ইতিহাস
ইউরোপের কৃষি কাঠামো মুসলমানদেরই হাতে গড়া
, ২৪ যিলক্বদ শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ২৪ ছানী আ’শার, ১৩৯২ শামসী সন , ২৩ মে, ২০২৫ খ্রি:, ১০ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) ইতিহাস

হযরত তারিক বিন জিয়াদ রহমতুল্লাহি আলাইহি অত্যাচারী খৃস্টান শাসক রডারিককে পরাজিত করে আইবেরীয় উপদ্বীপে (স্পেন ও পর্তুগাল) মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। মুসলিম ঐতিহাসিকরা মুসলিম স্পেনকে আন্দালুসিয়া বা আল-আন্দালুস নামে অভিহিত করে থাকেন।
মুসলিম শাসনামলে স্পেন হয়ে ওঠে জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রাণকেন্দ্র। সভ্যতা-সংস্কৃতির অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয় সে সময়; বরং স্পেন হয়ে ওঠে সমগ্র ইউরোপের জন্য সভ্যতার বাতিঘর। ‘দ্য মুরস ইন স্পেন’ গ্রন্থে লেখা হয়েছে, ‘মুরদের শাসনামলে স্পেনে শিল্পকলা, সাহিত্য ও বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে যে উন্নতি সাধিত হয়েছিলো ইউরোপের কোথাও তা পরিলক্ষিত হয়নি।
ফ্রান্স, জার্মানি, ইংল্যান্ড প্রভৃতি দেশ থেকে শিক্ষার্থীরা স্পেন ও সিসিলিতে আসতো মুসলমানদের থেকে জ্ঞান আহরণের জন্য। তারা আরবী ভাষার গ্রন্থগুলো ল্যাটিন ভাষায় অনুবাদ করে পাশ্চাত্যের কাছে পৌঁছে দেয়। আধুনিক ইউরোপীয় সভ্যতা বিনির্মাণে মুসলিমদের অবদান অনস্বীকার্য।
এখানে মুর বলতে স্পেনের মুসলমানদের বোঝানো হয়েছে। মুর শব্দটি মধ্যযুগে মরক্কো, আইবেরিয়ান উপদ্বীপ, সিসিলি দ্বীপপুঞ্জ এবং মাল্টার মুসলিম বাসিন্দাদের চিহ্নিত করতে ঐতিহাসিকরা প্রথম এটি ব্যবহার করে। তবে মুররা ছিলো প্রকৃতপক্ষে উত্তর আফ্রিকার মুসলিম অধিবাসী। উনারাই আইবেরীয় উপদ্বীপ ও সিসিলি দ্বীপপুঞ্জ জয় এবং তাতে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। পরবর্তী সময়ে বহুসংখ্যক মুর স্পেন ও সিসিলিতে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।
মুসলিম স্পেনের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে যেসব ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছিলো তার মধ্যে কৃষি অন্যতম। মুসলিম শাসকরা কৃষি খাতে আমূল পরিবর্তন আনেন এবং এই অঞ্চলকে খাদ্যে স্বনির্ভর করতে অবদান রাখেন। স্পেনসহ ইউরোপের একটি বিশাল অংশে প্রতিষ্ঠিত আন্দালুসিয়ার কৃষির উন্নয়নে মুসলিম শাসকরা ভূমি সংস্কার, কৃষকদের জন্য সুবিধাজনক করে আইন সংস্কার, কৃষকদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা, কৃষকদের কাছে জমির মালিকানা প্রত্যর্পণ ইত্যাদি কল্যাণকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।
মুসলিম শাসনামলে স্পেনের স্থানীয় কৃষির সঙ্গে মিশর, সিরিয়া এবং মধ্য এশিয়ার সমৃদ্ধ কৃষির সমন্বয় ঘটে। আফ্রিকার সঙ্গে যোগাযোগ এই ব্যবস্থায় অনেকখানি পরিবর্তন আনে। মুসলমানদের সমকালীন আন্তর্জাতিক কৃষির ব্যাপারে বিস্তারিত জ্ঞান থাকায় তারা আন্দালুসিয়ায় তা প্রয়োগ করেন এবং এ ক্ষেত্রে অকল্পনীয় সফলতা অর্জিত হয়।
এ অঞ্চলে কৃষিক্ষেত্রে প্রথম প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ঘটে ফসল গুদামজাতকরণ ব্যবস্থা গড়ে তোলার মাধ্যমে। দুর্ভিক্ষ রুখতে স্পেনের মুসলিম শাসকরা উৎপন্ন ফসল গুদামজাত করে সংরক্ষণের আধুনিক ব্যবস্থা গড়ে তোলেন। যাতে দশ বছর বা তারও বেশি সময় খাদ্যমজুদ করা যেতো। সব কয়টি প্রদেশে সরকারি গুদামঘর তৈরি করা হয়। বিশেষভাবে সারাগোস, টলেডো, সেভিল এবং লোরসা ছিলো উল্লেখযোগ্য।
