আধুনিক যুদ্ধ জাহাজ নির্মাণ শিল্পের গোড়াপত্তন করেছিলেন আরব মুসলমানগণই
, ১৬ যিলহজ্জ শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ০৩ ছানী, ১৩৯১ শামসী সন , ০৩ জুলাই, ২০২৩ খ্রি:, ২১ আষাঢ়, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) ইতিহাস
![আধুনিক যুদ্ধ জাহাজ নির্মাণ শিল্পের গোড়াপত্তন করেছিলেন আরব মুসলমানগণই](https://www.al-ihsan.net/uploads/1688511333_.png)
বর্তমান বিশ্বে যে যুদ্ধ জাহাজ শিল্প গড়ে উঠেছে তার মূল রচয়িতা ছিলেন আরব মুসলমানগণ। কিন্তু বিধর্মী ঐতিহাসিক এবং তথ্য-সন্ত্রাসের কারণে মুসলমানদের এসব সমৃদ্ধ ইতিহাস ধামাচাপা পড়ে আছে।
হযরত খোলাফায়ে রাশেদীন আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত খিলাফতকাল থেকেই আধুনিক সমরবিদ্যায় চরম সাফল্যের স্বাক্ষর রাখেন মুসলমানগণ। এর মধ্যে অন্যতম হলো নৌযুদ্ধ। নৌযুদ্ধের সূচনা হয়েছিলো আমিরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত যূন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত খিলাফতকালে। উনারই সম্মানিত পৃষ্ঠপোষকতায় সাইয়্যিদুনা হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু অত্যাধুনিক নৌবাহিনী গঠন করেন। যা দ্বীন ইসলাম উনার প্রথম নৌবাহিনী হিসেবে ইতিহাসে পরিচিত। নৌবাহিনী গঠনের পর থেকেই যুদ্ধক্ষেত্রে যুদ্ধজাহাজের প্রয়োজনীয়তা পড়ে। আর এই প্রয়োজনীয়তা থেকেই যুদ্ধ জাহাজ শিল্পের গোড়াপত্তন করেন আরব মুসলমান নৌকুশলীগণ।
আরবগণ জাহাজ নির্মাণ কারখানাকে বলতেন ‘দারুস সানা’। উনারা জাহাজ নির্মাণ শিল্পে পূর্ণ পারদর্শিতা অর্জন করেছিলেন। ইউরোপের অধিবাসীরা স্পেন, সিসিলী এবং আফ্রিকায় আরবদের নিকট থেকে এই বিদ্যা শিক্ষা করেছিলো। আরব মুসলমানদের পাশাপাশি জাহাজ নির্মাণ ও জাহাজ চালনা করতো রোমকরা। কিন্তু তাদের জাহাজ নির্মাণ ও নৌ চালনা ছিলো সম্পূর্ণ অনুন্নত ও অপরিকল্পিত ধাঁচের। রোমকরা কেবল ছোট ছোট রণতরীই নির্মাণ করতে পারতো। বড় বড় যুদ্ধ জাহাজ তাদের কারখানায় তৈরী হতো না। আরব মুসলমানরাই এই শিল্পে নতুনত্ব আনয়ন করেন। নতুন নতুন মডেল ও কৌশল আবিষ্কার করেন। আরবরাই সর্বপ্রথম নৌ দফতর প্রতিষ্ঠা করেন। এই দফতরের নাম ছিলো ‘দীওয়ানুল উসহুল’। এই দফতরের অধীনে অনেক বড় বড় নৌ-কারিগর ছিলেন। তারা রণতরীর নতুন নতুন মডেল ও নকশা তৈরী করতেন।
স্পেন, আফ্রিকা, মিসর ও সিরিয়া ছিলো তৎকালীন মুসলমানদের বড় বড় নৌকেন্দ্র। এই সবগুলো দেশই ভূমধ্যসাগরের উপকূলে অবস্থিত। ভূমধ্যসাগরের উপকূলভাগ সব সময়ই তার মনোরম আবহাওয়ার কারণে তাহযীব তামাদ্দুনের কেন্দ্রভূমি ছিলো। মুসলমানরা সর্বপ্রথম যুদ্ধ জাহাজ নির্মাণ কারখানা স্থাপন করেন হিজরী প্রথম শতাব্দীতে মিসরের ফুসতাত নামক স্থানে। আহমদ ইবনে তুলুন নামের এক মুসলিম সামরিক কমান্ডার এই কারখানার বিশেষ উন্নতি করেন। পরবর্তীতে মুসলিম শাসনের বিভিন্ন ভূখন্ডে জাহাজ নির্মাণ কারখানা গড়ে ওঠে।
