হালাল হারামের কথা-১৪
, ২১ শাওওয়াল শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ০২ ছানী আশার, ১৩৯১ শামসী সন , ০১, মে, ২০২৪ খ্রি:, ১৮ বৈশাখ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
৪ খাদ্য ও পণ্যদ্রব্যে ভেজাল ও বিষক্রিয়াঃ একটি বহুমাত্রিক জটিল সমস্যা
বিভিন্ন জরিপে উঠে আসা ভেজাল খাবারের উপাত্তের একটি তালিকা লক্ষ্য করুনঃ
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার সহযোগীতায় আইপিএইচ একটি জরিপ পরিচালনা করে। ২০০৩ সালে তারা ৪০০টি মিষ্টি, ২০০ টি আইসক্রীম, ২৫০ টি বিস্কুট ও ৫০টি পাউরুটির নমুনা সংগ্রহ করে। তাতে দেখা যায়, মিষ্টি ৯৭%, আইসক্রীম ৫৯%, বিস্কুট ৫৪% ও পাউরুটি ২৪% অনিরাপদ। এছাড়া ১৯৯৪, ২০০৬ ও ২০০৭ সালে রাস্তার খাবারে যথাক্রমে ১০০%, ৭৮%, ৫৯% খাবার ছিল অনিরাপদ ও জীবাণুদুষ্ট।
এই তালিকা থেকে আমরা দেখতে পাই, ২০০৭ সাল নাগাদ অনিরাপদ খাবারের শতকরা পরিমাণ কমলেও তা মারাত্মক পরিমাণে খাবারের মধ্যে বিদ্যমান। উপরে বর্ণিত খাদ্যগুলো কম-বেশি আমরা সবাই খাই। এখন প্রশ্ন দাঁড়ায়, আমরা যা খাচ্ছি তা কতটা নিরাপদ?
মার্কিন বিজ্ঞানীদের একটি দল সত্তরের দশকে ১২ টি রাসায়নিককে স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর বলে বিশ্বব্যাপী নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। এগুলোকে ‘ডার্টি ডজন’ বলা হয়।
1. Aldrin
2. Chlordane
3. Dieldrin
4. Endrin
5. Heptachlor
6. Hexachlorobeûene
7. Mirex
8. Toxaphene
9. Polychlorinated bipheûls
10. DDT
11. Polychlorinated dibeûo-p-dioxins
12. Polychlorinated bipheûlsকিন্তু আমাদের দেশে এই ১২ টি রাসায়নিকের ৯টিই আমদানী করা হয় যা কীটনাশক রূপে ব্যবহৃত হয়। একটি জরিপের ব্যখ্যা দিয়ে বলা হয় ২০০৯ সালে বাংলাদেশে ৫০০০০ টন কীটনাশক আমদানী করা হয় যার আর্থিক মূল্য দাঁড়ায় ৫০০০০ কোটি টাকা। এই কীটনাশকগুলোতো শেষমেশ আমাদের খাদ্যেই মিশছে। সূত্রঃ হালখাতা
এবার দৃষ্টি দেয়া যাক পানীয় উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর দিকে। আমাদের দেশে পারমিটেড কালারগুলোর দাম বেশি বলে অসাধু ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন রঙের পানীয়তে ‘টেক্সটাইল কালার’ ও ‘লেদার কালার’ এর মত মারাত্মক উপাদান ব্যবহার করে থাকে। রঙ্গিন পানীয়গুলোতে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয় ‘সুদান রেড’, ‘এমারান্থ’, ‘টারট্রাজিন’। এছাড়া বিভিন্ন খাদ্যে ব্যবহৃত ‘সোডিয়াম সাইক্লোমেট’ মানুষের ত্বককে রোদের সংস্পর্শে কালো করে দেয়। এর কারণে বিকলাঙ্গ সন্তান, অস্বাভাবিক সন্তানও হতে পারে।
