সুলত্বানুল হিন্দ, কুতুবুল মাশায়িখ, মুজাদ্দিদুয যামান, গরীবে নেওয়াজ, আওলাদে রসূল, হাবীবুল্লাহ সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন হাসান চীশতী আজমিরী সাঞ্জারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৭)
(বিলাদত শরীফ ৫৩৬ হিজরী, বিছাল শরীফ ৬৩৩ হিজরী)
, ০১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ১২:০০:০০ এএম ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
মায়ের কোলে হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি-২
যে বয়সের শিশু-সন্তানরা খেলা-ধুলায় মত্ত থাকে সে বয়স মুবারকে গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম ছিলেন। তিনি ছিলেন ধীরস্থির, অচঞ্চল, গাম্ভীর্যপূর্ণ থাকতেন যেন একজন পূর্ণ বয়সের লোক। দুই বছর বয়স হতে তিন বছর পর্যন্ত তিনি উনার বাড়ীর পাশে পাথরের উপর বসে কখনো যিকির করতেন। কখনো মুরাকাবা (ধ্যানমগ্ন) থাকতেন। উনার সমবয়সীরা কখনো উনাকে খেলার সাথী বানাতে পারতো না। তিনি তাদেরকে অতি পরিষ্কার ভাষায় বলে দিতেন এসব আমার ভাল লাগে না।
তিনি সকালে ও সন্ধ্যায় স্বীয় সম্মানিত পিতা সাইয়্যিদ গিয়াসউদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকট হতে ইলিম হাছিল করতেন। উনার মেধাশক্তি এতোই প্রখর ছিলো যে, কোন একটি বিষয় একবারের বেশী দুবার পাঠ করতে হতো না। উনার নিকট কেউ কোন বিষয় আলাপ করলে তিনি সেটা উনার মধ্যে গেঁথে রাখতেন। এভাবে বয়স মুবারক বাড়ার সাথে সাথে উনার ইলিম ও হিকমত মুবারকের ভান্ডারও বাড়তে থাকে।
সুলত্বানুল হিন্দ, কুতুবুল মাশায়িখ, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বয়স মুবারক যখন ৪ বছর ৪ মাস ৪ দিন তখন উনার বাসার নিকটবর্তী একটি মক্তবে ভর্তি করিয়ে দেয়া হয়। সেখানে তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ পাঠ এবং বিভিন্ন মাসয়ালা-মাসায়িল শিক্ষা করেন। ঐ সময় তাতার দস্যূরা সাধারণ মানুষ ও তাদের বাড়ী-ঘরগুলো ধ্বংসের সাথে সাথে খোরাসানের বড় বড় মাদরাসা, খানকা শরীফসহ অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দিয়েছিলো।
ঈদের দিনে হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি
ঈদের দিন। নতুন পোষাক-পরিচ্ছেদ পরিহিত অবস্থায় গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ঈদগাহের উদ্দেশ্যে চলছেন। শরীর মুবারকে আতর মুবারকের ঘ্রাণ বাতাসের সাথে মিলে যাচ্ছে। চোখ মুবারকে সুরমা মুবারক। আল্লাহু আকবার তাকবীর ধ্বণিতে আকাশ বাতাস মুখরিত। পথিমধ্যে হঠাৎ একটি বালক দৃষ্টি গোচর হলো। বালকটি অন্ধ। নোংরা শরীর, গায়ে ময়লা। শরীর থেকে দুর্গন্ধ বের হচ্ছে। পড়নে ছেড়া-ফাটা, ফেলে দেয়ার মতো কাপড়। বালকটি উনারই সমবয়সী। মনে কোন আনন্দ নেই। আছে শুধু দুঃখ-কষ্ট ভারাক্রান্ত মন ও মনন। দুই চক্ষু দিয়ে পানি পড়ছে। হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার পিতা তখন উনার দুই ভাইকে সাথে নিয়ে অনেকটা পথ এগিয়ে গেছেন। গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার চিন্তা ও সিদ্ধান্ত এক সাথে কাজ করলো। এগিয়ে গেলেন অন্ধ বালকটির দিকে। অত্যন্ত মুহব্বতের সাথে একটা হাত ধরে বললেন আমার সাথে চলো। তিনি তাকে নিজের বাড়ী নিয়ে এলেন। গোসল করালেন। নিজের পরিহিত অত্যন্ত দামী, সুন্দর ও নতুন পোশাকটি তাকে পরিয়ে দিলেন। শরীরে আতর লাগিয়ে ঈদের নামাযের জন্য তৈরী করলেন। নিজে একটি সাধারণ পোশাক পরিধান করে বালকটিকে নিয়ে ঈদগাহে গিয়ে ঈদের নামায পড়লেন। নামায শেষ হলে তাকে সাথে নিয়েই বাড়ী ফিরলেন। অবশ্য উনার আগেই উনার সম্মানিত পিতা ও দুই ভাই নামায শেষ করে বাড়ী ফিরে এসেছিলেন।
উনারা যখন হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার এ কাজটি দেখলেন তখন প্রথমে একটু বিরক্ত হলেও পরক্ষণে খুশী হলেন। উনারাও ছেলেটিকে সাথে নিয়ে এক সাথে খাবার খেলেন। তারপর হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ছেলেটিকে সাথে নিয়ে তার বাড়ীতে পৌঁছে দিলেন।
ছেলেটি অত্যন্ত খুশি হলো। তার আর কোন দুঃখ-কষ্ট রইলো না। অতি অল্প বয়স মুবারকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এই সুন্নত মুবারকটি পালন করলেন। সর্বোপরি সুলত্বানুল হিন্দ, কুতুবুল মাশায়িখ, মুজাদ্দিদে যামান আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি শিশুকাল থেকেই গরীবে নেওয়াজী তথা অতিথি পরায়ন ছিলেন তা প্রমাণিত হলো। মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাকে গরীবে নেওয়াজীর শিক্ষা ও রহমত উনার জন্মগত স্বভাব হিসেবে হাদিয়া করেছিলেন। সুবহানাল্লাহ! পরবর্তী জীবনে যা উনাকে সীমাহীন মর্যাদা-মর্তবার আসনে সমাসীন করেছিলো। (চলবে)
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
হযরত আব্বাস ইবনে মিরদাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যাকাত সম্পর্কিত আহকাম, মাসায়িল ও ফাযায়িল (৪)
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
প্রাণীর ছবি তোলা হারাম ও নাফরমানীমূলক কাজ
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
অ্যান্টার্কটিকা নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় বিজ্ঞানীরা
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম (৪)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা অবশ্যই সত্যের মাপকাঠি; অস্বীকারকারীরা কাট্টা কাফির (১)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র দু‘আ বা মুনাজাত (১১তম অংশ)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম (৩)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুনিয়ার যমীনে অবস্থানকালীন সময়ে ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ যে রোযা মুবারক রাখতেন সে রোযা মুবারক মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ১২ই শরীফ উনার দিনে হওয়াটা ছিলো একটি বিরল ঘটনা (২)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)