কোনো কারণে রাজ্যে দুর্ভিক্ষ দেখা দিলে গুদামজাত শস্যগুলো মানুষের মাঝে বিতরণ করা হতো। গম ১০০ বছর, ফল পাঁচ-ছয় বছর সংরক্ষণ করার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো। এ ব্যবস্থা কৃষকদের অভাবের দিনে নিশ্চিন্ত রেখেছিলো। তারা সব শঙ্কা ও দুর্ভাবনামুক্ত হয়ে চাষাবাদে আত্মনিয়োগ করেন।
স্পেনের আবহাওয়া ও প্রকৃতি কৃষি অনুকূল এলাকা হিসেবে স্বীকৃত ছিলো। তবে কৃষি উপযোগী অনেক এলাকাতেই সেচের কোনো উপায় ছিলো না। এসব এলাকায় প্রাকৃতিক প্রবাহ ও বৃষ্টির ওপর নির্ভর করে কৃষকদের কৃষি কাজ করতে হতো। মুসলিম শাসকদের পৃষ্ঠপোষকতায় আন্দালুসিয়ায় এ অবস্থার অবসান হয়। কৃষি কাজে প্রয়োজনীয় সেচ নির্বিঘœ ও নিশ্চিত করার স্বার্থে শাসকরা অনেকগুলো খাল খনন করেন। প্রয়োজনের ভিত্তিতে কোথাও কূপ খনন করা হয় আর কোথাও কোথাও নির্মাণ করা হয় বিশাল নালা। এ ছাড়া কৃষিজ উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য আন্দালুসিয়ার মুসলিমরাই প্রথম সারের ব্যবহার শুরু করেন।
এ সময় প্রাকৃতিকভাবে উৎপন্ন সার ব্যবহার হতো। পশুর বিষ্টা ও অস্থি মাটিতে পচিয়ে সার তৈরি করা হতো। মুসলিম শাসকগণও বিষয়টিতে প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করেন। উনাদের চেষ্টায় আন্দালুসিয়ায় ‘আয়না’ নামে একরকম প্রাকৃতিক সার বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করা হয়। এভাবে মুসলিম শাসকরা ইউরোপের কৃষি-প্রযুক্তিতে উন্নত করে তোলেন।
-মুহম্মদ শাহ জালাল।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ইতিহাস থেকে প্রমাণিত: মানুষের গোশত খাওয়ার মত ঘৃণ্য কাজও ইহুদী-খ্রিস্টানদের জাতিগত বৈশিষ্ট্য
২২ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সিলেট বিজয়ী সাইয়্যিদ হযরত নাসির উদ্দিন সিপাহসালার রহমতুল্লাহি আলাইহি
১৮ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (২৩)
১৪ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
কুরবানীবিরোধী ও মুসলিম বিদ্বেষী জালিম শাসক গৌরগোবিন্দের করুণ পরিণতি
০৫ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
উসমানীয় সালতানাতে যেভাবে পবিত্র কুরবানী উনার ঈদ বিশেষভাবে উদযাপন করা হতো
০৪ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ইসলামী বিশ্বকোষের আলোকে বালাকোট শহরের স্থাপত্য ও বালাকোট যুদ্ধের ইতিহাস (৪)
০৩ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
বাংলার মুসলিম কৃষকদের উপর হিন্দু জমি দখলদারদের জুলুমের ইতিহাস (পর্ব ১৪)
০২ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
ইসলামী বিশ্বকোষের আলোকে বালাকোট শহরের স্থাপত্য ও বালাকোট যুদ্ধের ইতিহাস (৩)
০১ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (২২)
৩১ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ: অভিশপ্ত ইহুদী মনস্তত্ব বিশ্লেষণ
৩০ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
বাংলার মুসলিম কৃষকদের উপর হিন্দু জমি দখলদারদের জুলুমের ইতিহাস (পর্ব ১৩)
২৭ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
বাংলার মুসলিম কৃষকদের উপর হিন্দু জমি দখলদারদের জুলুমের ইতিহাস (পর্ব ১২)
২৬ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)