স্থাপত্য-নিদর্শন
অনন্য স্থাপত্যের নজির বাংলাদেশে: মসজিদে নববী শরীফ উনার হুবহু নকশায় রাজারবাগ শরীফে সুন্নতী জামে মসজিদ নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হয়েছিল সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’দাদ শরীফ মহাসম্মানিত ১২ই শরীফে
, ১২ রবীউল আউওয়াল শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ১৯ রবি , ১৩৯২ শামসী সন , ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রি:, ০১ আশ্বিন, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) স্থাপত্য নিদর্শন
রাজারবাগ শরীফের পবিত্র সুন্নতী মসজিদ উনার মিল রয়েছে সেই পবিত্র মদীনা শরীফে হিজরত পরবর্তী সময়ে প্রতিষ্ঠিত ‘মসজিদে নববী শরীফ’ উনার সাথে।
রাজারবাগ শরীফ উনার সম্মানিত হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি রাজারবাগ শরীফে উনার পৈতৃক বাড়িতে প্রতিষ্ঠা করেন “মসজিদে নববী শরীফ” উনার হুবহু নকশা অনুযায়ী “সুন্নতী জামে মসজিদ”। বিষয়টি বলা যত সহজ, বাস্তবে তা করা ছিল অনেক কঠিন। কিন্তু যেহেতু তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার ও নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ইচ্ছা মুবারকেই এই মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, তাই উনার জন্য ছিল গায়েবী সাহায্য বা মদদ।
বলাবাহুল্য যে, স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লøাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনাকে সাথে করে নিয়ে আসেন এবং সুন্নতী জামে মসজিদ নির্মানের স্থান হতে শুরু করে সার্বিক বিষয়গুলো দেখিয়ে দেন। সুবহানাল্লাহ!
সুন্নতী মসজিদ ও মাদরাসা উনাদের মূল বুনিয়াদী অবকাঠামো ও তার পূর্ণ বিবরণী:
খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মুবারক নির্দেশ এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক দিক-নির্দেশনায় রাজারবাগ শরীফে সুন্নতী জামে মসজিদ উনার নির্মাণ কাজ শুরু হয়। বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অক্লান্ত ও অবর্ণনীয় ত্যাগ ও পরিশ্রমে সর্বপ্রকার সুন্নতী নির্মাণ সামগ্রী সংগ্রহ করা হয়। যথাক্রমে যশোর ও ফরিদপুর এবং ঢাকা রূপগঞ্জের কালীগঞ্জ থেকে খেজুর গাছ, খেজুরের পাতা, কা- ও ছাল। আমাদের দেশের অধিকাংশ খেজুর গাছই রস সংগৃহীত কাটা গাছ। আর ওই কাটা গাছ দিয়ে স্তম্ভ, কাঠ, রুয়া ইত্যাদি তৈরি করা সম্ভব নয়। পূর্ণাঙ্গ ভালো গাছের দরকার। তাই অনেক খোঁজাখুঁজি ও ব্যয়বহুল ব্যবস্থায় দূর-দুরান্ত থেকে ট্রাকযোগে ও নৌপথে সমস্ত সুন্নতী সামগ্রী সংগ্রহ করে পবিত্র রাজারবাগ শরীফ-এ আনা হয়। চাল বাঁধাইয়ের জন্যে বেঁত আনতে হয় সিলেট থেকে। দেয়াল নির্মাণের জন্য লালমাটি সংগ্রহ করা হয় ঢাকা ক্বদমতলা রাজারবাগ থেকে। পাথর আনা হয় নারায়ণগঞ্জ থেকে।
