হিকায়াতুল আবরার বা নছীহতমূলক ঘটনাসমূহ (১৬)
, ২৮ যিলক্বদ শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ১৯ আউওয়াল, ১৩৯১ শামসী সন , ১৮ জুন, ২০২৩ খ্রি:, ০৪ আষাঢ়, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা

পবিত্র সুন্নত মুবারক অনুযায়ী আমল করতে হবে
হযরত আনাস ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত- তিনি বলেন, একদিন তিনজন হযরত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা আসলেন এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ইবাদত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। উনাদেরকে যখন মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আমল-ইবাদত সম্পর্কে সংবাদ দেয়া হলো, তখন উনারা নিজেদের আমলগুলো কম মনে করলেন এবং বললেন, মহান আল্লাহ পাক তিনিতো উনার মহাসম্মানিত হাবীব ও মাহবূব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সমস্ত গুনাহ থেকে পবিত্র রেখেছেন।
অতঃপর উনাদের মধ্যে একজন বললেন, আমি সারা রাত্র নামায পড়ব একটুও ঘুমাব না। আরেকজন বললেন, আমি সারা বৎসর রোযা রাখবো একদিনও ভাঙ্গব না। আরেক জন ছাহাবী বললেন, আমি বিয়ে শাদী করবনা, স্ত্রীদের নিকট যাব না। এমন সময় সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাদের নিকট এসে উপস্থিত হন এবং বলেন, ‘হে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম! আপনারাই কি এরূপ কথা বলেছেন যে, সারারাত্র নামায পড়বেন, সারা জীবন রোযা রাখবেন এবং বিবাহ করবেন না।’ তখন উনারা বললেন, হ্যাঁ আমরা এগুলো বলেছি। তখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, সাবধান! মহান আল্লাহ পাক উনার কসম, আমি আপনাদের চেয়ে সব চাইতে মহান আল্লাহ পাক উনাকে বেশী ভয় করি এবং আপনাদের চেয়ে আমি বেশী মুত্তাকী পরহেযগার। তথাপি আমি রাত্রে নামায পড়ি, আবার ঘুমাই, রোযা রাখি ও ভঙ্গ করি এবং আমি বিবাহ করেছি। এটাই আমার সুন্নত মুবারক, সুতরাং যে আমার পবিত্র সুন্নাহ হতে ফিরে যাবে সে আমার উম্মতের অন্তর্ভূক্ত নয়। (মিশকাত শরীফ)
উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার আলোচনা দ্বারা এটা স্পষ্টই প্রমাণিত হয় যে, পবিত্র ইসলাম উনার মধ্যে তাফরীত এবং ইফরাত অর্থাৎ বাড়ানো ও কমানোর অধিকার কাউকে দেয়া হয়নি। কাজেই আমাদের কোন আমল করতে হলে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক আদর্শের ভিত্তিতে করতে হবে, কারণ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অনুসরণ অনুকরণ করা প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য ফরযে আইন।
মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি মুহব্বত