জুসের কথাই ধরুন। কোম্পানীগুলো বলে যে, তারা নিজেদের বাগানের আম দিয়ে জুস তৈরী করে। কিন্তু একথা বিশ্বাসযোগ্য নয়, কারণ তাদের বার্ষিক বিক্রীর পরিমাণ হিসেব করলে দেখা যায় তাদের বছরে যে পরিমাণ আমের দরকার তা বাংলাদেশের মোট উৎপাদিত আমের ছয় ভাগের এক অংশ। আর জুস প্রস্তুতকারক কিছু কোম্পানী বলে যে তারা দেশের একমাত্র প্রিসারভেটিভ বিহীন জুস তৈরী করে থাকে। এখন প্রশ্ন হলো, জুসতো সারাবছর ধরেই তৈরী হচ্ছে, তাহলে সারাবছর ধরে তারা বৈশাখের আমকে কিভাবে সংরক্ষণ করছে। আমের কথা নাহয় বাদ দিন, কোম্পানীগুলোর ‘অরেঞ্জ জুস’ তৈরীতে যে কমলা লাগে সেই কমলার বাগানটি দেশের কোন স্থানে অবস্থিত? দেশে যে এত বড় কমলার বাগানই নেই। কোম্পানীগুলো ‘বিটা ক্যারোটিন’ ও ‘সোডিয়াম সাইক্লোমেট’ ব্যবহার করছে জুসে।
নিচে বিভিন্ন খাদ্য দ্রব্যে ব্যবহৃত রাসায়নিক পদার্থ ও তা বোঝার উপায় সংক্ষেপে আলোচনা কর হল
১। মাছে ব্যবহার করা হচ্ছে ফরমালিন। বিশেষ করে মায়ানমার ও ভারত থেকে আসা মাছে ফরমালিন থাকে। ফরমালিনযুক্ত মাছে মাছি বসেনা। বসলেও তা সাথে সাথে উড়ে যায়। এবং মাছের চোখ ঘোলাটে থাকে। দীর্ঘদিন এর ব্যবহারে ‘লিভার সিরোসিস’ হতে পারে। ২০০৬ সাল থেকে দেশে ফরমালিনের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়।
২। আমে ব্যবহার করা হয় ‘কার্বাইড’। কার্বাইডের তেজষ্ক্রীয়তায় আম গরম থাকে। এর প্রভাবে চোখ ঘোলাটে হয়ে যেতে পারে।
৩। আবদ্ধ চূল্লী জাতীয় ঘরে কেরোসিনকে গ্যাসে পরিণত করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কলাকে পাকানো হয়। কেরোসিন গ্যাসে পরিণত হলে তা শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হয়।
বিভিন্ন সময়ে ভেজাল বিরুধী অভিযানে নেত্ত্বৃ দেয়া ম্যাজিস্ট্রেট ও যৌথবাহিনীর ভাষ্য থেকে পাওয়া অন্যান্য দ্রব্য সামগ্রীগুলোর বর্ণনাঃ
৪। দেবীদাস রোডের বিস্কুট কারখানাগুলোতে অভিযানের সময় পোড়া মবিল পাওয়া যায়। পাওয়া যায় ইউরিয়া, অ্যামোনিয়া-বাই-কার্বনেট, সোডিয়াম সাইক্লামেট যা বিস্কুটে ব্যবহার করা হত।
৫। লক্ষীবাজারে মিষ্টির দোকানে পাওয়া যায় টেক্সটাইল মিলের ডাইং রঙ। এ রঙ ব্যবহার করা হয় লালমিষ্টি, লাল দই ও কেক প্রস্তুত করতে। এছাড়া আগের পঁচা মিষ্টিগুলো নতুন মিষ্টির সাথে মিশিয়ে বিক্রী করা হয়। কারখানায় কিছু গোলাপজল পাওয়া যায় যা ছিল মেয়াদোত্তীর্ন।
৬। গুঁড় রয়েছে দুই রকম। কালচে ও সাদা। ক্ষেত থেকে আঁখ কেটে আনার সময় আখের শরীরে অনেক কাদা-ময়লা থাকে, তা পরিষ্কার না করেই মেশিনে রস তৈরী করা হয়। এই গুড়ের রঙ হয় কালচে। অন্যদিকে ময়লাযুক্ত রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরীর সময় রসের মধ্যে কাপড় ধোয়ার সোডা মিশিয়ে ঝকঝকে করা হয়। ৭। মুড়িতে ব্যবহার করা হয় ইউরিয়া।
৮। আইসক্রীম ফ্যাক্টোরীগুলোতে ব্যবহার করা হয় ওয়াসার পানি, টেক্সটাইল কালার। দুধের পরিবর্তে ব্যবহার করা হচ্ছে ময়দা ও ফ্লেভার। চিনির পরিবর্তে স্যাকারিন।
৯। ভেজালের ভীড়ে সবচেয়ে অবাক করা ব্যাপার হল ডিম। বাজারে লাল ডিমের দাম সাদা ডিমের চেয়ে ৫০ পয়সা বেশি বলে মুরগীর খামারে সাদা ডিমকে লাল রঙের টেক্সটাইল কালারে ডুবিয়ে লাল করা হয়।
