জীবনী মুবারক
হযরত আবদুর রহমান ইবনে আওফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (১)
বিলাদত শরীফ: হিজরীপূর্ব ৪৩ সন। (শামসীপূর্ব ৫৫ সন) বিছাল শরীফ: ৩২ হিজরী। বয়স মুবারক: ৭৫ বছর।
, ২৩ রমাদ্বান শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ০৪ হাদী আশার, ১৩৯১ শামসী সন , ০৩ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রি:, ২০ চৈত্র, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
পরিচিতি:
নাম আবদুর রহমান। ইসলাম-পূর্ব নাম আবদে আমর বা আবদে কা’ব। উপনাম আবু মুহম্মদ। পিতার নাম আওফ, মাতার নাম শিফা বিনতে আওফ। মাতা-পিতা উভয়েই ছিলেন কুরাইশ বংশের যুহ্রা শাখার লোক। দ্বীন ইসলাম গ্রহণের পর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার নাম রাখেন আবদুর রহমান। উনার উর্ধ্বতম ৬ষ্ঠ পুরুষে গিয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক বংশের সাথে মিলিত হয়েছে।
বিলাদত শরীফ:
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের ১০ বছর পর অর্থাৎ আমুল ফীল (আবরাহার বাইতুল্লাহ শরীফ আক্রমণ) উনার দশ বছর পর তিনি বিলাদত শরীফ গ্রহণ করেন। (তবাকাত)
উনার পিতা আওফ ছিলেন ব্যবসায়ী। ব্যবসার উদ্দেশ্যে একবার তিনি পিতার সাথে ইয়ামান গিয়েছিলেন। পথে বনু জুজায়না গোত্রের লোকের হাতে উনার পিতা নিহত হন। তিনি সে স্থানেই পিতৃ হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
দ্বীন ইসলাম গ্রহণ:
দ্বীন ইসলাম উনার প্রথম যুগেই হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার মাধ্যমে দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেন।
হিজরত ও ব্যবসায় মনোনিবেশ:
আনুষ্ঠানিক রিসালাত মুবারক প্রকাশের ৫ম সনে হাবশার মুহাজিরদের প্রথম ১৫ জনের মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম। কিছুদিন পর হাবশা হতে মক্কা শরীফে ফিরে আসেন এবং রিসালাত মুবারক প্রকাশের ১৩ সনে মদীনা শরীফে হিজরত করেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত আবদুর রহমান ইবনে আওফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে হযরত সা’দ ইবনে রাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সাথে ভ্রাতৃত্ব সম্পর্ক স্থাপন করে দিয়েছিলেন। আনছার ছাহাবীগণ উনাদের সাথে এ ভ্রাতৃত্ব সম্পর্ক স্থাপনের উদ্দেশ্য ছিল মুহাজির ছাহাবীগণের সাহায্য করা। এ বিষয়ে হযরত আবদুর রহমান ইবনে আওফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার আনছারী ভ্রাতা হযরত সা’দ ইবনে রাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি একটি তুলনাবিহীন নজীর প্রদর্শন করেছিলেন।
হযরত আবদুর রহমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, আমার আনছারী ভাই হযরত সা’দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আমাকে বললেন, আনছারগণের মধ্যে আমি একজন সম্পদশালী ব্যক্তি। আমার অর্ধেক সম্পদ আপনাকে প্রদান করছি; আর আমার দুই আহলিয়া বা স্ত্রীর মধ্যে যাকে আপনার পছন্দ হয়, উনাকে আমি তালাক দিবো, আপনি উনাকে বিবাহ করতে পারেন। হযরত আবদুর রহমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উত্তরে বললেন, এগুলির আমার কোন প্রয়োজন নেই। মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনার পরিবার পরিজন ও ধন সম্পদে বরকত দিন। ব্যবসা বাণিজ্যের জন্য এ স্থানে কোন বাজার আছে কি? হযরত সা’দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, হ্যাঁ, বনু কায়নুকা বাজার। হযরত আবদুর রহমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু পরদিন ভোর হতেই কিছু ঘি ও পণির নিয়ে ব্যবসা শুরু করলেন। উনার ব্যবসার এত উন্নতি হতে লাগল যে, তিনি বলেন, একটি পাথরের টুকরা হাতে নিলেও মনে হতো এতে স্বর্ণ বা রৌপ্য আমার হস্তগত হবে। (ইবনে সা‘দ)
একবার উনার এক বাণিজ্য কাফেলা আসলে মদীনা শরীফে আলোড়নের সৃষ্টি হয়ে পড়েছিল। খাদ্য বোঝাই ৭০০ উষ্ট্র উক্ত কাফেলায় ছিল। ব্যবসা শুরু করার কিছুদিন পরই তিনি আনছারদের কুদাআ গোত্রের কন্যা ছাহ্লা বিন্তে আছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।
জিহাদের ময়দানে:
হযরত আবদুর রহমান ইবনে আওফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বদর, উহুদ ও খন্দকসহ সকল জিহাদেই অংশগ্রহণ করেন এবং অত্যন্ত সাহস ও দৃঢ়তার পরিচয় দেন। উহুদের জিহাদের সময় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর যে আক্রমণ হয়েছিল, সে সময় যে কতিপয় ছাহাবী উনার নিকটে ছিলেন, তিনি ছিলেন উনাদের অন্যতম। সেদিন উনার শরীরে ২১টি স্থানে আঘাত লেগেছিল। পায়ের আঘাতের ফলে বাকী জীবন উনাকে কষ্ট করে চলতে হয়েছিল।
শত শত মুজাহিদ সম্বলিত একটি বাহিনীর নেতৃত্বে ৫ম হিজরী সনে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে দুমাতুল জান্দালে প্রেরণ করেছিলেন। রওয়ানা হওয়ার সময় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি স্বহস্তে উনার মাথায় কালো বর্ণের একটি পাগড়ী মুবারক পরিয়ে উনার হাতে একটি পতাকা তুলে দিয়েছিলেন। দুমাতুল জান্দালে পৌঁছে তিনি তিনদিন পর্যন্ত লোকদেরকে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দিকে আহবান জানান। ফলে খৃষ্টান প্রধান কাল্ব গোত্রের আছবাগ ইবনে আমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও উনার সম্প্রদায়ের বহু লোক দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নির্দেশ মুবারকে কাল্ব গোত্রের প্রধান নওমুসলিম আছবাগ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার মেয়ে ‘তুমাদির’কে হযরত আবদুর রহমান ইবনে আওফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বিবাহ করেন। এই ঘরেই সুপ্রসিদ্ধ হাদীছ শরীফ বর্ণনাকারী আবু সাল্মা উনার বিলাদত শরীফ হয়েছিল। (ইবনে সা’দ) (চলবে)
-আল্লামা সাঈদ আহমদ গজনবী।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
১২ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
১২ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১২ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
মুসলমানদের সবচেয়ে বড় শত্রু ইহুদী ও মুশরিকরা
১২ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা সত্যের মাপকাঠি
১২ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার কথা বলার উদ্দেশ্য পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযাকে নষ্ট করা, যা মূলত মুনাফিকদের একটি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত (৫৬)
১২ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
১১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
অকাট্য দলীল দ্বারা সুস্পষ্টভাবে “গান-বাজনা” হারাম সাব্যস্ত হয়েছে
১১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইমামে আ’যম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি
১১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার)