জীবনী মুবারক
১৩ হিজরী শতকের মুজাদ্দিদ, মুজাহিদে মিল্লাত, শহীদে বালাকোট, আমীরুল মু’মিনীন, হযরত সাইয়্যিদ আহমদ শহীদ বেরেলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি (২)
বিলাদত শরীফ: ১২০১ হিজরী বিছাল শরীফ: ১২৪৬ হিজরী বয়স মুবারক: ৪৫ বছর
, ০৭ ছফর শরীফ, ১৪৪৭ হিজরী সন, ০৩ ছালিছ, ১৩৯৩ শামসী সন , ০২ আগস্ট, ২০২৫ খ্রি:, ১৯ শ্রাবণ, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
বাল্যকাল:
হযরত সাইয়্যিদ আহমদ শহীদ বেরেলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বাল্য বয়স থেকেই নির্জনতা অবলম্বন করতেন এবং কাফির মুশরিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ করার চিন্তা-ভাবনা করতেন। উনার শৈশবকাল মুবারক সম্পর্কে “সাওয়ানেহ আহমদী” নামক কিতাবে তিনি নিজেই বলেন, বাল্যকাল হতেই আমার মনে এই ধারণা বা ভাব উদয় হতো যে, একদিন আমি কাফিরদের বিরুদ্ধে জিহাদ করবো। তাই শৈশবেই দেখা যায় তিনি উনার সঙ্গী-সাথীদের দুই দলে বিভক্ত করে দু’টি পরস্পর সৈন্যবাহিনী দাঁড় করিয়ে দিতেন। একটি দলের আমির হয়ে তিনি উনার নাম দিতেন “মুজাহিদে ইসলাম” অন্য দলটির নাম দেওয়া হতো “কাফির বাহিনী। ”
এইভাবে দু’টি দলের মধ্যে যুদ্ধ লেগে যেতো। যুদ্ধে যখন “মুজাহিদে ইসলাম” বাহিনী জয় লাভ করতো তখন তিনি ও উনার সঙ্গীগণ খুব জোরে শোরে তাকবীর ধ্বনি দিতেন। আর এটা হবে না-ই বা কেন? তিনি যে আসাদুল্লাহিল গালিব, ইমামুল আউওয়াল, সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার আওলাদ উনার অন্তর্ভুক্ত। সুবহানাল্লাহ!
কাফির-মুশরিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ করা উনার বংশগত ঐতিহ্য। এই জন্যই দেখা যায়, উনার হায়াত মুবারকের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত তিনি কাফির-মুশরিকদের বিরুদ্ধে বহু জিহাদ করেছেন। ভারতবর্ষ থেকে কাফিরদের অস্তিত্ব তুলে দেয়ার জন্য তিনি আকোড়ার যুদ্ধ, শিধূর যুদ্ধ, উতমান জাইর যুদ্ধ, পান্জতার যুদ্ধ, ফুলড়ার যুদ্ধ, মর্দান যুদ্ধ, মায়ার যুদ্ধসহ আরো অনেক যুদ্ধ ক্ষেত্রে তিনি কাফিরদের মোকাবিলায় তরবারী পরিচালনা করেছিলেন। অবশেষে ১৮৩১ সালে বালাকোটে শিখ, খ্রিস্টান ও মুনাফিক সীমান্ত সরদারদের বিরুদ্ধে জিহাদ করতে গিয়ে শাহাদাত বরণ করেছেন।
দিল্লী সফর, বাইয়াত ও খিলাফত লাভ:
“মাখজানে আহমদী কিতাবের ১৮ পৃষ্ঠায়, সাওয়ানেহ আহমদী, সীরাতে সাইয়্যিদ আহমদ শহীদ” (করাচী ছাপা) ৯০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, সাইয়্যিদুনা হযরত আহমদ শহীদ বেরেলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি যখন “রায় বেরেলী” থেকে দিল্লী এলেন সিরাজুল হিন্দ, ইমামুল মুহাদ্দিস, সাইয়্যিদুনা হযরত শাহ আব্দুল আযীয মুহাদ্দিস দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সাক্ষাত ও ছোহবত মুবারক লাভের জন্য। প্রথমেই তিনি উনাকে মহাসম্মানিত সুন্নতী তরীকা মুতাবিক সালাম পেশ করলেন এবং উনার সাথে মুসাফা করলেন।
সাইয়্যিদুনা হযরত শাহ আব্দুল আযীয মুহাদ্দিস দেহলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার সালাম দেয়ার মহাসম্মানিত সুন্নতী তরীকা ও আদব দেখে জিজ্ঞেস করলেন, কি কারণে এলেন? জবাবে তিনি বললেন, মহান আল্লাহ পাক উনার মুহব্বত-মা’রিফত মুবারক হাছিলের জন্য।
