সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার কথা বলার উদ্দেশ্য পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযাকে নষ্ট করা, যা মূলত মুনাফিকদের একটি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত (৪৮)
, ০৮ ছফর শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ১৬ ছালিছ, ১৩৯২ শামসী সন , ১৪ আগষ্ট, ২০২৪ খ্রি:, ৩০ শ্রাবণ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
“কম দূরত্বের কারণে সময়ের পার্থক্য যেহেতু মান্য করা ফরয, সেহেতু বেশি দূরত্বের কারণে দিনের পার্থক্য মেনে ভিন্ন ভিন্ন দিনে পবিত্র ঈদ পালন করা ও পবিত্র রোযা শুরু করা ফরযে আইন”
সারাবিশ্বে একই দিনে পবিত্র ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার দাবিকারীরা দাজ্জাল ও কায্যাব, তাদের থেকে দূরে থাকা ফরয-ওয়াজিব:
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَاللهُ يَشْهَدُ إِنَّ الْمُنَافِقِينَ لَكَاذِبُونَ
অর্থ: মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, নিশ্চয়ই মুনাফিকরা অবশ্যই মিথ্যাবাদী। (পবিত্র সূরা মুনাফিকূন শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ-১)
পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللّٰهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَكُوْنُ فِي آخِرِ الزَّمَانِ دَجَّالُونَ كَذَّابُونَ يَأْتُونَكُمْ مِنَ الْأَحَادِيثِ بِمَا لَمْ تَسْمَعُوْا أَنْتُمْ وَلاَ آبَاؤُكُمْ فَإِيَّاكُمْ وَإِيَّاهُمْ لاَ يُضِلُّونَكُمْ وَلاَ يَفْتِنُونَكُمْ.
অর্থ: “হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আখিরী যামানায় কিছু সংখ্যক মিথ্যাবাদী দাজ্জাল বের হবে, তারা তোমাদের নিকট এমন সব (মিথ্যা-মনগড়া) কথা উপস্থাপন করবে, যা তোমরা কখনো শুননি এবং তোমাদের বাপ-দাদারাও শুনেনি। সাবধান! তোমরা তাদের থেকে দূরে থাকবে এবং তোমাদেরকে তাদের থেকে দূরে রাখবে। তবে তারা তোমাদেরকে গোমরাহ করতে পারবে না এবং ফেৎনায় ফেলতে পারবে না।” (মুসলিম শরীফ, শরহুন নববী, ফতহুল মুলহিম)
দাজ্জালে কাযযাবের অর্থ-
خَلَّاطُوْنَ بَيْنَ الْحَقِّ وَالْبَاطِلِ مُمَوِّهُوْنَ.
অর্থ: যারা সত্যের সাথে সাথে মিথ্যাকে মিশ্রিত করে মানুষের সাথে প্রতারণা করে ও ধোঁকা দেয়।
আর পবিত্র হাদীছ শরীফে বর্ণিত দাজ্জালে কাযযাবের প্রকৃত অর্থ হলো- যারা পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার বিভ্রান্তিকর অর্থ ও অপব্যাখ্যা করে সর্বদা মুসলমানদের মাঝে ফেৎনা করে ও বিভ্রান্তি ছড়ায় তাদেরকে বলা হয় দাজ্জালে কাযযাব। মূলতঃ তারা মুনাফিক। তাই সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার দাবিকারীরাও পবিত্র হাদীছ শরীফে বর্ণিত দাজ্জাল ও কাযযাবের অন্তর্ভুক্ত।
ধারাবাহিক আলোচনা.........
এ কে এম মাহবুব তার বইয়ের ১১ও ৬৫ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ রয়েছে- ২০১৪ সালের ২৮ জুলাই সোমবার প্রাচ্যের জাপান থেকে পাশ্চাত্যের আলাস্কা পর্যন্ত ১৮২টি দেশে একই দিন ও বারে স্থানীয় সৌর সময় অনুযায়ী ঈদুল ফিতরের নামায অনুষ্ঠিত হয়েছে।
জাওয়াব: মিথ্যা যাদের স্বভাব, ধোঁকাবাজি যাদের পেশা। তারা একথা বলাটাই স্বাভাবিক যে, ২০১৪ সালের ২৮ জুলাই সোমবার প্রাচ্যের জাপান থেকে পাশ্চাত্যের আলাস্কা পর্যন্ত ১৮২টি দেশে একই দিন ও বারে স্থানীয় সৌর সময় অনুযায়ী ঈদুল ফিতরের নামায অনুষ্ঠিত হয়েছে।
যেখানে সারাবিশ্বে ১৫ থেকে ২৪ ঘন্টা পর্যন্ত সময়ের পার্থক্য সেখানে একই দিন ও বারে স্থানীয় সৌর সময় অনুযায়ী পবিত্র ঈদুল ফিতর উনার পবিত্র ছলাত অনুষ্ঠিত হওয়ার দাবি করা দিবালোকের ন্যায় সুস্পষ্ট মিথ্যা। পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার বিষয়ে এ ধরণের মিথ্যাচার কোন মুসলমান করতে পারে না একমাত্র মুনাফিক ছাড়া।