১০। ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোড ও নবাবের দেউরিতে চকলেট কারখানায় ডাইং রঙ ও ক্ষতিকর কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়।
১১। সমসাবাদ নয়াবাজারে সেমাই’র কারখানায় দেখা যায়, রোদে শুকাতে দেয়া সেমাই’র উপর কাপড় শুকাতে দেয়া হয়েছে।
১২। মিনারেল ওয়াটারের যে নীল জারগুলো আছে, নিয়ম হল পুনরায় পানি ভর্তি করার আগে জারটিকে হাইড্রোজেন-পার-অক্সাইড দিয়ে জীবাণুমুক্ত করতে হবে। পরে ফিলিং মেশিনের মাধ্যমে আল্ট্রাভায়োলেট রে ব্যবহার করে জারে পানি ভর্তি করতে হবে। কিন্তু বাংলাদেশের প্রায় সকল কারখানাতেই ওয়াসার পানি ব্যবহার করছে।
১৩। শুটকিতে ব্যবহার করা হয় ক্ষতিকর ডিডিটি।
১৪। ঘি’র কারখানাগুলোয় কোন দুধ ব্যবহার করা হয়না। বদলে তারা ব্যবহার করে ‘যিবু ঢ়ড়ফিবৎ’।
১৫। কিছু ঔষধের কারখানায় দেখা যায়, মেয়াদোত্তীর্ণ ঔষধগুলোকে পুনরায় প্যাকেট করা হচ্ছে।
১৬। গুঁড়োদুধে মেশানো হয় মেলামিন।
১৭। হলুদ গুঁড়োতে মেশানো হচ্ছে রেড ক্রোমেট ও মেটানিল ইয়েলো। গুড়ো মরিচে ব্যবহার করা হয় সুদান রেড ও পেপরিকা। এর মধ্যে মেটানিল ইয়েলো ও সুদান রেড শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেন এক্সচেঞ্জ পলিসি ডিপার্টমেন্টের দেয়া তথ্য থেকে জানা যায়, বছরে ৯২ কোটি টাকার মেটানিল ইয়েলো ও পেপরিকা দেশে আমদানী করা হয়। এত কিছুর পর মনে প্রশ্ন জাগে, সত্যিকার অর্থে আমরা কি খাচ্ছি। আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে কি আমরা ভেজালের জাল থেকে রক্ষা করতে পারবনা? এই ভেজাল কি কখনো বন্ধ হবেনা?
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
খরচ করার ব্যাপারে মহান আল্লাহ পাক উনার ফায়সালা
০৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (৫)
০৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মুসলমানদের সবচেয়ে বড় শত্রু কাফির-মুশরিকরা (১)
০৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ছবি তোলা হারাম, যা জাহান্নামী হওয়ার কারণ
০৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
বিজাতীয় বিধর্মী তথা ইহুদী-নাছারাদেরকে অনুসরণ করা ইসলামী শরীয়তে হারাম-নাজায়িয
০৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পবিত্র ‘ছলাতুল জুমুয়াহ’ উনার পূর্বে ৪ রাকায়াত সুন্নত নামায অর্থাৎ পবিত্র ‘ক্বাবলাল জুমুয়াহ’ নামায নিয়ে বাতিলপন্থিদের বিভ্রান্ত্রিকর ও মিথ্যা বক্তব্যের দলীলভিত্তিক জাওয়াব (৬)
০৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ইলিম অর্জন করার পর সে অনুযায়ী যে আমল করে না, তার তিনটি অবস্থার যে কোনো একটি হবেই-
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (৪)
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ঢিলা-কুলুখের বিধান
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
বেপর্দা হওয়া শয়তানের ওয়াসওয়াসাকে সহজ করার মাধ্যম
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)