দারুস সানায়া বা জাহাজ নির্মাণ কারখানায় ছোট বড় বিভিন্ন রকমের যুদ্ধ জাহাজ তৈরী হতো। এগুলোর নামও ছিলো ভিন্ন ভিন্ন। আকার-আকৃতি ও গঠন প্রকৃতিও ছিলো নানারূপ। এগুলোর সমষ্টিকে ‘উসতুল’ বলা হতো। আমরা এখানে কয়েকটি যুদ্ধ জাহাজের নাম উল্লেখ করছি-
শূণা: এগুলো দেখতে বিশাল আকারের ছিলো। এগুলোতে শত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য কেল্লা ও মিনার নির্মাণ করা হতো।
হাররাকা: এগুলোতে মিনজানিক স্থাপন করা হতো। মিনজানিক দ্বারা শত্রু পক্ষের উপর বিস্ফোরক দ্রব্য নিক্ষেপ করা হতো।
তার রাদা: এ ছিলো এক ধরণের দ্রুতগামী নৌবিশেষ।
উশারিয়াত: এতে করে নৌ সেনারা নীল নদে টহল দিতেন।
শালান দিয়াত: এসব দিয়ে বিভিন্ন খবরাখবর পৌছানো হতো।
মিসতাহাত: এই জাহাজ সাধারন যুদ্ধের জন্য ব্যবহার করা হতো।
নৌ যুদ্ধে মুসলমানদের এ সকল অবদান শুধু ধামাচাপাই দেয়া হয়নি বরং যে সকল মুসলিম ঐতিহাসিক মুসলমানদের এ সকল অবদান প্রকাশের চেষ্টা করেছেন তাদের উপর নেমে এসেছিলো নির্যাতন-নিপীড়ন। যা পরবর্তী কোনো পর্বে প্রকাশ করা হবে ইনশাআল্লাহ!
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ষড়যন্ত্র ও শঠতার মাধ্যমে যেভাবে ইসরাইলকে স্বীকৃতি দিয়েছিলো রাশিয়া-আমেরিকা
২৭ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
মুসলমানদের নিয়ে উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের একটি বানোয়াট ও হাস্যকর ইতিহাস প্রচারণার খন্ডন
২৫ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ আলাইহিস সালাম উনার বীর বিক্রম আক্রমণ
১৫ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
ইহুদীদের নিশানাতে ভূমি নাকি আল আকসা শরীফ? (২)
১০ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ইহুদীদের নিশানাতে ভূমি নাকি আল আকসা শরীফ? (১)
০৯ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
আমিরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার নৌবাহিনী গঠন এবং বিজিত এলাকার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা
০৮ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সমৃদ্ধশালী বাঙ্গালাহ সালতানাতের সুলতান শামসউদ্দিন ইলিয়াস শাহ সম্পর্কে কিছু সংক্ষিপ্ত তথ্য
০১ জুলাই, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মুসলমানদের শক্তিশালী সামরিক বিভাগের সমৃদ্ধ ইতিহাস
২৬ জুন, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
আমেরিকা আবিষ্কারের যে সঠিক তথ্যটি আড়াল করা হয়েছে
২৫ জুন, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
প্রেভেজার যুদ্ধে উসমানীয়দের কাছে খ্রিষ্টানদের সম্মিলিত বাহিনীর পরাজয়
২২ জুন, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সুলতান ‘আলপ আরসালান এবং ইতিহাসের গতিপথ পরিবর্তনকারী মানজিকার্টের যুদ্ধ (২)
০৯ জুন, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সুলতান ‘আলপ আরসালান এবং ইতিহাসের গতিপথ পরিবর্তনকারী মানজিকার্টের যুদ্ধ (১)
০৪ জুন, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)