হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের কিছু সংক্ষিপ্ত ঘটনা ও ইবরত নছীহত (৯)
, ২৯ মে, ২০২৫ ১২:০০:০০ এএম ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
(১৭) একদিন হযরত হাতেম আছেম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে উনার শায়েখ হযরত শাক্বীক বলখী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি জিজ্ঞেস করলেন, “আপনি কতদিন ধরে আমার এখানে আছেন”? তিনি উত্তর দিলেন, “৩৩ বৎসর”। হযরত শাক্বীক বলখী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আবার জিজ্ঞেস করলেন, “এত বৎসরে আপনি আমার থেকে কতটুকু শিক্ষা লাভ করেছেন”? তিনি বললেন, “এই ৩৩ বৎসরে আমি মাত্র ৮টি মাসয়ালা শিখেছি”।
হযরত শাক্বীক বলখী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আফসুস করে বললেন, “আফসুস, এত বৎসরে আপনি মাত্র ৮টি মাসয়ালা শিখলেন। ” হযরত হাতেম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, “জী হুযূর! সত্যিই আমি মাত্র ৮টি মাসয়ালাই শিখেছি”। তবে আমার মনে হয়, “এই ৮টি বিষয়ের জ্ঞানের মধ্যে দুনিয়া ও আখিরাতের নাযাত নিহিত আছে। ”
শায়েখ বললেন, “আচ্ছা, বলেন তো দেখি সেই ৮টি বিষয় কি কি”? হযরত হাতেম আছেম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলতে লাগলেন- প্রথমত, নেক আমল ব্যতিত অন্য কোন বন্ধু নেই, যে মৃত্যুর পরও কবরে যাবে। নেক আমলই হচ্ছে স্থায়ী বন্ধু আর বাকী সব অস্থায়ী বন্ধু। কাজেই আমি অন্য সব বন্ধুকে ত্যাগ করে শুধুমাত্র নেক আমলকেই বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করলাম।
দ্বিতীয়ত, মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেছেন, “যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার দরবারে দাঁড়িয়ে হিসাব নিকাশ দেবার ভয় রাখে এবং নিজের নফসকে খাহেশ থেকে ফিরিয়ে রাখে, তারই স্থান হবে বেহেশতে। ” অতঃপর আমি নফসানী খাহেশের বিরুদ্ধাচরণ শুরু করলাম এবং নফসকে মহান আল্লাহ পাক উনার হুকুম পালনে বাধ্য করলাম।
তৃতীয়ত, মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেছেন, “তোমাদের কাছে যা কিছু আছে, তা নিঃশেষ হয়ে যাবে। আর মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে যা আছে তা চিরস্থায়ী। ” মহান আল্লাহ তায়ালা উনার এ ঘোষণার প্রতি বিশ্বাস করে আমার সমস্ত ধন দৌলত আমি মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় ব্যয় করে ফেলেছি। সেগুলোর বিনিময়ে মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট থেকে যা পাবো, তা স্থায়ীভাবেই পাবো আশা করি।
চতুর্থত, মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি অধিক খোদাভীরু, পরহেযগার সে ব্যক্তিই মহান আল্লাহ তায়ালা উনার দরবারে অধিক সম্মানিত”। সুতরাং এ দুনিয়ার ধন-দৌলত, বংশ মর্যাদা, শক্তি, বিদ্যা-বুদ্ধি ইত্যাদির জন্য ফখর, রিয়া, অহংকার ইত্যাদি ত্যাগ করে প্রকৃত সম্মানের বিষয় পরহেযগারীকেই আঁকড়িয়ে ধরলাম।
পঞ্চম, মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “পার্থিব জীবনে আমিই তাদের মধ্যে তাদের জীবিকা বন্টন করে থাকি। ” অর্থাৎ শত চেষ্টা করেও মহান আল্লাহ পাক উনার দেয়া নির্ধারিত ধন-দৌলত, মান-সম্মান এক বিন্দু কেউ বাড়াতে বা কমাতে পারবে না। কাজেই অন্যের ধন-দৌলত মান-সম্মান দেখে হিংসা-বিদ্বেষ পোষণ করে কোন লাভ নেই।
