ব্রিটিশ দখলদারিত্ব ইতিহাসের দীর্ঘস্থায়ী দখলদারিত্বগুলির মধ্যে একটি, যা বিশ্বব্যাপী অগণিত যুদ্ধাপরাধ, জুলুম ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটিয়েছে। নিচে এর বিবরণ ও উৎস উল্লেখ করা হলো-



১. ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশ শোষণ:

- বঙ্গভঙ্গ ও মন্টেগু-চেমসফোর্ড সংস্কার: জনগণের প্রতিবাদকে দমন করতে ১৯১৯ সালে জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকা- চালানো হয়, যেখানে ১,০০০-এর বেশি নিরস্ত্র মানুষ নিহত হয়।

- অর্থনৈতিক শোষণ: ভারত থেকে সম্পদ লুট করে ব্রিটিশ শিল্পায়ন ত্বরান্বিত করা হয়, যা দুর্ভিক্ষ ও দারিদ্রের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।



২. ইয়েমেনে গোপন যুদ্ধ (১৯৬২-১৯৬৯):

- রাজতন্ত্রীদের সমর্থন: ব্রিটিশ সরকার গোপনে যুদ্ধবিমান ও অস্ত্র সরবরাহ করে ইয়েমেনের গৃহযুদ্ধে হস্তক্ষেপ করেছিলো। ২ লক্ষ মানুষ নিহত হয় এই সংঘাতে।



৩. ইন্দোনেশিয়ায় প্রোপাগান্ডা ও গণহত্যা (১৯৬৫-১৯৬৬):

- কমিউনিস্ট নিধন: ব্রিটিশ গোয়েন্দারা ইন্দোনেশিয়ায় চকও-বিরোধী প্রচারণা চালিয়ে ১০ লক্ষ মানুষ হত্যায় উস্কানি দেয়।



৪. কেনিয়ায় মাউ মাউ বিদ্রোহ দমন (১৯৫২-১৯৬০):

ব্রিটিশ উপনিবেশবিরোধী মাউ মাউ বিদ্রোহ দমনে কেনিয়ায় চালানো হয়েছিলো নৃশংস দমননীতি।

- ভূমি দখল: ১৯২০-এর দশক থেকে ব্রিটিশ সেটেলাররা কেনিয়ার উর্বর জমি দখল করে স্থানীয় কিকুয়ু সম্প্রদায়কে বাস্তুচ্যুত করেছিলো।

- নির্যাতন শিবির: ১.৫ লক্ষাধিক কিকুয়ুকে “কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প”-এ আটকে রাখা হয়েছিলো, যেখানে নির্যাতন, গণহত্যা, নারীদের সম্ভ্রমহরণ ও পুরুষদের খোজাকরণের মতো পৈশাচিক ঘটনা ঘটেছে।

- মৃত্যুর সংখ্যা: আনুষ্ঠানিকভাবে ১১,০০০ বিদ্রোহী ও ৩,০০০ বেসামরিক নাগরিক নিহত হলেও প্রকৃত সংখ্যা ৯০,০০০-এর বেশি বলে প্রমাণ পাওয়া যায়।

- অপারেশন লিগ্যাসি: এই অপরাধের প্রমাণ ধ্বংস করতে ব্রিটিশ সরকার গোপন নথি পুড়িয়ে ফেলে এবং সমুদ্রে ফেলে দেয়।



৫. দক্ষিণ আফ্রিকায় বোয়ার যুদ্ধ (১৮৯৯-১৯০২):

- কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প: ব্রিটিশ বাহিনী ৪৫টি বোয়ার ও ৬৪টি আফ্রিকান ক্যাম্পে ১.৫ লক্ষ নারী ও শিশুকে আটকে রেখেছিলো। অপুষ্টি ও রোগে ২৭,৯২৭ বোয়ার ও ১৪,০০০ আফ্রিকান মারা যায়।

