ছহিবু সাইয়্যিদি সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মাওলানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
হক্কানী-রব্বানী আলিম উনাদের খুছুছিয়ত
, ১৮ রবীউছ ছানী শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ০৫ সাদিস ১৩৯১ শামসী সন , ০৩ নভেম্বর, ২০২৩ খ্রি:, ১৮ কার্তিক, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
যেটা উছুল রয়েছে-
لكل حضرت موسى عليه السلام فرعون و لكل فرعون حضرت موسى عليه السلام
প্রত্যেক ফিরআউন, যালিমদেরকে হিদায়েত করার জন্য মহান আল্লাহ পাক তিনি প্রতি যামানায় হাদী পাঠান আর যারা হাদী থাকেন উনাদের পিছনে সেই ফিরআউনের মত কিছু যালিম সবসময় লেগে থাকে, উনাদেরকে কষ্ট দেয়ার জন্য। তবে এর কারণে মহান আল্লাহ পাক তিনি যারা হাদী উনাদের মর্যাদা বৃদ্ধি করে থাকেন। সুবহানাল্লাহ! হযরত ইমামে আ’যম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনি বিশ্বখ্যাত আলিম বেমেছাল ইমাম। উনার ছানা-ছিফত করার প্রয়োজন হয়না। তিনি কত বড় ইমাম ছিলেন? ইমাম ছুফিয়ান ছাওরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার বিশিষ্ট ওলী বুযুর্গ, তিনিও বড় আলিম। তিনি বলেন, আমরা যখন ইমামে আ’যম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার দরবারে যেতাম এমন অবস্থায় আমরা থাকতাম, যেমন একটা বাজ পাখির সামনে একটা চড়–ই পাখি থাকে। এতো ভীত-সন্ত্রস্ত, আদবের সহিত আমরা থাকতাম, যার মিছাল নেই। হযরত ইমামে আ’যম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মর্যাদা সম্পর্কে হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার মাকতুবাত শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ করেছেন। পূর্ববর্তী আরো অনেক কিতাবে বর্ণনা করা হয়েছে। উনাকে মহান আল্লাহ পাক তিনি এতো মর্যাদা দিয়েছেন, তিনি ইজতিহাদ করে যে মাযহাব হাদিয়া করেছেন তা হচ্ছেন হানাফী মাযহাব। আখিরী যামানায় মহান আল্লাহ পাক উনার নবী ও রসূল যিনি জলীলুল ক্বদর রসূল হযরত ঈসা রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম আসবেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হচ্ছেন একক। উনার পরে মর্যাদাসম্পন্ন যে সকল হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা রয়েছেন উনাদের প্রথম কয়েকজনের মধ্যেই রয়েছেন হযরত ঈসা রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি। তিনি যখন আখিরী যামানায় আসবেন উম্মতে হাবীবী হিসেবে সরাসরি। তিনি এসে কিন্তু ইজতিহাদ করে চলবেন। কারণ তিনিতো রসূল। তিনি কোন উম্মতকে তাকলীদ করতে পারেন না। তিনি ইজতিহাদ করে চলবেন।
কিতাবে বর্ণিত রয়েছে, হযরত ঈসা রুহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি ইজতিহাদ করে চলবেন। কিন্তু মানুষ মনে করবে হযরত ঈসা রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি বোধ হয় হানাফী মাযহাবের মুক্বাল্লিদ। কি কারণ, দেখা যাবে হযরত ইমামে আ’যম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার যে ইজতিহাদ আর জলীলুল ক্বদর রসূল যার প্রতি মহান আল্লাহ পাক তিনি ইনজীল শরীফ কিতাব নাযিল করেছেন সেই রসূল হযরত ঈসা রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার ইজতিহাদ এক হয়ে গেছে। সুবহানাল্লাহ! এমন বেমেছাল ইমাম, ইমামে আ’যম হযরত আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি। উনারও অনেক শত্রু ছিলো। উনাকেতো গ্রেফতার করে জেলখানায় থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছিলো। নাউযুবিল্লাহ! জীবনের শেষ দু’বছর তিনি জেলখানায় ছিলেন। তখন যে কথিত খলীফা ছিলো মনছুর সে উনাকে গ্রেফতার করে জেলখানায় থাকার ব্যবস্থা করেছিলো। নাউযুবিল্লাহ! আস্তে আস্তে উনাকে সেøা পয়জনিং করে অর্থাৎ আস্তে আস্তে উনাকে বিষ দিয়ে তারা উনাকে শহীদ করে। নাউযুবিল্লাহ! তিনি যখন জেলখানায় ছিলেন তখনও অনেক লোকজন আসতো পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে ফতওয়া নেয়ার জন্য। তিনি ফতওয়া দিতেন। সুবহানাল্লাহ!