এক বুযুর্গ ব্যক্তি ছিলেন, তিনি বাজারে গিয়েছেন মাল খরিদ করার জন্য। একটা বড় মাছ খরিদ করেছেন। যেটা সাধারণভাবে ব্যাগে করে আনা সম্ভব নয়। ওটা মাথায় করে আনতে হবে। তখন সেই বুযুর্গ ব্যক্তি তিনি একজন কুলি খুঁজতে লাগলেন। একটা যুবক ছেলে এসে বললো, হুযূর, আপনি কি মাছটা নেয়ার জন্য কোন লোক খুঁজছেন? বুযুর্গ ব্যক্তি বললেন, হ্যাঁ। তাহলে আমাকে দেন, আমি পৌঁছে দেই। আপনি যা দেন সন্তুষ্ট হয়ে আমি তাই নিব। যুবক ছেলেটি মাছটা কাঁধে নিয়ে রওয়ানা হয়ে গেল। কিছুদূর আসার পরে হঠাৎ মসজিদে আযান হলো। যোহরের আযান। সেই কুলি মাছটা রাস্তার মধ্যে রেখে বললো, হুযূর! এখন তো আযান হয়ে গেছে, মহান আল্লাহ পাক তিনি ডাক দিয়েছেন, আমি মসজিদে চলে যাই, আমাকে নামায পড়তে হবে। আপনি যদি ইচ্ছা করেন অপেক্ষা করতে পারেন বা আমার সাথে মসজিদে আসতে পারেন। এখন তো আমাকে মসজিদে যেতেই হবে। একথা বলে যুবক মসজিদে চলে গেল। তখন বুযুর্গ ব্যক্তি যিনি মাছ নিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি বললেন, এই ছেলের কাজটাতো দেখা যায় আল্লাহওয়ালাদের মতো। আযান হওয়ার সাথে সাথে মসজিদে প্রবেশ করলো। সেই বুযুর্গ ব্যক্তির সাথে উনার ছেলেও ছিল। উনারা দু’জনও সেই মাছটাকে রাস্তার মধ্যে রেখে মসজিদে প্রবেশ করলেন, নামায আদায় করলেন। নামায আদায় করার পর উনারা বের হয়ে আসলেন। দেখলেন মাছটা যেভাবে ছিল ঠিক ওই ভাবেই রয়েছে। ওই কুলি আবার মাছটা নিয়ে বাড়ীতে পৌঁছায়ে দিয়ে পারিশ্রমিক নেয়ার পর কুলি ছেলেটি বললো, আমাকে তাহলে এখন চলে যাওয়ার ইজাযত দিন। কিন্তু বুযুর্গ ব্যক্তির স্ত্রী ঘটনাটা শুনার পর বললেন, তাহলে এক কাজ করুন, এই কুলি ছেলেটাকে দাওয়াত দেন। সেও আমাদের সাথে মাছ খাবে। কিন্তু সেই কুলি ছেলেটি বললো, আমি একবার যেখানে যাই দ্বিতীয়বার সেখানে যাই না, আর আমি আজকে রোযা। তখন সেই বুযুর্গ ব্যক্তি বললেন, তাহলে তুমি এক কাজ কর, আমাদের সাথে ইফতারী করে যাও। সে বললো, তাহলে আমি আপনাদের বাড়ীর নিকটে যে মসজিদ, সেখানে অপেক্ষা করতে থাকি। মাগরিবের ওয়াক্ত হলে ইফতারীর পরে খাওয়া-দাওয়া করে চলে যাব, ঠিক তাই হলো। মাগরিবের ওয়াক্ত হলে সেই ব্যক্তি ইফতারী করলো। ইফতারীর পর বুযুর্গ ব্যক্তি বললেন, তুমি এখন কোথায় যাবে? আমাদের এখানে থেকে যাও। এক ঘরে তাকে জায়গা দেয়া হলো। সে ঘরে প্রবেশ করলো, ঘরে প্রবেশ করেই সে আবার নামায শুরু করে দিল, নামায পড়তে লাগলো। মূলত সে সারা রাতই সেখানে নামায পড়লো। পরের দিন চলে গেল। সুবহানাল্লাহ!
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
একটা আদেশ মুবারক অমান্য করে আরেকটা মান্য করা জায়িয নেই
১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
একটা আদেশ মুবারক অমান্য করে আরেকটা মান্য করা জায়িয নেই
১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সাওয়ানেহ উমরী মুবারক (৭)
১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পবিত্র শবে বরাত উনার রোযা নিয়ে বিভ্রান্তি নিরসন
১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ছবি তোলা শক্ত হারাম, রয়েছে কঠিন শাস্তি
১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে লেবাস বা পোশাকের হুকুম-আহকাম (১১)
১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে লেবাস বা পোশাকের হুকুম-আহকাম (১১)
১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পবিত্র ঈমান বা আক্বায়িদ সম্পর্কিত পবিত্র কালিমা শরীফসমূহ
১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পবিত্র ছহীহ হাদীছ শরীফ দ্বারাই শবে বরাত প্রমাণিত (৪)
১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)