কারামত
“সেদিন আমার ক্বইয়ূমিয়াতের হাল এমনভাবে প্রবল হয়েছিল যে, আমি যদি আসমানকে যমীন এবং যমীনকে আসমান হতে বলতাম তাহলে তাই হতো।” সুবহানাল্লাহ!
, ১২ রবীউছ ছানী শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২৯ খ্বমীছ ১৩৯১ শামসী সন , ২৮ অক্টোবর, ২০২৩ খ্রি:, ১২ কার্তিক, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
অপরদিকে বাদশাহর দরবারে একজন মুফতী ছিলেন। উনার নাম হযরত আব্দুর রহমান রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি ছিলেন আফদ্বালুল আওলিয়া, ইমামে রব্বানী হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মুরীদ। তিনি বাদশাহকে সবসময় হক্বের উপর ইস্তিক্বামত থাকতে পরামর্শ দিতেন। একবার উজিরে আ’যম আসফ খাঁর নেতৃত্বে শিয়ারা ইউরোপ থেকে চৌদ্দ জন পাদ্রীকে নিয়ে আসলো। বাদশা যাতে খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করতে রাজী হয়। পাদ্রীরা এসে বাদশাহর দরবারে বীজ লাগালো, তাতে সাথে সাথে গাছ হয়ে ফল হলো। আগুন ব্যতীত ভাত পাকালো। বাদশাহ সেটা বুঝতে না পেরে তাদের অনুরক্ত হয়ে গেল। খ্রিস্ট ধর্ম গ্রহণ করবে বলে এক প্রকার সিদ্ধান্ত নিলো। মুফতী হযরত আব্দুর রহমান রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বিষয়টি আফদ্বালুল আওলিয়া, ইমামে রব্বানী হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে অবহিত করলেন। ইমামে রব্বানী হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, তাদেরকে থাকতে বলুন, আমি আসতেছি। তিনি বাদশাহর দরবারে এসে পাদ্রীদেরকে বললেন, “তোমরা তোমাদের কথিত কারামত দেখাও দেখি। তারা তাদের কথিত কোন কারামত দেখাতে পারলো না। ভয়ে থর থর করে কাঁপতে লাগলো। আর কাকুতি-মিনতি করে বার বার ক্ষমা চাইতে লাগলো। তখন তিনি তাদেরকে দু’ভাগ হতে বললেন। তারা দু’ভাগ হলো। তিনি তাদের একভাগকে বললেন-
مُوْتُوْا بِاِذْنِ اللهِ
(তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনার আদেশে মরে যাও) সাথে সাথে তারা মারা গেল। অপর ভাগকে বললেন, দেখতো তারা জীবিত না মৃত। তারা ভালভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বললো, “তারা মৃত”। তিনি বললেন, “তোমরা তাদেরকে জীবিত করো।” তারা জীবিত করতে পারলো না। তাই তারা হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ক্বদম মুবারক ধরে তাদের সঙ্গীদেরকে জীবিত করে দেয়ার জন্য কান্নাকাটি করলো। তখন ইমামে রব্বানী হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি তাদের (মৃতদের) প্রতি লক্ষ্য করে বললেন-
قُوْمُوْا بِاِذْنِ الله
(তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনার আদেশ মুবারক-এ জীবিত হও)। সাথে সাথে তারা জীবিত হলো।
এবার অপর ভাগের প্রতি লক্ষ্য করে তিনি বললেন-
مُوْتُوْا بِاِذْنِ اللهِ
(তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনার আদেশে মরে যাও) সাথে সাথে তারাও মারা গেল। জীবিতদেরকে বললেন, তাদেরকে জীবিত করো। তারা তাদেরকে জীবিত করতে পারলো না। তাই তারা হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ক্বদম মুবারক ধরে তাদের সঙ্গীদেরকে জীবিত করে দেয়ার জন্য কান্নাকাটি করলো। তখন তিনি তাদেরকেও জীবিত করলেন। ইহা দেখে বাদশাহ জাহাঙ্গীরসহ সবাই তওবা করলো এবং বাইয়াত গ্রহণ করলো। ইমামে রব্বানী হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, “সেদিন আমার ক্বইয়ূমিয়াতের হাল এমনভাবে গালিব বা প্রবল হয়েছিল যে, আমি যদি আসমানকে যমীন এবং যমীনকে আসমান হতে বলতাম তাহলে তাই হতো।” সুবহানাল্লাহ!