উল্লেখ্য যে, মনে হয় মাহবুব! কল্পণা করতে করতে স্বপ্ন জগতে দেখতে পেয়েছে সারাবিশ্বে একই দিনে ২০১৪ সালের ২৮ জুলাই উক্ত ঈদুল ফিতরের নামায অনুষ্ঠিত হয়েছে। আর উক্ত স্বপ্ন তাকে ইবলিস দেখিয়েছে। নচেৎ যেখানে বিগত চৌদ্দশত বৎসর পর্যন্ত কারো জন্য সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ করা সম্ভব হয় নাই, সে বা তারা উক্ত সালের একই দিনে ঈদ করা মানেই স্বপ্ন দেখা পূর্বকল্পিত বিষয় ছাড়া অন্য কিছ্ইু নয়।
মাহবুব উক্ত ১১ পৃষ্ঠায় আরো লিখেছে- কেউ কেউ বলে থাকেন পূর্ব যুগের আলেমগণ একই দিনে একই তারিখে বিশ্বব্যাপী উক্ত আমলগুলি করেছেন এমন কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। সম্মানিত ভাইদের এ দাবি ঠিক নয়। কারণ আজকের মত রেডিও টেলিভিশন, মোবাইল ও ইন্টারনেট ছিলো না। যোগাযোগের মাধ্যম ছিলো শুধুমাত্র উট ঘোড়া ইত্যাদি।
তাদের ফতওয়া ঠিক রেখে উট ঘোড়া ইত্যাদিকে বাহন করে নতুন চাঁদ উঠার সংবাদ যতটুকু দূরত্বে পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে ততটুকু এলাকায় রোযা ঈদ ও অন্যান্য পর্বসমূহ পালন করেছে মুসলিম উম্মাহ।
জাওয়াব হচ্ছে- প্রথমত: উপরোল্লেখিত কথাগুলি মাহবূবের নিতান্তই মনগড়া, কল্পনাপ্রসূত এবং মিথ্যা। কেননা, “পূর্ব যুগের আলেমগণ একই দিনে একই তারিখে নতুন চাঁদ উঠার সংবাদ যতটুকু দূরত্বে পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে ততটুকু এলাকায় রোযা ঈদ ও অন্যান্য পর্বসমূহ পালন করেছে” এমন কোন প্রমাণ ক্বিয়ামত পর্যন্ত চেষ্টা করেও দেখাতে পারবে না। বরং পূর্ব যুগের আলেমগণ উনারা কেউ জীবনে কখনো যেমনভাবে সারাবিশ্বে একই দিনে পবিত্র ঈদ পালন ও পবিত্র রোযা শুরু করার দাবি করেন নাই, তেমনি করতেও বলেন নাই। এমনকি একই দিনে পবিত্র ঈদ ও রোযা না করার কারণ হিসেবে উনারা কেউ যোগাযোগ ব্যবস্থার সমস্যা বলে যোগাযোগ ব্যবস্থাকেও দায়ী করেন নাই। এমন কি উনারা কোথাও একথা বলেন নাই যে, আমরা যোগাযোগ ব্যবস্থার সমস্যার কারণে সারাবিশ্বে একই দিনে পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযা শুরু করতে পারতেছি না। সুতরাং পরবর্তীতে যদি যোগাযোগ ব্যবস্থা আরো উন্নত হয়, তখন সারাবিশ্বে একই দিনে পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযা পালন করবে।
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
أَفَرَأَيْتَ مَنِ اتَّخَذَ إِلَهَهُ هَوَاهُ
অর্থ: আপকি কি ঐ ব্যক্তিকে দেখেন নাই যে তার নফস তথা খেয়াল খুশিকে ইলাহ বানিয়ে নিয়েছে? অর্থাৎ আপনি অবশ্যই জানেন যে ব্যক্তি নিজের খেয়াল খুশিকে মা’বূদ (ইলাহ) বানিয়ে নিয়েছে। (পবিত্র সূরা জাছিয়াহ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ-২৩)
আসলে মাহবুব তার নফসকেই শরীয়ত প্রণেতা বা ইলাহ বানিয়ে নিয়েছে। যার কারণে তার মনে যেভাবে যে কথা এসেছে ঐ কথাকে সে শরীয়তের হুকুম হিসেবে দাড় করার চেষ্টা করেছে। অর্থাৎ সে নফসের পূজারী। নাঊযুবিল্লাহ! চলবে....
-মুহম্মদ মুফীদ্বুর রহমান।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
হযরত আব্বাস ইবনে মিরদাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যাকাত সম্পর্কিত আহকাম, মাসায়িল ও ফাযায়িল (৪)
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
প্রাণীর ছবি তোলা হারাম ও নাফরমানীমূলক কাজ
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
অ্যান্টার্কটিকা নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় বিজ্ঞানীরা
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম (৪)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা অবশ্যই সত্যের মাপকাঠি; অস্বীকারকারীরা কাট্টা কাফির (১)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র দু‘আ বা মুনাজাত (১১তম অংশ)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম (৩)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুনিয়ার যমীনে অবস্থানকালীন সময়ে ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ যে রোযা মুবারক রাখতেন সে রোযা মুবারক মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ১২ই শরীফ উনার দিনে হওয়াটা ছিলো একটি বিরল ঘটনা (২)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)