বিজ্ঞ বিজ্ঞ মিস্ত্রী যোগাড় করে মহাসম্মানিত সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’দাদ শরীফ মহাপবিত্র ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ-১৪০৬ হিজরী সনে (২৮ সাদিস-১৩৫৩ শামসী সন, ১৯৮৬ খৃ:) পবিত্র সুন্নতী জামে মসজিদ তৈরির মূল কাজ শুরু হয়। সুন্নতী জামে মসজিদ উনার বারান্দা, হুজরা শরীফ ও সুফ্ফাখানাসহ দৈর্ঘ্য ৫০ ফুট এবং প্রস্থ ৩০ ফুট। মূল মসজিদ উনার দৈর্ঘ্য ৩০ ফুট এবং প্রস্থ ২০ ফুট। মসজিদের চাল বা ছাদ ছিল ৯ ইঞ্চি পুরু খেজুর পাতার ছাউনি। চালের ফ্রেম ছিল ২/২ ইঞ্চি রুয়া। আড়া ছিল তাল ও খেজুর গাছের। আর ৬খানা স্তম্ভ/খুঁটি ছিল খেজুর গাছের। দেয়াল নির্মাণে লালমাটির কঙ্কর (ছোট পাথর) বিছিয়ে দেয়া হয়। মসজিদের ভেতরে স্তম্ভে মাটির চেরাগ ব্যবহার করা হয়, যা সংগ্রহ করা হয়েছিল পুরান ঢাকার ঠাটারীবাজার ও টঙ্গি থেকে। উক্ত চেরাগে আলো জ্বালানোর জন্যে পবিত্র সুন্নত মুবারক অনুসরণে সরিষার তেল ও যয়তুন তেল ব্যবহার করা হয়। সুবহানাল্লাহ! সুন্নতী মসজিদ উনার বিছানা ছিল পবিত্র সুন্নত মুবারক অনুসরণে খেজুর পাতার চাটাই দিয়ে। সুবহানাল্লাহ!
পবিত্র জায়নামাযও ছিল খেজুর পাতার তৈরি। আর মিম্বর শরীফ তৈরি করা হয়েছিল চট্টগ্রাম, কক্সবাজার থেকে ঝাউগাছ এনে তিন থাক (তাক/সিঁড়ি) বিশিষ্ট সুন্নতী মাপে। পবিত্র সুন্নতী মাপে খেজুর গাছের লাঠি মুবারকও তৈরি করা হয়। গরমকালে তাল পাতার পাখা ব্যবহার করা হতো। সুবহানাল্লাহ!
উল্লেখ্য, খেজুর গাছের খুঁটি, খেজুর পাতার চালা এবং মাটির তৈরি সুন্নতী মসজিদ এখন সময়ের প্রয়োজনে সংস্কার করে অনেক বড় আকারে তৈরি করা হয়েছে এবং কাজ এখনো চলছে।
-আল হিলাল।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
খেজুরের পাতায় লিখা পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ
০৬ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
অনন্য নিদর্শন সভ্যতার স্বর্ণযুগে গ্রন্থবাঁধাই (৫)
২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
অনন্য নিদর্শন সভ্যতার স্বর্ণযুগে গ্রন্থবাঁধাই (৪)
২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
অনন্য নিদর্শন সভ্যতার স্বর্ণযুগে গ্রন্থবাঁধাই (৩)
০১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মুসলিম স্থাপত্যের অনন্য নিদর্শন খাগড়াছড়ির সবচেয়ে পুরনো ঐতিহাসিক শাহী জামে মসজিদ
১৭ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
অনন্য নিদর্শন সভ্যতার স্বর্ণযুগে গ্রন্থবাঁধাই (২)
১৩ আগস্ট, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
স্থাপত্যশৈলীর অন্যতম নিদর্শন ঐতিহাসিক চন্দনপুরা তাজ মসজিদ (২)
১১ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
স্থাপত্যশৈলীর অন্যতম নিদর্শন ঐতিহাসিক চন্দনপুরা তাজ মসজিদ (১)
১০ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ছাহাবী সাইয়্যিদুনা হযরত আমর ইবনুল আস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু মসজিদ (৫)
০৫ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ছাহাবী সাইয়্যিদুনা হযরত আমর ইবনুল আস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু মসজিদ (৪)
২৯ জুন, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
বাবা আদম শহীদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মাজার শরীফ ও মসজিদ
২৭ জুন, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ইউরোপে মুসলিম সভ্যতার অন্যন্য এক নিদর্শন “বিবি-হায়েবাত মসজিদ”
২৪ জুন, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)