- গ্রাম ধ্বংস: ভেন্টার্সবার্গের মতো শহর পুড়িয়ে দেওয়া হয় এবং বেসামরিকদের জোরপূর্বক স্থানান্তর করা হয়।



৬. মালয় জরুরি অবস্থা (১৯৪৮-১৯৬০):

- স্কর্চড আর্থ নীতি: মালয় কমিউনিস্ট পার্টির বিরুদ্ধে ব্রিটিশ বাহিনী ৪ লক্ষ থেকে ১০ লক্ষ মানুষকে “নিউ ভিলেজ” ক্যাম্পে আবদ্ধ করে। ফসল নষ্ট করতে এজেন্ট অরেঞ্জ ব্যবহার করা হয়।

- নিহতের সংখ্যা: ৬,৭০০ গেরিলা ও ৩,০০০ বেসামরিক নিহত হয়।



৭. উত্তর আয়ারল্যান্ডের ব্লাডি সানডে (১৯৭২):

- বেসামরিক হত্যা: ডেরি শহরে শান্তিপূর্ণ মিছিলে ব্রিটিশ সেনারা গুলি চালিয়ে ১৪ জনকে হত্যা করে।



৮. ক্যারিবিয়ান দাসপ্রথা ও জমি দখল:

- গায়ানায় অভ্যুত্রেক দমন: ১৯৫৩ সালে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী চেদি জাগানকে ব্রিটিশ সেনারা ক্ষমতাচ্যুত করে।

- দাস ব্যবসা: ১৭-১৮শ শতকে ব্রিটিশরা ৩০ লক্ষ আফ্রিকানকে ক্যারিবিয়ানে নিয়ে গিয়ে বলপ্রয়োগে কাজ করাতো।



৯. আয়ারল্যান্ডের দমননীতি:

- আইরিশ স্বাধীনতা যুদ্ধ: ১৯১৯-১৯২১ সালে ব্রিটিশ বাহিনী গ্রামে গ্রামে অগ্নিসংযোগ ও গণগ্রেফতার চালায়।



১০. নথি ধ্বংসের অপারেশন লিগ্যাসি:

ব্রিটিশ সরকার ৩৭টি উপনিবেশ থেকে ২০,০০০-এর বেশি গোপন নথি ধ্বংস বা লুকিয়ে ফেলে, যাতে যুদ্ধাপরাধের প্রমাণ মুছে ফেলা যায়।



বিস্তারিত বিবরণের উৎস:

১. ইতিহাস গ্রন্থ:

- - Caroline Elkins-Gi *Legacy of Violence: A History of the British Empire*

- Santham Sanghera-এর *Empireland: How Imperialism Has Shaped Modern Britain

২. আর্কাইভ:

- ব্রিটিশ ন্যাশনাল আর্কাইভে “মাইগ্রেটেড আর্কাইভ”।

- কেনিয়ার মাউ মাউ নথি (উচ্চ আদালতের রায়সহ)।



৩. ডকুমেন্টারি:

- *The Mau Mau Rebellion: Britain's Gulag* (Al Jazeera)

- *The Empire's Shadow: Britain's Role in the Yemen Civil War* (BBC)



৪. অনলাইন উৎস:

-[Wikipedia: British war crimes](https://en.wikipedia.org/wiki/British_war_crimes)

- [The Nation-এর বিশ্লেষণ] (https://www.thenation.com/article/world/caroline-elkins-legacy-of-violence/)



ব্রিটিশ দখলদারিত্বের ইতিহাস শোষণ, রক্তপাত ও প্রাতিষ্ঠানিক মিথ্যাচারে ভরা। যদিও অনেক নথি ধ্বংস করা হয়েছে, ঐতিহাসিক গবেষণা ও আর্কাইভাল উদ্যোগের মাধ্যমে এই অপরাধগুলির চিহ্ন উন্মোচিত হচ্ছে। এদেরকে চিহ্নিত করে ফাঁসি দিতে হবে।



-মুহম্মদ মুশফিকুর রহমান।