আইভরি কোস্টে যেভাবে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার আগমন
এডমিন, ০৮ যিলহজ্জ শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ২৮ আউওয়াল, ১৩৯১ শামসী সন , ২৭ জুন, ২০২৩ খ্রি:, ১৩ আষাঢ়, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) ইতিহাস

দেশটির সরকারি ভাষা ফরাসি। মোট জনসংখ্যা ২৭ কোটি ৪৮ লাখ এক হাজার ৮৬ জন। দেশটির মোট জনসংখ্যার অধেকেরই বেশি মুসলমান। আয়তন তিন লাখ ২২ হাজার ৪৬২ কিমি। আইভরি কোস্টের নামকরণের ব্যাপারে বলা হয়, প্রাচীনকালে আফ্রিকার ব্যবসায়ীরা হাতির দাঁত একত্র করে উপকূলে এসে বিক্রি করত। তা থেকেই ‘আইভরি কোস্ট’ বা ‘হাতির দাঁতের উপকূল’ নামে পরিচিতি লাভ করে।
আইভরি কোস্টে নানা উপায়ে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার আগমন হয়। তৎকালীন সময়ে মুসলিম ব্যবসায়ীদের পদচারণ ছিল আফ্রিকার এ অঞ্চলে। ব্যবসা-বাণিজ্যে মুসলিম বণিকদের সদাচার ও সততা দেখে মুগ্ধ হয় স্থানীয়রা। মুসলমানদের মধ্যে পবিত্র কুরআন শরীফ এবং পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার অনুসরণ-অনুকরণ দেখে স্থানীয়দের মধ্যে আকর্ষণের সৃষ্টি হয়। ফলে তারা আগ্রহী হয়ে ওঠে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার প্রতি। স্থানীয় পৌত্তলিক গোত্রগুলোতে মুসলমানদের আদর্শ ও শিক্ষার প্রভাব বাড়তে থাকে।
১০২৫ সালে আইভরি কোস্টের প্রভাবশালী পরিবার মান্ডিংকা গোত্রের নেতারা সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেন। আইভরি কোস্টে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম প্রচারে উনাদের ব্যাপক ভূমিকা আছে। মান্ডিংকা গোত্রটি পশ্চিম আফ্রিকার বৃহৎ ও প্রাচীন একটি পরিবার। পশ্চিম ও দক্ষিণে আটলান্টিক মহাসাগরের উপকূলে এবং নাইজার নদীর আশপাশসহ পশ্চিম ও উত্তরের মরুভূমিতে ছড়িয়ে আছে গোত্রটির সদস্যরা। বর্তমানের সুবিশাল আফ্রিকার দেশগুলোতে এই গোত্রটির বিভিন্ন শাখা-প্রশাখা ছড়ানো।
১০৫০ সালে আইভরি কোস্টের উত্তরাঞ্চলে মান্ডিংকা বংশের মুসলিম গোত্রগুলো ঘানা সাম্রাজ্য থেকে স্বাধীনতা অর্জনের জন্য প্রচেষ্টা শুরু করে। দীর্ঘ ২০ বছর পর ১০৭৬ সালে দেশটির দক্ষিণের মুরাবিত মুসলিম নেতা আবু বকর বিন উমরের নেতৃত্বে স্বাধীনতা অর্জন করে। এর পর থেকে সুদীর্ঘকাল ধরে আফ্রিকার এই অঞ্চলটিতে মুসলিম শাসন বিদ্যমান ছিলো। মুসলিম শাসনের সময় এ ভূমিতে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার হুকুম-আহকাম এবং নীতিমালা বাস্তবায়িত ছিলো।
অতঃপর ১৫ শতাব্দীর শেষেরদিকে পশ্চিম আফ্রিকার উপকূলে আসতে থাকে বেনিয়া ইউরোপীয়ানরা। তারা উপকূলবর্তী এই অঞ্চল থেকে ব্যাপকভাবে নারী, শিশু, তরুণ-তরুণীদের লুণ্ঠন করা শুরু করে। অত্যন্ত ঘৃণ্য পন্থায় স্থানীয়দের বন্দি করে আমেরিকায় তাদের দাস-দাসী হিসেবে বিক্রি করা হয়। ১৮৪৮ সালে দাস প্রথার বিলুপ্তি পর্যন্ত ‘মানব লুণ্ঠন ও পাচার’ অব্যাহত থাকে। হত্যা, লুণ্ঠন ও লুটতরাজের কারণে মুসলিম শাসক ও জনগণের মধ্যে চরম অস্থিরতা বিরাজ করে। ১৮৬১ সালে মান্ডিংকার লোকদের সাহায্যে আফ্রিকার বিখ্যাত বীর শাসক সামোরি তুরে ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠা করে একটি সালতানাত কায়েম করেন। এ সময় সামোরির নেতৃত্বে আইভরি কোস্টের মুসলিমরা বেনিয়াদের বিরুদ্ধে দীর্ঘ সংগ্রাম করে। এরপর ১৯০০ সালের সেপ্টেম্বর ফ্রান্স সেনাবাহিনীর সাথে জিহাদ করতে করতে শহীদ হন সামোরি তুরে। অতঃপর ফ্রান্সের শাসনাধীন হয় আইভরি কোস্টসহ আফ্রিকার বিশাল অঞ্চল। আর অস্থিরতা ও যুদ্ধ-বিগ্রহে ব্যাপক অস্থিরতা বিরাজ করতে থাকে অঞ্চলটিতে। বর্তমানে দেশটি স্বাধীন হলেও বিশৃঙ্খলা ও স্থবিরতা আজও সেখানে বিরাজ করছে।