ইতিহাস
ইতিহাসের পাতায় মুজাহিদে মিল্লাতে আ’যম হযরত সাইয়্যিদ আহমদ শহীদ বেরেলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৫)
, ০৮ ছফর শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ১৬ ছালিছ, ১৩৯২ শামসী সন , ১৪ আগষ্ট, ২০২৪ খ্রি:, ৩০ শ্রাবণ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) ইতিহাস

দীর্ঘ ছফর মুবারক শেষে হযরত সাইয়্যিদ আহমদ শহীদ বেরেলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আপন জন্মভূমি রায় বেরেলীতে ফিরে আসেন। এ সময় রায় বেরেলীতে খরা ও দুর্ভিক্ষাবস্থা বিরাজ করছিলো। চারদিকেই চলছিলো হতাশা, অনাহার, দারিদ্র আর নিঃস্বতার রাজত্ব। এমতাবস্থায়ও উনার উপর অর্পিত ছিলো একশত লোকের রুটি-রুজীর যিম্মাদারী। কিন্তু উনার অন্তর ছিলো মহান আল্লাহ পাক উনার প্রদত্ত শান্তি এবং তাওয়াক্কুলে পরিপূর্ণ। উনার ছোহবতে তখন অবস্থান করছিলেন তৎকালীন ভারতবর্ষের বড় বড় উলামায়ে কিরাম, প্রখ্যাত ছুফী ও পীর বুযূর্গগণ। প্রত্যেকেই উনারা নিজেদের জ্ঞান ও মর্যাদার দিক দিয়ে সাফল্যের সুউচ্চ সোপানে অবস্থান করা সত্ত্বেও উনারা হযরত সাইয়্যিদ আহমদ শহীদ বেরেলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার করে নিজেদের ধন্য মনে করতেন।
হযরত সাইয়্যিদ আহমদ শহীদ বেরেলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার সঙ্গী-সাথী এবং মুরীদগণদের নিয়ে খেদমতে খালকের (মানুষের সেবা) কার্যক্রমে শরীক হতেন। ফলে উনার রায় বেরেলী গ্রামটি একটি লোকজনে পরিপূর্ণ খানকাহ শরীফ, দ্বীনি মাদরাসা এবং একটি জিহাদের ময়দানে পরিণত হয়েছিলো। স্বীয় বাসভূমিতে অবস্থানকালে তিনি এলাহাবাদ, বেনারস, কানপুর এবং সুলকানপুর ছফর করেন। সামান্য দূর অতিক্রম করতে না করতেই লোকজন দলে দলে এসে উনার সাথে সাক্ষাত মুবারক করতো এবং বাইয়াত হতো।
ভোগ-বিলাসে লিপ্ত ভারতের লাখনৌবাসী যেভাবে হিদায়েত পেলো:
হযরত সাইয়্যিদ আহমদ শহীদ বেরেলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ভারতবর্ষের অগণিত এলাকায় ছফর মুবারক করেছেন মানুষের হিদায়েতের উদ্দেশ্যে। এর মধ্যে লাখনৌ উল্লেখযোগ্য। তৎকালীন সময়ে লাখনৌতে পাঠান মুসলমানদের একটি বড় বসতি ছিলো। পূর্ব থেকেই তারা হযরত সাইয়্যিদ আহমদ শহীদ বেরেলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার এবং উনার পরিবারের খুব আশিক ও মুহব্বতকারী ছিলো। উনাদের মধ্যে বিশেষ করে নওয়াব ফকীর মুহম্মদ খান নামের এক ব্যক্তি ছিলেন। উনার অনুরোধে হযরত সাইয়্যিদ আহমদ শহীদ বেরেলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ১৭০ জনের একটি কাফেলাসহ লাখনৌ ছফর করেন। উনার এ ছফরে সঙ্গী হিসেবে ছিলেন মাওলানা হযরত ইসমাইল রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং মাওলানা মুহম্মদ আব্দুল হাই রহমতুল্লাহি আলাইহি।
তিনি যখন লাখনৌ ছফর করেন, তখন সেখানকার মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন ওয়াব গাজীউদ্দিনের নবাবী ও নওয়াব মুতামিউদ্দৌলা আগা মীর। এ সময়ে লাখনৌতে সম্পদের অপচয়, বিশৃঙ্খলা, অপরের অধিকারে হস্তক্ষেপ ও ছিনতাই এবং ভোগ-বিলাসের রাজত্ব চলছিলো। আরাম-আয়েশ, খেল-তামাশায় মত্ত ছিলো লাখনৌবাসী। তবে লাখনৌতে সে সময় উলামা-মাশায়েখ কিরামদের চারনভূমিও ছিলো। সেই সাথে ধনী অভিজাত মুসলিম পরিবারগুলোর বসবাসও ছিলো লাখনৌতে।
হযরত সাইয়্যিদ আহমদ শহীদ বেরেলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং উনার কাফেলার সবাই গোমতী নদীর তীরে পীর শাহ মুহম্মদের টিলায় অবস্থান গ্রহণ করলেন। তিনি সেখানে পৌঁছতেই হাজার হাজার মানুষ আসতে লাগলো উনার ছোহবত মুবারক গ্রহণের উদ্দেশ্যে। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত জনসমাগম বাড়তেই থাকলো। মাওলানা ইসমাইল রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং মাওলানা মুহম্মদ আব্দুল হাই রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাদের প্রভাব সৃষ্টিকারী এবং অন্তর পরিশুদ্ধকারী ওয়াজ-নছীহতের ফলে লাখনৌর স্থায়ী বাসিন্দাদের মধ্যে বিশাল পরিবর্তন সৃষ্টি হয়। লোকেরা এসে তওবা করতে থাকলো এবং পবিত্র সুন্নত মুবারক উনার আলোকে জীবন অতিবাহিত করার ওয়াদা করলো। উনাদের কাফেলা লাখনৌতে কয়েকদিন অবস্থান করেছিলো।
