتَبَرَهُ يَنْظُرُ فَإِنْ كَانَ بَيْنَهُمَا تَقَارُبٌ بِحَيْثُ لَا تَخْتَلِفُ الْمَطَالِعُ يَجِبُ وَإِنْ كَانَ بِحَيْثُ تَخْتَلِفُ لَا يَجِبُ وَأَكْثَرُ الْمَشَايِخِ عَلَى أَنَّهُ لَا يُعْتَبَرُ حَتَّى إذَا صَامَ أَهْلُ بَلْدَةٍ ثَلَاثِينَ يَوْمًا وَأَهْلُ بَلْدَةٍ أُخْرَى تِسْعَةً وَعِشْرِينَ يَوْمًا يَجِبُ عَلَيْهِمْ قَضَاءُ يَوْمٍ وَالْأَشْبَهُ أَنْ يُعْتَبَرَ لِأَنَّ كُلَّ قَوْمٍ مُخَاطَبُونَ بِمَا عِنْدَهُمْ وَانْفِصَالُ الْهِلَالِ عَنْ شُعَاعِ الشَّمْسِ يَخْتَلِفُ بِاخْتِلَافِ الْأَقْطَارِ كَمَا أَنَّ دُخُولَ الْوَقْتِ وَخُرُوجَهُ يَخْتَلِفُ بِاخْتِلَافِ الْأَقْطَارِ حَتَّى إذَا زَالَتْ الشَّمْسُ فِي الْمَشْرِقِ لَا يَلْزَمُ مِنْهُ أَنْ تَزُولَ فِي الْمَغْرِبِ-
অর্থ: ছহিবু তাবয়ীনুল হাক্বায়িক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উল্লেখ করেন যে, (হযরত ইমাম আবুল বারাকাত আন নাসাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, উদয়স্থলের পার্থক্য গ্রহণযোগ্য নয়) এবং কেউ কেউ বলেন, উদয়স্থলের পার্থক্য গ্রহণযোগ্য। যারা বলেছেন لَا عِبْرَةَ بِاخْتِلَافِ الْمَطَالِعِ অর্থাৎ উদয়স্থলের পার্থক্য গ্রহণযোগ্য নয়, উনাদের উক্ত কথার অর্থ হলো, এক অঞ্চলের অধিবাসীগণ নতুন চাঁদ দেখলো, অন্য অঞ্চলের অধিবাসীগণ নতুন চাঁদ দেখে নাই। তাহলে যে অঞ্চলের লোকেরা চাঁদ দেখেছে উনাদের দেখার দ্বারা অন্য অঞ্চলের লোকদের উপর পবিত্র রোযা রাখা ফরয হয়ে যাবে।
আর যারা বলেছেন উদয়স্থলের পার্থক্য গ্রহণযোগ্য। উনাদের কথার অর্থ হলো- দেখতে হবে যে, যদি পাশাপাশি দুটি অঞ্চল নিকটবর্তী হয় এবং একই উদয়স্থলের অন্তর্ভুক্ত হয়, তাহলে রোযা রাখা ওয়াজিব, আর যদি ভিন্ন মাতলা’ভুক্ত অঞ্চল হয় তাহলে তাদের উপর রোযা রাখা ওয়াজিব হবে না। (অর্থাৎ যারা বলেছেন لَا عِبْرَةَ بِاخْتِلَافِ الْمَطَالِعِ অর্থাৎ উদয়স্থলের পার্থক্য গ্রহণযোগ্য নয় এবং যারা বলেছেন উদয়স্থলের পার্থক্য গ্রহণযোগ্য দুই পক্ষের কথায় কোন মতবিরোধ নাই। পার্থক্য হলো- প্রথম পক্ষের কথা হলো, একই মাত্বলা’র অন্তর্ভুক্ত অঞ্চলসমূহের ব্যাপারে উদয়স্থলের পার্থক্য গ্রহণযোগ্য নয়। আর দ্বিতীয় পক্ষের কথা হলো, ভিন্ন মাত্বলা’র অন্তর্ভুক্ত অঞ্চলসমূহের ব্যাপারে উদয়স্থলের পার্থক্য গ্রহণযোগ্য)।
তবে অধিকাংশ মাশায়িখগণ উনারা যে বাক্য ব্যবহার করেছেন, তা হলো, لَا عِبْرَةَ بِاخْتِلَافِ الْمَطَالِعِ অর্থাৎ উদয়স্থলের পার্থক্য গ্রহণযোগ্য নয়। এমনকি উনারা বলেছেন, যদি কোন শহরের লোকজন চাঁদ দেখে ৩০টি রোযা পূর্ণ করে, অপর আরেকটি শহরের লোকজন চাঁদ দেখে ২৯টি রোযা রাখে তাহলে তারা একটি রোযা কাযা করবে।
উপরোক্ত (দুই পক্ষের) বক্তব্যের অধিক সাদৃশ্যপূর্ণ কথা হলো- নতুন চন্দ্র উদয়স্থলের ভিন্নতা গ্রহণযোগ্য হবে। কেননা পবিত্র ইবাদত-বন্দেগীর ক্ষেত্রে প্রত্যেক কওম তথা অঞ্চলের লোকেরা তাদের স্থানীয় আঞ্চলিক সময়ের প্রতি সম্বোধিত। অঞ্চলের ভিন্নতার কারণে সূর্যোদয় ও নতুন চন্দ্র উদয়স্থলের ভিন্নতা ঘটে থাকে। যেমনটি অঞ্চলের ভিন্নতার কারণে সময়ের শুরু ও শেষ হওয়ার ক্ষেত্রেও ভিন্ন হয়ে থাকে। এমনকি পূর্বাঞ্চলে যখন পশ্চিমে সূর্য ঢলে পড়ে, তখন উক্ত সময়ের অনুসরণ করাটা পশ্চিম অঞ্চলের লোকদের জন্য আবশ্যক করে না। (তাবয়ীনুল হাক্বায়িক্ব শরহু কানযিদ দাক্বায়িক্ব ১/৩২১, দুরারুল হুক্কাম শরহু গুরারিল আহকাম ১/২০১)
চলবে....
-মুহম্মদ মুফীদ্বুর রহমান।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় খরচ করার অপরিসীম ফযীলত
০৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র দুরূদ শরীফ দৈনিক বাদ ইশা ও বাদ ফজর ১০০ বার করে পাঠ করা সকলের জন্য আবশ্যক
০৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পবিত্র ক্বাবলাল জুমুআহ্, বা’দাল জুমুআহ্ এবং সুন্নাতুল ওয়াক্ত নামায উনার শরঈ আহকাম (৫)
০৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
অসংখ্য হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত- প্রাণীর ছবি হারাম
০৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
মসজিদে ইবাদত করতে বাধা দেয়া বা মসজিদ উচ্ছেদ করা কুফরী
০৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে রাস্তা করার অজুহাতে মসজিদ ভাঙা কখনো শরীয়তসম্মত নয়
০৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের প্রতি বিশুদ্ধ আক্বীদা-হুসনে যন পোষণ করা ঈমান
০৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (৬)
০৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুনিয়ার যমীনে অবস্থানকালীন সময়ে ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ যে রোযা মুবারক রাখতেন সে রোযা মুবারক মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ১২ই শরীফ উনার দিনে হওয়াটা ছিলো একটি বিরল ঘটনা (১)
০৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মহিলাদের প্রতি মহান আল্লাহ পাক উনার বিশেষ নির্দেশনা মুবারক- পর্দা পালন করা
০৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)












