আল আন্দালুসে ওয়াদা রক্ষার অবিস্মরণীয় ঘটনা
এডমিন, ০৫ ছফর শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২৩ ছালিছ, ১৩৯১ শামসী সন , ২২ আগস্ট, ২০২৩ খ্রি:, ০৭ ভাদ্র শ্রাবণ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) ইতিহাস

তখন স্পেনে মুসলিম শাসন চলছে। আল আন্দালুসের শাসনভার তখন আমীর আব্দুর রহমানের হাতে। আল আন্দালুসে তখন অনেক আরব সম্পদশালী মুসলিম ব্যবসায়ীও বসবাস করতেন। সে সময় কর্ডোভার একটি গোত্রের সর্দার ছিলেন এক আরব সম্পদশালী মুসলমান। উনার বিপুল ধনসম্পদ ও জমিজমা ছিল। তবে তিনি অত্যন্ত পরহেযগার ও আল্লাহওয়ালা ছিলেন।
একদিন তিনি নিজ বাগানে পায়চারী করে বেড়াচ্ছেন। এই সময় জনৈক স্পেনীয় যুবক আকস্মিকভাবে উনার বাগানে ঢুকলো এবং উনার পায়ে পড়ে জীবনের নিরাপত্তা চাইলো। উনি তাকে টেনে তুললেন এবং কারণ জানতে চাইলেন।
যুবক বললো, পথিমধ্যে এক যুবকের সাথে আমার কথা কাটাকাটি হয়েছিল। আমি ক্রোধে দিশাহারা হয়ে তার মাথায় একটা আঘাত করলাম। যুবকটি তৎক্ষনাৎ মারা গেল। তার সঙ্গীরা আমাকে ধাওয়া করেছে। আমি জীবনের নিরাপত্তার জন্য পালাচ্ছিলাম। আপনার দরজাটা খোলা দেখে ঢুকে পড়েছি। দোহাই আপনার, আমাকে আশ্রয় দিন।”
এই কথা বলে যুবকটি পুনরায় উনার পা জড়িয়ে ধরলো। সর্দার এবারও তাকে টেনে তুললেন এবং বললেন, “তোমাকে নিরাপত্তা দিচ্ছি। কেউ তোমার কিছু করবে না। এসো আমার সঙ্গে।” অতঃপর তিনি যুবকটিকে উনার বাড়ীর একটি গোপন কক্ষে তালা দিয়ে রাখলেন।
যুবককে নিরাপদ কক্ষে তালাবদ্ধ করে বাগানে ফিরে আসতেই তিনি দেখতে পান একটি অকল্পনীয় দৃশ্য। তারা এক সুন্দর সুঠামদেহী যুবকের লাশ ধরাধরি করে নিয়ে এসেছে। লাশ দেখে সর্দার এক প্রচন্ড আর্তচিৎকার দিলেন। কারণ যুবকটি ছিল উনার একমাত্র পুত্র সন্তান। উত্তেজিত জনতার মধ্য হতে একজন বললো, একটা স্পেনীয় যুবক এই হত্যাকান্ডটা ঘটিয়েছে। সে এই পর্যন্ত এসে উধাও হয়ে গিয়েছে। আমরা তাকে ধাওয়া করে এসেছিলাম। কিন্তু ধরতে পারলাম না।”
সর্দার নিঃসন্দেহে বুঝতে পারলেন যে, আশ্রিত যুবকই উনার প্রাণপ্রিয় সন্তানকে হত্যা করেছে। জনতা উনার সমস্ত বাগান তন্নতন্ন করে খুঁজলো। কিন্তু কোথাও তার সন্ধান পেল না। অবশেষে তারা নিরাশ হয়ে উনাকে শান্তনা দিয়ে চলে গেল।
আশ্রিত যুবকটি তার কক্ষ হতে এসব কিছু দেখলো এবং শুনলো। সে উপলব্ধি করতে পারলো যে, তার মৃত্যু আসন্ন। সে তার গোপন কক্ষে চরম আতংকের মধ্যে সময় কাটাতে লাগলো। লাশটি যথারীতি গোসল, কাফন ও জানাযা শেষে দাফন করা হলো। এরপর সন্ধা হয়ে এলো। সন্ধ্যা ক্রমশ গাঢ় হয়ে এলো। রাত গভীর হতে গভীরতর হলো। বাড়ীর লোকজন কান্নাকাটি করে ক্লান্ত হয়ে এক সময়ে গভীর ঘুমে অচেতন হয়ে পড়লো।
কিন্তু সর্দারের চোখে ঘুম নেই। তিনি তার বিছানা থেকে উঠলেন, ধীর পায়ে অপরাধী যুবকের কক্ষের কাছে গেলেন এবং তার দরজার তালা খুলে দিলেন। তখন ভয়ে কম্পমান যুবককে লক্ষ্য করে তিনি বললেন, “তোমার ভয়ের কোন কারণ নেই। তুমি আমার মেহমান। আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার একজন নগন্য গোলাম। আমি একজন মুসলমান। আর মুসলমানরা প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে না। এই নাও, এই পোটলায় তোমার পথে খাওয়ার জন্য কিছু খাবার আছে। আর আস্তাবল হতে একটি ঘোড়া নিয়ে এখনি এখান হতে চলে যাও। আমার ভয় হয়, কখন আবার শয়তানের কুপ্ররোচনায় তোমাকে হত্যা করে বসি।”
সীমাহীন কৃতজ্ঞতায় অশ্রুভরা চোখে যুবক তাকালো সর্দারের দিকে। অতঃপর সালাম জানিয়ে ঘোড়া হাঁকিয়ে দ্রুত সেখান থেকে চলে গেলো।
এই ওয়াদা রক্ষার ঘটনাটির মাধ্যমে বোঝা যাচ্ছে যে, সে সময় মুসলমানদের আমল-আখলাক্ব কতটা উচ্চ পর্যায়ের ছিলো। আর এর কারণেই বিশ্বের তাবৎ শক্তি মুসলমানদের কাছে মাথানত করেছিলো। সুবহানাল্লাহ!