এক বৃদ্ধা মহিলা ছিলো উনার বিদ্বেষী, দুষ্ট প্রকৃতির। সে হযরত ইমামে আ’যম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে মানুষের কাছে খারাপ করার জন্য, নাউযুবিল্লাহ! উনার যারা ছাত্র ছিলেন উনাদেরকে বললো, আপনাদের যিনি ইমামে আ’যম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি কি (বৃদ্ধা মহিলার) একটা মাসয়ালার জবাব দিতে পারবেন? উনার যারা ছাত্র ছিলেন উনারা বললেন, হে বৃদ্ধা মহিলা! তুমি কেন তোমার মত অনেক শত সহস্র মানুষের মাসয়ালার জবাব তিনি দিয়ে থাকেন। সুবহানাল্লাহ! এটাতো উনার জন্য কোন ব্যাপারই নয়। প্রকৃতপক্ষে বৃদ্ধা মহিলার ভিতরে ছিলো দুষ্টামী, সে হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকট এসে বললো, হে হযরত ইমামে আ’যম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি! আমার একটা মাসয়ালা রয়েছে। কি মাসয়ালা রয়েছে? মাসয়ালা হচ্ছে তার একটা ছাগল রয়েছে, ছাগলের থোতার মধ্যে কিছু পশম রয়েছে। ছাগলের থোতাতে যে পশম রয়েছে সেটা উত্তম, না আপনার যে দাড়ি মুবারক রয়েছে সেটা উত্তম? এটার জবাব জানতে চাই। উদ্দেশ্য তার এখানে প্রতারণা করা। উনাকে কোন রকম আটকানো যায় কি না সেই অসৎ উদ্দেশ্যে তার জিজ্ঞাসা। ইমামে আ’যম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সেটা বুঝতে পেরেছেন। বুঝতে পেরে তিনি বললেন, হে বৃদ্ধা মহিলা! তোমার এই মাসয়ালার জবাব যদিও আমার জানা রয়েছে তথাপি আজকে আমি জবাব দিবো না। তিনদিন পরে আমি এ মাসয়ালার জবাব দিবো। তুমি তিনদিন পরে এসো। মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরত। মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার ওলী উনাদেরকে তো অনেক সম্মান দিয়েছেন, অনেক বুযুর্গী দিয়েছেন, বেমেছাল। তিনদিন পর তিনি বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করলেন অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনার সাক্ষাত মুবারক-এ চলে গেলেন। বৃদ্ধা মহিলা সে রটাতে লাগলো, রটনা করতে লাগলো, সে ছড়াতে লাগলো যে ইমামে আ’যম হযরত আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি তার মাসয়ালার জবাব দেয়ার ভয়ে ইন্তিকাল করেছেন। নাউযুবিল্লাহ! এদিকে যখন উনার গোসল মুবারক সম্পন্ন করে কাফন মুবারক পরায়ে জানাযা মুবারক আদায় করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিলো দাফন মুবারক সম্পন্ন করার জন্য। রাস্তার মোড়ে এসে যখন পৌঁছলেন লোক জন; উনার সেই জিসিম মুবারক নিয়ে। বৃদ্ধা মহিলা রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলো, সেতো আজে বাজে কথা বলতেছিলো। মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরত! হযরত ইমামে আ’যম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার যবান মুবারক খুলে গেলো। সুবহানাল্লাহ! তিনি খাটিয়া থেকে বলতে লাগলেন, হে বৃদ্ধা মহিলা! তুমি জেনে রাখো, তোমার এই মাসয়ালার জবাব হচ্ছে, তোমার ছাগলের থোতার পশমের চাইতে আমার দাড়ি মুবারক উনার মর্যাদা লক্ষ কোটিগুণ বেশি রয়েছে। সুবহানাল্লাহ! আমি সেই দিনই এই মাসয়ালার জবাব দিতে পারতাম। তবে যেহেতু ঈমান উনার একটা বিষয় রয়েছে, মহান আল্লাহ পাক উনার ভীতি রয়েছে, তাক্বওয়া-পরহেযগারির বিষয় রয়েছে। এখন ঈমান উনার সহিত আমি বিদায় নিয়েছি। কাজেই আমার দাড়ি মুবারক উনার মর্যাদা তোমার ছাগলের থোতার পশমের চেয়ে লক্ষ কোটিগুণ বেশি রয়েছে। সুবহানাল্লাহ! তার ব্যতিক্রম হলে তোমার ছাগলের থোতার পশমই মূল্যবান হয়ে যেতো। নাউযুবিল্লাহ! তিনি জবাব দিয়ে আবার আগের মতোই চুপ হয়ে গেলেন। সুবহানাল্লাহ!
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
হযরত আব্বাস ইবনে মিরদাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যাকাত সম্পর্কিত আহকাম, মাসায়িল ও ফাযায়িল (৪)
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
প্রাণীর ছবি তোলা হারাম ও নাফরমানীমূলক কাজ
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
অ্যান্টার্কটিকা নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় বিজ্ঞানীরা
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম (৪)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা অবশ্যই সত্যের মাপকাঠি; অস্বীকারকারীরা কাট্টা কাফির (১)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র দু‘আ বা মুনাজাত (১১তম অংশ)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম (৩)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুনিয়ার যমীনে অবস্থানকালীন সময়ে ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ যে রোযা মুবারক রাখতেন সে রোযা মুবারক মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ১২ই শরীফ উনার দিনে হওয়াটা ছিলো একটি বিরল ঘটনা (২)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)












