ইতিহাসের পাতায় কীর্তিমান মুসলিম নাবিকগণ
এডমিন, ০৬ মুহররমুল হারাম শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ২৬ ছানী, ১৩৯১ শামসী সন , ২৫ জুলাই, ২০২৩ খ্রি:, ১০ শ্রাবণ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) ইতিহাস

ইবনে মাজিদ: বর্তমান ইরাকের নজদের একটি নাবিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন আহমেদ ইবনে মাজিদ। উনার পিতা ও দাদা সমুদ্রবিদ্যার শিক্ষক ছিলেন। লোহিত সাগর ছিল উনাদের নখদর্পণে। লোহিত সাগর থেকে পূর্ব আফ্রিকা, পূর্ব আফ্রিকা থেকে চীন পর্যন্ত বিস্তৃত তৎকালীন সমুদ্রপথগুলো সম্পর্কে ইবনে মাজিদ বিপুল তথ্য, জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। নৌবিদ্যা ও সমুদ্রপথ নিয়ে ইবনে মাজিদের ৩৮টি গ্রন্থ রয়েছে। যার কিছু গদ্যে এবং অন্যগুলো পদ্যে রচনা করেন। উনার রচিত গ্রন্থগুলোর মধ্যে ২৫টি এখনো পাওয়া যায়। তিনি এসব গ্রন্থে জ্যোতির্বিদ্যা, প্রকৃতিবিদ্যা, চাঁদের অবস্থানস্থল, সমুদ্রপথ ও অক্ষাংশ বিষয়ে আলোচনা করেছেন। উনার বিখ্যাত বই ‘কিতাবুল ফাওয়ায়িদ ফি উসুলিল ইলমিল বাহরি ওয়াল কাওয়াইদ’ (ব্যাবহারিক সমুদ্রবিদ্যা : মূলনীতি ও বিধান)।
সুলাইমান আল-মাহরি: ঈসায়ী ১৬ শতকে খ্যাতি লাভ করেন সুলাইমান আল-মাহরি। আধুনিককালে উনার অবদান মানুষের সামনে তুলে ধরেছেন মুসলিম কয়েকজন ঐতিহাসিক। উনার চার খ-ের ‘মিনহাজ আল-ফাহির’ গ্রন্থে ভারত মহাসাগরের গাণিতিক অবকাঠামো তুলে ধরেছেন, যা তৎকালীন মুসলিম বিশ্বে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছিল। আল-মাহরির গাণিতিক অবকাঠামো নাবিকদের সমুদ্রতট নির্ণয়ে অনেক বেশি সহায়ক ছিল। তিনি উনার বইয়ে পূর্ব আফ্রিকান উপকূল থেকে সুমাত্রা-জাভার দূরত্বসহ ৬০টি সমুদ্রপথের দূরত্ব নির্ণয় করেন। এ ছাড়া তিনি ভারত মহাসাগরের তীরবর্তী অসংখ্য দ্বীপ, উপদ্বীপ ও সমুদ্রবন্দরের অবস্থান চিহ্নিত করেন।
পিরি রেইস: উসমানীয় নাবিক পিরি রেইস ছিলেন ঈসায়ী ১৬ শতকের একজন খ্যাতিমান সমুদ্র বিশেষজ্ঞ। ‘কিতাব-ই-বাহরিয়া’ (সমুদ্রযাত্রীর বই) উনাকে সীমাহীন খ্যাতি এনে দেয়। এ বইয়ে মূলত তিনি ভূমধ্য সাগর, ভূমধ্য সাগরের উপসাগর, উপকূল, দ্বীপ, খাত, পানিপ্রণালি ইত্যাদি বিষয়ের অবতারণা করেছেন। এ ছাড়া এতে তিনি জাহাজ পরিচালনা, প্রতিকূল পরিস্থিতিতে নোঙর করা ও নিরাপদ আশ্রয়ে পৌঁছানোর উপায় সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। ২১৯টি পূর্ণাঙ্গ বিবরণীতে তিনি ভূমধ্য সাগর ও কৃষ্ণ সাগরের বিস্তারিত রূপরেখা তুলে ধরেছেন।
ঝেং হে: চীনা নৌবহরের মুসলিম অ্যাডমিরাল ছিলেন ঝেং হে। তিনি গামা ও কলম্বাসের আগে পবিত্র মক্কা শরীফ, পারস্য উপসাগর, পূর্ব আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কা ও আরব অঞ্চলগুলো ভ্রমণ করেন। তিনি ৬২টি রাজকীয় জাহাজের নেতৃত্ব দেন, যার প্রত্যেকটির ওজন ছিল ৩১০০ মেট্রিক টন। অন্যদিকে কলম্বাসের জাহাজের ওজন ছিল মাত্র ৯১ মেট্রিক টন। ২৮ বছরের নাবিক জীবনে ঝেং হে ৩৭টি দেশ ভ্রমণ করেন; বাণিজ্যিক ও কূটনৈতিক প্রতিনিধি হিসেবে সাতটি দূরবর্তী সমুদ্রযাত্রা পরিচালনা করেন। চীনা মুসলিমদের ছোট একটি দল নিয়ে তিনি পবিত্র মক্কা শরীফ সফর করেন। সমুদ্রযাত্রার সময় তিনি বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার, রতœ, প্রাকৃতিক সম্পদ, উদ্ভিদ, প্রাণী, ওষুধ ইত্যাদি নিয়েও গবেষণা করেন, যা তাঁর সমুদ্রযাত্রাকে ভিন্ন মাত্রা দেয়।
ইবনে খারদাজবিহ: আবুল কাসিম উবায়দুল্লাহ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে খারদাজবিহ অষ্টম শতাব্দীর মুসলিম ভূগোলবিদ ও নাবিক। উনার বিখ্যাত বই ‘কিতাবুল মাসালিক ওয়াল মামালিক’। এ বইয়ে তিনি মুসলিম বিশ্বের বাণিজ্যিক পথগুলোর বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন, যার মধ্যে চীন, কোরিয়া, জাপানসহ দক্ষিণ এশিয়ার উপকূলীয় অঞ্চল, ব্রহ্মপুত্র নদ, আদমান দ্বীপপুঞ্জ, মালায়া ও জাভা দ্বীপের বিবরণ রয়েছে।