সিপাহী বিদ্রোহ তথা ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে আমীরুল মু’মিনীন, শহীদে আ’যম, হযরত সাইয়্যিদ আহমদ শহীদ বেরেলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিশিষ্ট খলীফা হযরত মাওলানা কারামত আলী জৈনপুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ভূমিকা
, ১৫ যিলক্বদ শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ১৫ ছানী আ’শার, ১৩৯২ শামসী সন , ১৪ মে, ২০২৫ খ্রি:, ১ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
পলাশীর আম্রকাননে ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে বাংলার স্বাধীনতা সূর্য অস্তমিত হয়। এরপর শতাব্দীব্যাপী স্বাধীনতা পুনরুদ্ধার আন্দোলন অব্যাহত থাকে। ১৭৫৭-১৮০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এই আন্দোলন ছিলো মূলতঃ ফকীর ও সন্নাসীদের নেতৃত্বে পরিচালিত। ফকীর নেতা মজনু শাহ এসব বিদ্রোহের কেন্দ্রীয় চরিত্রে ছিলেন। হযরত শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার চিন্তা-চেতনা এসব আন্দোলনে উৎসাহ যোগায়।
হযরত শাহ আব্দুল আযীয মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি (১৭৪৬-১৮২৩ খ্রিস্টাব্দ) উনার ভারতকে ‘দারুল-হারব’ ঘোষণার মধ্য দিয়ে এই আন্দোলন চাঙা হয়। .. পরবর্তীকালে ১৮৩১ সনে শাহ আব্দুল আযীয মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার খলীফা হযরত সাইয়্যিদ আহমদ শহীদ বেরেলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নেতৃত্বে বালাকোটের জিহাদে এর চূড়ান্ত রূপ দৃশ্যমান হয়। এই জিহাদী আন্দোলনে নোয়াখালীর মাওলানা ইমামুদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি ও চট্টগ্রামের ছূফী নূর মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা বিশেষ ভূমিকা পালন করেন।
উনারা সিলেট, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, নোয়াখালী, মোমেনশাহী (ময়মনসিংহ) প্রভৃতি জেলার বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গকে ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রামে সম্পৃক্ত করেন।
মাওলানা কারামত আলী জৈনপুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি (১৮০০-১৮৭৩ খ্রিস্টাব্দ) দিনাজপুর অঞ্চলে জিহাদী আন্দোলনের নেতৃত্ব দান করেন বলে ডিষ্ট্রিক্ট গেজেটিয়ারে বর্ণিত আছে।
সাইয়্যিদ আহমদ শহীদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার অপর খলীফা হযরত গুলজার শাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনিও নির্লিপ্ত থাকেননি। তিনি মুশরীখোলার শাহ আহসানউল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি (১৮০৮-১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দ) উনার দাদা পীর ছিলেন।
লেখক সত্যেন সেন বলে, “বস্তুতপক্ষে ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহের আগে থেকেই স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু হয়ে গিয়েছিলো। বর্তমান উত্তর প্রদেশের রায় বেরেলীর সাইয়্যিদ আহমদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নেতৃত্বে মুজাহিদ বাহিনী ১৮২৬ সাল থেকেই অর্ধ শতাব্দী ধরে ব্রিটিশের বিরুদ্ধে যে জিহাদ চালিয়ে আসছিলেন তাকে অবশ্যই স্বাধীনতা সংগ্রামের সূচনা বলতে হবে। ”
নরহরি কবিরাজ বলে, “মীর কাশেমের সময় থেকে একশ বছর ধরে একটানা জাতীয় মুক্তি সংগ্রামের চরম পর্যায় ১৮৫৭ এর অভ্যুত্থান। ”
একশ বৎসর পূর্ণ হলেই বিদেশী রাজত্ব খতম হয়ে যাবে বলে একটি ভবিষ্যদ্বাণী তৎকালে দেশের সর্বত্র ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়। কে এই ভবিষ্যত বক্তা তা সত্যেন সেন বলতে পারে। তবে ‘মুসলিম বাংলার অভ্যুদয়’ গ্রন্থের লেখক মাহবুবুর রহমান বলেন, “মুসলমান সিপাহীরা বিশ্বাস করতেন যে, এ দেশের কোম্পানীর শাসন একশত বছর কালের বেশি সময় হবে না। এরপর ভারতে আবার মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে। ” এ প্রসঙ্গে ড: এম এ খান শাহ নিয়ামত উল্লাহর বাণীর কথা উল্লেখ করেছেন।
প্রকৃতপক্ষে কিছুকালের জন্য হলেও দিল্লীসহ উত্তর ভারতে ব্রিটিশ রাজ খতম হয়ে গিয়েছিলো এবং ঢাকায়ও কিছুদিনের জন্য হলেও তা হয়েছিলো। মাত্র ১০ দিনের মধ্যে অযোধ্যা প্রদেশে ইংরেজ শাসন সামান্য চিহ্নও না রেখে স্বপ্নের মত মিলে যায়। ‘ঢাকা প্রকাশে’র ৩০ আগস্ট, ১৮৯৬ সালের উদ্বৃতি দিয়ে ড: মুহম্মদ আব্দুল্লাহ উল্লেখ করেন, “স্থানীয় রাজপুরুষগণ যদি সাধ্যানুসারে অপ্রস্তুত সিপাহীদেরকে অসময়ে আক্রমণপূর্বক পরাস্ত না করতেন তবে অল্পকালের মধ্যেই তাদের হাতে অন্তত কয়েক দিনের জন্য হলেও ইংরেজ রাজত্বের অবসান ঘটতো। ”
বাংলাদেশের ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট প্রভৃতি অঞ্চলে রক্তাক্ত সিপাহী বিপ্লবের ঐতিহাসিক প্রমাণ পাওয়া যায়। ঢাকায় সিপাহী জনতার এই বিপ্লবে মাওলানা কারামত আলী জৈনপুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নেতৃত্বের কথা ঐতিহাসিক সূত্রে প্রমাণিত। তিনি মূলতঃ সংস্কারবাদী (শিরক-বিদয়াতের বিরুদ্ধে) আলিম হলেও হযরত শাহ আব্দুল আযীয মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ও সাইয়্যিদ আহমদ শহীদ বেরেলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা জিহাদী জজবায় বিশ্বাসী ছিলেন। ”
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ইলিম অর্জন করার পর সে অনুযায়ী যে আমল করে না, তার তিনটি অবস্থার যে কোনো একটি হবেই-
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (৪)
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ঢিলা-কুলুখের বিধান
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
বেপর্দা হওয়া শয়তানের ওয়াসওয়াসাকে সহজ করার মাধ্যম
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় খরচ করলে তা দ্বিগুণ-বহুগুনে বৃদ্ধি করে ফিরিয়ে দেয়া হয়
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
আসমাউর রিজাল, জারাহ ওয়াত তা’দীল, উছুলে হাদীছ শরীফ উনার অপব্যাখ্যা করে অসংখ্য ছহীহ হাদীছ শরীফ উনাকে জাল বলছে ওহাবী সালাফীরা (১)
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (৩)
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক- ছবি তোলা হারাম
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক করেন-
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার)