সাইয়্যিদুনা হযরত শাহ আব্দুল আযীয মুহাদ্দিস দেহলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এরপর জিজ্ঞেস করলেন, কোন বংশের? তিনি বললেন, সাইয়্যিদ বংশের। তখন সাইয়্যিদুনা হযরত শাহ আব্দুল আযীয মুহাদ্দিস দেহলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি খুশি হয়ে বললেন, এটা তো আপনারই বংশগত মিরাসী হক।
মহান আল্লাহ পাক উনার ফযল-করম মুবারকে আপনিও তা অর্জন করতে পারবেন। এরপর তিনি উনাকে চার তরীকায় বাইয়াত করালেন।
সাইয়্যিদুনা হযরত শাহ আব্দুল আযীয মুহাদ্দিস দেহলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নেক ছোহবত মুবারক উনার কারণে তিনি অতি অল্প সময়ের মধ্যে সুলুকের রাস্তা অতিক্রম করে মনজিলে মাকছূদে পৌঁছে গেলেন।
সাইয়্যিদুনা হযরত শাহ আব্দুল আযীয মুহাদ্দিস দেহলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি স্বল্প সময়ে আপন মুরীদের এই তরক্কী দেখে অত্যন্ত খুশি হলেন এবং উনার গোটা খান্দানের বড় বড় আলেমদেরকে উনার কাছ থেকে ফয়েজ হাছিল ও তা’লীম নেয়ার জন্য বিশেষ তাগিদ দিলেন। অতঃপর উনাকে খিলাফতের খিরকা পরিধানে ভূষিত করে নিয়ামত মুবারক হাদিয়া দিলেন।
উনার সম্মানিত শায়েখ উনার স্বপ্ন মুবারক:
আল্লামা রুহুল আমীন বশীর হাটি রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার “কারামতে আহমদী” কিতাবের ২৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন, “হযরত সাইয়্যিদ আহমদ শহীদ বেরেলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি দিল্লী পৌঁছার সাত দিন আগে হযরত শাহ আব্দুল আযীয মুহাদ্দিস দেহলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে স্বপ্নে দেখেন যে, তিনি দিল্লীর জামে মসজিদে মহাসম্মানিত তাশরীফ মুবারক এনেছেন। চারদিক থেকে লোকজন উনার বরকতময় জিয়ারত মুবারক লাভের জন্য আসছে। (ইনশাআল্লাহ চলবে)
-মুহাদ্দিস আহমদ হুসাইন।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (২)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যাকাত সম্পর্কিত আহকাম, মাসায়িল ও ফাযায়িল (২)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পর্দা পালন করা পুরুষ-মহিলা সবার জন্য ফরজ
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত মুবারক করা সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসীর জন্য ফরযে আইন
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে ছিরাতুল মুস্তাক্বীম উনার ছহীহ তাফসীর- ০১
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
যেখানে প্রাণীর ছবি থাকে, সেখানে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করেন না
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
যা খাওয়া হারাম করা হয়েছে
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ইবলিসের পরে দ্বিতীয় উলামায়ে সূ হলো বালয়াম বিন বাউরা
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পবিত্র ক্বাবলাল জুমুআহ্, বা’দাল জুমুআহ্ এবং সুন্নাতুল ওয়াক্ত নামায উনার শরঈ আহকাম (৪)
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)












