হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের কিছু সংক্ষিপ্ত ঘটনা ও ইবরত নছীহত (৮)
, ২৮ যিলক্বদ শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ২৮ ছানী আ’শার, ১৩৯২ শামসী সন , ২৭ মে, ২০২৫ খ্রি:, ১৪ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
হযরত মুহম্মদ ইবনুল হুসাইন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বাঁদীর মৃত্যুতে খুবই দুঃখিত হলেন। তার কাফন-দাফনের ব্যবস্থার জন্য তিনি বাজারে গেলেন। ফিরে এসে দেখেন তার কাফন পড়ানো হয়ে গেছে, আতর-গোলাপ লাগানো হয়েছে। তার দেহ দু’টি সবুজ রংয়ের বেহেশতী চাদরে ঢাকা। এতে দু’ছতরে দু’টো কথা লিখা আছে। প্রথমে লিখা আছে-
لا اله الا الله محمد رسول الله
তারপর লিখা আছে-
الا ان اولياء الله لا خوف عليهم ولا هم يحزنون.
হযরত ইবনুল হুসাইন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার বন্ধুবর্গকে নিয়ে তার জানাযা এবং দাফন শেষে পবিত্র সূরা ইয়াসীন শরীফ পাঠ করে বাড়ী ফিরে এলেন। বাড়ী ফিরে তিনি দু’রাকাত নামায আদায় করে ঘুমিয়ে পড়লেন। ঘুমিয়ে স্বপ্নে দেখলেন, সেই বাঁদী বেহেশতের মধ্যে, বেহেশতের চাদর পরিহিত অবস্থায় জাফরানের তখতের উপরে সমাসীন। সেখানে রেশম ও মখমলের ফরাশ, মাথায় হীরা, জাওহারের মনিমুক্তা খচিত মুকুট, পায়ে লাল ইয়াকুতের জুতা, মেশক ও আম্বরের সুগন্ধি বের হচ্ছে, চেহারা সূর্যের চেয়েও উজ্জল।
তিনি জিজ্ঞেস করলেন, “হে বাঁদী! কোন আমলের বরকতে তুমি এ মর্তবায় পৌঁছলে?” সে জবাব দিলো, “ফকীর ও মিসকীনদের মুহব্বত, অত্যাধিক ইস্তেগফার-তওবা, আর মুসলমানদের চলার পথ থেকে কষ্টদায়ক জিনিস সরিয়ে দেয়ার বদৌলতে আজ আমাকে এই বিশেষ মর্তবা দেয়া হয়েছে। ”
ফায়দা:
উপরোক্ত ঘটনায় একজন বাঁদী, যিনি সারাজীবন পরের বাড়ীর গোলামী করেছেন। তিনি এমন মর্যাদা ও মর্তবা হাছিল করেছেন, যা উনাকে মহান আল্লাহ পাক উনার পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছে। যেমন ছিলো উনার মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি ইশক, তেমনই ছিলো খোদাভীতি। ওলীআল্লাহগণ উনাদের প্রতি উনার ভক্তি ও মুহব্বতও ছিলো খুব গাঢ়। তিনি সংসারের সমস্ত বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে কামিয়াব হতে পেরেছেন, যারা বিভিন্ন বাঁধার সম্মুখীন তাদের জন্য এই ঘটনাটি গুরুত্বপূর্ণ নছীহত এবং উনার জীবনী এক অনুপম আদর্শ।
(১৬) হযরত আবুল হাসান নূরী বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার যুগে এক সময় গোলাম খলীল নামে এক ব্যক্তি তাছাউফের বিরোধীতা শুরু করলো। সে খলীফার নিকট গিয়ে সূফীদের সম্পর্কে অনেক মিথ্যা তথ্য বানিয়ে বললো যে, তারা কাফির এবং বেদ্বীন, তাদেরকে হত্যা করা উচিত।
খলীফা তখন সকল সূফীদেরকে তার দরবারে হাজির করবার জন্য হুকুম করলো। হযরত রাক্বাম রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আবু হামযা রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আবুল হাসান নূরী বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত শিবলী রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং আরো অনেককে খলীফার দরবারে হাজির করা হলো। খলীফা উনাদের হত্যার জন্য জল্লাদকে নির্দেশ দিলো।