ষষ্ঠ, মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেছেন, “নিশ্চয়ই, শয়তান তোমাদের চিরশত্রু। অতএব, কেবল তাকেই শত্রু মনে করো। ” এ পবিত্র আয়াত শরীফ অনুসারে আমার বিশ্বাস পয়দা হলো যে, শয়তান এবং শয়তানের প্রকৃতি বিশিষ্ট গোমরাহ দল (কাফির-মুশরিক) ছাড়া আর কারো সাথে শত্রুতা পোষণ করা উচিত নয়। সুতরাং আমি তাদের সাথে শত্রুতা পোষণ করতে দৃঢ়রূপে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হলাম।
মহান আল্লাহ পাক তিনি অন্যত্র ইরশাদ মুবারক করেন, “হে আদম সন্তান! আমি কি তোমাদেরকে আদেশ করিনি যে, শয়তানের তাবেদারী করো না? নিশ্চয়ই শয়তান তোমাদের জন্য প্রকাশ্য শত্রু। আর এও কি আদেশ করিনি যে, একমাত্র আমার ইবাদত করো, এই সরল ও সত্য পথ। ”
সপ্তম, মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেছেন, “দুনিয়াতে যত প্রকার জীব আছে, একমাত্র মহান আল্লাহ পাক উনার উপরই তাদের জীবিকা প্রদানের দায়িত্ব রয়েছে। ” সুতরাং আমার জীবিকা প্রদানের দায়িত্বও তো অবশ্যই মহান আল্লাহ পাক উনার উপর। আমি যদি উনার আদেশ মুবারক পালন করি তবে তিনিও উনার দায়িত্ব অবশ্যই পালন করবেন। এই ভেবে আমি জীবিকার চিন্তা ত্যাগ করে মহান আল্লাহ পাক উনার আনুগত্য পালনে মনোযোগ দিলাম।
অষ্টম, মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন, “আর যারা মহান আল্লাহ পাক উনার উপর তাওয়াক্কুল করে তিনিই তাদের জন্য যথেষ্ট। ” অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনার উপর ভরসা বা তাওয়াক্কুল করলে আর কারো উপর ভরসা করার প্রয়োজন নেই। কাজেই আমি আমার সমস্ত ব্যাপারে মহান আল্লাহ পাক উনার উপর ভরসা করাকেই যুক্তিসঙ্গত বলে মনে করলাম এবং অদ্যাবধি তাই করছি।
হযরত শাক্বীক বলখী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি একথাগুলো শুনে খুব খুশি হলেন এবং বললেন, “দোয়া করি যেন মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনাকে এ শিক্ষা অনুযায়ী আমল করার তাওফিক দান করেন। ”
ফায়দা:
উক্ত ঘটনায় যে ৮টি বিষয়ের কথা বলা হয়েছে তা হচ্ছে- (১) সর্বদা নেক আমল করা, (২) নফসের খাহেশ দূর করা, (৩) দুনিয়া ক্ষণস্থায়ী এবং আখিরাতকে চিরস্থায়ী বলে বিশ্বাস করা, (৪) সর্বক্ষেত্রে পরহেযগারীতা অবলম্বন করা, (৫) অন্যের ধন-দৌলত, মান-সম্মান দেখে হিংসা না করা, (৬) একমাত্র শয়তান এবং শয়তানের প্রকৃতি বিশিষ্ট গোমরাহ দলের সাথে শত্রুতা পোষণ করা, (৭) একমাত্র মহান আল্লাহ পাক তিনিই রিযিকদাতা, এই বিশ্বাস পোষণ করা ও (৮) সর্বক্ষেত্রে মহান আল্লাহ পাক উনার উপর তাওয়াক্কুল বা ভরসা করা। (সমাপ্ত)
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ইলিম অর্জন করার পর সে অনুযায়ী যে আমল করে না, তার তিনটি অবস্থার যে কোনো একটি হবেই-
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (৪)
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ঢিলা-কুলুখের বিধান
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
বেপর্দা হওয়া শয়তানের ওয়াসওয়াসাকে সহজ করার মাধ্যম
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় খরচ করলে তা দ্বিগুণ-বহুগুনে বৃদ্ধি করে ফিরিয়ে দেয়া হয়
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
আসমাউর রিজাল, জারাহ ওয়াত তা’দীল, উছুলে হাদীছ শরীফ উনার অপব্যাখ্যা করে অসংখ্য ছহীহ হাদীছ শরীফ উনাকে জাল বলছে ওহাবী সালাফীরা (১)
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (৩)
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক- ছবি তোলা হারাম
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক করেন-
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার)