আর এতেই পুরো লাখনৌবাসী পরিপূর্ণ ঈমানের স্বাদ পেতে থাকলো। ইবাদত-বন্দেগী, যিকির-ফিকিরের সমৃদ্ধ ভূমিতে পরিণত হলো লাখনৌ।
লাখনৌ অবস্থানকালে পবিত্র জুমুয়ার দিনে মাওলানা মুহম্মদ ইসমাইল রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং মাওলানা মুহম্মদ আব্দুল হাই রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাদের ওয়াজ-মাহফিল অনুষ্ঠিত হতো। বিভিন্ন পরিবার ও তাদের আত্মীয়-স্বজনেরা সেই দিন হযরত সাইয়্যিদ আহমদ শহীদ বেরেলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকট বাইয়াত গ্রহণ করতো এবং শিরক-বিদয়াত থেকে তওবা করতো। পাশাপাশি, সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারগুলো থেকে অগণিত দাওয়াত পেতে থাকেন তিনি। প্রতিটি দাওয়াতে উনার অসংখ্য-অগণিত কারামত মুবারক প্রকাশ পেতে থাকে। ফলে সেখানকার শিয়া এবং অমুসলিমরাও উনার প্রতি মুহব্বত পোষণ করতে থাকে এবং দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করতে থাকে।
পাদটীকা:
* লাখনৌ হলো বর্তমান ভারতের উত্তর প্রদেশের রাজধানী। এটিকে লখনউও বলা হয়ে থাকে।
* গোমতী নদী ভারতের উত্তর প্রদেশ থেকে উৎপত্তি একটি নদী। যা ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল অতিক্রম করে তার বিভিন্ন শাখা বাংলাদেশেও এসে প্রবেশ করেছে।
* হযরত সাইয়্যিদ আহমদ শহীদ বেরেলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সময় ব্রিটিশরা ভারতবর্ষে প্রভাব বিস্তার করেছিলো। কিছু কিছু এলাকায় মুসলিম শাসন থাকলেও তা অনেকটাই দুর্বল ছিলো। পরবর্তীতে উনার রূহানী ফায়েজে তারা ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলো। (অসমাপ্ত)
-মুহম্মদ শাহ জালাল।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ইতিহাস থেকে প্রমাণিত: মানুষের গোশত খাওয়ার মত ঘৃণ্য কাজও ইহুদী-খ্রিস্টানদের জাতিগত বৈশিষ্ট্য
২২ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সিলেট বিজয়ী সাইয়্যিদ হযরত নাসির উদ্দিন সিপাহসালার রহমতুল্লাহি আলাইহি
১৮ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (২৩)
১৪ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
কুরবানীবিরোধী ও মুসলিম বিদ্বেষী জালিম শাসক গৌরগোবিন্দের করুণ পরিণতি
০৫ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
উসমানীয় সালতানাতে যেভাবে পবিত্র কুরবানী উনার ঈদ বিশেষভাবে উদযাপন করা হতো
০৪ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ইসলামী বিশ্বকোষের আলোকে বালাকোট শহরের স্থাপত্য ও বালাকোট যুদ্ধের ইতিহাস (৪)
০৩ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
বাংলার মুসলিম কৃষকদের উপর হিন্দু জমি দখলদারদের জুলুমের ইতিহাস (পর্ব ১৪)
০২ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
ইসলামী বিশ্বকোষের আলোকে বালাকোট শহরের স্থাপত্য ও বালাকোট যুদ্ধের ইতিহাস (৩)
০১ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (২২)
৩১ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
প্রসঙ্গ: অভিশপ্ত ইহুদী মনস্তত্ব বিশ্লেষণ
৩০ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
বাংলার মুসলিম কৃষকদের উপর হিন্দু জমি দখলদারদের জুলুমের ইতিহাস (পর্ব ১৩)
২৭ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
বাংলার মুসলিম কৃষকদের উপর হিন্দু জমি দখলদারদের জুলুমের ইতিহাস (পর্ব ১২)
২৬ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)