জল্লাদ প্রথমে হযরত রাক্বাম রহমতুল্লাহি আলাইহিকে হত্যা করতে উদ্যত হলো। তখন হযরত আবুল হাসান নূরী বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি প্রফুল্ল মনে হাসতে হাসতে হযরত রাক্বাম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার স্থানে গিয়ে বসে পড়লেন। রাজসভার সভাসদগণ আশ্চর্য্য হয়ে উনাকে ভৎসর্না করতে লাগলো এবং বললো যে, তলোয়ার এমন বস্তু নয় যে, তার নীচে মাথা রাখার জন্য তাড়াহুড়ার প্রয়োজন।
তখন হযরত আবুল হাসান নূরী বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, পরের স্বার্থকে নিজের স্বার্থের উপর প্রাধান্য দেয়াই আমার তরীক্বতের নীতি। দুনিয়ায় সবচেয়ে প্রিয় হচ্ছে নিজের জীবন। আমি আমার জীবনের বাকী কয়েকটি নিঃশ্বাস আমার এই দ্বীনি ভাইদের জন্য কুরবান করে দিতে চাই। খলীফা হযরত নূরী বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার এ ইনসাফ এবং সততাপূর্ণ পদক্ষেপ দেখে অবাক হয়ে গেলো। ফাঁসির হুকুম বন্ধ করে বিচারের জন্য কাজীর কাছে পাঠিয়ে দিলো।
কাজী সাহেব উনাদেরকে ইসলামী শরীয়ত উনার কয়েকটা মাসয়ালা জিজ্ঞেস করলেন। উত্তর শুনে কাজী সাহেব খলীফাকে বললেন, উনারা যদি যিন্দিক এবং বেদ্বীন হন, তবে আমি ফতওয়া দিচ্ছি যে, এ দুনিয়ায় কোন একত্ববাদী নেই।
ফায়দা:
যারা মহান আল্লাহ পাক উনার ওলীগণ উনাদের বিরোধীতা করে; স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনি তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। তাছাউফের সুমহান শিক্ষা ব্যতীত মহান আল্লাহ পাক উনার ওলী হওয়া যায় না। আর মহান আল্লাহ পাক উনার ওলীতো সেই ব্যক্তি, যাঁর আচার-ব্যবহারে, কথা-বার্তায়, সীরত-সুরতে, চাল-চলনে তথা প্রতিটি মুহূর্তে তাছাউফের সুমহান শিক্ষার বাস্তবতা প্রস্ফুটিত হয়ে উঠবে, যেমন রাজদরবারে জল্লাদের তরবারীর নীচে হযরত আবুল হাসান নূরী বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে প্রস্ফুটিত হয়ে উঠেছে।
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (২)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যাকাত সম্পর্কিত আহকাম, মাসায়িল ও ফাযায়িল (২)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পর্দা পালন করা পুরুষ-মহিলা সবার জন্য ফরজ
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত মুবারক করা সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসীর জন্য ফরযে আইন
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে ছিরাতুল মুস্তাক্বীম উনার ছহীহ তাফসীর- ০১
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
যেখানে প্রাণীর ছবি থাকে, সেখানে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করেন না
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
যা খাওয়া হারাম করা হয়েছে
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ইবলিসের পরে দ্বিতীয় উলামায়ে সূ হলো বালয়াম বিন বাউরা
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পবিত্র ক্বাবলাল জুমুআহ্, বা’দাল জুমুআহ্ এবং সুন্নাতুল ওয়াক্ত নামায উনার শরঈ আহকাম (৪)
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)