যেমন এ সম্পর্কে কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে, “রাজা-বাদশাহরা যদি জানতো যে, ওলীআল্লাহগণ উনাদের কাছে মহান আল্লাহ পাক উনার কি নিয়ামত মুবারক রয়েছে, তাহলে রাজা-বাদশাহরা উক্ত নিয়ামত মুবারক ছিনিয়ে নেয়ার জন্য যুদ্ধ-জিহাদ পর্যন্ত করতো।” সুবহানাল্লাহ!
ওলীআল্লাহগণ উনাদের ফযীলত সম্পর্কে হাদীছে কুদসী শরীফে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
اِنَّ اَوْلِيَائِىْ تَـحْتَ قَبَائِىْ لَايَعْرِفُهُمْ غَيْرِىْ اِلَّا اَوْلِيَائِىْ.
অর্থ: “নিশ্চয় আমার ওলীগণ উনারা আমার কুদরতী জুব্বার নিচে অবস্থান করেন। একমাত্র আমি ও আমার খাছ ওলীগণ ব্যতীত উনাদেরকে কেউই চিনে না।” (রাহাতুল মুহিব্বীন)
হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের শান মুবারক সম্পর্কে হাদীছে কুদসী শরীফে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে- “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন, বান্দা নফল ইবাদত করতে করতে আমার এতো নৈকট্য লাভ করেন যে, আমি উনাকে মুহব্বত করি। আর আমি যখন উনাকে মুহব্বত করি, তখন আমি উনার কান হই, তিনি আমার কুদরতী কানে শ্রবণ করেন। আমি উনার চোখ হই, তিনি আমার কুদরতী চোখে দেখেন। আমি উনার যবান হই, তিনি আমার কুদরতী যবানে কথা বলেন। আমি উনার হাত হই, তিনি আমার কুদরতী হাতে ধরেন। আমি উনার পা হই, তিনি আমার কুদরতী পায়ে চলেন। যখন তিনি আমার কাছে কিছু চান, আমি উনাকে তা সাথে সাথে দিয়ে দেই। আর যখন তিনি আমার কাছে কোনো সাহায্য তলব করেন, আমি উনাকে তা পুরা করে দেই।” সুবহানাল্লাহ! (বুখারী শরীফ, ফতহুল বারী শরীফ, উমদাতুল ক্বারী শরীফ)
উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ব্যাখ্যা হলো, বান্দা কখনো মহান আল্লাহ পাক হন না। আর মহান আল্লাহ পাক তিনিও কখনো বান্দা হন না। তবে বান্দা এমন ফযীলত ও মর্যাদা হাছিল করেন, তিনি যা করেন সবই মহান আল্লাহ পাক উনার মতে ও পথে হয়।
বলার অপেক্ষা রাখে না, উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার পরিপূর্ণ মিছদাক ছিলেন ক্বউয়ূমে আউওয়াল হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি। ফলশ্রুতিতে বাদশা জাহাঙ্গীরের দরবারে ইউরোপ থেকে আগত চৌদ্দ জন পাদ্রীকে মৃত ও জীবিত করার মতো মহান কারামত প্রত্যক্ষ করিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
অ্যান্টার্কটিকা নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় বিজ্ঞানীরা
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম (৪)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা অবশ্যই সত্যের মাপকাঠি; অস্বীকারকারীরা কাট্টা কাফির (১)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র দু‘আ বা মুনাজাত (১১তম অংশ)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম (৩)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুনিয়ার যমীনে অবস্থানকালীন সময়ে ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ যে রোযা মুবারক রাখতেন সে রোযা মুবারক মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ১২ই শরীফ উনার দিনে হওয়াটা ছিলো একটি বিরল ঘটনা (২)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত হাযির-নাযির শান মুবারক (১)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
প্রাণীর ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
আল্লাহওয়ালী মহিলা উনাদের তিনটি বৈশিষ্ট্য-
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)












